www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সকল ক্ষমতার উৎস ও জাতির পিতা বিতর্ক

এই সেদিন হুমায়ন আজাদ স্যারের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আমি ফেসবুকে তাঁর ছবি সহ একটা লেখা দিয়েছিলাম।আগে দেই লেখাটা হুবহু তুলে ধরছি...

"নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে।পাক সার জামিন সাদ বাদ-আমি যখন কৈশরে,শুনেছিলাম বই টা কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।কৈশরে স্বভাবিক যৌন জিজ্ঞাসা আর নিষিদ্ধের প্রতি আগ্রহ থেকেই বইটা যোগাড় করি...কোন এক বড় ভাই আমাকে বলেছিল যে ঐ বই এ "ঐসব" কথা আছে!
নিছক নিষিদ্ধ জ্ঞান লাভের বাসনায় আমি যে বইটা পড়া শুরু করেছিলাম,বই পড়া শেষে সেটা আমার মধ্যে একটা পরিবর্তন করে দিল।জংগি,মৌলবাদ,তাদের আচরণ-এসব নিয়ে একটা ধারনা হল,আরো জানার আগ্রহ তৈরি হল।সেই সাথে যে মানুষ টি সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি হল তিনি হলেন বইটির লেখক অধ্যাপক হুমায়ন আজাদ।
একদিন শুনলাম তিনি মৌলবাদিদের আক্রমনের শিকার।উনি বেঁচে আছেন,তবে টেলিভিশনে ওনাকে দেখে সেই সব মৌলবাদিদের প্রতি একটা আক্রোশ তৈরি হল।এরপর একদিন শুনলাম তিনি নেই...
দিনটি ছিল আজকের দিন,২০০৪ সালের ১২ আগস্ট।
স্যার বলবনা আপনি শান্তিতে থাকুন,কারণ আপনি শান্তিতে নেই...
যতদিন এদেশে মৌল্বাদি,ধর্ম ব্যবসায়ি দের আস্ফালন না থামবে তত দিন আপনি শান্তি পাবেন না।"

তো আমার এই পোস্টে একদল 'ধার্মিক' গলাবাজি শুরু করে দিল আমার 'নাস্তিক প্রীতি' দেখে।আমিও তাদের কমেন্টের জবাব দিয়ে যাচ্ছিলাম।এক পর্যায়ে একজন প্রশ্ন করে,"আচ্ছা রাফি একটা সহজ প্রশ্ন করি,এক কথায় উত্তর দিবা।সকল ক্ষমতার উৎস কে?"
আমি উত্তর দিলাম,
"আমি যদি ধর্মের দৃষ্টিতে দেখি তাহলে একজন মুসলমান হিসেবে আমি বলব সকল ক্ষমতার মালিক আল্লহ।আবার দেশের একজন নাগরিক হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।তার মধ্যে হিন্দু,মুসলমান,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান-সবাই আছে।"

এর পরে প্রশ্নকর্তা আর কোন মন্তব্য করেন নি,হয়তোবা আমার মত 'নাস্তিক' এর সাথে কথা বলে নিজের ঈমানের ক্ষতি করতে চাননি।

এখন ও একদল প্রতিক্রিয়াশীল,ধর্মান্ধ মানুষ অহেতুক এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।দেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।এই কথাটির অর্থ এই না যে জনগণ সৃষ্টিকর্তার থেকেও শক্তিশালী,বরং এই কথাটির অর্থ হল দেশের শাসক শ্রেণী জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে,জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।রাষ্ট্র জনগণ কে সব রকম সুবিধা দিতে বাধ্য থাকবে।

মুসলমান দের বিশ্বাস অনুযায়ি আল্লাহ সর্ব-শক্তিমান,সব ক্ষমতার মালিক।হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ি ব্রহ্মা,ভগবান সব ক্ষমতার মালিক।বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন নিজের মধ্যেই সব ক্ষমতা লুকিয়ে আছে,ধ্যানের মাধ্যমে তাকে জাগ্রত করা যায়।খ্রিস্টান দের বিশ্বাস ঈশ্বর(GOD) সকল ক্ষমতার মালিক।এ সব গুলোই হল ধর্মীয় বিশ্বাস।এর সাথে রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই।

এখন আমাদের দেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও এখানে অন্যান্য সব ধর্মাবলম্বীরাই বাস করেন এবং দেশের সংবিধান তাদের সবাইকে সমান অধিকার প্রদানের স্বীকৃতি দিয়েছে।অর্থাৎ একজন মুসলমান হিসেবে আমি যতটুকু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করব,একজন হিন্দু অথবা একজন খ্রীস্টান ভাই ও সেই সুযোগ পাবেন।তাহলে আমি একজন মুসলমান হিসেবে যেমন আল্লাহ কে সব ক্ষমতার উৎস বলে মানি,একজন হিন্দু ও তেমনি ভগবান কে সব ক্ষমতার মালিক বলে মানেন।এখন আমি যদি বলি আমি সংখ্যা গরিষ্ট বলে আমার বিশ্বাস টাকেই স্বীকৃতি দিতে হবে,আমার বিশ্বাস টাকেই সংবিধানে স্থান দিতে হবে-তাহলে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত হলনা।

যার যার ধর্মীয় বিশ্বাস তার তার কাছে।সে সেই বিশ্বাস কে লালন করবে,সেই অনুযায়ী জীবন পালন করবে।কিন্তু সেই বিশ্বাস সবার উপর চাপিয়ে দেবার অধিকার কারো নেই।আমার বিশ্বাস একজন হিন্দু ভাই বা বোন কেন মেনে নেবেন?রাষ্ট্রের কথা যখন আসবে,দেশের কথা যখন আসবে,তখন অবশ্যই বলা হবে সকল ক্ষমতার মালিক 'জনগণ'।

আমি যদি বলি যে-সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ,তার মানে এই না যে আমি আমার ধর্ম বিশ্বাস কে অসম্মান করছি।যারা এই সহজ বিষয় টা গুলিয়ে ফেলে তাদের চিন্তা করার ক্ষমতা যে কম তাতো বুঝাই যায়।

আরো একটা বিষয় নিয়ে এই একই শ্রেনীর মানুষ কথা বলে-জাতির পিতা।
আমাদের জাতির পিতা কে?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
কিন্তু এই শ্রেণীর লোক একথা শুনলেই বলে ওঠে-না,আমাদের জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ)।

এখানে "আমাদের" শব্দটার উপর নির্ভর করবে যে উত্তর টা কি হবে।'আমাদের' বলতে যদি দেশের জনগণ অথবা 'জাতি' বলতে যদি আমরা বাঙালি জাতি বা বাংলাদেশি বুঝিয়ে থাকি তাহলে নিঃসন্দেহে উত্তর টা হবে বঙ্গবন্ধু।
আর 'জাতি' অর্থে যদি আমি মুসলমান জাতি বুঝাই তাহলে সেটা হবে ইব্রাহিম(আ)।

আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : এই কথাটা শুনলেই কিছু স্বাধীনতা বিরোধী কুত্তাপাগল হয়ে যায়। তারা বলে, মুসলমান জাতির পিতা ইবরাহিম। তা ধর্মের হিসেবে তিনি, জাতিসত্তার হিসেবে না। আর ধর্মের দিক দিয়েই আরো দু-দুটো বড় জাতির পিতাও তিনিই : ইহুদি ও খ্রিষ্টান।

জাতিসত্তার রাষ্ট্রীয় বিচারে শেখ মুজিবের স্থানে ইবরাহিমকে বসানোর চেষ্টা করার কোনো মানে নেই। সেটা করলে কারো সম্মানই রক্ষা পায় না, বরং কমে।

বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রেরই জাতির পিতা থাকে। খ্রিষ্টান, ইহুদি বা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোরও থাকে। মুসলিম, খ্রিষ্টান বা ইহুদিরাও ইবরাহিমকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতির পিতা বলে না। কতিপয় মুসলিম রাষ্ট্র ও তার জাতির পিতাদের নাম -

পাকিস্তান - জিন্নাহ্
আফগানিস্তান - দুররানি
সৌদি আরব - ইবনে সৌদ
ইন্দোনেশিয়া - সুকর্ণ
ইরান - সাইরাস দ্য গ্রেট
মালয়শিয়া - টুংকু আবদুল রহমান
তুর্কি - মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক... ইত্যাদি

প্রায় সব রাষ্ট্রই নিজ নিজ জাতির জনককে চিনে নেয় স্বীয় রাষ্ট্রের মুক্তিতে কার অবদান ও ত্যাগ সবচেয়ে অগ্রগণ্য সেই বিবেচনায়।

তো এখানে অবান্তরভাবে ধর্মকে টেনে-হেঁচড়ে এনে নিজ জাতির জনককেই খাটো করার পাঁয়তারা করা শুধু মূর্খতাই নয়, শাস্তিযোগ্য অপরাধও।

তাই এই দুটো বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা মূর্খতার পরিচায়ক।
তবে একটা বিষয় হল-
অন্ধের চিকিৎসা তবু করা যায় কিন্তু যে জোড় করে চোখ বন্ধ করে রাখে তাকে কিছু দেখানো যায় না।

আজ জাতির পিতার মৃত্যুদিন বলব না,জাতির পিতার পবিত্র দেহ টি এই দিন ঘাতকেরা পৃথীবি থেকে সরিয়ে দিয়েছিল কিন্তু তিনি তো বেঁচে আছেন,থাকবেন-যত দিন এই দেশ থাকবে।আজো তাঁর বজ্রকন্ঠ আমাদের শিহরিত করে।তাঁকে আপনজন মনে হয়।মনে হয় তিনি কত যুগের আত্মার আত্মীয়।নিন্দুক রা যাই বলুক তিনি থাকবেন আজীবন।

জয় বাংলা...জয় বঙ্গবন্ধু
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ১৪৬২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০৮/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই লেখকে। এতো সুন্দর করে এতো জটিল বিষয় কে খুবই সহজ সরল ভাষায় তুলে ধরার জন্য।আপনার এই লেখা থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে।তবে আমি নাস্তিকতাবাদে বিশ্বাসী নই।আমি একজন ধর্ম প্রারাণ মুসলমান আপনার লেখা সমর্থন করি।
 
Quantcast