www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রাত পোহাবার আগে ৭

মুন্নি যদি রাহাতের ডাকে সাড়া না দেয় তবে সুযোগ নিবে অসংখ্য ছেলে। তবে কি রাহাতের হাতেই ধরা দিবে মুন্নি? না না রাহাত অনেক মেয়েকে দিয়েছে তার মিথ্যে প্রেমের পরশ। তারা সকলেই হয়েছে সম্মানহীনা। মুন্নি চায় না তাদের মতো হয়ে বাঁচতে, রাহাতের লালসার শ্বিকার হতে। প্রয়োজনে সে এই কলেজ ছেড়ে অন্য কলেজে ভর্তি হবে। তবু নিজের সম্মানকে বিসর্জন দিবে না। দিবে না সে বাবা-মায়ের আদর্শকে বদমায়েশদের হাতে নিষ্পোষিত হতে। মুন্নি ভাবে, তার ভাই মাসুমের কথা। যে জীবন প্রতিষ্টিত করেছে আদর্শতার সৈনিক রুপে। তার মুখে কোনো দিনো কলংকের স্পর্শ লাগেনি। সেও তো কম ছিলো না কোনো অংশে। অনেক মেয়ের পাল্লায় পড়েছে তবুও ভেঙ্গে পড়েনি কারো মায়ায়। তাই যদি হয় তবে সে কেন পারবে না?
হ্যাঁ, পারতে হবে মুন্নিকে। পারতেই হবে তাকে। ওসব বখাটের পাল্লায় পড়লে মুক্তি পাবে না কেউ। একবার নয় বার বার পেতে চাই ওরা। হঠাৎ কেঁপে উঠে মুক্তা। শীত লাগছে হয়তো। মুন্নি কাছে গিয়ে হাত রাখে তার গায়ে। হ্যাঁ, ঠান্ডা হয়ে উঠছে তার শরীর। মায়ের হাতে নকশী কাঁথাটা জড়িয়ে দেয় তার গায়ে। মম ঘুমাচ্ছে। থেকে থেকে ঠোঁটে তার মৃদু হাসি জেগে উঠেছে। হয়তো বা মধুর কোনো স্বপ্ন দেখছে। মম’র মাথায় হাত রাখলো মুন্নি। পাশ ফিরে শুলো মম। মুন্নি চলে গেলো জানালার পাশে। চোঁখ দুটো জ্বালা করছে তার। ভাইয়াটা কোথায় আছে কে জানে। সে বাসায় থাকলে কতোবার আসতো তাদের রুমে। দেখতো ওরা ঘুমাচ্ছে কিনা। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে যায় প্রতিবার। কখনো ঘুম না এলেও এভাবে জেগে থাকার সুযোগ হয়নি কোনো দিন। মাসুম মুন্নিকে ঘুমাতে না দেখলে কখনো ঘুমাতে যায় না। তাই নির্ঘুম মুন্নিকে ঘুমের ভাব করেই শুয়ে থাকতে হয় ভাইয়ার জন্য। কিন্তু আজ ভাইয়া নেই তাই শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না তার। বার বার হাঁটছে সে। ভাবছে সেই পুরানো ভাবনাগুলো নতুন করে। ভাবছে জেবা নামের মেয়েটার কথা। যার কারণে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে মাসুমকে। এমনি হাজারো জেবার কারণেই হয়তো বা বাড়ী ছাড়তে হচ্ছে অজস্র মাসুমকে। কিন্তু কেন? কেন এমন হচ্ছে তাদের? সেও তো কলেজ ছাড়ছে রাহাতের জন্য। শুধু একবার নয়। তিন তিনবার তিনটে কলেজ ছাড়লো মুন্নি। সবখানেই একই অবস্থার শ্বিকার হয়েছে সে। তবে কী তাদের আদর্শ তার কোনো দাম নেই এই স্বাধীন বাংলার সবুজ সমাজে? নাকি সবুজ সমাজ হয়ে উঠেছে হলুদ বিবর্ন? যেখানে আদর্শতা নয় অরাজকতা গ্রাস করেছে সম্মান নামের সততাকে। মুহূর্তে আলোকৃত হয়ে উঠে মুন্নির ভাবনা। জেগে উঠে মম। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার জন্য বেরিয়ে যায় সে। মম ফিরে আসে অল্পক্ষণে।
ঃ আপু, তুমি ঘুমাও নি। এতোক্ষণ জেগে কী করছো?
ঃ এই তো একটা কবিতা লেখার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ একটা চমৎকার মিথ্যে বলে দিলো সে।
মম শুতে শুতে বললো,“সে তোমার দ্বারা হবে না। তুমি তো কবি নও; ছবি মাত্র।”
ঃ তার মানে?
ঃ মানে আর কী? তুমি অনেক সুন্দর তো তাই সবার কাছে তোমাকে ছবি মনে হয়।
ঃ সবার কাছে ছবি মনে হয় মানে?
ঃ হ্যাঁ, আমার কাছে মনে হয় তাই বললাম।
ঃ সে যাগ গে। এসো শুয়ে পড়ি।
বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো ওরা। তখনো ইদুরটা কুট কুট করেই চলেছে। এবার সে শব্দ মম’র কাছে কর্কট হয়ে ধরা দিলো। সে বিছানা ছেড়ে উঠে বাতি জ্বালিয়ে তাকের কাছে গিয়ে অবাক হলো। একটা নয়, প্রায় পাঁচ কি সাতটী ইদুর বই কাঁটছে।
ইদুরগুলো মানুষের সাড়া পেয়েই পালিয়ে গেলো। মম শুয়ে পড়তেই টিকটিকিটা টিক টিক করে উঠলো। মম ঘড়ি দেখলো, দুইটা বাঁজে।
খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গলো মম’র। যথারীতি নামাজ পড়ে, কোরআন শরীফ তেলওয়াত করে বাগানে ঘুরলো কিছুক্ষণ। ক্যাকটাস ডায়েথ্যাস আর দুপাটি গাছগুলো কেমন ঝিমিয়ে আসছে। বয়স হয়ে গেছে , আর কিছু দিবে কেমন করে? সবটুকু বিলিয়ে যে ওরা শূন্য হয়ে চলেছে আপনার গতি পথে। গোলাপ গাছটার কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো মম। দেখলো পাশের বাসার দোতালার জানালা দিয়ে। না, কারো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো এখনো জাগেনি অন্তু। কিন্তু তাই বা হয় কী করে? সে তো নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। এসময় রোজ জানালায় বসে কোরআন পড়ে। খুব ভালো লাগে ছেলেটাকে মম’র। কিন্তু সে ভাবনা কোনো দিন প্রকাশ করে না মম। কেনই বা করবে? ভালোলাগাই যে ভালোবাসতে হবে এমন তো কথা নয়। আবার ভালোবাসলেই আপন করতে হবে, তাই বা কেন। ভালো লাগলো ভালোবাসলাম এই তো। এই যা এ কি ভাবছে আমি। একটু সহানুভূতিকে সে যে ভালোবাসার রূপ দিচ্ছি। ছিঃ ছিঃ! অন্তু জানতে পারলে কি ভাববে!
মম চলে গেলো ঝাউ গাছটার কাছে। ওখানে ছোট্ট একটা নাম না জানা ফুল গাছে টুনটুনির বাসা। মম প্রতিদিন দেখে। আজ ও দেখলো একবার, তার সাড়া পেয়েই পাখি দুটি ফুড়ৎ করে উড়াল দিলো। মম আর একবার তাকালো অন্তুর জানালায়। না, দেখা যাচ্ছে না কিছু। ঘরে ফিরে গেলো মম। মুন্নি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানানোর জন্য রান্না ঘরে যাচ্ছে। মুক্তা বসে টিভি দেখছে।
মম ঘরে ঢুকেই বললো,“মুক্তা, তোর স্কুল নেই?”
ঃ আছে।
ঃ তাহলে বসে টিভি দেখছিস কেন? ঝটপট তৈরি হয়ে নে।
ঃ আপু, তুমি কলেজে যাবে না?
ঃ হ্যাঁ, যাবো।
ঃ ভাইয়াতো নেই। আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে কে?
ঃ কেন? বড় আপু।
ঃ বড় আপু তো কলেজে যাবে না।
ঃ কেন, বড় আপু কী তোকে বলেছে, কলেজে যাবে না?
ঃ হাঁ, বলেছেই তো। ভ্র কুঁচকালো মম। বড় আপু বললো, তুমি আমায় স্কুলে রেখে কলেজে যাবে।
ঃ ঠিক আছে, তাই হবে। তুই রেডি হয়ে নে।
মম মুন্নির কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মুন্নি বললো,“মম, আমি আজ কলেজে যাচ্ছি না। তুই মুক্তাকে সঙ্গে নিয়ে যা।”
মম কিছু বললো না। শুধু বললো,“ঠিক আছে।” তারপর জিজ্ঞেস করলো,“তুমি একা বাসায় থাকবে?”
ঃ হ্যাঁ। জেবার মাকে তাড়াতে হবে না।
মমর মুখে কেমন একটা আভা স্পস্ট হয়ে আবার মুছে গেলো।
ঃ আর হ্যাঁ, ভাইয়াকে অফিস করে বাসায় আসতে বলিস।
ঃ কিন্তু ওরা কী এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবে?
ঃ হ্যাঁ, যেতেই হবে।
ঃ আপু...।
কি যেন বলতে চেয়ে থেমে গেলো মম। হাসলো মুন্নি। কি বুঝে কে জানে।
মুক্তাকে নিয়ে রাস্তায় নেমে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে মম। হঠাৎ অন্তুর কথাই পাশ ফিরে তাকালো মম।
ঃ গুড মরনিং মম।
ঃ গুড মরনিং। কী ব্যাপার, এতো সকাল সকাল কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
ঃ না, যাচ্ছি না। এলাম আর কি।
ঃ মানে।
ঃ মানে আর কী? এই যে নাও তোমার জন্য একটা বকুলের মালা। এগিয়ে দিলো অন্তু।
ঃ মালা কোথায় পেলি?
ঃ পেলাম মানে ফুল কুড়িয়ে নিজের হাতে গেঁথেছি।
ঃ তাই নাকি।
ঃ হ্যাঁ।
ঃসত্যি বলছিস,.?
ঃতোর বিশ্বাস হচ্ছে না.?
ঃতুই মালা গাথতে পারিস ?
ঃদেখনা হাতে শুচ ডুকেছে ।
ঃমম অন্তুর দিকে তাকালো,অন্তু ও তাকিয়ে আছে...
ঃ তো এতো কষ্টের মালাটা আমায় দিলি কেন?
ঃ ইচ্ছে হলো তাই।
ঃশুধু ইচ্ছে হল তাই দিলি ?
ঃ জানিস তুই আমার এক মাত্র বন্ধু, যে কিনা প্রতিদিন সকালে আমার খোঁজ নেয়।
ঃ আমি তোর খোঁজ নিই? প্রতি সকালে? বয়েই গেছে।
ঃ নারে, বয়ে যায় নি। রয়ে গেছে তার অমর স্বাক্ষী।
ঃ মানে টা কি?
ঃ মানে তো খুব সোজা। তোর আর আমার বন্ধুত্বের প্রথম স্বাক্ষী ঝাউ গাছের টুনটুনি আর টুনটোনা। কী বলছিস?
হাসলো মম। হাসলো অন্তুও।
ঃ আপু, ঐ তো খালি যাচ্ছে।
মুক্তার কথাই খালিটাকে ডাকলো অন্তু। চলে যাচ্ছে মম, সেদিকে চেয়ে হাত ইশারা করলো অন্তু। সকালের মিষ্টি রোদে ঝিলমিল করছে শান্ত শহরটা। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটলো অন্তু। শেষে আলতাফের ভাঙ্গা দোকানে গিয়ে বসলো।
ঃ ভাইসাব, আপনার জন্য কী খেদমত করতে পারি, কন?
অন্তু হাসলো তার কথা বলার ভঙ্গি দেখে। তবু সে ভাব গোপন করে বললো,“আলতাফ, কি খাওয়াবে খাওয়া ও। আজ রাঁধতে ইচ্ছে করছে না। তাই যা খাওয়াবে যেন এক দুপুর পেটে থাকে।”
আলতাফ যেন বিপাকে পড়লো। তার দোকানে তো তেমন কিছু নাই। হালকা খাবারের আয়োজন তার। এই বিস্কিট, পেডিস, কেক, সমসা ইত্যাদি সঙ্গে চা।
ঃ ভাইসাব, আফনে একটু বসেন গা। আমি আইতাছি।
ঃ কই যাও তুমি?
ঃ এই যামু আর আমু। চলে গেলো আলতাফ।অদুরে কুকুরের সমাগম। কাছেই একটা ড্রেইন সেখানে থেকে দুর্গন্ধ আসছে থেকে থেকে। আরো ক’টা কাস্টমার এসে বসলো। ওরা এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। মনে হয় আলতাফকে খুঁজছে।
অন্তু দেখলো আলতাফ আসছে। মুখে তার মুক্তির হাসি। কাছে এসেই বললো,“ভাত আনছি গো সাব। ছোট মাছের ভাজি আর মুশুর ডাল ভর্তা, খাইবেন তো?”
অন্তু চেয়ে থাকে আলতাফের মুখে। লোকটা তাকে বেশি ভালোবেসে ফেলেনি তো..?





চলবেই
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৮৭৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/১১/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast