www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আদিবাসী -২

বৃষ্টি থেমে গেছে। কুয়াশার মতো এক ধোঁয়াটে আবহে চারপাশ ঢাকা। ছয়জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ঘেরা এক সরু পথের কিনারায়। ওদের সামনে ছড়িয়ে আছে অচেনা এক জগৎ—সবুজে ঢাকা, কাদায় ভেজা, কিন্তু দৃষ্টিনন্দন।

নিশি নিচু স্বরে বলল,
— “এখানেই কি সেই গ্রাম? এতটা নির্জন কেন?”

রক্তিম ছায়ার মতো সরে এসে বলল,
— “মানুষের শব্দ এখানে পৌঁছায় না, নিশি। এ গ্রাম নিঃশব্দেই কথা বলে।”

গ্রামে ঢোকার আগেই এক প্রবীণ মানুষ এগিয়ে এল। পরনে ছেঁড়া হলেও পরিচ্ছন্ন এক কাপড়, হাতে বাঁশের লাঠি। তার চোখে ছিল প্রশ্ন, মুখে ছিল নীরবতা। ইজোমো তার ভাষায় কিছু বলল। তিনিই একমাত্র ওদের দলের যিনি এই পাহাড়ি ভাষা জানতেন। একটু পর লোকটি মাথা নাড়ল এবং বলল,
— “তিন রাত থাকতে পারো। কিন্তু একটুও বেশি নয়।”

গ্রামের নাম "আমিয়াপাড়া"। এখানে মানুষের সংখ্যা গোনা যায়—মাত্র তিরিশজন। ওদের কুঁড়েঘরগুলো মাটির উপর নয়, বাঁশের খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে। যেন সবকিছু জল ছুঁয়ে থাকলেও কখনো জলভেজা হয় না।

রাত্রে রান্নাঘরে বসে ওরা সবাই একসাথে বসেছিল। আগুনের আলোয় রুদ্র নিশির চোখে তাকিয়ে ছিল। বাইরে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ, আর দূর পাহাড় থেকে জলধারার মৃদু শব্দ শুনা যাচ্ছিল।

হঠাৎই রিক্তা বলল,
— “এই পাড়ায় কোনো শিশু নেই? আমি এখনো কারো কণ্ঠ শুনিনি।”

এক মুহূর্তে যেন আগুনের আঁচও ঠান্ডা হয়ে গেল। গ্রামের একজন বৃদ্ধা, যিনি তখন পাশে বসে ছিলেন, ধীরে বললেন,
— “শিশু ছিল... কিন্তু হারিয়ে গেছে। বছর তিনেক আগে।”

নিশির গলা শুকিয়ে এল। সে ফিসফিস করে বলল,
— “কোথায় গেল তারা?”

বৃদ্ধার চোখ চলে গেল দূরের অন্ধকারের দিকে।
— “পাহাড় জানে… আর যারা হারিয়েছে, তারাও জানে। তবে পাহাড় সব কথা বলে না।”

সবাই একসাথে চুপ করে গেল।

এ রাতে ঘুম এলো না কারো। রুদ্র নিশির কাঁধে মাথা রাখতেই নিশি বলল,
— “আমরা কি সত্যিই জানি, আমরা কোথায় এসেছি?”

রুদ্র জবাব দিল না। শুধুই আঁধারে জ্বলতে থাকা একটুকরো শঙ্খচিলের ডাক শোনা গেল—অজানা ভবিষ্যতের ইঙ্গিত যেন।


---
চলবে,,,,,,
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০৬/২০২৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ১৪/০৬/২০২৫
    চমৎকার লেখা
  • দারুণ
 
Quantcast