www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রাত পোহাবার আগে ১৩

মাসুম মুক্তাকে নিয়ে ঘরে গিয়ে ফ্যানটা ছেড়ে দিলো। ফ্যান চলছে। মুন্নি চলে গেলো খাবার পরিবেশন করতে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরলো মম। দেরির কারণ জানালো সে, রাস্তায় জ্যাম। সকলে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলো। কিন্তু কিছু খেতে পারছে না মুন্নি। অজানা আতংকে সংকুচিত তার পৃথিবী। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্ত। কিছু ভালো লাগছে না তার। বার বার মনে হচ্ছে, চেয়ারম্যানের ছেলের বলা কথাগুলো। ও দিকে কলেজের ছেলে রাহাত, ওর জ্বালাতনে কলেজে টিকা মুশকিল। মহল্লার ছেলে বারিক, অমিত ওরা লেগেই থাকে সক্রিয় ভাবে। মুন্নির মনে হয় সে যেন তার আত্মসত্তাকে হারিয়ে তলিয়ে যাচ্ছে অতল অন্ধকারে। চারদিকে শৃগাল-কুকুরের হিংস্র থাবা। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর মেলে না তার। ঝিম ঝিম করতে থাকে মাথাটা। চোঁখ থেকে বেরিয়ে আসতে চায় কষ্টের লোনা জল। অবশ হয়ে আসে সমস্ত শরীর। পরক্ষণেই সজাগ হয় মুন্নি। মনের ভাবকে আড়াল করে অকারণে কথা বলে,“মম, তোর কলেজ চলছে কেমন?”
মম তাকায় মুন্নির দিকে। বলে,“হ্যাঁ, ভালো চলছে। সামনে আমাদের সিনিয়রদের পরীক্ষা। তাই ক’দিন বাদে আর ক্লাস হবে না।”
মম বুঝতে পারে মুন্নির পরিবর্তন। জানতে চাই,“আপু, তোমার কী হয়েছে? তোমাকে যেন অস্বাভাবিক লাগছে?
চমকে উঠে মুন্নি। তবু সে ভাব গোপন করে বলে,“না। তেমন কিছু না। শরীরটা ভালো লাগছে না তাই।”
মাসুম বললো,“কী সমস্যা তোর?”
ঃ না। তেমন কিছু না। মাথাটা ধরেছে একটু।
ঃ মুন্নি, তুই এক কাজ কর, বিকেলে মুক্তাকে নিয়ে একবার ডাক্তার মামার বাসায় যা। মুক্তাটা কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। খেতেও চায় না। মাঝে মাঝেই কাশিটা দেখা দেয়। ডাক্তার মামাকে বলে ওর একটা ভালো প্রেসক্রিপশন্স নিস। আর নিজের জন্য ঔষুধ নিবি।
ঃ না ভাইয়া, আমি যাবো না। আমার ঔষুধ লাগবে না। তুমি একবার মুত্তাকে নিয়ে যাও।
মাসুম কিছু বললো না। খাওয়া শেষ করে উঠে গেলো। মম’র মনে হচ্ছে, মুন্নিটা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।

সকাল থেকেই শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। দক্ষিণা হাওয়া বইছে। মাঝে মাঝেই সূর্য হারিয়ে যাচ্ছে মেঘের অলক্ষে।
আজ কলেজে যায়নি কেউ। মাসুম অফিস যাবার আগে মমকে বললো,“মম, মুক্তাকে দেখিস। মুন্নির প্রতি নজর রাখিস। পারলে ওর মাথায় জলপট্টি দিস। আর আমি একবার ডাক্তার মামার বাসায় যাবো।”
মুন্নির জ্বরটা বেশ বেড়েছে। তবুও যেন জানালা দিয়ে কি দেখার চেষ্টা করছে বার বার। মম মুন্নির চোঁখে-মুখে দেখতে পায় কঠিন ভয়ের উৎকণ্ঠা। কিন্তু প্রশ্ন করে উত্তর পায় না কিছু। তবু মমের মনে হয় মুন্নির কি যেন হয়েছে।
মুক্তার এ বন্দি দশা আর ভালো লাগে না। তার ইচ্ছে করে, স্কুল ফাঁকির দিনগুলোর মতো সারাদিন ছুটোছুটি করে। হইচই করে মাতিয়ে রাখে সারাবাড়ি। সে ভাবে, তার যদি একটা ছোট্ট বন্ধু থাকতো কতো না মজা হতো। ঘুড়ি বানিয়ে ছাদে উড়িয়ে দেওয়া যেতো। কাগজের বিমান বানিয়ে... উহু ভাবতেই ভালো লাগে।
পাশের বাসার ঝুনুর ছোট্ট মামা আর ঝুনু তো মাঝে মাঝেই তাই করে। ঝুনুর কথা মনে হতেই ছাদের দিকে পা বাড়ায় মুক্তা। মম, ব্যস্ত মুন্নির জ্বর তাই তার বাঁধা নেই। মুক্তা ছাদে গিয়ে কাউকে দেখতে পায় না। তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। মনে হয় আজ তো ছুটির দিন না অসুস্থার কারণে শুধু সে তো স্কুলে যায়নি। ওরা নিশ্চয় স্কুলে গেছে। মুক্তা দাঁড়িয়ে থাকে বিষন্ন মনে। শীত লাগছে তার তবু দাঁড়িয়ে থাকে। ঝুনুদের ছাদে তাকিয়ে। একটা লোকের দেখায় চেয়ে থাকে মুক্তা। এই সেই লোক মম’র বন্ধু অন্তু। অনেকগুলো কাপড় ধুয়ে দু’হাতে করে এগিয়ে যাচ্ছে। মুক্তা দেখছে লোকটাকে। কিন্তু লোকটা এখনো দেখেনি মুক্তাকে। গুণ গুণ করে গান গাইছে অন্তু। আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলো। ভালো লাগছে মুক্তার ভরাট কন্ঠের এ মিষ্টি গান শুনতে। চুপ করে শুনছে সে। লোকটা অনুভব করলো, তার কাধে কি একটা কামড় দিলো।
উঃ। বলে কাপড়সহ হাত দিয়ে গলার লাল পিঁপড়েটাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। না, হচ্ছে না। কামড় দিয়ে চিকটে ধরে আছে পিঁপড়েটা। আবার নিচে সুড়সুড়ি দিচ্ছে আর একটা পিঁপড়ে। আতকে উঠলো অন্তু। হাত দিয়ে নিচে একটা ঘোষা দিতেই লুঙ্গিটা খুলে গেলো। পড়ে গেলো সেটা নিচে। খিল খিল করে হেসে ফেললো মুক্তা। ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো অন্তু। উপরে মুক্তাকে দেখতে পেয়েই দ্রুত হাতে তার কাপড় রেখে ঝটপট লুঙ্গিটা পরে নিলো। ভাগ্যিস নিচে হাফ প্যান্ট পরা ছিলো তাই রক্ষে পেলো। মুক্তা তখনো হাসছে। হাসিতে লুটিয়ে পড়ছে ছোট্ট মেয়েটা। এদিকে অন্তু চেয়ে আছে মুক্তার দিকে। নিরপায় অন্তু উপায় না পেয়ে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাসতে লাগলো। কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলো। অন্তু মুক্তার কাছে এসে ওপার থেকে বললো,“মুক্তা মনি, তুমি এখানে। স্কুলে যাওনি?”
মুক্তা তার হাসি থামিয়ে বললো,“আমি অসুস্থ।”
ঃ ও অসুস্থ তাই স্কুলে যায় নি? তোমার মম আপুও যায়নি বুঝি?
ঃ না।
অন্তু অল্পক্ষণে উদাস হলো। আজ সকাল থেকে একবারো দেখা পায়নি সে মম’র। মম একবারো যায়নি গোলাপ গাছের নিচে। মুক্তা বললো,“তুমি অফিসে যাওনি কেন?”
অন্তু হাসলো। বললো,“আমার তো কেউ নেই। তাই ভাবছিলাম তোমাদের দেখতে যাবো। এই জন্য অফিসে গেলাম না। এখন কেমন আছে তোমার বড় আপু।”
ঃ ভালো।
ঃতাহলে তুমি এসো একবার। কেমন ।বলেই চলে গেলো মুক্তা।


চলেবই
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৫২৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast