www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সতী স্ত্রী (গল্প - তৃতীয় পর্ব)

।। পর্ব ৩ ।।

এরপর নানানরকম কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ি চলে আসলাম, ভাবলাম যদি গাছের শিকর মাটির তলা দিয়ে বাগানের বাইরে যায়, তবে মালি আর মালিক কি করবে ? তখনি মাথার মধ্যে কে যেন বলে উঠলো - গাছ কেটে ফেলো । ভাবলাম আমি যে প্ল্যানটা করেছি খারাপ নয়, মধুও খাওয়া হবে মোমও সংগ্রহ হবে । কিন্তু সে পথে কি আমার মত একজন পুরুষের যাওয়া ঠিক হবে ? বিবেকে সাড়া জাগলো, ভাবলাম, স্বপ্নাকে কোনো প্রকার টোপ দিয়ে রানির সব খবর জেনে নেব । কিন্তু রানি যে খুব কম চালাক নয়, সেটাও জানতাম । যদি আগে থেকেই রানি কোনো জোরালো টোপ দিয়ে রাখে, তবে আমার টোপে কাজ না-ও হতে পারে । দেখা যাক বলে সেদিন কাটলো ।
এর মধ্যে স্বপ্নাকে পটিয়ে ফেললাম, কিন্তু রানি আর অরবিন্দর সম্বন্ধে একটা কথাও ওর মুখ থেকে বার করতে পারলাম না ।

একদিন স্বপ্নাকে নিয়ে গোপনে সিনেমাও দেখতে গেলাম, সম্পর্ক গভীরে নিয়ে যাবার জন্য । এবং তাকে বলেও দিলাম যে রানি যেন কিছুমাত্র সন্দেহ না করতে পারে ।
আমি বুঝতে পারছি স্বপ্না কেমন জালে জড়াচ্ছে, একদিকে অরুণকে কষ্ট দিয়ে প্রশান্তর সঙ্গে প্রেম, আর একদিকে প্রশান্তকে ফাঁকি দিয়ে আমার সঙ্গে । আবার রানির প্রেম গোপন রাখার শপথ ।
যাই হোক, এ ধরনের মেয়েদের অবস্থা কী হবে সেটা ভগবানই জানেন ।
স্বপ্নার সঙ্গে বেশ জমে উঠলো প্রেমের খেলা, কিন্তু এসবই ক্ষণকালের জন্য অভিনয় মাত্র ।

একদিন রাত্রে রানি আমাকে বলছে,
- জানো, আমার সেই বন্ধুটা পালিয়েছে ।
আমি হাসতে হাসতে বললাম,
- কোথায় পালিয়েছে, কেন কেও কি তাকে তাড়া করেছিলো নাকি ? নাম কী তার ?
রানি বললো,
আরে প্রশান্ত, প্রশান্ত । যে স্বপ্নার সাথে প্রেম করতো ।
- বাহ্, তা তো ভালোই হয়েছে । শীতের দিন, নতুন বিয়ে । এবার হয়তো অরবিন্দও পালাবে ।
পরক্ষণেই মনে হল প্রশান্ত স্বপ্নাকে নিয়ে পালিয়েছে, তাহলে আমি ? মাথায় বাজ পড়লো আমার । রানিকে সবিস্ময়ে প্রশ্ন করলাম,
- স্বপ্না কি প্রশান্তর সঙ্গে পালিয়েছে ?
- আরে বাবা স্বপ্না পালায়নি, প্রশান্ত অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে পালিয়েছে ।
কথাটা শুনে আমার ধরে প্রাণ এলো । প্ল্যান তবে ঠিক লাইনে লাইনে যাচ্ছে । কাজটা যে কতটা সোজা হয়ে এলো তা কী করে বলবো । রানিকে বললাম,
- অরবিন্দ কার সাথে প্রেম করে ?
- জানি না ।
- প্রশান্ত যে অন্য আরেক জনের সাথে প্রেম করতো তুমি জানতে ?
- না তো !
- স্বপ্না জানে যে ওর বয়ফ্রেন্ড পালিয়ে বিয়ে করেছে ?
- না, অরবিন্দ আমাকে ফোনে জানালো । ভাবছি স্বপ্নাকে কী বলবো ।
আমি আনন্দে নাচতে থাকলাম একপ্রকার, পেটের ভিতর অট্টহাস্য করে উঠছে আমার আত্মা । এই সুযোগ রানিকে.... ভাবলাম এই সময় রানি যদি অরবিন্দর সাথে কোথাও যেত, তবে কি লাভটাই না হত । ছ্যা ছ্যা সুযোগ এসেও হাতছাড়া ।
অরবিন্দর বাড়ির সামনে আমার বন্ধু অরুণের ডাক্তারখানা, ওকে বলেছিলাম রানি যদি অরবিন্দর বাড়ি আসে, তবে আমাকে জানাতে । আর ওর কথামতো গোবিন্দকে সারাদিনের চাকরিতে নিযুক্ত করেছিলাম, আর গোবিন্দকে বলে দিয়েছিলাম রানিকে নজর রাখতে । যাইহোক রানিকে বললাম স্বপ্নাকে জানিয়ে দিতে, আজ বাদে কাল ও তো জেনেই যাবে, তার চেয়ে বেচারি সঙ্গে সঙ্গেই জেনে যাক ।
রানি আমাকে বললো,
- জানতে পারবে না, আমি আর অরবিন্দ যদি না বলি তাহলে ও টেরও পাবে না । কারণ প্রশান্ত ওর মোবাইল নাম্বার চেঞ্জ করে ফেলেছে। স্বপ্নার কাছে ওর নাম্বার নেই ।
আমি চমৎকৃত হলাম এবং বললাম,
- বাবা ! এত গোপনে প্রেম ? তোমাদের তো তুলনা হয় না ।
আমার কথায় রানি অবাক হল, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
- আমরা মানে ?
আমি বললাম,
- তোমরা মানে তোমাদের বন্ধুরা । এই যে প্রশান্ত স্বপ্নার সঙ্গে প্রেম করতো, কেও জানে না....
রানি একথা এড়িয়ে আমাকে বলল,
- কী করবো বলো না ।
আমি বললাম,
- তুমি কী করবে ? আমি জানি নাকি এসব !
রানি চুপ করে গেলো । আমি রানিকে শুনিয়ে শুনিয়ে নিজের মনেই বললাম, "স্বপ্না যে কী কান্না করবে, যদি শোনে একথা । সত্যি প্রশান্তর তুলনা হয় না । কি কাজটাই না তুমি করলে প্রশান্ত ! ডুবে ডুবে জল খাওয়া ? কত জনের সঙ্গে সম্পর্ক, কাল নিশ্চয় ধরা পড়াতে এলাকার লোকজন ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়েছে ।"
- রানি আমাকে ধমক দিয়ে বললো,
- আহ্ঃ ! ছাড়ো তো ন্যায়দর্শন । সমস্যায় পড়ে গেলাম আমি, আর উনি ডায়ালগ ঝাড়ছেন । কী করব বলো -

তখন আমি প্ল্যান-ফ্ল্যান করে রানিকে বললাম,
- অরবিন্দকে বাড়িতে ডাকো, ও হয়তো সবকিছু বুঝিয়ে বলতে পারবে ।
- রানি বললো,
- ফোনে ব্যালেন্স নেই । তোমারটা দাও তো ।
আমি প্ল্যান করে ওকে বললাম,
- আমারো তো ব্যালেন্স নেই ।
জানি না রানিও প্ল্যান করে আমাকে ব্যালেন্স না থাকার কথা বললো কি ! হয়তো দেখছে যদি অরবিন্দকে ডাকতে ওর বাড়িতে যেতে বলে ।
যাই হোক, আমি রানিকে বললাম,
- ঠিক আছে, তুমি অরবিন্দকে ডেকে আনো, যাবার পথে স্বপ্নাকেও পাঠিয়ে দিও । আমি তো বাড়িতেই আছি, সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি । কিন্তু কী সমস্যার সমাধান করবো তা তো আমি ভালোই জানি । ভাবলাম, সুযোগ যখন আমিও পেলাম, কেন হাত গুটিয়ে বসে থাকা ।

রানি সেজেগুজে চলে গেল অরবিন্দর বাড়ি....


( এরপর পরবর্তী পর্বে )
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩১৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/০২/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast