www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ক্যামোফ্লাজ(Camouflage)-১

হুইস্কির বোতলে চুমুক দিতে দিতে তখনও জেনারেল স্টিফেনস মেতে ছিলেন পার্টিতে। পার্সোনাল সেলিব্রেশন, এতদিন পর এক বিশাল অর্জন। এটার জন্য তিনি কি করেন নি! রাজনৈতিক কারণেই মূলত তার প্রোমোশন টা আটকে ছিল। যদিও সে ক্ষমতাশীন দলে ছিলেন, দলের হঠাৎ পতন তার সবকিছু আটকে রেখেছিল। বিরোধী দল থেকে তার কাছে অফার আসল সে যদি তার পক্ষের সবাইকে আটকে দেন তাহলে প্রোমোশন নিশ্চিত। ক্ষমতালোভী স্টিফেনস এতবড় সুযোগ হাতছাড়া করেন নি। হঠাৎ এক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার পক্ষের সৈনিকদের তিনি আটকে দিলেন। আর কদিন বাদেই তাই তাকে জেনারেল পদ দেওয়া হল। খবরের কাগজ আর টিভি চ্যানেল গুলো তে একটাই খবর-"স্টিফেনস একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক।" তারপর তার দেশের প্রতি অবদান তুলে ধরা। ক্ষমতালোভী এক মানুষের কাছে থেকে এই ক্ষুদ্র প্রতিবাদী পক্ষ অন্তত সেনা অভ্যুত্থান আশা করেছিল নি। তাই তাকে শেষবারের মত হলেও তারা বিশ্বাস করে সামনে আগাচ্ছিল।
সবাই স্টিফেনস কে অভ্যর্থনা জানাতে ব্যস্ত। ক্যাপ্টেন রিচার্ড তো স্টিফেনস এর নামে দুটো গানের লাইন উৎসর্গ করলেন। রিচার্ড আর স্টিফেনস একই সময়ে যোগদান করলেও চরিত্রহীনতা আর অসততার জন্য রিচার্ড পড়ে ছিল ক্যাপ্টেন র‍্যাংকেই। একবার ক্যাপ্টেন থেকে প্রোমোশন পেয়ে মেজর পদে গেলেও যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে আবার তাকে ডিমোট করে ক্যাপ্টেনে রাখা হয়। এ নিয়ে তার কোনো সংশয় নেই। কারণ পুরো সেনাবাহিনী জুড়ে যদি হাতে গোণা কয়েকজন পার্ফেক্ট শুটার থাকে তার মধ্যে সবার উপরে রিচার্ড। কথিত আছে রিচার্ডের আকাশে করা ফাকা গুলিও নাকি পাখির গায়ে লাগে।
সবাই যখন নাচ আর গানে মেতে আছে তখন বাড়ির সামনের দরজা দিয়ে ছোট একটা রিমোট কন্ট্রোল কার প্রবেশ করে। সিকিউরিটি গার্ডদের চোখ এড়িয়ে সেটি চলে যায় একদম বাসার ভিতরে। বিশাল বাড়ি, কিন্তু মানুষ শুধু একজন। সারাজীবন সেনাবাহিনীর পিছনে উৎসর্গ করায় বিয়েও করেন নি স্টিফেনস। পুরো বাড়ি রিমোট কন্ট্রোল কার টা ঘুরতে থাকে। গাড়ির সাথে ছোট্ট একটা ক্যামেরা; মাথা দিয়ে বের হয়ে আছে সাবমেরিন এর মত। ঘুরতে ঘুরতে সেটি চলে গেল স্টিফেনস এর রুমে। সারা দেয়াল জুড়ে মেডেল আর ছবি টাঙানো। খাটের কাছে গিয়ে সেটি একটা ডিভাইস লেগে দিল খাটের সাথে। এভাবে সারা রুমে এখানে সেখানে আরো কিছু ডিভাইস লেগে দিল। বাথটবের এক সাইডে সেটি আরেকটা ডিভাইস লাগিয়ে ওয়াশরুমের জানালা বেয়ে নিচে নেমে আসল। তারপর অন্ধকারে খুব সাবধানে সেটি বাড়ির প্রাচীর টপকে রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কালো মার্সিডিসের কাছে এসে থেমে গেল। মার্সিডিসে বসে ছিলেন একজন লোক, তার মাথায় শার্লক হোমস এর হ্যাট, চোখে ব্ল্যাক গগলস আর গায়ে চাদর মুড়ানো। তিনি গাড়িটা নিয়ে বাসার পিছনের দিকে দিয়ে চলে গেলেন
রাত তখন পৌণে একটা। পার্টির সমাপনী বক্তব্য শেষ করে রিচার্ড আর স্টিফেনস এসে বসলেন ড্রয়িং রুমটাতে। স্টিফেনস রিচার্ডের হাত ধরে চুমু খেয়ে বললেন-"আজ শুধু তোমার জন্য আমি এইখানে বন্ধু"
- তুমি পরিশ্রম করেছ তাই এই পজিশনে এসেছ।
- তুমি যদি খুনটা না করতে..........
- চুপ কর, বাতাসেরও কান আছে। আমার টাকাটা কবে দিচ্ছ সেটা বল।
- পাবে, কাল পরশুর মধ্যেই পেয়ে যাবে।
- দেখো, তোমার সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমি টাকা নিতাম না। কিন্তু আমার আর এই জায়গায় থাকতে ভাল লাগছে না। আমি অন্য দেশে যেয়ে বিজনেস শুরু করব ক্যাসিনোর। এর জন্যই আমি টাকা নিচ্ছি তোমার থেকে.......
- আমি বুঝতে পেরেছি। তুমি যে কাজটা করেছ সেটা অনেক ইম্পর্ট্যান্ট ছিল আমার জন্য।
- বাদ দাও এসব। আমি বাসায় ফিরতে চাই।
- থেকে যাও আজ এখানে, অনেক বেজে গেছে। তাছাড়াও তোমার শরীর ভাল নেই। তুমি একটু বেশিই খেয়েছ আজ রাতে।
- খাব না! আমার বন্ধুরা কোথায় চলে যাচ্ছে আর আমি কোথায় পড়ে আছি!
রিচার্ড বের হয়ে যায় রুম থেকে। স্টিফেনস তাকিয়ে আছে রিচার্ডের দিকে। সে তার রুমে চলে যায়। এক তরুনী আসে তার শরীর ম্যাসাজ করে দিতে। কিন্তু সে ফিরায়ে দেয়। অনেককিছু পেয়েও যেন কি একটা অপূর্ণ রয়ে গেছে; সে সেটা ধরতে পারছে না। বাথটবে যেয়ে সে চিন্তা করছে তার অতীত নিয়ে। সময় কত দ্রুত যায়! এইতো সেদিন সে বাবা মা থেকে দূরে এসে জয়েন করল। এলিসাকেও ছেড়ে আসতে হয়েছে তাকে। মেয়েটাকে সে অনেক বেশি ভালবাসত। আসার সময় এলিসা তার হাত ধরে বলেছিল-"প্রতিদিন চিঠি লিখবা আমায়" সে প্রতিদিনই চিঠি লিখেছিল, কিন্তু এত কড়াকড়ির ভিতরে আর চিঠিগুলো পৌঁছানো হয় নি। এরই মাঝে তার বাবা মা মারা গেলেন একটা বোমা বিস্ফোরণে। তখন গ্রামে গিয়ে শুনলেন যে এলিসার বিয়ে হয়ে গেছে। একই সাথে দুইটা ধাক্কা তিনি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন নি। তখন থেকেই তিনি ডেস্পারেট হয়ে গেছেন লাইফ নিয়ে। প্রতিটা মিশনে তিনি ফ্রন্টে এটাক দিয়েছেন, যে জায়গাগুলোতে কেও সাহস পায় নি একা সে জায়গাগুলোতে তিনি একাই কভার দিয়েছেন। এসব তাকে আরো উপরে নিয়ে গিয়েছে। এলিসার ধাক্কা টা তিনি নিতে পারেন নি। তাই ইচ্ছা করেই বিয়ে করেন নি। কিন্তু ওয়েস্টার্ন এর ট্র‍্যাডিশন অনুযায়ী মেয়েদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক তার কাছে নরমাল ছিল। বাথটবের হালকা গরম পানিতে থেকে যখন স্টিফেনস তার অতীত নিয়ে চিন্তা করছিল, ঠিক তখন কোথায় থেকে যেন ভেসে আসল-"Time to revenge my friend. Time to destroy the camouflages..........."
স্টিফেনস এটা শুনে লাফ দিয়ে উঠে। তার নাকে মুখে পানি ঢুকে। তাড়াহুড়ো করে নামতে যেয়ে পা পিছলে তার বাম হাতে লাগে। তিনি ওয়াশরুমে পড়ে যান। কোনোরকমে নিজেকে সামলে রুমে এসে হাপাতে থাকেন। এটা তিনি কি শুনলেন; তার চেয়ে বড় কথা তিনি কার গলায় শুনলেন! তিনি নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছেন না। এটা কখনোই হতে পারে না; মৃত মানুষ কখনো কথা বলতে পারে না।
আর শব্দ আসছে না ওয়াশরুম থেকে। তিনি ধরে নিলেন এটা তার মনের ভুল। একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে তিনি ঘুমায়ে গেলেন। তার ঘুম ভাঙ্গল আবার সেই টেপ রেকর্ডারে সাউন্ডে। তিনি চিতকার দিয়ে উঠলেন। ঠিক তখনই তার ল্যান্ড লাইন বেজে উঠল। তিনি ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসল-"স্যার, রিচার্ড মারা গেছেন কার এক্সিডেন্টে। তার গাড়ি একটা বনের মধ্যে পাওয়া গেছে দুমড়ানো মোচড়ানো অবস্থায়। কিন্তু সবচেয়ে অবাক করা বিষয় তার গাড়ির সিডি প্লেয়ারে একটা টেপ রেকর্ডার বাজছিল তখন। সেটা হচ্ছে- Time to revenge my friend. Time to destroy the camouflages..........."
স্টিফেনস ফোনটা ধরে আছে কানে, কোনো কথা বলতে পারছেন না। এদিকে তার রুমের চারপাশ থেকে রেকর্ডার বাজছেই। ধীরে ধীরে যেন সাউন্ড টা বাড়ছে। তার মাথা ধরে আসছে, মাথা ঘুরাচ্ছে। তিনি মেঝেতে পড়ে গেলেন। এরপর তার আর কোনোকিছু মনে নেই।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৫২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/১১/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মেহেদি হাসান ২৫/১১/২০১৯
    দারুন
  • ভালো লাগলো।
    কিন্তু মূলগল্প কার লেখা?
  • নাইস।
    দারুণ লেখা। এভাবেই চালিয়ে যান।
  • অসম্ভব ভাল লাগল এই উত্তেজনাকর গল্পটা পড়ে। আমি আশা করছি এই গল্পটা আরো বড় হবে একে বর্ধিত করে ডিটেকটিভ টাইপ বা ক্রিমিনাল টাইপ উপন্যাস করা হোক। শুভ কামনা প্রিয় লেখক সাহেব
 
Quantcast