www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ

আমাদের শরীরে অনেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আছে। যেমন দেখার জন্য চোখ, শোনার জন্য কান, বলার জন্য মুখ। প্রায় সব অঙ্গ পরিচালনা করে আমাদের মগজ। এটা নরম থলথলে। এর একটা অংশ ভালো মন্দ ভাবতে সাহায্য করে, এতে কথা তৈরীর একটা কেন্দ্র আছে, এর দুই পাশে অনুভব শক্তি তৈরীর অনেক কোষ আছে, এর পেছনে দেখার শক্তি তৈরীর একটা জায়গা আছে, অনুভূতি পরিচালনার জন্য এতে আছে হাইপোথালামাস নামে একটা জায়গা। এখানে সমস্যা হলে অনুভূতি এলোমেলো হয়ে যায়, ঘুম হয়না অথবা বেশি হয়, প্যারালাইসিস হয়। শরীরে লাল রঙের যে তরল পদার্থ আছে তা রক্ত। মেরুমজ্জা থেকে রক্ত তৈরী হয়। এতে লাল, সাদা, ক্ষুদ্র তিন ধরণের কণা থাকে। যে জলীয় পদার্থে কণাগুলো ভেসে বেড়ায় তা প্লাজমা। এটাই বিভিন্ন কোষে অক্সিজেন ও খাদ্য নিয়ে যায়। লাল কণায় হিমোগ্লোবিন থাকে। রক্তে লাল কণা কমে গেলে এনিমিয়া রোগ হয়। লাল শাক, পালং শাক, ডাল, শিম খেলে রক্ত স্বল্পতা দুর হয়। বুকের মাঝখানে একটু বাঁ দিকে আছে হৃৎপিণ্ড। এর দুই পাশে আছে দুটো ফুসফুস। শ্বাস নিলে ফুসফুস বাতাসে ভরে ওঠে। শরীরে অক্সিজেন ঢুকে। শ্বাস ছাড়লে শরীর থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়ে যায়। বাতাসের সাথে ঢুকে যাওয়া ধুলা, বালি ফুসফুস কাশির মাধ্যমে বের করে দেয়। শ্বাসনালীতে জীবানু ঢুকলে ব্রঙ্কাইটিস হয়। ফুসফুসে জীবানু ঢুকলে নিউমোনিয়া হয়। শ্বাস পথে বাঁধা পেলে হাঁপানী হয়। কাশি স্থায়ী হলে যক্ষা ও টিবি হয়। অবশ্য এ সবের চিকিৎসা এখন সহজে করা যায়। তবুও ফুসফুস ঠিক রাখার জন্য ঠাণ্ডা কম লাগানো, নাক মুখ ঢেকে রাখা বা মুখোশ পড়া ভালো। বিশুদ্ধ বাতাসে জোরে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার অভ্যাস করলে ফুসফুস শক্তিশালী হয়। হৃৎপিণ্ডে চারটা ঘর। ডানদিকে উপরে ডান অলিন্দ, নীচে ডান নিলয়, বামদিকে উপরে বাম অলিন্দ, নীচে বাম নিলয়। প্রত্যেকটিতে একটি করে চারটা ভালভ। রক্ত প্রথমে পালমোনারী শিরা বেয়ে ডান অলিন্দে যায়। তারপর ডান নিলয় হয়ে পালমোনারী ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছায়। এখানে অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন ডাই অক্সাইড বর্জন করে রক্ত বাম অলিন্দ ও বাম নিলয় হয়ে শরীরের কোষগুলোতে পৌঁছে। হৃৎপিণ্ড প্রতি মিনিটে ৭০ থেকে ৮০ বার সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। এতে সমস্যা হলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ হয়। একে ঠিক রাখতে হলে ধুমপান মুক্ত থাকা, হাঁটা, ব্যায়াম, খেলা করা, চর্বিজাতীয় খাবার কম খাওয়া দরকার। মোটা হওয়া বা শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া ভাল নয়। কেননা মোটা হওয়া ও স্বাস্থ্যবান হওয়া এক কথা নয়। সুস্থ মানুষকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলে। এজন্য খাবার ভালো করে চিবিয়ে খেতে হয়। এতে বিভিন্ন লালা গ্রন্থি থেকে রস এসে খাদ্যে মিশে। জিহ্বার গোড়ার দিকে গুহার মত খাদ্যনালী আছে। সেটা দিয়ে খাদ্য পাকস্থলীতে পৌঁছে। পেটের উপরের অংশে থলির মত পাকস্থলী, তার নিচে অগ্নাশয়, পাশে যকৃত, প্লীহা, পিত্তথলি, মাঝের অংশে সরু পাইপের মত ক্ষুদ্র অন্ত্র, শেষে মোটা পাইপের মত বৃহৎ অন্ত্র যা ডানদিক থেকে উঠে অগ্নাশয়ের নীচ দিয়ে পাশাপাশি অতিক্রম করে বামদিকে নেমে তলপেটে রেকটাম হয়ে মলদ্বারে গিয়ে শেষ হয়েছে। পাকস্থলীতে প্যানক্রিয়াস বা অগ্নাশয়ের এসিড, পিত্তথলি ও ক্ষুদ্রান্তের রস খাদ্য হজমে সাহায্য করে। শর্করা, আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য পর্যায়ক্রমে হজম হয় এবং কাজ করার শক্তি উৎপন্ন হয়। যেটুকু হজমের অযোগ্য তা মল হিসেবে বৃহদন্ত্রের মধ্য দিয়ে তলপেটের কাছে মল জমার জায়গা মল আধারে জমে এবং মলদ্বারের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। খাদ্যে ও হজমে সমস্যা হলে পাকস্থলীতে ঘা বা আলসার, পিত্তথলিতে পাথর, ক্ষুদ্রান্ত্রের ও বৃহদন্ত্রের কৃমি, আমাশয় ও লিভারের রোগ হয়। হাত, নখ, মুখ, খাবার পরিস্কার রাখলে, ঝাল, টক, বাসি, মশলাযুক্ত, অপরিচ্ছন্ন খাবার না খেলে, লিভারের জন্য বি হেপাটাইটিস টিকা নিলে এসব রোগ হয় না। নিয়মিত পানি, বিভিন্ন শাক, সবজি, রসালো ফল, ভূষিসহ লাল আটার রুটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। কোমর থেকে একটু উপরে পেছন দিকে শিরদাঁড়ার দুই পাশে আছে সীমের বীচির মত বা বাংলা ৫ এর মত ছাই রঙের রক্তের ছাঁকনী বা প্রস্রাব তৈরীর যন্ত্র কিডনী। রেনাল শিরা দিয়ে দুষিত রক্ত কিডনীতে ঢুকে। এখানে রক্তের ক্ষতিকর পদার্থ ও অতিরিক্ত পানি ছেঁকে নেয়া হয়। বিশুদ্ধ রক্ত রেনাল ধমনী দিয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। বর্জ্যটা ইউরেটারের মাধ্যমে প্রস্রাব জমার জায়গা মূত্রথলিতে গিয়ে জমে ও মূত্রনালীর মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। কিডনীর সমস্যা হলে শরীরে পানি জমে, পা, মুখ ফুলে যায়, দুষিত রক্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, শরীরের চামড়ায় ও আঙ্গুলের ফাঁকে চুলকায়, গলায় ব্যথা হয়, কিডনীতে পাথর হয়, প্রস্রাব লাল হয়। পড়নের কাপড়, বিছানার চাদর, বালিশ, তোষক রোদে শুকালে, গরম জলে মাঝে মাঝে ধুয়ে নিলে জীবানু মারা যায় ও রোগ ছড়ায় না। মুখের ভিতর গলার দুইপাশে আছে দুটো টনসিল গ্ল্যাণ্ড। জীবানু যাতে গলায় না ঢুকে সে জন্য এরা পাহারা দেয়। মাঝে মাঝে জীবানু টনসিলকে আক্রমণ করে। ঠাণ্ডা লাগলেও অনেক সময় টনসিলে ব্যথা হয়। শরীরের অসংখ্য ছোট বড় গিঁট যেমন হাত পায়ের আঙুলে, কনুই ও হাঁটুতে যে গিঁট আছে এগুলো আঙুল ভাঁজ করতে, হাঁটতে, বসতে সাহায্য করে। টনসিল আক্রান্ত হলে বিষাক্ত রস বের হয় ও রক্তের মাধ্যমে গিঁটগুলোতে যায়। ফলে গেঁটে বাত ও জ্বর হয়, গলায় ব্যাথা, ঢোক গিলতে কষ্ট হয়। অসংখ্য গ্ল্যাণ্ড বা টিস্যু শরীরের বিভিন্ন জায়গায় থেকে জীবানুকে পাহারা দেয়। চামড়ায় ময়লা জমে খোস পাচড়া হয়। চুলে খুসকি হয়। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে এ সমস্যা হয় না।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৭১৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/১০/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • Înšigniã Āvî ০৯/১০/২০১৩
    খুব তথ্যসমৃদ্ধ লেখা..... খুব ভাল লাগলো অনেক কিছু জেনে
  • অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান তথ্যসমৃদ্ধ এই লেখার জন্য। আমাদের না জানা অনেক কিছুই আপনি সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
 
Quantcast