www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রেষণা কি

প্রেষণা কি?প্রেষণা ও শিক্ষকের ভূমিকাঃ
---
**
প্রেষণা=প্র+ইষ্+ণিচ্+অন+আ
যার অর্থ প্রেরণা।(অনলাইন ডিকশনারি)
বাংলা একাডেমি বলছেন প্রেষণা হলো নিয়োগ,প্রেরণা।
আবার হস্তান্তরও প্রেষণা।
**
বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ প্র উপসর্গটিকে এভাবে বলছেন
"প্র - পায়ী রহে যাহাতে।
বাংলা ভাষার ২২টি উপসর্গের মধ্যে " প্র" একটি,যার নিজস্ব অর্থ অব্যক্ত কিন্তু অন্য শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে সে তাকে ব্যক্ত করে,সুষ্পষ্ট করে।
' পুরুষ প্রকৃতি যখন পরস্পরকে উচ্চ বলিয়া ব্যবহার করে' তখনই তা সুন্দর হয়,তা সৃষ্টি হয় এবং তা 'প্র' হয়।
প্=পাওয়ন,র-ফলা=আরক্ষণ, বহন।এই র আবর্তন বা ঋ এর অধঃপতিত রূপ-র-এর ফলা।
প্ করণ একই কাজের পুনরাবৃত্তির আবর্তনে আবদ্ধ হয়ে রক্ষিত হয় - প্র এ।
প্র=গতি(অগ্রে,সম্মুখে,সমস্তাৎ) আরম্ভ,প্রকর্ষ,অত্যন্ত,খ্যাতি,উৎপত্তি,শক্তি,শেষ,শুদ্ধি,ইচ্ছা,পতন,উন্নতি,বিয়োগ- ইত্যাদি ইত্যাদি।
**
প্রেষণা একটি বিশেষ্য পদ যার আরেক নাম প্রেরণা।
প্রেষণা বা প্রেরণার কাজ হলো কোনও মানুষকে তার লক্ষ অর্জনে সক্রিয় করা,উৎসাহিত করা।প্রেষণার দ্বারা মানুষ গতিশীল হয়।
কাজেই কাউকে কোনও কিছু করার জন্য ক্রমাগত উৎসাহ প্রদান হচ্ছে প্রেষণা,প্রেষণার ফলে মানুষ তার স্বীয় ইচ্ছেকে জাগিয়ে তোলে,নিজের ইচ্ছেয় কাজ করার আগ্রহ বাড়ে।
**
কোনও চাকুরেকে প্রেষণা দেয়া যায় অনুপ্রাণিত করে,তার বেতন বাড়িয়ে,তাকে ন্যায্য বেতন এবং মাঝে মাঝে বোনাস দিয়ে।
কোনও রাধুনীকে তার রান্নার প্রশংসা করে আরও ভালো রান্না করতে উৎসাহীত করা যায়।
কাউকে তার ভালো কাজের স্বীকৃতি দিয়ে,প্রশংসা করে,সম্মাননা দিয়ে প্রেষণা দেয়া যায়।
**
প্রেষণা বহির্মুখী ও অন্তর্মুখী দু'রকমই হতে পারে।
বহির্মুখী প্রেষণা হলো কাউকে কোনও কাজে অন্য কেউ প্ররোচিত করছে,বা উৎসাহিত করছে।
অন্তর্মুখী প্রেষণা আসে স্ব- নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই নিজেকে স্বীয় লক্ষ অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করে এবং অভীষ্ট লক্ষ অর্জনে কাজ করে যেতে নিজেই নিজেকে তাগিদ দেয়।
**
শিক্ষার্থীদের শিখনে উৎসাহ সৃষ্টি,মনোযোগী করা এবং শিখনে আগ্রহ সৃষ্টিতে সমস্যাঃ
--কিভাবে উৎসাহ সৃষ্টি করা যায়= আমি প্রথম শ্রেণিতে খাতা দেখার সময় স্টুডেন্টদের উৎসাহ দেয়ার জন্য good,ভালো,সুন্দর এসব লিখে দিই।তারা খুব খুশি হয়,অনেকে আবার আরও বেশি কিছু চায়।
স্টার এঁকে দিতে হবে- ওটা হলো খুব ভালো।আমি বলি,আমি তো স্টার আঁকতে জানি না,তখন তারা মজা পায়,আমাকে স্টার আঁকতে শিখায়- এটা আমি ইচ্ছে করে করি।তারা আমাকে বলে,ম্যাডাম তোমাকে আর কত শেখাবো স্টার আঁকা,তুমি মনে রাখতে পারো না।
এই বিষয়টা এমন যে তারা কিছু হলেও ম্যাডামের চেয়ে বেশি জানে- এটা তাদের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে,তাদের নিজে নিজে আরও ভালো করার তাগিদটা বাড়িয়ে দেয়।
কেউ হয়তো লিখলো কিছু,তাকে বললে - বাহ খুব চমৎকার তোমার হাত,এই হাত দিয়ে তুমি ইচ্ছে করলেই আমার চেয়ে সুন্দর লিখতে পারো, তাই না!
তখন তারা খুশি হয়,হাতের লেখা সুন্দর করতে সচেষ্ট হয়।
-- পড়ার ফাঁকে হাততালি দিলে,কবিতার ছন্দে,গানের তালে পড়াগুলো উপস্থাপন করলে শিশুরা উৎসাহিত হয়।আর তাদের সঠিক ভাবে প্রশংসা করতে হবে।কেউ পড়া পারেনি,কিন্তু সুন্দর বেণি করে এসেছে,তাকে তার সুন্দর বেণির জন্যই প্রশংসা করুন।সত্যিটা বলেই প্রশংসা করতে হবে।
-- শিক্ষকের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,কখনই একজন শিক্ষক ক্লাস চলাকালে বসবেন না।তাঁর হাত-পা সঞ্চালন,মুখের অভিব্যক্তি,বডির নড়াচড়া সবকিছু এমনভাবে সক্রিয় হতে হবে যাতে শিশুরা অমনোযোগী হওয়ার সুযোগই না পায়।তারা আপনাকেই দেখবে মন দিয়ে- কতটা চিত্তাকর্ষক হতে পারে আপনার উপস্থাপন, যতটুকু সম্ভব সর্ব্বোচ্চ চেষ্টাটাই থাকবে।
আপনি ক্লান্ত হলে বসে পড়ুন একটু শিশুর পাশে বা ডেস্কে,চেয়ারেও বসতে পারেন,শিশুদের ডেকে নিন পাশে।গল্প করার ছলে পাঠের কোনও অংশ উপস্থাপন করুন।
তালে তালে তাদের দিয়ে আবৃত্তি করান,শিশুরা নিজেদের প্রকাশ করতে চায় কিন্তু তাদের জড়তা থাকে।
বোর্ডের সামনে এনে কিছু লিখতে দিন,সামনে দাড় করিয়ে সে যা জানে তাই বলতে বা করতে দিন।আস্তে আস্তে জড়তা কাটবে,সে নিজেও কিছু পারে এই বোধটা তার জাগ্রত হবে,সে তাকে প্রকাশ করতে পারছে এই বোধ তাকে উৎসাহিত ও মনোযোগী করবে।
প্রতি শিশুকেই একেকবার সামনে এনে লিড করতে দিন - সে বলবে অন্যরা সমস্বরে তা আবৃত্তি করবে।
শিশুদের তাদের নাম ধরে ডাকতে হবে,নাম ধরে ডাকা বিষয়টি শিশুরা পছন্দ করে,এতে তাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এই বিশ্বাস তার জন্মে।
এসব ছোট ছোট বিষয় বা কাজ শিশুকে মনোযোগী করতে,শিক্ষকের প্রতি আকৃষ্ট হতে সাহায্য করে।
**
শিক্ষালয়ে আগত শিশুরা বিভিন্ন পরিবেশ থেকে আসে।নতুন অবস্থায় খাপ খাওয়াতে সময় লাগে,আবার কিছু শিশু হীনমন্যতায় ভোগে।কিছু শিশু ভালো পোশাক পরে আসে,এক্ষেত্রে ইউনিফর্ম থাকলে উত্তম হয়।
শিক্ষককে হতে হবে ধৈর্যশীল ও সমতায় বিশ্বাসী।সকল শিশুকে একই নজরে দেখতে হবে,একই ভাবে মূল্যায়ণ করতে হবে।
কখনই কোনও শিশু যেন বুঝতে না পারে যে সে অবমূল্যায়িত হচ্ছে,যদি এটা হয় তবে তা হবে চরম দুর্ভাগ্যজনক।
শিক্ষক সকল শিশুর দিকে সমান নজর দিবেন,সকলকেই উৎসাহিত করবেন,তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করবেন।
প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয় এভাবে মূল্যায়ণ করাটাই হবে পুরস্কার। যদি কিছু উপহার দেবেন সেক্ষেত্রে চকোলেট দিতে পারেন- এবং তা সবাইকেই দিবেন।
চকোলেট না দেন তাদের প্রশংসা করুন এই বলে যে তুমি পারো নাই তাতে কি চেষ্টাতো করেছো,আরেকবার করলে তুমিও পারবে।
**
এই যে আমিও কিছু পারি এই বোধটুকু জাগিয়ে তোলা জরুরী।তখন শিশু নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করবে,নিজ থেকেই শেখার আগ্রহ তার মাঝে জন্মাবে।এই নিজ থেকে শেখার আগ্রহটা জাগিয়ে তোলাই শিক্ষকের কাজ।
একজন আদর্শ শিক্ষক তার ছাত্রকে শেখার জন্য যে আগ্রহ জাগিয়ে দেন এটাউ হচ্ছে বহির্মুখী প্রেষণা,আর যখন ছাত্র বহির্মুখী প্রেষণা পেয়ে নিজেই নিজেকে তাগিদ দেবে নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার,নিজে নিজে ভালোভাবে শেখার তখনই তা হয় অন্তর্মুখী প্রেষণা।
**
একজন আদর্শ শিক্ষক কখনই তার ছাত্রকে চাপ প্রয়োগ করবেন না,বলবেন না এটা মুখস্ত করো,ওটা মুখস্ত করো।তিনি বুঝিয়ে দেবেন,বুঝতে সহযোগিতা করবেন,শেখার আগ্রহ কৌশলে জাগিয়ে দেবেন।
শিশুকে বুঝতে হলে শিশুর চাহিদা এবং সামর্থ্যও বুঝতে হবে,শিশু মনোবিজ্ঞান জানা জরুরী।
বলপ্রয়োগ একজন শিশুর জন্ঢ় কখনই ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
--ধন্যবাদ।
২৭/০৫/২০১৯
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩৯৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩১/০৫/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast