www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ষড়রিপুর ব্যবচ্ছেদ

প্রাণপ্রিয় বন্দুগন, 💝 জাত মত, ধর্ম নাহি ভেদাভেদ, দুনিয়া কর্মক্ষেত্রে নহে যেন ঐশী ভেদ। সত্য পথে যদি করো সাধনা আরাধনা , ভবে লভিবে তুমি তবে আল্লাহ্‌ ও পয়গাম্বরের ও দিদার করো তারই প্রার্থনা । 💝💞

💝💞🌺🌺💝💞🌺চলুন মানুষের মাঝে যে ৬ টি রিপু রয়েছে তা কি কি ও কোন রিপুর কি কাজ তা বিশদভাবে জেনে নিই ও নিজ নিজ জীবনে তা প্রয়োগ করি, নিজে সংশোধিত হই আর অপরকে ও সংশোধন করি:
ষড়রিপু হচ্ছে ৬টি রিপু যথাঃ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য্য।

১। কাম : কাম অর্থ , কামনা , বাসনা, যে কোন রূপ লালসা চরিতার্থ ও ভোগ বাসনা । রিপু গুলির মধ্যে, কাম রিপুই প্রধান, বিষয় চিন্তা করিতে করিতে, মানুষের তাহাতে আসক্তি জন্মে, আসক্তি হতে কামনা, অর্থাৎ বিষয় ভোগের অভিলাষ জন্মে, এই চাওয়া যখন চরম আকার ধারন করে , ঐ চরম অবস্থার নামই হচ্ছে কাম। প্রকৃত সংযমী হতে পারলে কামিয়াবি অর্জনে ফলদায়ক হয়। তা না হলে, জেনা, ব্যভিচারে রূপ নিবে ফলে হবে কবিরা গোনাহ।

২। ক্রোধ : ক্রোধ শব্দের আরেক নাম রাগ। রাগ দুই প্রকারঃ- রাগ এবং অনুরাগ। মানুষ ক্রোধ রিপুর বশবর্তী হয়ে অতিতুচ্ছ বিষয়ে লঙ্কাকান্ড ঘটায়, যার ফলশ্রতিতে নিজের জীবনে, সংসারে, সমাজে অশান্তির ঢেউ বয়ে চলে। তাই ক্রোধকে সংবরন করে ধৈর্য্য ধারণ করা জ্ঞানীর পরিচয়। অন্যদিকে কামনা, ভোগ বাসনা, পাইতে যাইয়া যখন মানুষ বাঁধা প্রাপ্ত হয়, তখন মনের বাসনা প্রতিহত হইলেই ক্রোধের উদ্রেক হয়। এটার নামই হচ্ছে ক্রোধ। কথায় আছে, ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’। বরং রেগে না গিয়ে রাগ বা ক্রোধকে সংবরন করতে পারাই বুদ্ধিমানের কাজ। যারা রাগের বশবর্তী হয়ে, জিদের বশে মনের বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের জয়ী হবার রেকর্ড খুব কমই রয়েছে। যারা জিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী তারাই কামীয়াব বা জয়ী হয়েছে।

৩। লোভ : অগাধ ধন সম্পদ জমানো, অবৈধ পথে অর্থ কামানো, অন্যায়ভাবে নারী পুরুষে মিল মহব্বত, ঘুষ ও সুদের উপার্জনে গাড়ি বাড়ি করা, এ সমস্ত যাবতীয় বিষয়ের প্রতি অতি মাত্রায় আকৃষ্ট হলেই তাহাকে লোভ বলে।

৪। মোহ : মোহ অর্থ অজ্ঞান। এই অজ্ঞানতা যখন, আমি ধনী, আমি জ্ঞানি, সকল স্থানে আমার ও আমিত্ব প্রকাশ পায়, তাহার নামই মোহ। মূলতঃ স্বপ্ন দর্শনের ন্যায় অবাস্তবকে বাস্তব মনে করা এবং ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য ক্ষণস্থায়ী মেকী বিষয়ের উপর ভুল ধারণা পোষন করে তার দিকে মোহিত হয়ে থাকার নাম মোহ।

৫। মদ : ‘মদ’ হলো দম্ভ, গর্ব, অহংকার। মানুষ সাধারণভাবে জীবন যাপন করার মত বিশেষ প্রয়োজনীয় বিষয় বস্তু সমুহ থাকা সত্ত্বেও অতৃপ্ত মন ও অতি উচ্চাভিলাষী হওয়ায় মনের মধ্যে যে অস্থিরতা, ‘আরও চাই আরও চাই’ ক্রিয়া ভাব তার নাম হচ্ছে মদ রিপু। মদ রিপু থেকে মুক্তি পেতে হলে সমাজের উচুতলার ধনী লোকের দিকে দৃষ্টিপাত না করে কেবল গরীব-দুঃখী ও শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধীদের দিকে গভীরভাবে মনযোগ নিবন্ধ করলে ক্রমে-ক্রমে মদরিপু থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, লোকেরা চায় যে, তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা জোড়া সুন্দর হোক। জবাবে রসুল (সাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। কিন্তু ‘অহংকার’ হলো ‘সত্যকে দম্ভের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা’। আসলে, মানুষের জন্য অহংকার করার মতো তেমন কিছু নেই। কেননা সে তার নিজের রোগ-শোক, বার্ধক্য-জরা কিছুকেই প্রতিরোধ করতে পারে না। শতবার ওষুধ খেলেও আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তার রোগ সারে না। শত চেষ্টায় ও টাকা পয়সা খরচে ও আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তার বিপদ দূরীভূত হয় না। এমতাবস্থায় সে একজন অসহায় ব্যক্তি ছাড়া কিছুই নয়। ফলে তার উচিত সর্বদা নিরঅহংকার ও বিনয়ী থাকা।

৬। মাৎসর্য : ‘মাৎসর্য’ হলো ঈর্ষা, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা। এই অহমিকা যখন পরের উন্নতি দেখে সংকুচিত হয়, পরের ভাল সহ্য করতে না পারে, পরের দুঃখে আনন্দিত হয়, মনে মনে অপরের অনিষ্ট চিন্তা করে, পরের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত হয়। তাহার নামই মাৎসর্য। মাৎসর্য রিপুয় বশীভূত ব্যক্তি অতি আপন জনের ভালও সহ্য করতে পারে না, হিংসায় ফেটে যায় এবং তার ক্ষতি সাধনে দ্বিধাবোধ করে না। মাৎসর্য্য রিপুর বশবর্তী মানুষের ধর্মে কর্মে বিশ্বাস থাকে না এবং সে জীবনে কোন কাজে দীর্ঘস্থায়ী সফলতা পায় না।


আল্লাহ্ বিভিন্ন শ্রেণীর মাখলুক (আল্লাহ্র সৃষ্ট জীব-জগৎ) সৃষ্টি করেছেনঃ
প্রথমতঃ, ফেরেশতা- এঁদের তিনি বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন,কিন্তু কাম-স্পৃহা দেননি।
দ্বিতীয়তঃ, জীবজন্তু- এদের তিনি কাম-স্পৃহা দিয়েছেন, কিন্তু বিবেক-বুদ্ধি দেননি।
তৃতীয়তঃ, মানুষ- এদের তিনি স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন এবং বিবেক-বুদ্ধি ও কামস্পৃহা সবই দিয়েছেন। তাই মানুষের ভিতর যারা স্বীয় বিবেক-বুদ্ধি শক্তিশালী ও জাগ্রত করে কামস্পৃহা কে পরাভূত করতে পেরেছেন তাহারা ফেরেস্তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ। কিন্তু যাদের বিবেকবুদ্ধি কাম-রিপুর কাছে পরাভূত তাহারা জীব-জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট।

-->>> উৎসঃ সত্য পথের সিড়ি , পাতা নং ১৮৭ - ১৮৯। লিখেছেনঃ শাহ্‌ মোঃ রেজাউল আবেদীন।💝💞🌺🌺💝💞🌺
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৮৩৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৫/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অসাধারণ সুন্দর লেখনী।
    তথ্যবহুল এই রচনার জন্য আপনাকে অনেক অভিনন্দন জানাই।
    ভাল থাকুন সর্বক্ষণ।
    ধন্যবাদ।
    • রেজাউল আবেদীন ২৬/০৫/২০১৮
      মুল্যবান সময় দিয়ে কয়েক চরন লিখে মন্তব্যের জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আর বিশেষ করে দোয়ার জন্যে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। ভাল থাকুন নিরন্তর। আমিন
 
Quantcast