www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কি চমৎকার দেখা গেলো

কি চমৎকার দেখা গেলোঃ
--
মোড়ের পাশে পৌঁছেই রিকশা পেয়ে গেলাম
" ড্রাইভার সাহেব যাবেন?"
আমি অদূরে থাকা ফলের দোকানটির দিকে তাকিয়ে আছি।রং বেরং এর বাহারী ফল।
লাল লাল ডালিমও আছে।
ছড়া আছে-
" সোনা মুখে রোদ লেগেছে, ডালিম ফেটে পড়ে"
সোনা মুখ হয়তো কচি কোনও শিশুর মুখ- তার মুখে রোদ লেগেছে আর ওদিকে ডালিম ফেটে পড়ছে।গভীর ভাবনার বিষয়- ডালিম বোধ হয় কড়া রোদে পাকে,আমি এই ভাবনায় মশগুল আর কিছুক্ষণ পর পর বলি
" ড্রাইভার যাবেন"
কোনও সাড়া নেই,রাগ লাগছে- এরা তাদের যখন যাত্রী প্রয়োজন আপনার দরকার না পড়লেও জোর করে উঠাতে চাইবে আর আপনার দরকারে পাত্তাও দিবেনা।
আমি লোকটার দিকে সরাসরি তাকালাম,আমার চোখের সামনে ডালিম ঝুলছে।
" কথা বলি কানে শুনেন না? যাবেন না বলে দিলেই তো হয়"
লোকটি নড়ে চড়ে কাশি দিলো।
" আমাকে দেখে আপনার রিকশার ড্রাইভার মনে হলো"
ডালিম সরে গেলো চোখ থেকে।পরিস্কার শার্ট প্যান্ট পরা একজন মানুষ।
" না,রিকশার পাশে দাড়িয়ে আছেন আমি ভাবলাম আপনি ড্রাইভার"
" মানুষের কাপড় দেখে মানুষ চিনেন না? কে ড্রাইভার কে ভদ্রলোক চিনতে পারেন না?"
মহা বিরক্ত লোকটি আবার বললো
" জানেন আমি কে? চিনেন আমাকে?"
আমি উনার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বললাম
" জ্বী না,আপনি কে চিনি না,হয়তো চেনার প্রয়োজন পড়েনি কোনও দিন।আর প্রয়োজন পড়বেও না হয়তো কোনও দিন।পৃথিবীতে বহ বহু লোক আছেন যারা কেউ কাউকে চিনে না।"
" বুঝে শুনে কথা বলা লাগে"
উপদেশ এলো।
আমি বললাম, " স্যরি,আমি বুঝিনি আগে আপনি পথিক আমিও পথিক,খামাখাই আপনার সাথে আমার কথা হয়ে গেলো,না হলেও ক্ষতি ছিলো না।"
" কেমন মহিলা আপনি? ভদ্রলোক দেখে চিনেন না?"
" চিনবো কিভাবে বলেন? কাপড় ভালো পরলে ভদ্রলোক,মন্দ কাপড় পরলে রিকশা ড্রাইভার,এই যেমন আমি মোটামুটি নর্মাল কাপড়ে আছি তাই আমার কাপড়ের তুল্য আসনে আমার স্থান,আমি যদি পুরনো কাপড় পরে থাকি তবে আমাতে আর মেসের বুয়া বা বাসাবাড়ির বুয়ার সাথে কোনও অমিল থাকে কি?"
ভদ্রলোক হা করে আমাকে দেখছেন।
" তাহলে আমি কি করি, আমার সার কি সেটা বিবেচ্য নয়,বিবেচ্য হলো পোশাক,তাই না?আপনাকে চিনি না আমি,কি করেন জানি না,তবে পোশাক হলেই আমি অন্তত ভদ্রলোক বলিনা- ব্যবহারটা দেখি, কাজও দেখি না,মানুষ মানুষ হয় মনুষ্যত্বে।"
"খালাম্মা যাইবাইন?"
তাকিয়ে দেখিয়ে আমার পরিচিত ড্রাইভার,রিকশাটা উনারই।
" হ্যাঁ,যাবো চলেন।"
ড্রাইভার তার ময়লা গামছা দিয়ে মুখ মুছে ড্রাইভিং সিটে বসলেন।
গামছা থেকে ঘাম নয় শ্রমের গন্ধ আসছে।
আমরা যারা এদের চেয়ে একটু ভালো পোশাক পরি,আরামে চড়ি রিকশায়- একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে জীবিকার প্রয়োজনে টেনে নিয়ে যায়, কি অমানুষিক ব্যাপার - বাড়তি টাকা চাইলে বা ন্যায্য ভাড়া চাইলেও কলার চেপে ধরি,আমরাই তো ভদ্রলোক।
আর ওরা যখন ক্লান্তিতে ঝিমিয়ে রিকশার হুড ফেলে আরাম করে বসে,যাত্রী নিয়ে যেতে চায় না,তখন আমাদের কি রাগ হয়! ওদের কি আর বিশ্রাম নিতে আছে!
--সকল মেহনতি মানুষের জন্য ভালোবাসা,শ্রদ্ধা।
০১/০৫/২০১৯
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩৮৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/০৫/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • Great..
  • মেহনতী মানুষের জন্য অসাধারণ ভাবনা
    খুব ভালো লাগলো। প্রিয় কবি বন্ধু। ভাল থাকবেন।
  • আব্দুল হক ২১/০৫/২০১৯
    বেশ মজার অভিজ্ঞতা!
 
Quantcast