www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মিতু আর ফুলেরা

মিতুর বয়স এখন আট। জন্মের এক বছর পরে ওর মা মারা যায়। মিতুর বাবা আর একটি বিয়ে করে। মিতুর নতুন মা প্রথম প্রথম মিতুকে আদর যত্ম করতো কিন্তু মিতুর একটি ভাই হওয়ার পর থেকে মিতুকে আর আগের মত আদর করে না। মিতুর বাবার বাজারে একটা দোকান আছে। সে সেখানেই বেশি ভাগ সময় থাকে। ফলে মিতুর প্রতি তারো তেমন একটা খেয়াল রাখে না। মিতু স্কুলে পড়তে চেয়েছিল কিন্তু ওর মা ওকে স্কুলে যেতে দেয় না। বাড়ির বেশির ভাগ কাজই অতটুকুন একটা মেয়েকে দিয়ে করিয়ে নেয়। চার পাশে সে যখন দেখে তার মতো ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে নতুন নতুন পোশাক পড়ছে তখন তার খুব খারাপ লাগে, খুব কষ্ট হয়। যদি কাজের একটু কম বেশি হয় সৎ মা ওকে অনেক মারে। তখন সে শিউলি গাছটির নিচে বসে কাঁদে। শিউলি ফুলের গাছটি মিতুদের বাড়ির পিছনে, চার পাশে জঙ্গল। এদিকটায় সাধারণত কেউ আসতে চায়না বলে মিতু এখানেই তার দুঃখের সময়টা কাটায়। শিউলি ফুলের গাছটার চার পাশে অনেক জঙ্গল ছিল মিতু গাছটির চার পাশের জঙ্গলগুলো পরিস্কার করেছে। শিউলি ফুলের পাশ দিয়ে আরো কয়েকটা ফুলের গাছ হয়েছে। মিতু সময় পেলে ওদেরকে পানি দেয়, যত্ম করে। মিতুর ছোট ভাইয়ের বয়স চার বছর। একদিন ভাইটি ঢিল দিয়ে একটি কাচের প্লেট ভেঙ্গে ফেলেছে, মা অমনি ঘর থেকে এসে মিতুকে কি পিটুনিটাই না দিল। সেদিন বাবাও উপস্থিত ছিল কিন্তু সে কিছু বলল না। মিতুকে খাবার না দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিল। মিতু কাঁদতে কাঁদতে শিউলি ফুলের গাছটির নিচে এসে বসল। ক্ষুধায় তার প্রাণটা বেড় হয়ে যায়। মিতু কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি। যখন ঘুম ভাঙ্গল সে চোখ খুলে তো অবাক! একি কোথায় আমি! মিতুর চার পাশে তাঁকিয়ে দেখ শুধু ফুল আর ফুল। সাদা, লাল, নীল অনেক ফুল। এ যেন ফুলের দেশ। ফুলের মাঝে ওরা কারা? মিতু ভাল করে দেখল আরি এরাতো পরী! এমা এতো সুন্দর পরী? মিতু ভাবতে লাগল আচ্ছা সে এখানে কিভাবে এলো? এটাতো কোন চেনা জায়গা মনে হচ্ছে না। ওরতো মনে আছে মা ওকে মেরেছিল বলে সে শিউলি ফুলের গাছটির নিচে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তবে কি সে স্বপ্ন দেখছে? সবাই বলে স্বপ্নে চিমটি কাটলে লাগে না। দেখিতো চিমটি কাটলে লাগে না, বলে সে তাঁর নিজের গায়ে চিমটি কাঁটল, উহ! লাগল তো। তবে কি সে জাগনাই আছে। হঠাৎ ওর নিজের গায়ের দিকে তাঁকাল অমা এই জামা সে কোথায় পেল! তার গায়েতো ছিল ছেড়া একটি ময়লা জামা। এখন দেখছে খুব সুন্দর ফুলের রঙের জামা । মিতু দেখল চার পাশের ফুলেরা তার সাথে কথা বলছে। সবাই কথা বলাতে বেশি কিছু বুঝতে সে পারছে না। হঠাৎ একটি নীল ফুল তার কাছে এলো। মানুষের মতোই যেন সে দাঁড়িয়ে আছে। সবাইকে থামিয়ে সে মিতুকে বলল- ভাল আছো মিতু?
ফুলের মুখে নিজের নামটা শুনে মিতু তো অবাক! কি করে তার নাম জানল?
- তুমি কি ভাবছ, কি করে তোমার নাম জানলাম?
- মিতু বোকার মত মাথা নাড়ল।
- আমাদের দেশে তোমার নাম সবাই জানে। কারণ তুমি শিউলিকে যে ভাবে যত্ম করে বাঁচিয়ে তুলেছ এটা সবাই জানে। শিউলি আমার ছোট বোন, ওকে খুব ভালবাসি তাই শিউলিই আমাদেরকে তোমার কথা বলেছে।
- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
ফুলটি হেলে দুলে বলল- অবশ্যই বল।
- তোমাদের দেশ মানে? তোমাদের কি আলাদা দেশ আছে? থাকলে সেটা কোথায়?
- হ্যাঁ অবশ্যই আছে, তোমরা আমাদের দেশ মানচিত্র দিয়ে খুঁজে পাবে না। এটা এমন একটা বিষয় যে সহজে বুঝবে না। তুমিই প্রথম মানুষ যে আমাদের দেশে এলো।
- বেশ। কিন্তু সেটা কিভাবে এলাম?
ফুলটি হেসে বলল- এটা তোমাকে বলা যাবে না। তোমার খুব ক্ষিধে লেগেছে।
খাওয়ার কথা শুনে মিতুর পেটটা যেন মোচড় দিয়ে উঠল। ফুলটি মিতুকে হরেক রকমের খাবার এনে দিলো। মিতু এতো খাবার একসঙ্গে দেখে তো অবাক। মিতু যা পেল তাই পেট ভরে খেল। খাওয়া শেষ হতেই সেই নীল ফুল এলো।
- এসো মিতু তোমাকে আমাদের রাজা ডেকেছে।
- তোমাদের আবার রাজাও আছে?
- কেন থাকবে না? আমাদের জীবনও তো তোমাদের জীবনের মতো জন্ম হয়ে বড় হই আবার এক সময় মরে যাই। তোমাদের রাজা থাকলে তবে আমাদের কেন থাকবে না? আর তাছাড়া আমরা তো তোমাদেরই একটা অংশ।
বলতে বলতে নীল ফুল মিতুকে একটা প্রাসাদে নিয়ে এলো। ফুল আর পাতা দিয়ে সাজানো বিশাল প্রাসাদ। সুন্দর একটা সিংহাসনে ঠিকই একজন রাজা বসে আছেন। রাজা মিতুকে দেখে খুব খুশি হলো। তিনি মিতুকে একটি সোনালী রঙের ফুল হাতে দিয়ে বলল। আমাদের রাজ্যে তুমিই প্রথম কোন মানুষ যে এসেছে। তাই তোমাকে খুশি হয়ে এই ফুলটি দিলাম। এই ফুলটির অনেক ক্ষমতা। তুমি যা চাবে তাই হবে কিন্তু মনে রেখো কোন খারাপ উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার করা যাবে না। মিতু ফুলটি নিয়ে রাজাকে কুর্নিশ করে বিদেয় হলো। সেই নীল ফুল মিতুর হাত ধরে নিয়ে এলো। চার পাশে কত ফুলের গাছ নড়ছে হাঁটছে নিজেরা কথা বলছে গল্প করছে। সে সব দেখে দেখে মিতু আর নীল ফুল একটি গাছের কাছে এলো। গাছটি মিতুর গাল ছুয়ে বলল কেমন আছ মিতু?
- হ্যা ভাল আছি। তুমি কেমন আছ?
-আমিও ভাল আছি। এই পাতায় বসে তুমি চোখ বন্ধ কর, খবরদার চোখ খুলবে না। তুমি তোমার বাড়িতে পৌঁছে যাবে।
মিতুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। সেতো বাড়ি যেতে চায় না। মিতু বলল আমি বাড়ি যাবো না।
- তাই কি হয়? কোন মানুষতো আমাদের সঙ্গে আমাদের রাজ্যে থাকতে পারবে না।
- কিন্তু আমিতো বাচ্চা মেয়ে আমি থাকলে দোষ কিসের?
- তুমিও তো মানুষ। তুমি এক সময় বড় হবে তোমার মধ্যেও সৃষ্টি হবে লোভ-লালসা, অহংকার-রাগ-ক্ষোভ। যেটা আমাদের দেশে নেই।
- আমি যাবো না। আমি গেলে মা আবার আমাকে মারবে।
- তাতো হবে না, তোমাকে যেতেই হবে। আর তোমার ভয় নেই তোমার কাছে যে ফুলটা দেয়া হয়েছে সেই ফুল দিয়ে তুমি যা চাবে তাই হবে। কিন্তু তুমি ছোট মানুষ তাই তুমি একাই এসব করতে পারবে না। তোমার বাড়ির সামনে ছোট ঝুপরির মাঝে একটা বুড়ি থাকে না।
- হ্যা সে আমার দাদী। আম্মু তাকে বেড় করে দিয়েছে।
- তুমি যেয়ে তার কাছে উঠবে, তার সেবা করবে ক্ষেতে দিবে, তোমাদের আর দুঃখ থাকবে না। এবার চোখ বন্ধ কর।
মিতু আর কথা বাড়ালো না চোখ বন্ধ করল। চোখ খুলে দেখে সে তাদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে। মিতু ওর দাদির কুড়ে ঘরে এলো। দাদি তখন ক্ষিধায় কাঁদছিল। মিতুকে দেখে বলল ভাই খাবার আনতে পেরেছিস? এ কদিন তুই না থাকায় আমাকে কেউ ক্ষেতে দেয়নি, আমি যে ক্ষিধায় মারা যাচ্ছি। মিতু বলল দাদি আর কেঁদো না, তোমাকে আর খাবারের চিন্তা করতে হবে না। বলে সে ফুলটাকে খাবারের কথা বলতে অনেকগুলো খাবার চলে এলো ওরা দুজন পেট ভরে খেল। পরের দিন সকালে মিতুর সৎ মার চিৎকারে ওর বাবা ঘুম থেকে উঠে এসে দেখে একি অবাক কান্ড! যেখানে ওর বুড়ি মা একটা ছাপরায় থাকতো সেখানে এতো সুন্দর দালান বাড়ি কে করল? এলাকায় হৈ-চৈ পরে গেল সবাই এলো সেই বাড়ি দেখার জন্য। সবাই ডাকা ডাকি করতে মিতু আর ওর দাদি বেড় হয়ে এলো। সবাই তো অবাক কি সুন্দর জামা পড়েছে মিতু। মিতুর মা দৌড়ে এলো- কিরে মা তুই কোথায় গিয়েছিলি আমরা তোকে কত খুঁজেছি। আর এতো টাকা পয়সা তুই কোথায় পেলি? মিতু ওর মাকে বলল সব কিছু একটা ভুত আমাকে দিয়েছে। আর বলেছে কেউ যদি ভুল করেও এই দিকে লোভ করে বা ক্ষতি করতে চায় তবে তার ঘাড় মটকে দিবে। মিতুর বাবা বুঝতে পারল মা ও মেয়ের প্রতি সে যে অন্যায় করেছে সেটা বলবার মত নয় থাক ওরা ভাল থাক।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২১২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০১/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast