www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ঘূর্ণিঝড় ফণী

ঘূর্ণিঝড় ফণী
---
মজার একটা লেখা পড়েছিলাম- যে দেশে টিউবওয়েল বসানো দেখতে বিশ বাইশ জন লোক দাড়িয়ে থাকে সে দেশের নাম বাংলাদেশ।আসলে আমার মনে হয়েছে যিনি এটি লিখেছেন তিনি আমরা যে হুজুগে মেতে থাকি তা হয়তো বুঝাতে চেয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের নাম ফনি নাকি ফনী এ নিয়ে বিবাদে নাকি নয়জন আহত হয়েছে- এটিও ওই লেখারই অংশ ছিলো।
ওইদিন আকাশে মেঘ ছিলো,বৃষ্টিও ছিলো কিন্তু কারেন্ট ছিলো না।প্রায় অন্ধকার অফিসকক্ষে আমরা শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের আগমনের অপেক্ষা করছি।আমি পুরোই ভেজা,রিকশায় গিয়েছি,ঝি আসতে লেট করেছে।ওর ছাতা অন্য কেউ নিয়ে গেছে তাই আসতে পারেনি সময়মতো।পৌনে নয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত রাস্তায় দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজলাম,ঝড়োবাতাস কি আর টেডি ছাতায় কুলায়! ভিজে শেষ,ওই ভেজায় আনন্দ ছিলো না।
কারেন্ট থাকলে বাতাসে কাপড় শুকাতো,মশায় কামড়াতো না।এই অবস্থায় আমার এক কলিগ বললো," সাপের গন্ধ আসছে।"
আমি তখন ফোঁস ফোঁস আওয়াজ শুনলাম।
" ফোঁস ফোঁস আওয়াজ পাচ্ছি।"
আমি গম্ভীর কণ্ঠে ঘোষণা দিলাম।
সিনিওর আপা দুজন হেসে উঠলেন।আসলে ওই গন্ধ ছিলো পাতা পঁচার,আর আওয়াজ টা ছিলো বাতাসের।
তাহলে বাতাসও সো সো করে বয় যখন তখন ফোঁস ফোঁস করে- কারণ গতির প্রাবল্য।
যাই হোক এরপরই শুনলাম ফনির কথা, ফনি আসছেন।কখনও ফনি কখনও ফনী।
**
নামকরণঃ
ফনি কেন ফনি বা ফনী সে নিয়ে অনেক লেখাই পড়েছি।ওতে কি আর মজা আছে? আমি নিজে ভেবে কেনো লেখি না?যাক আমি আমার মতো করে ফনি বা ফনীকে জানার চেষ্টা করলাম যা এখন শেয়ার করছি।
**
ঘূর্ণিঝড়ের বিভিন্ন নাম আছে,ভারত মহাসাগরে যা সাইক্লোণ,আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকায় সেটা হারিকেন,আবার প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সেটা টাইফুন।
একটা সময়ে ঘূর্ণিঝড়গুলোকে নাকি নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হতো যা সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য ছিলো না।সেজন্য বিশ্বের অন্যান্য এলাকায় আরও আগে শুরু হলেও ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরবসাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোতেও ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে।
ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে বাংলাদেশ,ভারত,পাকিস্তান,মিয়ানমার,মালদ্বীপ,শ্র
ীলঙ্কা,থাইল্যান্ড এবং ওমান- এই প্যানেলটি WMO/ESCAP নামে অভিহিত।
ফনি বা ফনী নামটির ইংরেজী Fani যার উচ্চারণ হয়েছে ফনি বা ফনী।এই নামটি বাংলাদেশ দিয়েছে।পরবর্তী ঝড়ের নাম হবে ভায়ূ ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী।মোট আটটি নাম তালিকায় আছে - হিক্কা,কায়ার,মাহা,বুলবুল,পাউয়ান,এবং আম্পান।
ঝড়ের নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা হয় তা যেন কোনও ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক কিংবা সামাজিক ভাবে কোনও বিতর্ক বা ক্ষোভের সৃষ্টি না করে।
ঘূর্ণিঝড়ের নাম বিভিন্ন বস্তু বা বিষয়ের নাম দিয়ে নামকরণ করা হয়, তবে নারীর নামে নাম হলে সেটি বেশি মনে রাখে মানুষ যেমন নার্গিস।আর এবার ফনি বা ফনীর নাম আলোড়ন তুললো।
**
ফণ বা ফণা তুলতে পারে যে সেই হলো ফণি বা ফণি- ঝড়েরও ফণা আছে তাই সে ফণি বা ফণী হতে হতো,কিন্তু হয়েছে ফনি বা ফনী- বহু খুঁজেও আমি ফনি বা ফনী পেলাম না,ফণি বা ফণী পেয়েছি।যার অর্থ যে ফণ বা ফণা তুলতে পারে।
ফণ,ফণা/ বিশেষ্য- সাপের বিস্তৃত মস্তক।( অনলাইন ডিকশনারি)
মস্তক হলো মাথা।
বিস্তৃত শব্দের অনেক অর্থ আছে, সবচে কাছাকাছি অর্থ আমার কাছে মনে হলো উন্মুক্ত বা প্রসারিত।
তাহলে ফণ,ফণা অর্থ সাপের উন্মুক্ত বা প্রসারিত মুখ।
সাপ যখন ফণা তোলে মুখটাকে তখন উপরে তোলে প্রসারিত করে,তার মুখ উন্মুক্ত থাকে।
**
সাপ ফোঁস ফোঁস করে,ফোঁস ফোঁস করে গর্জন করে,ছোবল দিতে চায়।
জলপ্রবাহ ফুঁসে উঠে যখন তার প্রবাহ তীব্রগতি পায়।
বাতাস ফোঁস ফোঁস করে যখন প্রচণ্ড বেগ পায়।
অর্থাৎ বাড়তি কিছু বেগ পেলেই বা আঘাত পেলেই ফোঁস ফোঁস করে রাগ প্রকাশিত হয়।
যেমন কারও স্বার্থে আঘাত লাগলে সে ফোঁস ফোঁস করে,ছোবল বা আঘাত দিতে উদ্যত হয়।
কখনও কখনও জনগণও ফুঁসে উঠে ফোঁস ফোঁস করে।
রেগে গেলে বস ফোঁস ফোঁস করেন।
ঘরে গিন্নী ফোঁস ফোঁস করেন।
গরমে তেতে গেলে লোকজন ফোঁস ফোঁস করে।
আছেই ফোঁস ফোঁস আমাদের সাথে।
**
আসলে ফনি বা ফনী বলে কিছু নেই, ওটা হবে ফণি বা ফণী।যদি ক্রিয়াভিত্তিক নিয়মে যাই তবে এখানেও ফ্যাঁকড়া আছে।
ফোঁস ফোঁস করা হলো ফঁ ফঁ করা।
ফঁ= ফণ
ফণ থাকে ফণাতে।
ফণা যার থাকে সে হলো ফণি।
ফণা গতিশীল হয় ফণিতে
ফণির আধার হলো ফণী।
অর্থাৎ ফণি হলো আধেয় আর ফণী হলো আধার।
কাজেই সাপ হলো ফণী।
ফণী ধরে রাখে যে সে হবে ফনিধর।কারণ সমাসবদ্ধ হলে 'ঈ কার ' ' ই কার' এ পরিণত হবে।
কিন্তু আমরা লিখি ফণীধর,ফণীমনসা।
**
ভাষার মূল বা ব্যাকরণ মেনে আসলে অনেক কিছুই হয়না।সেজন্যই ফণী অবলীলায় হয়ে গেলো ফনি বা ফনী।
ফনি বা ফনী এসে এতোটাই আলোড়ন তুলে গেলো আর ইতিহাস হয়ে রইলো আমাদের জীবনে।
নামে কিবা আসে যায়,নামের বড়াইও করতে নেই।
কাজে হলো প্রকাশ।
---ফণীতে কেমন জল জলে ফণা বিস্তার করে!!
-----নামকরণ সংক্রান্ত তথ্যসূত্রঃ কৃতজ্ঞতা যুগান্তর. কম
---০৫/০৫/২০১৯
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৪৪২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৫/০৫/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast