www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মন খারাপের জানালা -০২

মহাবিশ্বকে আমার ভাবনাতে প্রায়ই টেনে আনি।এইযে রাতের আকাশে একফালি চাঁদ উকি দেয় এটা দেখতে যেমন ভাল লাগে এটাকে নিয়ে ভাবতেও রোমাঞ্চ অনুভূত হয়।জ্যোৎস্না রাতে দাদীর সাথে শীতল পাটিতে বসে চাঁদের বুড়ির চরকা কাঁটার গল্প শুনতে ভালো লাগে।আর মনে মনে ভাবি,দাদীটা কত বোকা!চাঁদে বুড়ি আসবে কোথা থেকে?নিল সাহেব যে প্রথম চাঁদে গেলো কোনো বুড়িতো দেখলো না।দাদীর কাছে যখন চাঁদের বুড়ির গল্প শুনি তখন আমি নিতান্ত ছেলেমানুষ।রাবার ঢিলা হাফপ্যান্ট পড়া সাত বছরের সুবোধ বালক।এতো গেলো চাঁদের কথা!এরপর আদম সুরুত,তারাদের ছিটকে পড়া দেখতে দেখতে কখন যেনো ঘুমিয়ে যেতাম দাদীর কোলেই।ঘুমের দেশে চাঁদের বুড়ির সাথে সুতা কাঁটার প্রতিযোগিতায় নেমে যেতাম।অবশ্য সুতা কাঁটাতে আমি অভিজ্ঞতাসম্পন্নই ছিলাম।প্রাইমারিতে পড়াকালীন একটা প্রতিযোগিতা হতো,একটা সমান্তরাল দড়িতে সুতা দিয়ে বিস্কুট বাধা থাকতো।হাত বাধা থাকতো পিছনের দিকে,এবার এক দৌড়ে সুতা সহ বিস্কুট নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে ফিরে আসতে হতো।যে আগে আসবে সেই হতো প্রথম স্থান অধিকারি,তারপল যে আসবে সে হবে দ্বিতীয়।আমার অবশ্য একবার দ্বিতীয় হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো।সেই সুতো কাঁটতে হতো দাঁতে সাহায্যে।তারপরও চাঁদের বুড়ি আমার সাথে সুতা কাঁটায় পেরে উঠতো না।ছিটকে পড়া তারাদের চেয়ে আমি ছিলাম গতিময়।সকালের প্রথম সূর্যটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম অনেকক্ষণ।ভিটামিন ডি সংগ্রহ করার একটা অ্যাম্বিশান ছিলো ছেলেবেলায়।জোয়ার ভাটাতে নাকি অনেকের শরীরেও প্রভাব ফেলতো।তবে আমার বালকমনে সেগুলোকে প্রশ্রয় দিতো না।খুব ছোটবেলাতেই বিজ্ঞানের প্রতি একটা ঝোঁক ছিলো।মাধ্যমিকে শখের বশে নিয়ে নিলাম বিজ্ঞানবিভাগের বই।নিউটন,গ্যালিলিও,আর্কিমিডিসদের পড়তে পড়তে ব্যস্ত সময় কাটাতাম।সামাজিক বিজ্ঞান বইটাতে ভূগোলের যে দুটো অধ্যায় ছিলো খুব করে পড়তে লাগলাম।মহাবিশ্বকে যে জানতে হবে!বিজ্ঞানে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব জানতে গিয়ে লেগে যেতো গিট্টু।মহাবিশ্ব আর জানা হয়ে ওঠে না।দেখতে দেখতে মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে গেলাম মহেশপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে।উচ্চমাধ্যমিকের কলেজটা ছিলো কপোতাক্ষের পাড়ে।মেসে থেকে পড়ালেখা করতাম,আমাদের মেস থেকে কলেজটা ছিলো দশমিনিটের হাঁটা দূরত্বে।কলেজের সামনে মৃতপ্রায় কপোতাক্ষ।কপোতাক্ষ নদের মাঝ বরাবর একটা ছোটধরনের ব্রীজ।বিকেল হলেই চলে আসতাম এখানে,ব্রীজের রেলিং ধরে দাড়িয়ে থাকতাম সন্ধ্যা অবধি।

মহাবিশ্বের খুঁটিনাটি সম্পর্কে ভাবতে থাকি।কোনো কুলকিনারা হয়না।কলেজ লাইব্রেরিতে বসে মোটামোটা বইয়ে ডুবে থাকি।শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, বিজ্ঞানের গতানুগতিক বই পড়ে মহাবিশ্ব জানা যাবে না আমার বরং মানবিক বিভাগের ভূগোল নিয়েই পড়তে হবে।প্রায় সাথে সাথেই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে চলে আসলাম মানবিকে।পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হলো ভূগোল,প্রথম বর্ষে প্রাকৃতিক ভূগোল দ্বিতীয় বর্ষে মানব ভূগোল।কিছুটা স্বস্তি পেলাম তবে যতটা জানা প্রয়োজন ততটা জানা হলো না।সাগর,মহাসাগর,মহাদেশ,জোয়ার ভাটা,বায়ুর স্তর জানলাম কিছুটা।তবে দাদীর কোলে শুয়ে যে মহাবিশ্বকে চিনেছিলাম তার সাথে এর মিল নেই বললেই চলে।রাক্ষস-ভূত-পেত্নিরা মহাবিশ্বের কোথায় থাকে তা আজও জানা হলো না।মহাবিশ্বটাকেও জানতে পারলাম না।

মন খারাপের জানালা -০২ // কামরুজ্জামান সাদ
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৭০৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/১০/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast