প্রসংগ বিবিধ
প্রসংগঃ বিবিধ।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে যুগোপযোগী একটি শিক্ষানীতি প্রনয়ণের উদ্যোগ বার বারই নেয়া হয়েছে এবং তা সঠিক ভাবে কার্যকর করণ ব্যহত হয়েছে নানাবিধ কারনে।
বাংলাদেশে যত ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে আমার জানা নেই পৃথিবীর আর কোন দেশে এত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে কিনা।একই দেশে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরীর প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কি সুফল বয়ে আনবে তা ভেবে সচেতন মহল উদ্বিগ্ন।আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠছে এক বৈষম্যপূর্ণ এবং ভারসাম্যহীন ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাপদ্ধতির মধ্য দিয়ে।এবার আসি দেশে প্রচলিত ভিন্ন ভিন্ন কারিকুলাম ও শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে সামান্য আলোচনায়।
* মাদ্রাসাঃ
মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা অতি প্রাচীন একটি শিক্ষাব্যবস্থা।বৃটিশ আমলে আমাদের এই উপমহাদেশে এই শিক্ষাপদ্ধতি এক নতুনরূপে আবির্ভূত হয়।
বাংলাদেশে প্রায় চারধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
১) নূরানী
২) হাফেজী
৩) কওমী
৪) আলিয়া।
নূরানী পদ্ধতিতে প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের আরবী বর্ণমালা,কায়দা আমপাড়া শেখানো হয়।পরবর্তীতে তারা উচ্চপর্যায়ের মাদ্রাসা বা মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়।
হাফেজী মাদ্রাসায় কোরআন হেফজ করানো হয়।
কওমী পদ্ধতিতে নিজস্ব শিক্ষাবোর্ডের অধীনে শিক্ষাদান চলে।তারা কোন সরকারি অনুদান পায়না,দানে অনুদানে চলে।তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইদানীং মূলধারার কিছু কিছু বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
আলিয়া মাদ্রাসা সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে।এখানে আরবীর পাশাপাশি মূলধারার বিষয়গুলোও পড়ানো হয়।
* কিন্ডারগার্টেনঃ
বিখ্যাত শিশুমনোবিদ ও শিক্ষাবিদ ফ্রেডরিখ ফ্রোয়েবল ১৮৩৭ সালে এই শিক্ষাপদ্ধতির প্রচলন করেন।এই শিক্ষাপদ্ধতির অন্যতম উদ্দ্যেশ্য হল পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন ও খেলাধূলা ও তাদের উপযোগী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহন।বিভিন্ন শিক্ষাপোকরণের মাধ্যমে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো তাদের পড়তে উদ্বুদ্ধ করাই শিক্ষকের বা শিক্ষাদানের মূল লক্ষ্য।
আমাদের দেশে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যত্রতত্র গড়ে উঠা কেজি স্কুলগুলো কি এই উদ্দেশ্যের সাথে সংগতি রেখে তাদের পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে? তাদের প্রধান লক্ষ্য বাহ্যিক চাকচিক্য দেখিয়ে অভিভাকদের নজর কাড়া এবং অভিভাবকদের পকেট খালি করা।আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির অভিভাবকগণ,কিছুট
া উন্নাসিকতায়,কিছুটা অহমিকায়, কিছুটা জাতে উঠার মানসে ঐ সব স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করান ও সারাবছর তোতা পাখির মত শিশুদের শেখানো বুলি আওড়াতে সাহায্য করেন।
এর ফলে পাশের বাড়ির প্রাইমারি পড়ুয়া শিশুটির অভিভাবক হীনমন্যতায় ভোগেন যে তার বুঝি আর্থিক সামর্থ্য নেই,থাকলে তিনিও তার শিশুকে কেজিতে ভর্তি করাতেন।কচি কেজি পড়ুয়া শিশুটিও তার খেলার সাথী প্রাইমারি পড়ুয়া শিশুটিকে প্রাইমারিতে পড়ে বলে উপহাস করে।এর ফলে ঐ শিশুটিও হীনমন্যতায় ভোগে।এরকমই অসাম্য শিক্ষাব্যাবস্থার বলি হয়ে শিশুরা বড় হচ্ছে,মানসিকতায় তৈরী হচ্ছে শ্রেণিবৈষম্যের বীজ।
*ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল
পৃথিবীতে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যে দেশের মানুষেরা বুকের তাজা রক্ত অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে মাতৃভাষা বাংলার জন্য।বিশ্বদরবারে ভাষা শহীদদিবস আজ আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত।সেই অনন্য গর্ব ধারনকরি জাতির ধনিক শ্রেণি আজ বিদেশী সংস্কৃতি ধারন করেছে মননে,লালিত করছে পরম যত্নে।তাদের সন্তানেরা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে।এরা এদেশে জন্মেছে,এদেশের জলবায়ূতে বড় হয়েছে,শ্বাস নিচ্ছে এদেশের বাতাসে।কিন্তু এরা বাংলার নয়।জীবন যাপনে পাশ্চাত্যরীতি অনুসরন কারী এই শ্রেণির অভিভাবককেরা বিরাট আত্মপ্রসাদে ভোগেন যে তার সন্তান ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে।একলক্ষ থেকে শুরু করে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেও তারা সন্তানকে ভর্তি করেন ঐ সব স্কুলে।মাসে মাসে এই ফিস ওই ফিস আর বেতন বাবদ পনেরো থেকে বিশ হাজার টাকা দিয়ে বন্ধু বান্ধব আর দরিদ্র আত্মীয় স্বজনদের সামনে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে গল্প করেন আমার সন্তানের স্কুলে অক্সফোর্ড,ক্যামব্রিজ,বৃটিশ সিলেবাস পড়ানো হয়।বয়সের তুলানা অধিক পড়ার চাপে অতিষ্ট,পনেরো বিশ কেজি ওজনের বইয়ের ব্যাগ কাঁধে বহন করে তারা কি শিক্ষা লাভ করে আমি জানিনা।আমি জানিনা অক্সফোর্ড,ক্যামব্রিজ আর বৃটিশ সিলেবাসে শিশু নীপিড়নকারী এইসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত কিনা।কারন আমার সে সব স্কুলে পড়ার বা পড়াবার কোন অভিজ্ঞতাই নাই।।এইসব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো স্বরচিত নীতিমালায় চলে।এদের উপর নেই কোন সরকারি নিয়ন্ত্রণ।
* বিয়ামঃ
প্রশাসনে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে বিয়াম প্রতিষ্টিত হয়।২০০৩ থেকে বিয়াম স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই এই ক্যাটাগরীর স্কুল প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত এসব স্কুলে ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলা ভার্সনও চালু আছে।সাধারণত প্রশাসনের লোকজনের সন্তানেরা এসব স্কুলে পড়ে।তবে টাকা থাকলে যে কেউ পড়তে পারবে।
* সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ
বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত শিক্ষানীতি অনুযায়ী পরিচালিত বিদ্যালয় সমূহ যা ইদানীং গরীবের স্কুল নামে অভিহিত হচ্ছে।যার রয়েছে পৃথিবী শ্রেষ্ঠ একটি কারিকুলাম।যাদের টাকা পয়সা খরচ করে পড়ানোর সামর্থ্য নাই,যেসব লোকেরা মনে করেন পড়াশোনার বিষয়টি গৌণ একটি বিষয়, তাদের সন্তানেরা গৃহস্থালী কাজকর্মে বাবা মাকে সাহায্য করার পাশাপাশি এসব স্কুলে ভর্তি হয়।সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই।কিন্ত যারা এইসব স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পনা প্রনয়ণে নিয়োজিত আছেন তাদের সন্তানেরা এসব স্কুলে পড়েনা,তাই তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্ভট বিষয় চাপিয়ে দেন কোমল মতি শিশু ও সর্বংসহা নীরিহ প্রাথমিক শিক্ষকদের উপর।পাঠদান বহির্ভূত বিভিন্ন কাজে তারা শিক্ষক দের এমন ভাবে ব্যস্ত রাখেন যে পাঠদান বিষয়টি এখন মূখ্য বিষয় নেই।বিভিন্ন অযাচিত বিষয় এমন ভাবে চাপিয়ে দেয়া হয় যা মেনে নেয়া কষ্টকর।দীর্ঘসময় ব্যাপী বিদ্যালয়ে অবস্থান,স্বল্প সময়ের বিরতি শিশুদের বিদ্যালয় বিমুখ করে।উপবৃত্তির জন্য স্কুলে আসে ঠিকই শিশুরা,কিন্তু উপস্হিতি দিয়ে চলে যাবার প্রবণতাই বেশি।দরিদ্র, অসচেতন প্রান্তিক জনগোষ্ঠির এই স্কুল গুলো,এর শিক্ষকবৃন্দ এদেশে সবচে অবহেলিত।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বলে প্রাথমিক স্কুলে উন্নয়নের জন্য এক পয়সা বরাদ্দও কেউ দিতে চায়না।কিন্তু খবরদারির জন্য রয়েছে প্রচুর লোক ও সংস্হা।দরিদ্র প্রাইমারি শিক্ষকের ছাত্ররাও ভুলে যায় একদিন তার প্রাইমারির স্যার নিজের পকেট থেকে তার পরীক্ষার ফিস দিয়েছিলেন।
প্রাইমারির বিভিন্ন প্রয়োগ পদ্ধতিতে রয়েছে বিভিন্ন অসংগতি।যারা পরিকল্পনা প্রনয়ণ করেন মাঠ সম্পর্কে তাদের ধারনা সীমিত।তাই বিদেশভ্রমন করে যে ধারনা নিয়ে আসেন তাই তারা এখানে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন,এদেশে তার উপযোগিতা আছে কিনা তা বাছবিচার না করেই।সবচে যে বিষয়টি ইদানীং বুমেরাং হয়ে দাড়িয়েছে তা হল সৃজনশীল পদ্ধতি নামের আমদানীকৃত উদ্ভট পদ্ধতি।উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া,উপযুক্ত বই প্রনয়ণ ছাড়াই পরিচালিত এই পদ্ধতি ইতিমধ্যেই অনেক প্রশ্নের সম্মূখীন।প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিও তাই।
জানিনা জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিনির্মাণে আমাদের যে কোন গাফিলতির চরম মূল্য দিতে হবে।
জানিনা কোমল মতি শিশুদের নিয়ে আর কত পরীক্ষানীরিক্ষা চলবে,আর কত বৈষম্য সৃষ্টি হবে।।
তবে আশার কথা বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার এবং সেইসাথে মমতাময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন যুগান্তরীকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন,আমরা আশাবাদী অচিরেই আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজিত পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন আসবে এবং আমরা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন হবে এং শিক্ষার সর্বক্ষেত্রেই ইতিবাচক কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবেই।
০৬/১১/২০১৭
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে যুগোপযোগী একটি শিক্ষানীতি প্রনয়ণের উদ্যোগ বার বারই নেয়া হয়েছে এবং তা সঠিক ভাবে কার্যকর করণ ব্যহত হয়েছে নানাবিধ কারনে।
বাংলাদেশে যত ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে আমার জানা নেই পৃথিবীর আর কোন দেশে এত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে কিনা।একই দেশে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরীর প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কি সুফল বয়ে আনবে তা ভেবে সচেতন মহল উদ্বিগ্ন।আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠছে এক বৈষম্যপূর্ণ এবং ভারসাম্যহীন ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাপদ্ধতির মধ্য দিয়ে।এবার আসি দেশে প্রচলিত ভিন্ন ভিন্ন কারিকুলাম ও শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে সামান্য আলোচনায়।
* মাদ্রাসাঃ
মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা অতি প্রাচীন একটি শিক্ষাব্যবস্থা।বৃটিশ আমলে আমাদের এই উপমহাদেশে এই শিক্ষাপদ্ধতি এক নতুনরূপে আবির্ভূত হয়।
বাংলাদেশে প্রায় চারধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
১) নূরানী
২) হাফেজী
৩) কওমী
৪) আলিয়া।
নূরানী পদ্ধতিতে প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের আরবী বর্ণমালা,কায়দা আমপাড়া শেখানো হয়।পরবর্তীতে তারা উচ্চপর্যায়ের মাদ্রাসা বা মূলধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়।
হাফেজী মাদ্রাসায় কোরআন হেফজ করানো হয়।
কওমী পদ্ধতিতে নিজস্ব শিক্ষাবোর্ডের অধীনে শিক্ষাদান চলে।তারা কোন সরকারি অনুদান পায়না,দানে অনুদানে চলে।তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইদানীং মূলধারার কিছু কিছু বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
আলিয়া মাদ্রাসা সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে।এখানে আরবীর পাশাপাশি মূলধারার বিষয়গুলোও পড়ানো হয়।
* কিন্ডারগার্টেনঃ
বিখ্যাত শিশুমনোবিদ ও শিক্ষাবিদ ফ্রেডরিখ ফ্রোয়েবল ১৮৩৭ সালে এই শিক্ষাপদ্ধতির প্রচলন করেন।এই শিক্ষাপদ্ধতির অন্যতম উদ্দ্যেশ্য হল পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন ও খেলাধূলা ও তাদের উপযোগী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহন।বিভিন্ন শিক্ষাপোকরণের মাধ্যমে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো তাদের পড়তে উদ্বুদ্ধ করাই শিক্ষকের বা শিক্ষাদানের মূল লক্ষ্য।
আমাদের দেশে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যত্রতত্র গড়ে উঠা কেজি স্কুলগুলো কি এই উদ্দেশ্যের সাথে সংগতি রেখে তাদের পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে? তাদের প্রধান লক্ষ্য বাহ্যিক চাকচিক্য দেখিয়ে অভিভাকদের নজর কাড়া এবং অভিভাবকদের পকেট খালি করা।আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির অভিভাবকগণ,কিছুট
া উন্নাসিকতায়,কিছুটা অহমিকায়, কিছুটা জাতে উঠার মানসে ঐ সব স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করান ও সারাবছর তোতা পাখির মত শিশুদের শেখানো বুলি আওড়াতে সাহায্য করেন।
এর ফলে পাশের বাড়ির প্রাইমারি পড়ুয়া শিশুটির অভিভাবক হীনমন্যতায় ভোগেন যে তার বুঝি আর্থিক সামর্থ্য নেই,থাকলে তিনিও তার শিশুকে কেজিতে ভর্তি করাতেন।কচি কেজি পড়ুয়া শিশুটিও তার খেলার সাথী প্রাইমারি পড়ুয়া শিশুটিকে প্রাইমারিতে পড়ে বলে উপহাস করে।এর ফলে ঐ শিশুটিও হীনমন্যতায় ভোগে।এরকমই অসাম্য শিক্ষাব্যাবস্থার বলি হয়ে শিশুরা বড় হচ্ছে,মানসিকতায় তৈরী হচ্ছে শ্রেণিবৈষম্যের বীজ।
*ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল
পৃথিবীতে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ, যে দেশের মানুষেরা বুকের তাজা রক্ত অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছে মাতৃভাষা বাংলার জন্য।বিশ্বদরবারে ভাষা শহীদদিবস আজ আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত।সেই অনন্য গর্ব ধারনকরি জাতির ধনিক শ্রেণি আজ বিদেশী সংস্কৃতি ধারন করেছে মননে,লালিত করছে পরম যত্নে।তাদের সন্তানেরা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে।এরা এদেশে জন্মেছে,এদেশের জলবায়ূতে বড় হয়েছে,শ্বাস নিচ্ছে এদেশের বাতাসে।কিন্তু এরা বাংলার নয়।জীবন যাপনে পাশ্চাত্যরীতি অনুসরন কারী এই শ্রেণির অভিভাবককেরা বিরাট আত্মপ্রসাদে ভোগেন যে তার সন্তান ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে।একলক্ষ থেকে শুরু করে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেও তারা সন্তানকে ভর্তি করেন ঐ সব স্কুলে।মাসে মাসে এই ফিস ওই ফিস আর বেতন বাবদ পনেরো থেকে বিশ হাজার টাকা দিয়ে বন্ধু বান্ধব আর দরিদ্র আত্মীয় স্বজনদের সামনে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে গল্প করেন আমার সন্তানের স্কুলে অক্সফোর্ড,ক্যামব্রিজ,বৃটিশ সিলেবাস পড়ানো হয়।বয়সের তুলানা অধিক পড়ার চাপে অতিষ্ট,পনেরো বিশ কেজি ওজনের বইয়ের ব্যাগ কাঁধে বহন করে তারা কি শিক্ষা লাভ করে আমি জানিনা।আমি জানিনা অক্সফোর্ড,ক্যামব্রিজ আর বৃটিশ সিলেবাসে শিশু নীপিড়নকারী এইসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত কিনা।কারন আমার সে সব স্কুলে পড়ার বা পড়াবার কোন অভিজ্ঞতাই নাই।।এইসব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো স্বরচিত নীতিমালায় চলে।এদের উপর নেই কোন সরকারি নিয়ন্ত্রণ।
* বিয়ামঃ
প্রশাসনে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে বিয়াম প্রতিষ্টিত হয়।২০০৩ থেকে বিয়াম স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই এই ক্যাটাগরীর স্কুল প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত এসব স্কুলে ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলা ভার্সনও চালু আছে।সাধারণত প্রশাসনের লোকজনের সন্তানেরা এসব স্কুলে পড়ে।তবে টাকা থাকলে যে কেউ পড়তে পারবে।
* সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ
বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত শিক্ষানীতি অনুযায়ী পরিচালিত বিদ্যালয় সমূহ যা ইদানীং গরীবের স্কুল নামে অভিহিত হচ্ছে।যার রয়েছে পৃথিবী শ্রেষ্ঠ একটি কারিকুলাম।যাদের টাকা পয়সা খরচ করে পড়ানোর সামর্থ্য নাই,যেসব লোকেরা মনে করেন পড়াশোনার বিষয়টি গৌণ একটি বিষয়, তাদের সন্তানেরা গৃহস্থালী কাজকর্মে বাবা মাকে সাহায্য করার পাশাপাশি এসব স্কুলে ভর্তি হয়।সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই।কিন্ত যারা এইসব স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পনা প্রনয়ণে নিয়োজিত আছেন তাদের সন্তানেরা এসব স্কুলে পড়েনা,তাই তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্ভট বিষয় চাপিয়ে দেন কোমল মতি শিশু ও সর্বংসহা নীরিহ প্রাথমিক শিক্ষকদের উপর।পাঠদান বহির্ভূত বিভিন্ন কাজে তারা শিক্ষক দের এমন ভাবে ব্যস্ত রাখেন যে পাঠদান বিষয়টি এখন মূখ্য বিষয় নেই।বিভিন্ন অযাচিত বিষয় এমন ভাবে চাপিয়ে দেয়া হয় যা মেনে নেয়া কষ্টকর।দীর্ঘসময় ব্যাপী বিদ্যালয়ে অবস্থান,স্বল্প সময়ের বিরতি শিশুদের বিদ্যালয় বিমুখ করে।উপবৃত্তির জন্য স্কুলে আসে ঠিকই শিশুরা,কিন্তু উপস্হিতি দিয়ে চলে যাবার প্রবণতাই বেশি।দরিদ্র, অসচেতন প্রান্তিক জনগোষ্ঠির এই স্কুল গুলো,এর শিক্ষকবৃন্দ এদেশে সবচে অবহেলিত।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বলে প্রাথমিক স্কুলে উন্নয়নের জন্য এক পয়সা বরাদ্দও কেউ দিতে চায়না।কিন্তু খবরদারির জন্য রয়েছে প্রচুর লোক ও সংস্হা।দরিদ্র প্রাইমারি শিক্ষকের ছাত্ররাও ভুলে যায় একদিন তার প্রাইমারির স্যার নিজের পকেট থেকে তার পরীক্ষার ফিস দিয়েছিলেন।
প্রাইমারির বিভিন্ন প্রয়োগ পদ্ধতিতে রয়েছে বিভিন্ন অসংগতি।যারা পরিকল্পনা প্রনয়ণ করেন মাঠ সম্পর্কে তাদের ধারনা সীমিত।তাই বিদেশভ্রমন করে যে ধারনা নিয়ে আসেন তাই তারা এখানে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন,এদেশে তার উপযোগিতা আছে কিনা তা বাছবিচার না করেই।সবচে যে বিষয়টি ইদানীং বুমেরাং হয়ে দাড়িয়েছে তা হল সৃজনশীল পদ্ধতি নামের আমদানীকৃত উদ্ভট পদ্ধতি।উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া,উপযুক্ত বই প্রনয়ণ ছাড়াই পরিচালিত এই পদ্ধতি ইতিমধ্যেই অনেক প্রশ্নের সম্মূখীন।প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিও তাই।
জানিনা জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিনির্মাণে আমাদের যে কোন গাফিলতির চরম মূল্য দিতে হবে।
জানিনা কোমল মতি শিশুদের নিয়ে আর কত পরীক্ষানীরিক্ষা চলবে,আর কত বৈষম্য সৃষ্টি হবে।।
তবে আশার কথা বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার এবং সেইসাথে মমতাময়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন যুগান্তরীকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন,আমরা আশাবাদী অচিরেই আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজিত পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন আসবে এবং আমরা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন হবে এং শিক্ষার সর্বক্ষেত্রেই ইতিবাচক কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবেই।
০৬/১১/২০১৭
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ৩০/০৫/২০১৯ভালো।
-
অধীতি ২৯/০৫/২০১৯মোটামুটি বিশ্লেষণ ছিলো।ভালো লিখেছেন।