www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মাণব

মাণব
---
মাণব= মাণ বহন করে যে।
মাণ= মণ হতে জাত।
** মণ কি?
মণ=পরিমিত-করণ অন যাহাতে।
যে সত্তায় পরিমিত করার ক্রিয়াটি অন হয়ে আছে।
সত্তাটি নিজেকে নিজেই পরিমিত করতে থাকে,অথবা অন্য কেউ তাকে পরিমিত করতে থাকে তখন সে সত্তাকে মণ-করণ বলে।একবার মণ -করণ বা পরিমিত করণ হয়ে গেলে সেটি হবে মণ।
(আর যদি সত্তাটি অন্য কাউকে পরিমিত করে তবে সেটা হবে মন।এই রূপ যে করে সেও মন,যাকে করা হয় সেও মন।)
মণ হলো পরিমিত-করণের একটি প্রক্রিয়া।
আমরা জানি ওজন পরিমাপে এক সময় মণ ব্যবহৃত হতো।
**
মাণব= যে মানুষ বেদ অধ্যয়ন করে নাই।
(অনধীতবেদ মনুষ্য)।
অর্থঃমনুর অপত্য,মনুষ্য,মূঢ়,কুৎসিত অর্থাৎ বিহিতানুষ্ঠানহীন মনুষ্য,বালক,ষোড়শষষ্টিক হার।
প্রশ্ন----- মনুর অপত্য মানব,সেই মানব কেন মাণব তবে আর এই মাণবের অর্থ কেন নেগেটিভ!
মানব বেদ পাঠ না করলে মাণব হয়ে যায়,আবার সেই মাণব আবার শিব-পদবাচ্য হন?
মাণব বলতে কেন তথাকথিত নীচ,হেয়,তুচ্ছ,দ
ীন প্রভৃতি সামান্য জনকে বোঝায়?
**
মণ হতে জাত মাণ শব্দটিতেে একই সাথে দু'রকম ক্রিয়া সক্রিয়।
১।আত্মসংকোচন ক্রিয়া বা নিজের মূলে যাবার ক্রিয়া বা প্রচেষ্টা।
এজন্য নিজেকে জানা,চেনা জরুরী।সেজন্য প্রাচীনকালে প্রাচ্যে মানুষের মূল কাজ ছিল "আত্মানং বিদ্ধি" বা " নিজেকে জানো" আর পাশ্চাত্যের মানুষের মূল কাজ ছিল" know thyself".
যে মানুষ নিজেকে জানতে পারে,নিজেকে চিনতে পারে সে মানুষ জগতকেও চিনতে পারে।
তিনি মানবসত্তার মূলে পৌঁছে যান,এরকম অবস্থায়ই তাঁকে আমরা মনীষী বলে অভিহিত করি।
সুতরাং তিনি মাণব।
২। কোনও শক্তি যদি কোনো সত্তাকে সংকোচিত করতে বাধ্য করে তখন মানুষ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক মানুষ থাকে না,মূঢ় - কুৎসিত-হীন- নীচ-তুচ্ছ-সামান্যজন ইত্যাদি হয়ে যায়,অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যায়।এইরুপ মাণ-কে যে বহন করে সেও মাণব।
**
বরাক=যে বরণ না করিয়া কাউকে গ্রহন করে না,বা যে বরিত না হইয়া কাহারও দ্বারা গৃহীত হয় না।বরাক একটি উপত্যকার,সেই উপত্যকার মানুষ সেই বৈদিক যুগ থেকেই ম্লেছ রূপে ঘোষিত,এই মানুষও মাণব।
***
মানব শিশুর জন্ম হয় স্বাভাবিক- প্রাকৃতিক মাণব হিসেবে।বৈদিক যুগের আগে সনাতন যুগে এই মাণবই ছিলেন মানবসভ্যতার মূল ধারা,এবং মাণবদের পরিচালক ছিলেন শিব।
পরবর্তীকালে দক্ষ/সভ্যসমাজ এদের অসভ্য বলে ঘোষণা করে।
মাণবেরা দক্ষ সমাজে যে সকল ক্রিয়া অনুষ্ঠান করে জীবিকার্জন করার কথা বলা হত তা মানতেন না।তাই তাঁরা বিতাড়িত হয়ে পাহাড়-পর্বত-অরণ্যে অবাসযোগ্য এলাকায় চলে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।এরা হল অনুকম্পিত মাণব কারণ দক্ষসমাজ তাঁদের অনুকম্পা দেখাত।
পরবর্তীকালে সভ্যসমাজ এঁদের বরণ করে এনে চাষাবাদের কাজে লাগায় এজন্য তাদের বরাকও বলা হত।
তার মানে হল 'মাণব' প্রকৃত অর্থেই স্বাভাবিক -প্রাকৃতিক মানুষদের বোঝায়।
মানুষ যেহেতু মাণব প্রকৃত ভাবেই সেজন্যই সে বলে, " মানুষ হতে হবে।"
সভ্যতাগুলো বিকশিত হয়েছে সময়ে সময়ে,নতুন সভ্যতা এসে পুরনোকে ( ভাল এবং মন্দ) নস্যাৎ করে ফেলে এবং নিজেও দিকভ্রান্ত হয় অবশেষে।
অতীতেই দাড়িয়ে আছে বর্তমানের ভিত্তি,তাই অতীতের শিক্ষা সাথে নিয়েই বর্তমান অতিক্রম করতে হবে এবং ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা শুরু করতে হবে।নতুন আসবে কিন্তু অতীতের ভালটা ফেলে দেয়া কেন!
**
ভাষার ইতিহাস জানতে হবে, একটি ভাষার জন্ম কিভাবে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী যা মূলতঃ প্রাচীন মানুষের ক্রিয়াকর্মের কাহিনী -রূপকের মাধ্যমে হয়েছিলো,বিকশিত হয়েছিলো - তা জানলে ক্ষতি নেই বরং সমৃদ্ধিটা বাড়বে।
আর যতদূর মনে হচ্ছে প্রাচীন মানুষদের আবাসস্থল, ধ্বনি,বর্ণ,শব্দের মিলটা হয়তো বা একই কিংবা কাছাকাছিই ছিলো।
---কৃতজ্ঞতাঃ বঙ্গীয় শব্দার্থকোষের আলোকে।
২১/০৪/২০১৯
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০৫/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ভালো লাগলো।
 
Quantcast