www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সেরা পুজো

রিন্টির খুব মজা । ওদের হাউসিং কমপ্লেক্সে এ ঠাকুর এসে গেছে । কমিউনিটি হল টা কে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । ওর সমস্ত ফ্রেন্ডস সারাদিনে বার বার ওখানে আসছে আর মন দিয়ে মা দুর্গার সাজের ফিনিসিং টাচ গুলো দেখছে । ওদের মায়েরাও যেমন মেক আপ করার পর অন্য রকম দেখতে হয়ে যায়, মা দূর্গাও ঠিক তেমনি । তবে দূর্গা মা আরও অনেক বেশি সুন্দর । শুধু যেন সব কাজ ভুলে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করে ! দুটো বড় বড় ঢাক নিয়ে ঢাকিরাও এসে গেছে । অন্যান্য বার শুধু কাকুরাই আসে, এবারে তাদের সঙ্গে তার মতো একটা মেয়ে আর আরও ছোট্ট একটা ছেলেও এসেছে । ওরা নাকি একটা কাকুর ছেলে মেয়ে । রিন্টি শুনেছে , বাপি মাম্মি কে বলছিল যে ঐ কাকুটার বউ নাকি সাপের কামড়ে মারা গেছে , বাড়িতে আর কেউ নেই বলে বাচ্চাগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে । তার মানে ওদের মা নেই !! মা ছাড়া কি করে কেউ থাকতে পারে টা তো ভাবতেই পারে না রিন্টি ! ওরা হল এর একধারে চুপ করে বসে থাকে, ওদের মতো খেলাধূলা করে না, গল্প করে না । রিন্টি গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “এই, তোর নাম কি রে ?আমার বন্ধু হবি ?” ওকে দেখে ছোট্ট ছেলেটা দিদিকে আঁকড়ে ধরলো, ও যেন কোনও মন্স্টার ! ভয়ে ভয়ে মেয়েটা বললো, “দুগ্‌গা” । “ ওমা , তোর নামও দূর্গা ? বেশ মজা, বেশ মজা, দূর্গাপুজোর সময় নতুন ফ্রেন্ড দূর্গা !” ,বলে হাতটা বাড়িয়ে দিলো রিন্টি । কিন্তু কি অবাক কাণ্ড ! দূর্গা তো তার বাড়ানো হাত ধরে হ্যান্ডসেক করলো না ! বরং ছোট্ট ভাইটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো । রিন্টি ওর পাশে বসে পড়লো , “দূর্গা, আমার নাম রিন্টি । ও কি তোর ভাই ? কি নাম ওর ?” ভয়ে ভয়ে দুগ্‌গা উত্তর দিল, “নারান ( বোধহয় নারায়ণের অপভ্রংশ হবে )” “তোর কয়টা জামা হয়েছে রে দূর্গা ? আমার না পুজোয় ৯টা জামা হয়েছে।” প্রশ্নটা শুনে ছখ জলে ভরে গেলো ছোট্ট দূর্গার ,মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বলল । রিন্টি তো অবাক , একটাও জামা হয়নি ! তাও আবার হয় নাকি ? ওর তো বাপিই ৪টে জামা দিয়েছে। এছাড়া মামা, মাসিমণি, কাকাই, দাদুন, পিসিমণি সবাই জামা দিয়েছে । আর এই দূর্গার একটাও জামা হয়নি !! যে জামাটা পড়ে আছে সেটাও তো খুব পুরনো, রংচটা । আর কিছু বলল না রিন্টি । মনটা খারাপ হয়ে গেছে ওর । বন্ধুদের সঙ্গে না খেলে সোজা নিজেদের ফ্ল্যাট এ চলে এলো । মাম্মি তো অবাক, অন্যদিন যে মেয়েকে ডাকতে পাঠাতে হয় আজ সে নিজেই চলে এলো ! রিন্টি চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো । মাম্মি বুঝলেন কিছু একটা হয়েছে । আস্তে আস্তে রিন্টির মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে আমার সোনামণির ?মন খারাপ কেন ? ঝগড়া হয়েছে কারুর সঙ্গে ?” স্নেহের স্পর্শে কেঁদে উঠে রিন্টি জড়িয়ে ধরলো ওর মাম্মিকে । ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “জানো , ওর পুজোয় একটাও জামা হয়নি ! ওর খুব কষ্ট মাম্মি !” “ কার সোনা ? কার কথা বলছো তুমি ?” “ দূর্গার” “ দূর্গা ? কে দূর্গা ?” “ঐ যে, যে মেয়েটা ঢাকি কাকুদের সঙ্গে এসেছে !” “ ওহ্‌ , তা তুই জানলি কি করে ?” “আমি আজ ওর সঙ্গে ফ্রেন্ডসিপ করতে গিয়েছিলাম মাম্মি, তখন ওকে জিজ্ঞেস করলাম ওর কটা জামা হয়েছে । ও কাঁদলো মাম্মি, ওর একটাও জামা হয়নি। ” মাম্মি রিন্টিকে জড়িয়ে ধরে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন । হঠাৎ রিন্টি নিজেকে ছাড়িয়ে নিল, যেন কোনও একটা উপায় খুঁজে পেয়েছে ! দৌড়ে গিয়ে আলমারি থেকে নিজের নতুন জামাগুলো বের করে আনল । “মাম্মি, আমার তো এতগুলো নতুন জামা হয়েছে । এর থেকে একটা দুটো জামা ওকে দিয়ে দেবে মাম্মি ? তাহলে ও ও পুজয় নতুন জামা পড়তে পারবে ! কিন্তু ওর ভাই ? তার কি হবে ?” ছোট্ট রিন্টির বড় মনের পরিচয় পেয়ে মাম্মি এর মন সন্তান গর্বে ভরে ওঠে । ও যদি পারে তিনি কেন পারবেন না ? মেয়েকে আশ্বস্ত করে তিনি বললেন , “ ভাবিস না রিন্টি, ওর ভাই এর জন্য আমি জামা কিনে আনবো।” আনন্দে রিন্টি হাততালি দিয়ে উঠলো । তার খুশীভরা মুখের দিকে তাকিয়ে রিন্টির মা ভাবলেন, এই পুজোই তাঁর জীবনের সেরা পুজো হতে চলেছে ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২১৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/১২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • শ্যামেন্দু ২৯/১২/২০১৫
    নিন্মলিখিত স্থান ঠিক করে নিলে পড়তে আরো ভাল লাগবে :
    ১। কেউ থাকতে পারে 'টা' তো > তা
    ২। প্রশ্নটা শুনে 'ছখ' জলে > চোখ

    ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
    ধন্যবাদ দাদা
    --- শ্যাম
  • নির্ঝর ২৬/১২/২০১৫
    সুন্দর
  • নূরুল ইসলাম ২৪/১২/২০১৫
    খুব সুন্দর ভাষার যাদু দিয়ে মানবতার গল্প সাজিয়েছেন।
    পড়ে ভাল লাগল। লেখার মান খুব ভাল।
    ধন্যবাদ।
  • অভিষেক মিত্র ২৪/১২/২০১৫
    ভালো লাগল।
 
Quantcast