www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বঙ্গবন্ধু ও শিক্ষা

বঙ্গবন্ধু ও এদেশের শিক্ষাঃ
---নাসরীন আক্তার খানম
*
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাঙালী জাতির পরাধীনতার গ্লাণি মুছে দিয়েছিলেন,অকুতোভয়ে বজ্রকণ্ঠে ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য।এরই ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ।
একটি দেশকে গড়তে হলে সবার আগে দেশবাসীকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে হবে এই চিন্তা বঙ্গবন্ধুর চিন্তায় ও মননে সর্বাদাই ছিল।
শিক্ষা মানুষের আচরণগত দিকে কাঙ্খিত পরিবর্তন ঘটিয়ে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়।
শিক্ষার পদ্ধতি তিন ধরনের অনানুষ্ঠানিক, আনুষ্ঠানিক এবং উপানুষ্ঠানিক। সক্রেটিস, এরিস্টেটল, প্লেটো, কনফুসিয়াস, জন ডিউই, জ্যাঁ জ্যাক রুশো, জন ফ্রেডরিক হার্বাট, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বিভিন্ন মনিষী শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং একে একটি সর্বজনীন কাঠামোর ভেতরে এনে দিতে প্রয়াস পেয়েছেন।যে শিক্ষা মানুষের ভেতর সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটাবে,চেতনার জগতে ব্যপক পরিবর্তন এনে তাকে মানবধর্মে উদ্বুদ্ধ করবে এবং তার জাগতিক প্রয়োজন মেটাবে সে ধরনের একটা শিক্ষা ব্যবস্থা বিনির্মাণের যারা ধারক তাদের সাথে জাতির জনকের নামও অনায়াসে যুক্ত করা যায়।
স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারে এগিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু যেহেতু আজীবন বাঙালী জাতির সার্বিক আন্দোলনে জড়িত ছিলেন তাই তিনি জানতেন শিক্ষা ক্ষেত্রে এদেশকে কিভাবে দাবিয়ে রাখা হয়েছিল।তাই তিনি বলেছিলেন-
‘সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা খাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর হতে পারে না। ১৯৪৭ সালের পর বাংলাদেশে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা হ্রাস পাবার পরিসংখ্যান ভয়াবহ সত্য। আমাদের জনসংখ্যার শতকরা
আশি ভাগ অক্ষরজ্ঞানহীন। প্রতিবছর দশ লাখেরও অধিক লোক নিরক্ষর থেকে যাচ্ছে। জাতির অর্ধেকের বেশি শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শতকরা মাত্র আঠারো জন বালক ও ছয় জন বালিকা প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করছে। জাতীয় উৎপাদনের শতকরা কমপক্ষে চার ভাগ সম্পদ শিক্ষাখাতে ব্যয় হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। কলেজ ও স্কুল, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি
করতে হবে। নিরক্ষরতা অবশ্যই দূর করতে হবে।’
আসলেই বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালিদের কীভাবে জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত করে অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখার পাঁয়তারা করেছিল, কীভাবে সুকৌশলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমিয়ে আনছিল। সাতচল্লিশ সালে পূর্ববাংলায় যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল ২৯৬৬৩ টি, সেখানে আটষট্টি সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছিল ২৮৩০৮ টি। মাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রেও বিদ্যমান ছিল প্রকট বৈষম্য। তদুপরি মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে দেশের শতকরা ষাট ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
বিধ্বস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠনের জন্য বাহাত্তরের ২০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে একান্ন কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলী। বাহাত্তরের ১২ ফেব্রুয়ারিতে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার মাধ্যম বাংলা’র ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের প্রথম বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতের চেয়ে তিন কোটি বাহাত্তর লাখ টাকা বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয় শিক্ষাখাতে। গণশিক্ষার প্রসারে অর্থাত্ নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু বরাদ্দ করেছিলেন আড়াই কোটি টাকা। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনি, যা ছিল নারীশিক্ষা অগ্রযাত্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে তাঁর দুঃসাহসী ও চ্যালেঞ্জিং পদক্ষেপ ছিল ৩৬১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা। সেটা তিনি বেশ সাফল্যের সঙ্গেই সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনগোষ্ঠী দেশের অর্থনৈতিক ভিতকে মজবুত করে তুলবে, এজন্য তিনি মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে বৃত্তিমূলক
শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে দেশে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। উচ্চশিক্ষার প্রসারের জন্য তাঁর নির্দেশে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স ঘোষণা করা হয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিন্তার স্বাধীনতা ও মুক্ত-বুদ্ধিচর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করা। এই অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল যা মুক্তবুদ্ধির চর্চার পথকে সুগম করেছিল। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই ড. মুহাম্মদ কুদরত-এ-খুদাকে সভাপতি করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন।কমিশন ১৯৭৩ সালের ৮ জুন অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট এবং ১৯৭৪ সালের মে মাসে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করেন। এই রিপোর্টে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের বেশির ভাগই প্রতিফলিত হয়েছিল। কমিশন শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ, বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার, নারী শিক্ষার প্রসার, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালুকরণ, শিক্ষার সকলক্ষেত্রে বাংলা মাধ্যম প্রবর্তনসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করে।
বঙ্গবন্ধু সরকার এই কমিশনের আলোকে কাজ শুরু করলেও পঁচাত্তরের ঘৃণ্য পট পরিবর্তনে এই কাজ মুখ থুবড়ে পড়ে।
অবশেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপে
কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদনের আলোকে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণীত ও বাস্তবায়িত হচ্ছে।ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ১৬.৮ শতাংশের সাক্ষরতার হার এখন পৌঁছেছে ৭১ শতাংশে। প্রাথমিক স্কুলে মোট ভর্তির হার ১০০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। নারী শিক্ষার হার বেড়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় সর্বাগ্রে পরিমাণগত উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে, আর এখন জোর দেওয়া হচ্ছে গুণগত উন্নয়নের দিকে।
শিক্ষাক্ষেত্রে বহু যুগান্তকারী পদক্ষেপ বর্তমানে গৃহীত হয়েছে এবং তা সাফল্যের সাথে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
জাতির জনক যে স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং বলেছিলেন" স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণী আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়"।
আর এই প্রাপ্তি গুলি অর্জন করতে অবশ্যই শিক্ষা ছাড়া উপায় নেই , তাই শিক্ষা পদ্ধতি,শিক্ষকের মর্যাদা নিশ্চিত করা,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিতরণসহ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি।তাঁরই সুযোগ্যা কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাই শিক্ষাকে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করেছেন এবং সেই সাথে বৃদ্ধি করেছেন শিক্ষকের মর্যাদা।
বাঙালী জাতি বড় দুর্ভাগা তাই বঙ্গবন্ধুর মত একজন মহান নেতা, ক্ষণজন্মা নেতাকে ধরে রাখতে পারলনা।
বঙ্গবন্ধুকে অকালে হারিয়ে বিশ্বের এক নেতা বলেছিলেন"
শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে,আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে
—ফিদেল কাস্ট্রো।"
বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু এদেশকে গড়ে দেয়ার যে স্বপ্ন সেই মহান পুরুষের,সেই স্বপ্ন চিরদিন থাকবে বাঙালী মননে আর বয়ে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
--তথ্যসূত্র ও বিনীত কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক ইত্তেফাক,লেখকঃ আরিফুর সবুজ।
১৫/০৮/২০১৮
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩৯৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/০৬/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast