www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কুজোবুড়োর গুপ্তধন

অনেকদিন আগে রসুলপুর গ্রামে এক কুজো বুড়ো বাস করতেন। বুড়োর ছিলেন চার ছেলে। বড়টার নাম রাজা, তারপরেরটা বাদশা, কাসেম ও ছোট ছেলের নাম হাসেম। বুড়োর স্ত্রী আগেই মরে গেছে। এই গ্রাম ও আশপাশ এলাকায় এই কুজোবুড়োকে একনামে চিনত, কেননা বুড়ো সভাবে ছিল হাড়কিপ্টে। বুড়ো তার টাকা পয়সা একটা হাড়িতে ভরে কোন এক জায়গায় মাটির নিচে পুঁতে রাখতো, সেটা কেউ জানতো না। কোন দিন বাড়িতে বড় মাছ বা মাংস রান্না হতো না। কেননা মাছ মাংস কিনতে যে টাকা খরচ হবে তা দিয়ে সাতদিন চলা যাবে। একটি মাত্র পাঞ্জাবী যেটা তুলে রাখতো, বাহিরে যেতে হলে বেড় করে পড়ত আবার সেটাকে সেই স্থানে রেখে দিতো। ছেলেরা রঙিন নতুন পোশাক কিনলে রাগা রাগি করত। বুড়ার যেটুকু জমি জমা ছিল চার ছেলে সেই জমিতে চাষবাস করত। বড় ছেলের বিয়ের জন্য হারু মুন্সী তার থলেতে থাকা মেয়েদের জীবন কুন্ডলি বেড় করে শুনাতো। সব শুনে কুজোবুড়ো বলত এই বিয়েতে তার কত টাকা খরচ হবে। হারু মুন্সী হাতে গুণে হিসেব দিলেই বুড়ো চেঁচিয়ে উঠতো, এতো টাকা কি গাছে ধরবে? অগ্যতা হারু মুন্সী তার প্রস্তাবের কুন্ডলী থলেতে ভরে ফিরে যেত। ঘটক দেখে বড় ছেলের মনটা ভাল হলেও গোমড়া মুখে ফিরে যাওয়া দেখে পিত্তিটা জ্বলে যেত। এভাবে আরও কিছুদিন চলে গেল। এদিকে বুড়ো শারীরক ভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ল। তার সেবা করার মতো বাড়িতে কোন মেয়ে মানুষ না থাকায় বিছানায় পেসাব পায়খানার মধ্যে পড়ে থাকতো। একদিন বুড়ো ছেলেদের ডেকে বলল, আমার ছেলেরা শোন, আমি সারা জীবন অনেক কষ্ট করে তোমাদের মানুষ করেছি। তোমরা বাকী জীবন কষ্ট করেই আমার রেখে যাওয়া জায়গা জমি ভোগ দখল করবে। আর মরে যাওয়ার আগে আমার একটা ইচ্ছে ইলিশ মাছ দিয়ে একবেলা ভাত খাওয়াবা।
হাসেম : আব্বা সব কথা বললা কিন্তু তোমার গুপ্তধনের কথা তো বললা না।
বুড়ো ছেলের কথার উত্তর না দিয়ে মুখ ঘুড়িয়ে বলল: যে আগে আমাকে ইলিশ মাছ খাওয়াবে তাকে গুপ্তধনের কথা বলব।
এই কথা শুনে বুড়োকে রেখে ছেলেরা ইলিশ মাছের সন্ধানে ছুটতে থাকে। কিন্তু এখনতো বাজারে ইলিশ মাছ সচরাচর পাওয়া যায়না। ছেলেরা আশাহত না হয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে ছোটে। শহরেও মাছ না পেয়ে যখন ফিরছিলো তখন এক লোকের হাতে একটা ইলিশ মাছ দেখে তাদের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। লোকটি তার শ্বশুর বাড়িতে যাবার জন্য এই মাছটা কিনেছে কিন্তু ছেলেদের কান্না কাটিতে লোকটির মন গললে তাকে অন্য একটি মাছ কিনে দিয়ে মাছটি নিয়ে বাড়িতে এসে রান্না করে বুড়োকে খেতে দেয়। বুড়োর খাওয়ার শেষ পথে মাছের একটি কাঁটা বুড়োর গলায় বিঁধে যায়। ফলে বুড়ো যন্ত্রণায় ছটফট করে মরে যায়। বুড়োর মৃত্যুর খবর শুনে সবাই কানা কানি করতে থাকে গুপ্তধনের খবর কি তা হলে অজানায় থেকে গেল। চার ছেলে বাবা মারা যাবার শোকে যতটা না কাঁদতে থাকলো তার চেয়ে বেশি মনের দুঃখে কাঁদতে লাগল। রাগে ক্ষোভে তারা সীদ্ধান্ত নিল বুড়াকে ঘরের পেছনে যেখানে সে পায়খানা প্রসাব করতো সেখানেই মাটি দিবে। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। কবর খোড়া প্রায় শেষ এমন সময় কোদালের আঘাতে কিছু একটা শব্দ করে উঠল, তারা ভাল করে দেখল একটা হাড়ি পুঁতে রাখা। তারা সেটাকে উপরে উঠিয়ে দেখে চক্ষু ছানাবড়া একি! মায়ের গহনা, টাকা পয়সা সব এই হাড়ির মধ্যেই রাখা। এটাই তবে সেই গুপ্তধন।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৩০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/০২/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • নাইস
  • ভাল লেখেছেন মিঠু দা
  • সুন্দর তম প্রকাশ
  • সুন্দর
    • মোঃ আমিনুল ইসলাম মিঠু ২৭/০২/২০২২
      ধন্যবাদ প্রিয় কবি
  • ফয়জুল মহী ২৬/০২/২০২২
    বাহ দারুণ প্রকাশ করেছেন
    • মোঃ আমিনুল ইসলাম মিঠু ২৭/০২/২০২২
      ধন্যবাদ প্রিয় কবি
 
Quantcast