www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বাদলের বেলা

১১ এপ্রিল , ২০১৬ ইং ।
"একদিন গাড়ি নাইবা চড়লাম ,
একদিন ছাতা হাতে নাইবা গেলাম,
কোন এক দিনে , এই বর্ষায় ,
প্রাণের তৃষ্ণা মিটে তবু ঝাপটা বারি ধারায় ।”
আজ আকাশ এত মেঘলা ছিল না।আকাশে গুড়গুড় ডাকও ছিল না।ছাতা নিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।১৬ইং এর আগে কখনও গাড়ি ছাড়া এভাবে একা বের হয় নি।বৃষ্টি বাদলের দিনে তো প্রশ্নই আসে না।তবে,সবসময়ই কেউ না কেউ সাথে ছিল।বাসা থেকে বের হয়ে যখন সোবহানীঘাট যাই তখন বৃষ্টির নাম গন্ধও নেই।কাজ সেরে ২ ঘন্টা পর সন্ধ্যার ঘন্টাখানেক পূর্বে বাসার জন্য রিকশা চড়ে রওয়ানা দিলাম।আকাশ ঘন কালো হয়ে উঠল।জোরে জোরে বাতাস বইতে লাগল তো লাগল আর সেই কি ঝাপটা বৃষ্টি,তার তো থামবার লেশমাত্র চিহ্ন নেই।রিকশা চালক বলল,“বাপজান শিবগঞ্জ পর্যন্ত নামিয়ে দিতে পারি,আমার উপায় নেই ওদিকে যাওয়ার।”আমি অসহ্য বোধ করি নি।কষ্ট তো সবার হয়।তবে,প্রকৃতির এই নিষ্ঠুরতা আমার কাছে প্রথম বলে হয়ত আনন্দদায়ক ছিল।বৃষ্টি খুব ভিজাল আমাকে,তবুও আমার মনে লেশমাত্র যন্ত্রনাবোধ নেই।হয়তো অভ্যস্ত হয়ে উঠলে আমার কাছেও বিরক্তিকর ঠেকবে।রিকশা তখনও চলছিল।মনে মনে ভাবলাম,বাসায় পৌঁছলে বাবার ভারি বকুনি খেতে হবে।তাও আবার পৌছতে পৌছতে মাগরিব হবে।পরক্ষণে ভাবলাম,এর জন্য তো আমি দায়ী নই।এতো দৈব ঘটনা।মনে মনে ভাবলাম বাবা যদি প্রশ্ন করেন,“এটা কোন কথা হল?বৃষ্টির সময় একা একা বের হবে?”
আমি বলতাম,“বাবা ধীর্বে ধীরে তো প্রতিকূলতাকে ট্যাকলিং করা শিখতে হবে।”
তারপর আবার বলতেন,“সব কিছুর বয়স আছে তো।আরেকটু বড় হও।”
আমি বলতাম,“বাবা গাছের গোড়া যদি দুর্বল হয় তাহলে গাছ যতই উঁচু হোক না কেন প্রতিকূলতায় ভেঙ্গে পড়তে সময় লাগবে না।আমারও গোড়া শক্ত আর মজবুত হওয়া চাই।”
আমি জানি,এর পরে বাবা আর কোন কিছু বলতেন না।আবার ভাবলাম,ছোট বোনটি মুখ বাকিয়ে বলবে,“কলেজে উঠে যাচ্ছ তো তাই।”তার মুখ বাকানো কথাগুলো খুবই মিষ্টি।মনে নেই,কোন এক লেখক বলেছিলেন,“পরিবারের ছোট বোনটই ঘরের সৌন্দর্য।”আবার মায়ের কথা ভাবতে না ভাবতে ফোনে মায়ের কল আসল,“বাবা,তুমি কোথায় এখন।”
বললাম,“এইতো রাস্তায়।
- “বেশি ঝড় হলে রিকশা থামিয়ে নেমে পড়ে কোথাও আশ্রয় নিও।”
- “চিন্তা কর না,মা।”
- “ আমি চিন্তা না করলে কে করবে রে বাপ?এরকম তো আগে কখনও একা বাইরে যাওয়া আসা করনি তুমি।”
- “আচ্ছা,আচ্ছা ,রাখি।”
বিশ্বাস হোক আর না হোক ভাবছিলাম তখন মুখে মুচকি হাসি ঠিকই ছিল।ভাবছিলাম,বাসায় ফিরার পর মাকে পাকঘরেই পাব চা বানানোর জন্য,আর চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ।সত্যই বললাম,তাই হয়েছিল!তবে বাবার ক্ষেত্রে প্রেডিকশনটা এবার খাটল না।যদিও বাবা সবসময় আমাকে ছেলে মানুষ হিসেবে প্রমাণে ব্যস্ত থাকেন।তবে আমি জানি,বাবা বুঝেন যে বড় হচ্ছি।ধীরে ধীরে শিখতে হবে সব।সবই!অনূকূলতায় ভাব সামলানো,প্রতিকূলতায় নিজেকে সামলানো ইত্যাদি ইত্যাদি।চিন্তা করতে করতে অবশ্যই শিবগঞ্জ এসে পড়লাম।রিকশা থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে উঠে চা পান করলাম।বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার অপেক্ষা করলাম।বৃষ্টি নিতান্তই কমে আসল।আমার যাত্রা আবার শুরু হলো।হুহ!
আজ একটি কথা ভার ভার আমার মনে আসল।কেন জানি।
“যা আজ আছে,তার কোন নিশ্চয়তা নেই যে কালও তা থাকবে।
যা আজ নেই,তার কোন আশংকা নেই যে কালও তা থাকবে না।”
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৯৭১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০৪/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অপুর্ব!
  • পরশ ১৫/০৪/২০১৬
    অনেক লিখ্ছেন
    • ধন্যবাদ
      • সাধুবাদ।।
 
Quantcast