www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মোহ নয় সত্যকে ভালোবাসি

সত্যকে ভালোবাসি,মোহ নয়.....!
নিশিথের নিস্তব্ধতা ভেদ করে, একদিন এক স্নিগ্ধ সকালে, এক সাদাসিধে কৃষক তার চাষের জমিতে কাজ করছিল। রোদে পুড়ে, ঘামে ভেজা শরীরে ছিল পরিশ্রমের দীপ্তি, চোখে ছিল সরলতার দীপ্ত আলো। ঠিক তখনই, এক অপরূপা নারী যেন আকাশ থেকে নেমে এল তার সামনে। তার রূপ যেন শ্রাবণের প্রথম বৃষ্টির মতো নির্মল, যেন চাঁদের আলোয় ঝিকিমিকি করে ওঠা গোধূলির বাতাসে ভেসে আসা কুসুম।
নারী বলল, “আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”
কৃষক বিস্ময়ে অভিভূত। এমন রূপবতী, স্বর্গসম সৌন্দর্যের নারী তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে! চাষের কোদাল ফেলে রেখে সে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিল—এই নারীই তার জীবনের সব স্বপ্ন, সব সার্থকতা। সঙ্গে সঙ্গে তারা রওনা হল রেজিস্ট্রির অফিসে।
কিন্তু সেখানেও ঘটল অদ্ভুত ঘটনা।
রেজিস্ট্রার যখন সেই নারীর মুখোমুখি হলো, সে চোখে পড়ল রূপের এক অবিশ্বাস্য ঝলক। চোখ ধাঁধানো সেই মোহে সে নিজেও হয়ে পড়ল বিভোর।
রেজিস্ট্রার বলল, “এই কৃষক তোমার উপযুক্ত নয়। আমিই তোমার যোগ্য। আমিই তোমাকে বিয়ে করব!”
তখনই শুরু হল দ্বন্দ্ব।
তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল তারা, একে অপরকে অবজ্ঞা করতে করতে তারা হাজির হলো আদালতে।
বিচারকের সামনে উপস্থিত হতেই যেন কক্ষের বাতাস স্তব্ধ হয়ে গেল।
বিচারক তাকিয়ে থাকল সেই নারীর দিকে—নির্বাক, অবশ।
তার চোখে তখন আর বিচার নেই, ছিল শুধুই মোহ।
সে বলল, “তোমরা কেউই তার যোগ্য নও। আমি-ই তার প্রকৃত বর। আমি তাকে বিয়ে করব!”
তিন পুরুষ—একজন সরল কৃষক, একজন শিক্ষিত রেজিস্ট্রার, একজন বিচক্ষণ বিচারক—তখন দাঁড়িয়ে, তাকিয়ে রইল সেই নারীর পানে, যেন পৃথিবীর সমস্ত আকাঙ্ক্ষা, সমস্ত সার্থকতা এই এক নারীতেই নিহিত।
তখন নারী শান্ত কণ্ঠে বলল,
“আমি কোনো এক ব্যক্তির জন্য আসিনি।
যে আমাকে দৌড়ে ধরে ফেলতে পারবে, আমি তাকেই বিয়ে করব।”
শুরু হলো দৌড়—এক অসীম, অনন্ত দৌড়।
প্রথমে ছুটল কৃষক, প্রাণপণে, মনপ্রাণ উজাড় করে।
কিন্তু কিছুদূর গিয়েই ক্লান্ত হয়ে পড়ে গেল ধূলিতে—হারিয়ে ফেলল গন্তব্য, আশা, আকাঙ্ক্ষা।
রেজিস্ট্রার একটু বেশি দূর গেল,
তার চোখে ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তার পায়ে ছিল শহুরে চটপটে গতি।
কিন্তু দৌড়ের ক্লান্তি সহ্য করতে না পেরে সে থেমে গেল চিরতরে—ফেলে গেল এক অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার গল্প।
অবশেষে, একা রইল বিচারক।
তার শ্বাস তখন ভাঙা ঢেউয়ের মতো দুলছে।
সে বলল, “এখন তো আর কেউ বাকি নেই।
চলো, এবার আমরা বিয়ে করি।”
নারী তখনো শান্ত। তার মুখে এক রহস্যময় হাসি।
সে বলল, “তোমাকেও দৌড়ে ধরতে হবে আমায়।”
বিচারক তখন থমকে গেল।
তার জ্ঞানগর্ভ মন প্রশ্ন করল—“তুমি কে? কেন এই দৌড়, এই প্রলোভনের খেলা?”
নারী হেসে বলল:
“আমি এই দুনিয়া।
আমি মোহ, আমি লালসা, আমি মায়া জাল।
আমার রূপে, আমার অলঙ্কারে, আমার বাহ্যিক সৌন্দর্যে যারা বিভোর হয়ে যায়, তারা সবাই শেষ পর্যন্ত নিজেকেই হারায়।
আমি দিই না কিছু—আমি শুধু টেনে নিই।
যে আমার পেছনে দৌড়ায়, সে শুধু ক্লান্তি পায়, হারায় শান্তি, ত্যাগ করে সত্তা।
আমি কেবল মোহ দেখাই, কিন্তু সত্তার তৃপ্তি কখনোই দিই না।”
এটাই জীবনের নির্মম বাস্তবতা—
এই দুনিয়ার রঙচঙে মোড়ক যতই সুন্দর হোক না কেন,
যদি কেউ তার পেছনে চোখ বুজে ছুটতে থাকে,
শেষে থাকে শুধু শূন্যতা, ধুলো, আর নিঃশেষ হওয়া একটি অতৃপ্ত জীবন।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৭/২০২৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast