www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নিয়তি

-অনেক বছর পর আজ হঠাৎ-ই নীলিমার সাথে হাসানের দেখা হয়ে গেল বড় অপ্রত্যাশিত ভাবে, এক অপ্রত্যাশিত মূহর্তে অপ্রত্যাশিত স্থানে।

-হাসান ঢাকায় একটি প্রাইভেট ফার্মের হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজ করে। ফার্মের বাৎসরিক হিসাবের শেষ দিন হওয়ায় সব কাজ শেষ করতে করতে আজ অনেক রাত হয়ে যায় হাসানের, প্রায় বারোটা বাজে। কাজ শেষে প্রাইভেট কারে চড়ে বাসায় ফিরছিল হাসান। আর ফিরতি পথেই নীলিমার সাথে হাসানের এই অপ্রত্যাশিত সাক্ষাত। এই সাক্ষাতে হাসানের বিস্ময়ের সীমা ছাড়ায়। বেশির ভাগ মানুষ এমন অপ্রত্যাশিত ভাবে সাক্ষাত তার শত্রুর সাথে হোক তাও কখনো চায়না। আর যদি সে হয় এক সময়কার অতি পরিচিতজন তাহলে তো না-ই। সাক্ষাতরে শুরুতে দুজন দুজনার দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে থাকলেও হাসান নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত সে স্থান ত্যাগ করে। আর নীলিমা স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে থাকে হাসানের প্রস্থান পানে চেয়ে।

-হাসান বাড়ি ফিরে কলিংবেল চাপে। দরজা খুলতে কালবিলম্ব দেরী হয়না। কারণ অনেক রাত হয়ে যাওয়ার পরও তার জন্য জেগে অপেক্ষা করছিল তার জীবনসঙ্গিনী অনন্যা। হাসান ফ্রেশ হতে যায়। আর এরই মাঝে টেবিলে খাবার গোছায় অনন্যা। হাসান ফ্রেশ হয়ে আসলে দুজনে খেতে বসে। হাসান খেতে খেতেই নীলিমার সাথে দেখা হওয়ার অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি বলে অনন্যাকে। আর এ ঘটনা বলতে বলতে হাসানের মনে পড়ে যায় বারো বছর আগের পুরনো দিনগুলোর কথা, পুরনো স্মৃতিগুলো, পুরনো মূহর্তগুলো। মনে পড়ে যায় নীলিমার কাছ থেকে পাওয়া সেই কষ্টকর মূহর্তটির কথা যখন নীলিমা তাকে সরাসরি জানিয়েছিল- তার সাথে সম্পর্কটি আর রাখতে চায়না নীলিমা।

-হাসান আর নীলিমার প্রথম পরিচয় হয় নাটোর শহরের একটি কোচিং সেন্টারে, ক্লাস ফাইভে- বৃত্তি কোচিং করতে গিয়ে। তাদের মাঝে তখন থেকে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। দেখতে দেখতে তারা ক্লাস নাইনে উঠে। আর তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটিও গড়ায় ভালোবাসায়। তাদের ভালোবাসার মধুরদিন গুলো ভালোই যেতে থাকে। দেখতে দেখতে দুটি বছর পেরোয়। তারা দুজনই একসাথে এস.এস.সি পরীক্ষা দেয় এবং দুজনই ভাল রেজাল্ট করে। দুজনই নাটোর থেকে এসে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয় রাজশাহীর নামকরা একটি কলেজে। কলেজের পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের সম্পর্কটিও ভালোই চলতে থাকে। কলেজে হাসান-নীলিমার জুটিটি সে সময় পরিচয় পায় শ্রেষ্ঠ জুটি হিসাবে। সময় পেরোয়। তারা এইস.এস.সি পরীক্ষা দেয়। দুজনই ভালো রেজাল্ট করে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং দুজন একসাথে করে। দেখতে দেখতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় হয়ে যায়। দুজনে একসাথে ভর্তি পরীক্ষা দেয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেও নীলিমা চান্স পায়না কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে ভর্তি হয় রাজশাহী কলেজে। কিন্তু দুরত্ব তাদের মাঝে ব্যবধান হয়না। তাদের সম্পর্কটি চলতে থাকে আগের মতই। এভাবেই চলে যায় আরো দুটি বছর।

-সময়ের স্রোতে খরস্রোতা নদীতেও একসময় চর পড়ে। হাসান-নীলিমার সম্পর্কের নদীতেও চর পড়া শুরু হয়। হাসান তৃতীয় বর্ষের শেষ দিকে গিয়ে বুঝতে পারে তাদের সম্পর্কের বন্ধনটি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। হাসান সম্পর্কটি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু নীলিমা বদলে যেতে থাকে। সে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে হাসানকে আর সময়-ই দিতে চায়না। একসময় হাসান জানতে পারে নীলিমা নামকরা এক কোটিপতির একমাত্র ছেলে মুহিতের প্রেমে পড়েছে। কিন্তু হাসান হাল ছাড়েনা। সে নীলিমাকে ফেরাতে চেষ্টা করে তার ভালোবাসার রাজ্যে। কিন্তু নীলিমা তাতে ক্ষিপ্ত হয়। সে হাসানকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় হাসানের মত অনিশ্চত ভবিষ্যৎ-এর কোন ছেলের সাথে সে আর সম্পর্কটি এগিয়ে নিতে চায়না, আর তাই সে এখন মুহিতকে ভালোবাসে। আর সেদিনের পর থেকে নীলিমা তার সাথে হাসানের যোগাযোগের সব পথ বন্ধ করে দেয়।

-কিন্তু হাসান নীলিমার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে যায়। সে ভার্সিটিতে আসা, ক্লাস-পড়াশোনা করা প্রায় ছেড়ে দেয়। আর ঠিক হাসানের এ চরম দু্ঃসময়ে তার পাশে এসে দাড়ায় অনন্যা। ভার্সিটিতে অনন্যা-হাসান ক্লাসমেট ছিল। তাছাড়া ইন্টারমিডিয়েট থেকে তারা ভালো বন্ধু ছিল একই কলেজে পড়ার সুবাদে। তাই হাসান-নীলিমার কোন কিছুই অজানা ছিলনা অনন্যার। অনন্যা হাসানকে স্বাভাবিক করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে থাকে।

-এদিকে নীলিমা-মুহিতের প্রেমের সম্পর্ক গভীর হয়। নীলিমা মুহিতের অর্থ-বিত্ত আর মিষ্টি কথার মোহে পড়ে তার সর্বস্ব মুহিতকে বিলিয়ে দিতে থাকে। নীলিমার সর্বস্ব ভোগ করা হয়েগেলে একসময় নীলিমাকে আর ভালোলাগেনা মুহিতের। মুহিত নীলিমাকে ছুড়ে ফেলে। নীলিমা তার ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু তবু সে হাসানের কাছে ফেরেনা। কারণ তার কোটিপতি টাকায়ালা ছেলে নামক সোনার হরিণ পাবার প্রত্যশা তখনো কমেনা। সে প্রেম করে বিয়ে করে আরেক ধনীর দুলালকে। কিন্তু বিধি বাম। সে ছেলেটিও বিয়ের দু্ই বছরের মধ্যে নীলিমাকে ডিভোর্স দেয়।

-অন্যদিকে অনন্যার চেষ্টায় হাসান স্বভাবিক হয়ে উঠে। কিন্তু হাসানকে স্বভাবিক করতে যেয়ে একসময় অনন্যা হাসানের প্রেমে পড়ে যায়। অনন্যা হাসানকে তার ভালোবাসার কথা জানায়। হাসান প্রথমে না করলেও একসময় রাজী হয়। কারন তখন যে হাসানের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিল অনন্যা।

-হাসান-অনন্যা দেখতে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোয়। হাসানের চাকরি হয়ে যায় অতি দ্রুতই। হাসান পরিবারের সন্মতিতেই বিয়ে করে অনন্যাকে।

-এখন হাসান-অনন্যার সংসারের বয়স ছয় বছরের কিছু বেশী। তাদের কোল আলো করে আছে দুটি সন্তান- চার বছরের ছেলে সাগর আর এক বছরের মেয়ে নুসরাত। হাসান-অনন্যার এই ছোট সংসারে সত্যিই সম্পদের আধিক্য নাই- কিন্তু সে সংসার সুখ আর ভালোবাসায় ঘেরা।

-কিন্তু হাসান আজ আপন মনে নীলিমার পরিনতির কথা ভেবে অবাক হয়। নীলিমা যে কিনা একসময় সোনার হরিণ আর রাজপুত্র পাবার আশায় হাসানকে ছেড়েছিল সে কেন অন্ধকার গলিতে হাসানের ভাবনায় আজ সে কথা। হাসান ভাবে গভীর রাতে যখন পুরো ঢাকা শহর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে তখন সোনর হরিণের প্রত্যাশি নীলিমা আজ কেন রাজপথের কোন লেমপোস্টের পাশে দাড়িয় সন্ধান করে আমুদে পুরুষের। নীলিমাতো কোন রাজপুত্রের সাথে রাজকন্যা হতে চেয়েছিল, তবে কেন আজ সে প্রত্যাশি হয় কোন আমুদের মনোরঞ্জনের?

-আসলে সময়ের স্রোত বড় রহস্যময়। এ স্রোত মানুষের জীবনের পথকে কখন কিভাবে তৈরি করবে তা মানুষের ধারণার বাইরেই থেকে যায়। নিঃস্ব-আশাহীন মানুষকে এ স্রোত কখনো কখনো বাঁচার স্বপ্ন দেখায়, দেয় নতুন জীবন। আবার এ স্রোতের রহস্যময়তায় কেউ কেউ সোনার হরিণের পিছনে ছুটতে যেয়ে সবই হারায়, হারিয়ে যায় জীবনের অন্ধকার গলিতে।*
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০৭৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৭/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ০৪/০৭/২০১৬
    শব্দমালা খুব ভালো লাগলো
  • সাইদুর রহমান ০৫/০৮/২০১৫
    খুব ভালো লিখেছেন।
  • ২৯/০৭/২০১৫
    সুন্দর লিখেছেন গল্পটি ।
  • Sadekur Rahaman Suman ২০/০৭/২০১৫
    প্রেমের গল্প,, খুব ভালো লিখেছেন,
  • Mukunda kumar ১৬/০৭/২০১৫
    নারীরা অত্যন্ত লোভী শ্রেণীর, এরা লোভের বশে এদের হিতাহিত জ্ঞান ভুলে যায় |এরা ভালোবাসার মূল্য দিতে জানেনা|
  • অভিষেক মিত্র ১৩/০৭/২০১৫
    ভালো।
 
Quantcast