www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রাত পোহাবার আগে ১২

[নেটওয়ার্ক সমস্যায় বিঘ্ন ঘটায়, প্রকাশে বিলম্বর জন্য দুঃখিত]

ক’দিন থেকে ছেলেটা পিছু লেগেছে মুন্নির। যেখানে যায় সেখানেই ছেলেটাকে দেখতে পায় তার পিছে পিছে। তার হোন্ডার পিছে যে ছেলেটা তাকে মুন্নি ভালো করেই চেনে। তাদের মহল্লার ছেলে অজয়। ভদ্র ঘরের সন্তান। কিন্তু ও ঐ বখাটে ছেলেটার পাল্লায় পড়লো কী করে?
মুন্নি সাহস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যা হবার তাই হবে। জানতে চায় মুন্নি ছেলেটা তার পিছু নিয়েছে কেন? মুন্নিকে যেতে হলো না। স্কুটার থেকে নামতেই ছেলেটা তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
ঃ মিস মুন্নি, তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিলো। তোমার কী একটু সময় হবে?
ঃ জ্বি, বলুন?
মুন্নি ছেলেটাকে যতোটা অভদ্র ভেবেছিলো ততোটা অভদ্র নয় ছেলেটা।
ঃ তুমি তাসমিয়া মুন্নি। তোমার পরিবারে তোমরা তিন বোন আর এক ভাই। ভাইটি সবার বড়। তার চাকরীর পয়সাতে তোমাদের সংসার চলছে। অবাক হলে? আমি এতো কিছু জানি বলে? অবাক হবার কিছু নাই। তোমাকে ভালো লেগেছে বলেই এতো কিছু জানতে হয়েছে আমার। আমি আরো অনেক কথা জানি। তোমার অসহায়ত্বের কথা, তোমার উপরে বদ ছেলেদের বদ দৃষ্টির কথা। এমন কি তুমি যতোটা জানো না তার চেয়ে বেশি জানি আমি। সে যাগ গে। তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। তুমি চাইলেই আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আমার পরিচয়? আমি এখানকার চেয়ারম্যানের ছেলে। এখানে আমাদের চেয়ে প্রভাব আর কারো বেশি নেই। আমি তোমাকে সকলের কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পারি। মনে রেখো, তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। এই প্রথম তোমাকে আমি চাচ্ছি। কাল দেখা হবে বাকিটা কাল কলেজে বলবো।
এই বলে চলে যাচ্ছে ছেলেটা। দাঁড়িয়ে আছে মুন্নি। পৃথিবী থেমে গেছে তার অজানা আতংকে। আবার ফিরে এলো ছেলেটা। শুনো মুন্নি, আমি তোমার জন্য সব করতে পারবো। প্রয়োজনে খুন কিংবা ডাকাতি।
বাই। চলে গেলো ছেলেটা হেুান্ডাতে ষ্টার্ট  দিয়ে। সেই শব্দটা যেন মুন্নির মস্তিকে দ্বিগুণ হয়ে বেজেই চলেছে। ভয়ংকর সে শব্দে থেমে যেতে চাইছে মুন্নির পা। মুন্নি অনেক কষ্টে বাসায় পৌঁছালো। এখনো কেউ ফিরেনি বাসায়। বই রেখে ধপাস করে শুয়ে পড়লো বেডে। সেলিং ফ্যানের শব্দটা যেন সেই ভয়ংকর শব্দের মতোই শুনাচ্ছে। জানালার কাছে গিয়ে বাইরে তাকালো সে। না কেউ নেই। আসেনি ছেলেটা। কাপড় না ছেড়েই আবারো শুয়ে পড়লো। অনেকক্ষণ থাকালো এভাবে। হাজারো ভাবনা তার মনে। একদিকে কলেজের বখাটে ছেলেদের উৎপাত। অন্যেদিকে মহল্লার ছেলেদের বদ নজর। এখন আবার সবচেয়ে ভয়ংকর লোকটার পাল্লায় পড়েছে সে। কী করে নিজেকে রক্ষা করবে মুন্নি, এই চেয়ারম্যানের ছেলের হাত থেকে? কেন এমন হচ্ছে তার? কী দোষ করেছে সে? জেনে-শুনে এমন একটা বদ ছেলেকে কী করে মানবে মুন্নি? বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই শুর হয়েছে তাদের উপর এই নিষ্ঠুর নির্যাতন। এটা কী নির্যাতন নয়- মনের বিরুদ্ধে যা করা হয় সেই তো নির্যাতন। বাবা ছিলো সন্তানদের উপর ছায়ার হয়ে। কিন্তু সেই ছায়া যখন সরে গেলো তখন আর বাঁধা কোথায়! তাই বলে কী এতোটা লাই পেয়ে মানুষ যা হবার নয় তাই জোর করে করবে? আচ্ছা, সে কী এসব কথা ভাইয়াকে বলবে? ভাইয়া তো তার সব কথা বলে। কিন্তু ভাইয়া যদি রাগ দেখায় চেয়ারম্যান পুত্র বারিককে। তখন কী হবে? ভাইয়া এ অন্যায় কখনোই সইবে না। বারিককে সে বকবেই। বারিক বলেছে, তাকে তার চায়। তার জন্য সে খুনও করবে। না না, ভাইয়াকে একথা বলা যাবে না। একটা মাত্র ভাই তার। মাসুমের কিছু হলে তাদের পৃথিবী অন্ধকার। মাসুম জেদি মানুষ। কখন কি হয় বলা যায় না। না না, কিছুতেই একথা ভাইয়াকে বলা যাবে না। ভাইয়া তাদেরকে অনেক ভালোবাসে। একথা শুনলে তার মাথা ঠিক থাকবে না। মুন্নি দেখতে পায় দেয়ালে অজস্র টিকটিকি। নিজেদের ইচছা মতো ঘুরছে ওরা। একটা মশা কামড় দিলো মুন্নির নরম গালে। হাত দিলো মুন্নি গালে। উড়ে গেলো মশাটা। মুন্নি উঠে জামা কাপড় ছাড়লো। ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকতেই কলিং বেলটা বেঁজে উঠলো। দরজায় ফুটা দিয়ে দেখলো সে। ওপারে মাসুম আর মুক্তা দাঁড়িয়ে আছে। মম এখনো ফেরেনি। কিন্তু কেন? এখন তো কলেজ হচ্ছে না। নিজেকে অকারণে প্রশ্ন করলো মুন্নি। নাকি তার সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে? মুন্নির মতো সেও কী এতোটায় অসহায় হয়ে উঠেছে? নাকি ধরা দিয়েছে বদ ছেলেদের হাতে?


চলবেই
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৪৮১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast