www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গল্প

"রাফির ডায়েরী"
রূপম আহমেদ

২৭/০৯/১৫ ইং
আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় আসলাম। কী ভয়াভহ অবস্থা! প্রথমদিন তো নাকি সারাদিনই জ্ঞান ছিল না। ঠিক মনে করতে পারছি না, হয়ত গত পরশু বা তার আগের রাতে, সময়টা শেষ রাত হবে, খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল। পাশে রাকিব ছিল, তাই প্রথমে খুব একটা ভয় পাই নি। এমনিতে তো রাতে ঘুম ভেঙে গেলে ভয়ে অস্থির হয়ে যাই। রাকিব পাশে আছে ভেবে একটু সাহস পাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হল বিছানায় আমি একা। হাত দিয়ে বুঝলাম বিছানায় রাকিব নেই। মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে আশেপাশে তাকালাম, রাকিব নেই। আমার বাথরুমের ভিতরের গিয়ে খুজলাম, ওইখানেও নেই। কোথায় গেছে চিন্তা করছি, এমন সময় বিছানায় চোখ পড়ল। ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম। রাকিব খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছে। এটা হতেই পারে না। আমার ছোট্ট একটা রুম। দরজার ছিটকিনি দেওয়া আছে, আর সিংগেল খাটে সাথে আরেকজন থাকলে তার অস্তিত্ব খুব ভালো করেই টের পাওয়া যায়। ভয় পেয়ে রাকিব কে ডাকা শুরু করলাম। ওর ঘুম খুব পাতলা হলেও অনেক ডাকাডাকি করেও উঠাতে পারলাম না। পাশের রুমে আব্বা আছে। ভয় পেলে আমি উনার বসে থাকি। আব্বার রুমে গিয়ে দেখি আব্বা নেই। বড় আপার রুমে গেলাম, আম্মা বা আপা কেউ ই নেই। ভয়টা সমস্ত শরীর গ্রাস করে নিল। শেষ ভরসা হিসেবে ইমির রুমে গিয়ে বুঝলাম পুরো বাড়িতেই কেউ নেই। ঠিক তখন মনে হল কেউ একজন আমাকে দেখছে। এই বুঝি আমার সামনে আসবে।কোন রকমে এক দৌড়ে রুমে আসি। আবারও নাটক। রুমটা ফাকা। রাকিব নেই। বাথরুম টা চেক করার অবস্থা ছিল না। মনে হচ্ছিল সেই অশরীরী কেউ টা আমাকে ধরে ফেলবে। আর কিছু মনে নেই।

২৮/০৯/২০১৫ ইং
ভয় টা এখনো যাচ্ছে না। এই বাড়িটা করার পর থেকেই আমার মনে হচ্ছিল কোন একটা ঝামেলা আছে এ বাড়িতে। যেদিন ছাদের ঢালাই দিল এর পরদিন, ছাদের এক কোনায় একটা ছোট পাখির ডানা, পালক আর কিছু চাল রাখা ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল কেউ একজন ক্ষতি চাচ্ছে। আর এগুলো দেখে কেউ কুফরি টুফরি জাতীয় কিছু একটা একটা করেছে। আমার একটা বন্ধুর সাথেও এমন হইছিল। সে অনেক দিন অসুস্থ ছিল।
তারপর অনেক কাহিনী করে ওকে ভালো করছে। আম্মা কে বলেছিলাম এই পাখির পালক আর চাল রাখার বেপারটা। আম্মা হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। আজো আবার বললাম, কিন্তু কানে নিল না। বলে কি, আমার মাথায় নাকি সারাদিন এসব ই ঘুরে। কিন্তু ওই রাতের ঘটনা টা তো নিজের চোখে দেখা।

২৯/০৯/১৫ ইং
আজ সকালে রাকিবের বাসায় গিয়েছিলাম।বাসায় পাই নি। ওকে আমার খুব দরকার। ওই রাতে নাকি রাকিব আমাদের বাসায় ই আসে নি। আর বড় আপার শাশুড়ি স্ট্রোক করাতে সবাই চলে গিয়েছিল হাসপাতালে। আমাকেও নাকি অনেক ডেকেছিল কিন্তু ঘুম ভাঙাতে পারে নি। কিন্তু আমার তো স্পষ্ট মনে আছে, রাকিব বাসায় আসলো আর বলল রাতে নাকি আমার সাথে থাকবে। মশারি টাঙানো নিয়ে দুজন ঝগড়াও করলাম। শুধু শেষ রাতের ঘটনাটা হয়তো হেলুসিনেশন বলে চালিয়ে দেওয়া যায় কিন্তু এত কিছু কিভাবে বিভ্রান্তি হয়!!

৩০/০৯/১৫ ইং
আজ নিহা খুব বাজে একটা কাজ করছে। এই জন্যই মেয়েমানুষ দেখতে ইচ্ছা করে না। সব কিছু তে ফাইজলামি। সকালে বাসায় আসছে আমাকে দেখতে। কোথায় আমার সাথে বসে একটু কথা বলবে, আমার টেনশন টা একটু কমাবে, তা না করে ইমির সাথে বসে আমার মজা উড়াচ্ছে। আমি নাকি ভিতুর ডিম, কারন ছাড়া ই ভয় পাই। মেজাজ টা সপ্তম আকাশে উঠে গেল। আর ধৈর্য ধরতে পারলাম না। ওকে দেখেই মনে চাচ্ছিল ছাদে গিয়ে ওর হাত টা ধরে কিছুক্ষণ বসে থাকতে। কিন্তু হল না। বাইরে গিয়ে কিছুক্ষন রিকশা করে ঘুরছি একা একা। চা সিগারেট খেলাম, তারপর মাথা টা ঠাণ্ডা হল।

০১/১০/১৫ ইং
রাকিবের সাথে দেখা হল আজ। ওকে পেয়ে ই জিজ্ঞেস করলাম ওই রাতের কথা। রাকিব বলল আবার কেন জানতে চাচ্ছি এসব কথা! আমি কিছু না বুঝে জানতে চাইলাম 'আবার মানে'? রাকিব যা বলল তার মানে এই যে আমি গতকাল রিকশা করে একা ঘুরি নি। রাস্তায় রাকিব কে পেয়ে ওকেও নিয়ে নিই। আর বারবার নাকি জিজ্ঞেস করছিলাম ওই রাতের বেপারে। আমি কিছুই বুঝলাম না ওর কথা শুনে। কি বলছে এসব। কি হচ্ছে এসব। আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি! রাকিব অনেক বার জিজ্ঞেস করলাম ও কি দুষ্টামি করছে কি না। শেষ মেষ ও রেগে বলল 'চল আসলামের দোকানে যাই, আমি তোর সাথে ছিলাম কিনা প্রমান হয়ে যাবে।' গেলাম আসলামের দোকানে। আসলাম বলল আমরা নাকি অনেকক্ষন ছিলাম ওর দোকানে। চা খাইছি আর অন্য দিনের চাইতে একটি বেশিই সিগারেট খাইছি। আর এটাও বলল রাকিবের সাথে নাকি অনেক চেঁচামেচি করছিলাম। এসব শুনার পর আর ঠিক থাকতে পারি নি। জ্ঞান ছিল না অনেক ক্ষন। আসলাম আর রাকিব মিলে নাকি বাসায় দিয়ে গিয়েছিল।

০৪/১০/১৫ ইং
আজ অফিস করলাম অনেকদিন পর। বাসায় অনেক মানা করছিল। নিহা তো এক চোট ঝগড়া করে নিয়েছে এই নিয়ে। যাইহোক, চাকরি টা টিকাতে হলে তো অফিস করতেই হবে। আর অফিসে এসে ভালোই লেগেছে। বস একটু কটু দৃষ্টিতে তাকালেও কিছু বলে নি। হয়তো কারো কাছ থেকে শুনেছে। কিছু না বললেও কাজ মাফ করে নি। এক সপ্তাহ ছুটি কাটানোর মজা বুঝিয়ে দিছে। তবে কাজ বেশি করলেও এই অফিস টা আমার ভালো লাগে। পরিবেশ টা দারুন। কলিগ গুলাও অনেক মিশুক। আর সাদিয়া কে দেখলে মনে হয় মেয়েটার বুঝি অদৃশ্য ডানা আছে। একটা মেয়ে এত সুন্দর হয় কিভাবে।

০৫/১০/১৫ ইং
আজ নিহা এসেছিল অফিসে। নিহার এই ছোট ছোট কয়েকটা বিষয় এত্ত বেশি লাগে.. কালো শাড়িতে ওকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল। জীবনে এই সব মুহূর্ত অল্প কিছু থাকলেই হয়।

০৬/১০/১৫ ইং
আজকাল একা থাকতে ভীষন ভয় লাগছে। এই বয়সে বলাও যায় না কাউকে সাথে থাকার জন্য। তবে রাতে পরিস্থিতি টা যখন একদম ভিন্ন হয়ে যায় তখন আর কোন প্রেস্টিজ কাজ করে না মাথায়। দম বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। গত রাতেও ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ভোর পর্যন্ত জেগে ছিলাম। আর কয়দিন যাবে এই ভাবে?

০৯/১০/১৫ ইং
গত কয়েকদিন যাবৎ বস আমার উপর সিন্দাবাদের ভূতের মত চড়াও হইছেন। খাটাইয়া মারছেন। জাস্ট সম্রাট ভাই হেল্প করাতে বেচে গেছি। বস কে মাঝে মাঝে মনে চায় ধাক্কা দিয়ে অফিসের ছাদ থেকে ফেলে দিই।

১০/১০/১৫ ইং
গতরাতে আবারো রাকিবকে দেখেছি। পাশেই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আমি কিছু বলি নি। বেপার টা আমি বুঝতে চাই।

১৬/১০/১৫ ইং
আজ রাকিব আছে সাথে। কাল সকালে কয়েকটা বন্ধু মিলে কক্সবাজার যাব ঘুরতে। সমুদ্র আমাকে আকর্ষণ করে সব সময়। মন টা একদম শান্ত করে দেয়। আর জীবন টা হয়ে যায় ঝামেলা মুক্ত।

২/১২/১৫ ইং
আজ অনেক দিন পর লিখছি। রাকিব মারা গেছে। সমুদ্রের পানিতে ভেসে গেছে রাকিব। ও আর রাতে ভয় দেখাতে আসবে না আমার কাছে। ভাইটার জন্য খুব খারাপ লাগছে। কি হতে কি হয়ে গেল! আমরা ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছি। একসাথে সব কাজ করেছি। তবে ওর বুঝা উচিত ছিল সব কাজ একসাথে করা যায় না। কিছু জিনিস একেবারেই ব্যক্তিগত।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৭৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/১০/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • পরে খুব ভাল লেগেছে।সুন্দর প্রকাশ।
  • আজাদ আলী ০২/১০/২০১৭
    সহমর্মীতা জানাই । ভালো থাকুন খোদার নিকট দোয়া করি।
  • সুন্দর লিখেছেন।আরো গোছালো লেখা হলে ভালো লাগতো।
    • রূপম আহমেদ ০১/১০/২০১৭
      গল্পটা ডায়েরি এর মত করে সাজানোর চেষ্টা করেছি। আর বেশির ভাগ মানুষের ডায়েরি ই অগোছালো থাকে। তাই গুছিয়ে লিখি নি। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আর তারপরেও কোন ত্রুটি চোখে লাগলে জানাবেন।
  • Tanju H ০১/১০/২০১৭
    সুন্দর লিখনী!!!
  • সাঁঝের তারা ০১/১০/২০১৭
    সহমর্মিতা ...
    • রূপম আহমেদ ০১/১০/২০১৭
      ভাই, এটা কিন্তু শুধুই একটা গল্প।
 
Quantcast