www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

এক বৃন্তে দুটি কুসুম

-:প্রথম অংশঃ-
 
 আজকাল বধু হ্ত্যার সংবাদে মোটেই চমকে উঠি না। 'অগ্নিদগ্ধ হয়ে গৃহবধুর মৃত্যু'---সংবাদপত্রে এই শিরোনামটা যেন দৈনিক শিরোনামের রুপ নিয়েছে।বধূ-হত্যার ঘটনাও সাধারণ মানুষের মনে আর কোন রেখাপাত করে না। তাছাড়া হাসপাতালের ডাক্তার হিসাবে প্রত্যক্ষ তো করছিই।

  তাই যখন শুনলাম এমার্জেন্সিতে একজন অগ্নিদগ্ধ মহিলাকে ভর্তি করা হয়েছে তখন কোনরকম ভাবান্তর হয়নি আমার। কেবল ডিউটি পালনের তাগিদেই ছুটে গেলাম এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে।

  আগুনে ঝলসে গেছে সারাটা দেহ।চাঁদের উপর ঘন মেঘের আস্তরণের মতো সুন্দর মুখটা চাপা পড়ে গেছে বীভৎস কালিমায়।গলায় একটা সোনার হার ঝুলছে। হারের 'এস' লেখা লকেটটা দেখেই আমার হৃৎপিন্ডটা লাফিয়ে উঠলো,দুলে উঠলো সারা পৃথিবী,সব কিছু ভুলে উন্মাদের মতো চিৎকার করে উঠলাম,স্বপ্না.......

  স্বপ্না।আমার জীবন-পাতায় লেখা এক পবিত্রতম নাম।নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলে হয়েও আমি যে আজ একজন  প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার হতে পেরেছি তা ওই স্বপ্নারই কল্যাণে।

  আমি আর স্বপ্না একই গ্রামের ছেলেমেয়ে। ওদের আর আমাদের বাড়ির মাঝে  কেবল একটা পুকুরের ব্যবধান ছিল।ছোট বেলায় আমি পাডার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তেমন মিশতাম না। কেবল স্কুল আর বাড়ি--এই ছিল আমার জগৎ। তাই পাড়ার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তেমন পরিচয় ছিল না।স্বপ্নাও ছিল আমার অপরিচিতা।

  কিন্তু অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা স্বপ্নার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিল।ঘটনা না বলে দুর্ঘটনা বলাই সংগত।সেদিন ছিল শনিবার।স্কুল থেকে ফিরে পুকুরের ঘাটে পা ধুতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি পুকুরের জলে একটা মেয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। হাত-পা ছটফটিয়ে প্রাণপণে ভেসে থাকার চেষ্টা করছে মেয়েটি,কিন্তু কিছুতেই পাড়ে যেতে পারছে না। বুঝলাম মেয়েটি সাঁতার জানে না।অশুভ আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠলো আমার।আর কিছু দেরি হলে নির্ঘাৎ তলিয়ে যাবে মেয়েটি। আশেপাশে একটিও জনপ্রাণী নেই।গ্রীষ্মের দুপুরে ঘরে হয় তো সবাই বিশ্রাম নিচ্ছে।আর কিছু ভাবতে পারলাম না। ঝাঁপিয়ে পড়লাম জলে।তলায়মান মেয়েটিকে টেনে তুললাম পাড়ে।তারপর মেয়েটিকে মাটিতে উপুড় করে শুইয়ে পেটে চাপ দিতেই নাক-মুখ দিয়ে গল গল করে জল বেরোতে লাগলো। ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে এল মেয়েটির।ঠিক তখনই ওর মা ছুটে এলেন।আমার মুখ থেকে সব শুনে আমাকে আদর করে কাছে টেনে নিয়ে বললেন,তমি শুধু আজ আমার মেয়ের প্রাণ বাঁচাও নি বাবা,আমাদেরও বাঁচিয়েছো। স্বপ্না আমাদের একমাত্র মেয়ে,ওকে ছাড়া আমরা বাঁচতে পারতাম না।

  এরপর থেকে স্বপ্নার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।ওর বাবা-মাও আমাকে নিজের ছেলের মতোই ভালবাসতেন।

  সারাদিন আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতাম না। হয় আমাদের বাড়িতে না হয় ওদের বাড়িতে আমরা দুজনে খেলা করে বেড়াতাম।নিষ্পাপ দুটি ফুলের মতো পবিত্র সম্পর্কের সুমিষ্ট গন্ধে আমরা ভরিয়ে রাখতাম আমাদের ছোট্ট জগৎটাকে।
                                       
                           (২য় অংশ আগামীকাল)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৪২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অসাধারন মন ভরে গেল
  • ইব্রাহীম রাসেল ২৫/০৯/২০১৩
    দ্বিতীয় অংশের অপেক্ষায়.....
  • Înšigniã Āvî ২৫/০৯/২০১৩
    যতটা পড়লাম মনকে গভীরভাবে আঘাত দেয়
 
Quantcast