www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মোহ (১০ থেকে ১৩)

১০
দুজনের জন্যে দুদিন অফিস কামাই,
হৃদয় দিয়েছে বিধি মোটে  একটাই,
কষ্টেতে মঞ্জুর হল দুদিনের ছুটি,
কাজ বাঁচলেও বাঁচবে কি প্রেম দুটি?
ফাইলের পাহাড় ঘাঁটি অফিসে বসে
মনের পর্দা জুড়ে শুধুই দিয়া ভাসে,
নিজের চিন্তায় নিজে হই হতবাক
প্রিয়ার চেয়েও ভাবি দিয়া সুখে থাক,
রাতে ফিরে শুয়ে থাকি চোখে নেই ঘুম,
ঝিঁঝিঁরাও ডাকে না আর, সব নিঃঝুম;
ঠিক নয় বুঝি দিয়ার মন নিয়ে খেলা,
প্রিয়াকেও যাবেনা যে করা অবহেলা,
কি যে করি ভেবে ভেবে হই দিশাহারা,
একাকাশে দুটি চাঁদ দেয় কেন ধরা?
জড়িয়ে পড়ছি কি আমিও মোহ-জালে?
মিলিয়ে চলেছি সুর সময়ের তালে!
অভিজ্ঞ আমি,এ মোর পায় কি গো শোভা
নীরবে দেখা ওর অকুল সাগরে ডোবা?
একই অঙ্গে দুটি রূপ কেন মানুষের?
অন্তর লুকোতে নিই আশ্রয় মুখোশের।
জীবন যে একটাই, সুপথে চলা চাই,
দিয়াকে এড়ানো ছাড়া কোনো গতি নাই।
'শরীরটা ভাল নেই" বলি বারোটার ফোনে,
লাইনটা কেটে দিই, যা ভাবে ভাবুক মনে;
হঠাৎই কেঁপে ওঠে আবার ফোনটা
দিয়ার নামটা দেখে নেচে ওঠে মনটা।

১১
সুরা-পানে লোপ পায় হিতাহিত জ্ঞান
মোহও কি সেরূপে আচ্ছ্ন্ন করে প্রাণ?
হয় তো আমি ভেসে থাকা মেঘ আকাশে!
ঠিকানা আছে লেখা আগুয়ান বাতাসে
দিয়া বলে ফোনে,"ঘুমাওনি এখনও?
জানো তো রাত-জাগা ভাল নয় কখনও ;
আমি হেসে বলি,"তুই কি ঘুমের দেশে?"
"আমি তো জেগে আছি তোমায় ভালবেসে,
তোমার কথা ভাবতে ভাল লাগে ভারি,
জীবন তো একটা,ক্ষণ খোয়াতে পারি?"

"মনকে বোঝা তুই আরও এক বার,
ভালবাসা বৃথা, প্রতিদান নেই যার;
ভেবে দ্যাখ হয়তো তুই আমাকে ছাড়া
কাঊকে পাসনি কাছে প্রেমে দিতে সাড়া,
জন্মেছে তাই এই অকারণ ভালবাসা!
পাখি যেমন বাঁধে কাছের ডালে  বাসা।"

"এই তুমি প্রিয়তম, চিনেছো আমাকে?
কত যে প্রস্তাব এসেছে সপ্তম থেকে
এই দ্বাদশ শ্রেণী, ছটি বছর ধরে!
করেছি প্রত্যাখ্যান সব, গিয়েছে ফিরে।"

কি যে হল বুকে মোর জানি না, সহসা
আশার দীপ নিভে জেগে ওঠে হতাশা;
কাটাতে হবে মোহ, যা ভাবে ভাবুক মনে,
কে যেন আমাকে দিয়ে বলিয়ে নেয় ফোনে,
"আমি হব দায়ী, দুষবে না কেউ তোকে,
পড়াতে যাবো না আর এর পর থেকে।"
বুকে ওঠে ঝড়, ফোন করে দিই বন্ধ,
দিয়া ছেলেমানুষ,আমি তো নই অন্ধ!"

১২
তিন দিন কোন খবর রাখিনি ওর।
মাথা-যন্ত্রণা,গায়ে জ্বর, কাটে নি ঘোর;
মায়ের সেবা, ওষুধ-পথ্যে রবিবারে
দুঃসহ কাল কাটিয়ে উঠলাম সেরে।
যেন কোন এক সাগরে ছিলাম ডুবে,
ভেসে ঊঠেই দেখি সূর্য উঠছে পুবে!
প্রিয়াও এসেছিল বাবা-কাকাকে নিয়ে
কাল দুপুরে, ফলের চুপড়ি সাজিয়ে;
শৈশবে মোর বাবা ছাড়েন ইহলোক,
দাদা ভিন্ন সংসারে, মা অভিভাবক;
মাকেই বলে গেছে প্রিয়ার বাবা-কাকা,
'বিয়ের দিন-ক্ষণ করতে হবে পাকা।'
হঠাৎ দেখি দ্বার ঠেলে ঢুকলো ঘরে
দিয়ার মা,মুখেতে উদ্বেগ ধরা পড়ে,
দিয়ার খবর পাইনি তিনদিন হলো।
বৌদি বললেন,"এখনই একটু চলো,
যাচ্ছো না কেন পড়াতে,হয়েছে কি কিছু?
দিয়াও বলে না, করে থাকে মাথা নিচু,
খাওয়া ঘুম কথা হাসি গিয়েছে ভুলে,
বই নিয়ে বসে না দেখি,যায় না স্কুলে।"

"আমিও ভুগছি বৌদি, তিন দিন জ্বরে,
কাজেও পারিনি যেতে,পড়াবো কি করে?
সুস্থ এখন আমি, ছুটিও আছে আজ,
যাবো আমি সেরে নিয়ে টুকিটাকি কাজ।"

১৩
যেন ভূমিতে পতিত বায়সের লাশ,
দলে দলে আরো কাক জমিয়েছে ভিড়!
প্রয়াতের প্রতি শোক করতে প্রকাশ;
দিয়া রয়েছে বসে উঠোনের ধুলায়,
প্রতিবেশিনী মহিলারা রেখেছে ঘিরে,
এত শোক বক্ষে মোর কেমনে কুলায়?
ফেটে যায় বুক বুঝি, চোখে আসে জল,
ছূটে গিয়ে ওর হাত তুলে নিই হাতে,
"কি হয়েছে দিয়া তোর সব খুলে বল্।"
উদাসিন দৃষ্টি নিয়ে তাকালো কেবল,
হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তুলে নিলো কাঠি,
আঁকিবুকি কেটে যায় আবোল-তাবোল।
আমি আর দিয়ার মা হাত ধরে তুলি,
"থাকে না এখানে বসে, ঘরে তুই চল্"
মাটিতে বসতে যায়, মুখে নেই বুলি;
শিশুর মতো দুহাতে তুলে নিই ওকে,
ঘরে গিয়ে শোয়ালাম বিছানার 'পরে।
"ভূতে ধরেছে ঠিক", বলে পাড়ার লোকে।
বুঝলাম আমি, পেয়েছে দারুন শোক,
সইতে পারেনি ওর সুকোমল স্নায়ু,
জানি শুধু আমি, জানে না পাড়ার লোক।
'মনোবিদ্যা' পড়া শখ ছিল ওর মেলা,
ওরই হয় তো আজ বড় প্রয়োজন
মনোবিদকেই, হায় রে বিধির খেলা!
          (এক লাইনান্তর অন্ত্যমিলে ১৪ মাত্রায়
                                  রচিত)
বিষয়শ্রেণী: কবিতা
ব্লগটি ৫৫২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রাখাল ১৩/১১/২০১৩
    চমৎকার!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
    • সহিদুল হক ১৩/১১/২০১৩
      অজস্র ধন্যবাদ ভাই রাখাল। ভাল থেকো।
 
Quantcast