www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

করোনার শিক্ষা

করোনায় শিক্ষা
-
শিক্ষা হল অভিজ্ঞতা একদম সরল কথায়, আমি করোনা আমাদের কী শিক্ষা দিল সেটা আলাদা করে বলতে চাইছি না, আমি শিশুদের শিক্ষার বিষয়ে বলতে চাইছি।আমার দুর্বল কণ্ঠস্বর কতদূর পৌঁছাবে আমি ঠিক জানি না।
কোভিড -১৯ এর কারণে সারা বিশ্বের মত আমাদের স্কুলগুলোও বন্ধ রয়েছে কোমলমতি শিশুদের কথা ভেবে।শিশুরা জাতির ভবিষ্যত, যে কোনও মূল্যেই তাদের সুরক্ষা দিতে হবে, সার্বিক সুরক্ষার কথা বলছি আমি।
দীর্ঘদিন যাবত স্কুল বন্ধ, যেখানে পনের মিনিট আগেও কার্যদিবসে স্কুল ছুটি দিবার নিয়ম নাই।নির্ধারিত সময়ে স্কুল ছুটি হতে হবে এটাই বিধান এটাই আমরা মেনে চলি।
কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে স্কুল বন্ধ রয়েছে, পাঠদান কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটছে বলা বাহুল্য।এই ক্ষতি কী করে পুষিয়ে নেওয়া যায় সেই বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে অনেকের মত আমিও ভাবছি।শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষকের সুরক্ষার বিষয়টিও জরুরী, কারণ শিশুর একদম কাছাকাছি শিক্ষকের অবস্থান বাব-মা'র পরেই।
এই সময়ে স্কুল বন্ধ, কিন্তু শিশুরা সুরক্ষিত কি? আমাদের দেশে প্রাথমিকে কাদের সন্তান পড়াশোনা করে?। যারা প্রাথমিকের অভিভাবক তারা মূলতঃ খেটে খাওয়া শ্রেণির, কাজেই তাদের ঘরে বসে থাকলে চলবে না, কাজের খুঁজে ঘর থেকে বের হতে হবে। একই সাথে শিক্ষার অভাবে তারা অসচেতন।বিশেষ করে শহুরে এলাকার প্রাথমিকের যে অভিভাবক শ্রেণি তারা পরিবেশজনিত কারণে শিশুদের কতটুকু সুরক্ষিত রাখছেন সেটা ভাবনার বিষয়। এ ব্যাপারে যদিও শিক্ষকবৃন্দ নিজেরা যোগাযোগ রাখছেন অভিভাবকদের সাথে, কেউ কেউ আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন কিন্তু সেটা অপ্রতুল, শিক্ষকের আর্থিক ক্ষমতা সীমিত।
শিশুদের সরাসরি তত্বাবধান সম্ভব হচ্ছে না, দূর থেকে সেটা দুরূহ, যারা প্রাথমিকের শিক্ষক তারাই কেবল জানেন শিশুদের সামলানো কতটা কী।
কোভিড -১৯ এর বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কী করব, আর ভয়াবহতা যদি সহনীয় মাত্রায় আসে, তবে কীভাবে আমরা স্কুলগুলো খুলব আর খোলার পরেই বা আমরা কীভাবে সবকিছু সামাল দিব - একজন শিক্ষক হিসেবে প্রতিনিয়তই বিষয়টা মাথায় আসছে।
আমরা দেখেছি চীন তার স্কুলগুলো খুলে দিয়েছে, সেখানে শিশুদের বিশেষ নিরাপত্তা পোষাক ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রেখেছে, দৈহিক দূরত্ব বজায় রেখে খোলা মাঠে ক্লাস নিচ্ছে - এটা একটা ভিডিওতে দেখেছি।
আরেকটি খবর দেখেছি যেখানে স্কুল খোলার পরপরই ৭০ শিশু আক্রান্ত হয়েছে। উন্নত দেশের ব্যবস্থা আর আমাদের ব্যবস্থা তুলনীয় নয়।
আমাদের শহরাঞ্চলের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে জায়গার অভাব রয়েছে, আবার অনেক স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক বেশি।
যেহেতু বিষয়টি এখনও অমিমাংসিত কবে ভ্যাকসিন আসবে, আমরা কবে পাব, ভাইরাসটি আদৌ নির্মুল হবে কীনা কাজেই এ ব্যাপারে কার্যকর যৌক্তিক এবং প্রয়োগ করা সম্ভব এমন পরিকল্পনা নিতে হবে।
আমাদের প্রাথমিকের শিশুরা জাতির ভবিষ্যত, কাজেই যে কোনও পদক্ষেপ আমাদের বুঝে শুনে নিতে হবে।
স্কুল বন্ধকালীন সময়ে শিশুদের জন্য অনলাইন ক্লাস চালু করেছেন অনেকে নির্দেশিত হয়ে কিংবা নিজস্ব উদ্যোগে।আমার মতে এটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক মনিটরিং হলে সবচেয়ে ভালো।নেপ কর্তৃক সরবরাহকৃত বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে, সেই অনুযায়ী ক্লাস নেওয়া হবে, থাকবে উপজলা ভিত্তিক কার্যক্রম যার মাধ্যমে সেই ক্লাসগুলো শিশুদের কাছে পৌঁছানো যাবে।
অনলাইন ক্লাসে শিক্ষক বাছাই একটা বিষয়।শিক্ষকের উপস্থাপন সঠিক ও আকর্ষণীয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের শিশুদের অভিভাবকের মাধ্যমে এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা কতদূর সম্ভব! আমাদের সিংহভাগ অভিভাবক অনলাইন বিষয়টা বুঝেন কীনা, তাদের হাতে সেরকম ফোন আছে কীনা, এ বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে, নতুবা এর সার্বিক ফল আশা করা যাবে না।
আর স্কুল যদি খোলা হয় তবে শিশুদের সার্বিক স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
স্কুল পরিস্কার রাখার জন্য পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, মিউনিসিপ্যালিটিকে দায়িত্ব দিতে হবে, প্রাথমিক স্কুলে ছাত্র শিক্ষকদের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব না দিয়ে তাদের কেবল পাঠদান কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রাখতে হবে।
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা পোষাক ও থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
স্কুলটাইম কমিয়ে এনে বাড়ির কাজ বেশি দিতে হবে, শিশুদের অনলাইনে পাঠদানের উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
অনলাইন ক্লাসগুলো যেন প্রকৃতই শিশুদের কাজে আসে সেজন্য তাদের ট্যাব সরবরাহ করা যেতে পারে।
টিভিতে ক্লাসগুলো প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে, স্থানীয় ক্যাবল চ্যানেলগুলো যাতে ক্লাসগুলো একাধিকবার প্রদর্শন করে, কেউ চাইলে যেন গুগল থেকেও ক্লাসগুলো দেখতে পারে, ইউটিউবে দেখতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
অভিভাবকদের উন্নতমানের মোবাইল ফোন সরবরাহ করা যেতে পারে।
স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ সার্বক্ষণিক মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখবেন, পাঠ তত্বাবধান করবেন, ক্লাসের পড়ার বিষয়ে আলোচনা করবেন, পড়াগুলো আয়ত্ত্ব হয়েছে কীনা তা তদারকি করবেন।
বর্তমান পরিস্থতিতে আমাদের প্রযুক্তির দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
রেডিওর ফ্রিকোয়েন্সি খুব কম, প্রচারিত কার্যক্রম শোনা যায় না।এফএমরেডিওকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
অভিভাবকদের একটু সচেতনতা ও একটি এন্ড্রয়েড ফোন থাকলে বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণই অনলাইনে চালুকৃত পাঠদান শেয়ার করতে পারবেন।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সুবিধা নেওয়া সম্ভব বলে আমার অভিমত।
পরীক্ষার বিষয়ে আমার অভিমত পরীক্ষা আপাতত না নিলেই ভালো।কারণ পরীক্ষার আয়োজনটি যদি স্বাস্থ্যসম্মত না হয়, তবে তা না নেওয়াই ভালো।
আমাদের কাজ হবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর পাঠদান চালু রাখা।বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সমন্বিত বিজ্ঞান ও সমাজ - আপদকালীন সময়ে শিক্ষার ধারাবাহিকতাটুকু বজায় রাখা জরুরী হিসাবে দেখা হোক।
শিক্ষার ব্যবস্থায় যে সোপান রয়েছে, সেটা টিকিয়ে রাখতে পারলেই হল যেন পরবর্তীতে শিক্ষার্থী শিক্ষক উভয়েই খেই না হারান।
সমাপনীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে, কারণ বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকগণও চিন্তিত।সমাপনী না হলেই ভালো এ বছর।
মোট কথা আমাদের যৌক্তিক, গ্রহণযোগ্য, বাস্তবায়নযোগ্য কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে, এগোতে হবে সেভাবেই।
আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে থাকবে নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম।
আমরা যেন সত্যিকার ভাবেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভাবি - তাদের সুরক্ষা দেওয়া, তাদের সার্বিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
( লেখাটিতে প্রদত্ত মতামত একান্তই লেখকের নিজস্ব )
২৭/০৫/২০
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩৪৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০৫/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast