www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ঈদের রাতে সিঁধেল চোর

তিস্তার ওপারে আনন্দবাজারের দিকে বাড়ি ছিলো মহসীন আলীর। কী ছিলো না তার? বাড়ি ছিলো, গরু-ছাগলে ভরা গোয়াল ছিলো, মাছ ভর্তি পুকুর ছিলো, বিড়াল-কুকুরও ছিলো। সর্বগ্রাসী তিস্তার পেটে সব চলে গেছে। মহসীনের মতো সর্বহারা অনেকেই আদিতমারি কিম্বা লালমনিরহাটে চলে গেলো। মহসীন গেলো না। ওদিকে গিয়ে করবো কী, মহসীন ভাবলো। নদীর এ পাশে শিল্প-কারখানা আছে। কিছু একটা করে পরিবারে সবার মুখে খাবার তুলে দিতে পারবে, এই ভাবনায় হারাগাছে চলে আসলো সে। কিন্তু বৃদ্ধা মা, বউ, দুই সন্তানকে নিয়ে কোথায় উঠবে সে? হতভাগার চিন্তার শেষ হয় না। সর্বহারার কিছু থাক বা না থাক, দুশ্চিন্তা ঠিকই থাকে। স্থানীয় কিছু লোকের কাছে আবেদন করলো মহসীন। কেউ ঠাঁই দিলো না। বাঁধের ঢাল ঘেঁসে ঘর বানালো সে। সেখানেও আপত্তি কম আসেনি। তবে দু-একজন স্থানীয় মানুষ মহসীনের পক্ষ নিলে তার ঘর বাঁধা থামলো না। তাঁরা মহসীনকে ভাঙ্গাচোঁরা কিছু টিন দিলেন, বাঁশ দিলেন, ফেলে দেয়া শীতলপাটি দিলেন। মহসীনের জন্য এইবা কম কীসে? বউ-সন্তান মিলে একটা ঘর বানালো সে। মাঝখানে একটা পার্টিশন। মায়ের জন্য বিছানা তৈরি করে দিলো খড় দিয়ে। নিজের জন্য সেই খড়ও জুটলো না ঠিকমতো। সদরঘাটের পাশেই সাদা জামে মসজিদ। সেখানে পানির ব্যবস্থা ছিলো। রান্না ও খাবারের জন্য সেখান থেকেই পানি আনতে হলো। আর বাকি কাজ নদীর পানিতেই চলে। কয়েকদিনের মধ্যেই সে এক বিড়ির কারখানায় কাজ যোগাড় করলো। চলতে থাকলো দিন। কষ্টে, তবে দুঃখে নয়। তিস্তা এখন মরা নদী। মহসীনের হারানো বাড়ি-ঘর, গোয়াল, পুকুর আর জাগে নি, জেগেছে শুধু মাটি, বালির চর। কিন্তু মহসীন সে চর পেলো না। দখলদারেরা নিজেদের জমি দাবি করে সব লুটে নিলো। মহসীনের তাতে দুঃখ নেই। সে এখন যেখানে আছে সেখানেই সে খুশি। তিস্তার এই বাঁধকে আর বাঁধ মনে হয় না। অনেক মানুষ এসে বসতি গড়ে ঘিঞ্জি করে ফেলেছে বাঁধটাকে। অনেকদিন পার হয়ে গেছে। মহসীনের মা গত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। ছেলেটা স্কুলের পড়া শেষ করে সদরঘাটেই বাড়ির পাশে গালামালের দোকান করছে। মহসীনই ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়ের ঘরে একটা নাতনিও আছে। মহসীনের বউ শখিনা খুব মিশুক। নিজের ঘরে এক দণ্ড থাকতে চায় না সে। পাশের কোনও না কোনও বাড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটায় সে। কাল ঈদ। আর এই সময় বাড়িতে থাকার মতো মহিলা সে নয়। মহসীন সুপারীর ব্যাপারী। বাজার ঘুরে ঘুরে সুপারি বিক্রি করে, কিম্বা পাওনা টাকা তুলে। ঈদের রাতে তার ব্যস্ততা অনেকগুণ বেড়ে যায়। ঈদের রাতে গালামালের দোকানেও বিক্রি মন্দ নয়। ছেলে শফিকুলও খুব ব্যস্ত। শখিনা অবশ্য কোথাও গেলে ছেলেকে একবারের জন্য হলেও বলে যায়। আজও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
'শফিকুল রে, বাবা শফিকুল'
'ওই কী হইছে? অদান করি চিক্রিবানাকছেন ক্যানে?'
'ওরে বাবা! তোর আরও শিনোত পযযন্ত আগ।'
'তা কী হইছে সেইটা কন, দোকানত ম্যালা কাস্টমার, অ্যামনি ধইনশইন হয়া যাবাল্লাকছে।'
'হইছে রে, হইছে, মুই অ্যাকনা গোলাপি ভাবির ঘরে বাড়ি গ্যানু। তুই বাড়ির দিকত অ্যাকনা খেয়াল থুইস।'
'মুই পাবান্নাঁও, তোমরা গেটত তালা মারি থুয়া যাও।'
'তালা মারসো রে, তাও অ্যাকনা দেখিস।'
'আচ্ছা, ঠিক আছে, বেশী দেরি করেন না ঝন।'
ছেলের শেষের কথাগুলো শেষ হবার আগেই শখিনা সেখান থেকে উধাও। গোলাপিদের বাড়িতে মেহেদী লাগানোর উৎসব চলছে। গরীব মানুষগুলো ঈদে এভাবেই আনন্দ করে, সেই আনন্দ অন্যদের সাথে ভাগাভাগিও করে। মেহেদী গাছ থেকে কেউ হয়তো পাতা সংগ্রহ করেছে, কেউ বেটেছে, কেউ আবার সবাইকে লাগিয়ে দিচ্ছে, কেউ হয়তো কেড়ে নিয়ে লাগাচ্ছে।
'ও মোক অ্যাকনা মেন্দি লাগে দ্যান তো রে,' কোনও একজনকে লক্ষ্য করে বলে শখিনা।
'ঐ শখিনা বু, তুই না বুড়ি হয়া গ্যাছিস, বেটির বিয়াও হইছে, ছাওয়া হইছে, ব্যাটাক বিয়াও দ্যাওয়া নাগে, আর তুই অ্যালাও চ্যাংরি নাকি যে মেন্দি দিবু?'
গোলাপির প্রশ্ন শুনে একটু রেগে যায় শখিনা।
'হইছে, তুই আরও গ্যাছিস। অ্যাকনা মেন্দি নাগাইলে চেংরি হ্য়া যায়? থাউক, নাইগব্যার নয়, তোমরাগুলায় নাগান।'
শখিনার অভিমানী কথা শুনে হাসির রোল পড়ে গেলো। শখিনা আরও রেগে যায়।
'ক্যানে হাসেন রে? মুই কি আর সেলোওয়ার কামিজ পচ্ছো? তা চেংরি হনু ক্যামন করি?'
'হইছে চাচি, অ্যাতি আইসো তো তোমাক মেন্দি নাগে দ্যাঁও,' গোলাপির মেয়ে সোনালি বলে।
'থাউক সোনালি, মুই যাঁও, তোর মাক ভাল করি মেন্দি লাগে দ্যাইস, তোর মাও চ্যাংরি, আর হামরা হইনো বুড়ি।'
'হইচে চাচি, আগ করেন ক্যানে? মাও তো মজাক কচ্ছে।'
রান্নাঘর থেকে গোলাপি মেয়ের কথায় সায় দিলো।
'হ্যাঁ রে, মুই মজাক কচ্ছো, তুই মজাকও বুঝিস ন্যা?'
রাগ ভাংগে শখিনার। হাত দুখানা বাড়িয়ে দেয় সোনালির দিকে। সোনালির মোবাইলে গান বাজতেছে 'মোবারাক, ঈদ মোবারাক'।
'অ্যাই গানটা তোমার টেলিভিশনত দ্যাখাইছলো না রে?'
'হ্যাঁ চাচি, বাদশা বইয়ের গান।'
'ভালে তো।'
'আইজ রাইতোত বই দ্যাখমো, চাচি।'
'হ্যাঁ, তোমরা দ্যাইখপান নন?'
'ক্যামন করি দ্যাখিম? বাড়িত কাঁও নাই।'
'গেটত তালা দ্যান নাই?' অন্য একজন জিজ্ঞেস করে।
'দেছো তো। তাও ভয় নাগে। চোর টোর ম্যালা। দ্যাখলূ না সেইদিন মমিনা ভাবির ঘরের টাটি ভাঙ্গি চোর সউগ নিয়া গ্যাইছে? ব্যাচারির কান্দন দ্যাখলে কী আর কলু হয়।'
'দ্যাখি নাই মনে করেন? মমিনা চাচির শখের জিনিস, কাপড় চোপড় সউগ নিয়া গ্যাইছে চোরে।'
'অ্যা লা, তুই ক, খালি বাড়ি থুইয়া কি বই দ্যাখা মানায়?'
'আল্লাহ, চাচি দ্যাখি ছাওয়াছোটর মতন কথা কয়, আইজ ঈদের আইত না? রাস্তা দিয়া কতো মানুষ আসা-যাওয়া কইরব্যার লাগছে। চাইন্দনি আইতোত চোর আসপে চুরি কইরব্যার?'
আবার সবাই হাসা শুরু করলো একসাথে।
'আচ্ছা রে, বই টেলিভিশনত দ্যাখাইবে?' অনেক আগ্রহে প্রশ্ন করলো শখিনা।
'না, চাচি, মোখলেস কম্পুট্যার আনছে। উয়াতে ভিডিও দ্যাখাইবে।'
'ছ্যাঃ মুই ঐ ছাওয়া ছোটগুল্যার সাথে বসি বই দ্যাখিম?'
'আল্লাহ, তাতে কী হইছে। মাও তো দ্যাখপে। জোনাকি খালা, খাইরোন খালা, বুড়ি মাও, সবায় তো দ্যাখপে।'
শখিনার কেমন যেনো লাগলো। সোনালির কথায় ভরসা পেলো না সে। তাই গলা বাড়িয়ে গোলাপিকে জিজ্ঞেস করলো, 'হয় গোলাপি ভাবি, তোমরা অ্যাগুলাও বোলে মোখলেসে কম্পিটারোত বই দ্যাখমেন?'
'হ্যাঁ রে শখিনা ভাবি।'
এদিকে শখিনার দিকে তাকিয়ে মেয়েগুলো হাসা শুরু করলো।
'কী হইল, হাসেন ক্যানে তোমরাগুলা?'
'ওটা কম্পিটার না, চাচি, ওটার নাম হইল কম্পুটার।'
'ঐ হইছে, মুই মুরখো সুরখো মানুষ, মুই কী আর জানো, কোনটার কী নাম?'
'চাচি, ঘরত হাঁটো।'
'ক্যানে?'
'ওমা! বই দ্যাইখপ্যান নন?'
'অ্যালায়?'
'হ্যাঁ, অ্যালায়, অ্যালা ৯টা বাজে। বই শ্যাষ হইতে হইতে সাড়ে অ্যাগারো টা, বারোটা বাজি যাইবে।'
'খালি বাড়ি থুয়া আসছো যে।'
'ধুর! কিছু হবান নয়, তোমরা আইসো তো।'
শখিনার হাত টেনে ধরে ঘরে নিয়ে যায় সোনালি। মোখলেস আর ওর দুই বন্ধু কম্পিউটার চালু করে দিলো।
'দ্যাখো তো কারবার! অ্যাইটা না টেলিভিশন, অ্যাই টাক কয় কম্পিটার?'
'চাচি, এইটা কম্পিটার না, কম্পুটার, আর এটা টেলিভিশনের মতন দ্যাখতে, ঐ দ্যাখো, দ্যাখো মোখলেস যেটা ঢুকি দিল ঐটার নাম হইল সিডি। অইটাত বই আছে। ঐ মোখলেস কী বই নিয়া আসছিস?'
'বাদশা' মোখলেস উত্তর দিলো।
'ফাটাফাটি' মেয়েগুলো তালি দেয়া শুরু করলো।
'হামরাও অ্যাক সমায় বাদশা আছনো রে, আইজ ভাগ্য দোষে ফকির হয়া গ্যাছি।' গালে হাত দিয়ে বসতে বসতে দির্ঘশ্বাস ছেড়ে কথাগুলো বলে শখিনা।
'হইছে চাচি, থোন তো তোমার দুঃখের কথা, আইজ অ্যাকনা বই দ্যাখি মনটাক ফুরফুরা করো।
'তা তোর মাও, বুড়িমাও কই আসিল?' সোনালির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে শখিনা।
'এই যে রে, আসছি আসছি' ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে গোলাপি। তার পিছনে পিছনে ঘরে ঢুকে জোনাকি, খাইরোনসহ আরও কয়েকজন মহিলা ও শিশু।
'ঐ সবাই চুপ করি বই দ্যাখমেন। সাউন্ড কইরবার নন। যায় সাউন্ড করমেন, তাক বাইর করি দ্যাওয়া হইবে।'
সোনালীর ওয়ার্নিং শুনে শুধু শিশুরা কেনো, বয়স্করাও চুপ হয়ে গেলো। শুরু হয়ে গেছে ছবি।
মাঝেমাঝে হাততালি হচ্ছে। কেউ কেউ শিস বাজাচ্ছে।
সোনালি রেগে গেলো।
'ঐ কায় রে শিসি বাজায়?'
'শিস দেছে, দেছে, ছাওয়া মানুষ' গোলাপি উত্তর করে।
'শিস দিলে দিবু, কিন্তু সাউন্ড কইরবার নন,' হাসতে হাসতে সবার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে মোখলেস। মোখলেসের কথা শুনে কেউ কেউ হেসে ফেলে।
'তোর খালি অগরি!' এক মেয়ে বলে উঠলো।
গোলাপি হারিয়ে গেছে বাদশার মাঝে। হয়তো ছোটবেলায় গ্রামে টিভিতে দেখা কোনও ছবির কথা মনে পড়ে গেছে। হয়তো বাদশা ছবির নায়িকার মাঝে নিজেকে কল্পনা করছে সে। একসময় সে দেখতে কতো সুন্দর ছিলো। মেয়ে দেখতে এসে মহসীনের বাবা একবারই বলে ফেলে মেয়ে তাঁদের পছন্দ হয়েছে। মহসীনও মেয়ে দেখে বিয়ের জন্য একপায়ে খাড়া। আহা রে! আজ সংসারের এই হাল না হলে শখিনাকেও দেখতে নিশ্চয়ই ঐ নায়িকার কাছাকাছি কেউ মনে হতো। নির্বাক হয়ে গেছে শখিনা। কোনো কথা বলছেনা। একাগ্রচিত্তে ছবি দেখছে সে। কেউ তাকে খেয়াল করেনি। ছবি শেষ হয়ে গেলে গোলাপির ঝাঁকুনিতে সম্ভিত ফেরে শখিনার।
'কি হইল, শখিনা ভাবি? বই তো শ্যাষ হইছে, বাড়িত যাবান্নইস?'
শখিনা নড়ে চড়ে উঠে।
'কয়টা বাজিল রে, সোনালি?'
'পওনে বারোটা, চাচি।'
'ওরে আল্লাহ রে! বাড়িত বা কী হইল আল্লাই জানে। শফিকুলের বাপ আসিল নাকি। মুই গ্যানু, গোলাপি ভাবি।'
'আল্লাহ, কিছু খায়া গ্যালু না?'
'থাউক, কাইল খাইম।'
'আচ্ছা, আস পু কিন্তু।'
'আচ্ছা'।
শখিনা বিদ্যুৎগতিতে হাঁটা শুরু করলো বাড়ির দিকে। গেটের তালা ঠিকই আছে। বুকটা ধড়পড় করছিলো। তালা ঠিক আছে দেখে একটু শান্ত হলো। ছেলের দোকান বরাবর আর গেলো না শখিনা। গেটের আরেকটা চাবি মহসীনের কাছে থাকে। সে বাড়ি আসলে তো বাইরে থেকে তালা লাগানো সম্ভব না। তাহলে মহসীন বাড়ি ফেরেনি, নিশ্চিত হলো শখিনা। স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে তালা খুলে বাড়িতে ঢুকে সে। বাড়িতে শোবার ঘর দুইটাতে বিদ্যুৎ আছে। বাড়িতে কেউ নেই বিধায় বাল্বগুলো নেভানো ছিলো। বাইরে থেকে দরজার উপর দিয়ে সুইচ জ্বালানো নেভানো যায়। নিজের ঘরের বাল্ব জ্বালিয়ে দিলো শখিনা। শোবার ঘরের তালাটা খুলে ফেললো। শফিকুলের ঘরের দরজাতেও তালা লাগানো আছে। ঘরে ঢুকবার আগে একবার ছেলের ঘরের দরজার দিকে তাকালো শখিনা। তালা বন্ধই আছে। তাহলে ছবি দেখে ঈদের রাতটা খারাপ কাটলো না, মনে মনে ভাবলো শখিনা। এরপর নিজের ঘরে ঢুকলো।
ঘরে ধুকেই চিৎকার করে উঠল সে, 'হায় আল্লাহ! কায় এদান্তি করিল লে? ওরে আল্লাহ রে, মোর ঘরের সউগ চুরি হয়া গ্যাইছে রে।'
শখিনার চিৎকার শুনে আশেপাশের বাড়ি থেকে লোকজন এসে ভীর করতে শুরু করেছে শখিনার ঘরের ভিতরে, বাইরে। শফিকুলও খবর পেয়ে ছুটে এসেছে। ছেলেকে দেখে শখিনার কান্নার গলা বেড়ে গেলো।
'ওরে শফিকুলরে, কায়বা সিং কাটি হামার সউগ নিয়া গ্যাইরে, বাবা।'
শফিকুল নিজের ঘরের দিকে দৌড় দিলো। তালা খুললো। তার ঘরেও একই অবস্থা। অনেক বড় সিঁধ কেটে চোরে ঘরে যা যা পেয়েছে সব নিয়ে গেছে। শফিকুলের বিছানার নিচে রাখা ট্রাংকের তালা খুলে টাকা, জামা-কাপড় সব নিয়ে গেছে। শফিকুলও চিৎকার করা শুরু করলো।
'ও মা, মোর ঘর থাকিও সউগ নিয়া গ্যাইছে চোরে। তোমরা ক্যানে আইজ সোনালির ঘরে বাড়ি গ্যাইনেন? মুই না বাদা করনু?'
শখিনা নিজের ঘর থেকে ছেলের ঘরে এসে আবার চিৎকার করা শুরু করলো।
'সউগ শ্যাষ, হামার সউগ চুরি হয়া গ্যাইছে। তোর আব্বা আসলে মোক আইজ মারি ফ্যালাইবে রে, বাবা।'
উপস্থিত মহিলারা শখিনাকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করছেন। শফিকুলকে তারা বুঝিয়ে সুঝিয়ে দোকানে পাঠিয়ে দিলেন। ঘরের চৌকাঠে বসে শখিনা তখনও হাউমাউ করে কাঁদছে, 'ঈদটাও কইরবার দিলন্যারে। কায় হামার অ্যাতো বড় সর্বনাশ করনেন রে? গরীবের আর কী থাকিল রে?'
শখিনার কান্নার শব্দ এতক্ষণে হয়তো চোরের কানেও গেছে। পাড়ার মহিলারা যে যার বাড়িতে চলে গেছে। শখিনার কান্না থামে না। সে হাউমাউ করে কেঁদেই চলেছে।
মহসীন তখনও বাড়ি ফেরেনি। আল্লাহই জানে, সে বাড়ি ফেরার পর অবস্থা কী হবে।
[বি.দ্রঃ লেখাটি রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত।]
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১২৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast