এক নিরব অপরাধী

আমি বেশি কিছু চাইনি।
শুধু চেয়েছিলাম কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইচ্ছের পরিপূর্ণতা,
বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের কোমল ঘোরে হারিয়ে যেতে,
পাহাড় সমান ভালোবাসার আশ্রয়ে একটু আশ্বস্ত হতে।

হ্যাঁ, সেই ভালোবাসা—যেটা ছিল শুধুই আশ্বাসে গাঁথা,
যার কোনো ভিত্তি ছিল না বাস্তবতায়,
ছিল শুধু কল্পনার একটানা সুর।
আর আজ আমি
একজন ব্যর্থ মানুষ,
প্রায় মৃত এক অন্তর্জ্বালায় পুড়ে যাওয়া আত্মা।

ভেবেছিলাম, তোমাকে নিয়ে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সৌন্দর্য দেখবো
সবুজের মাঝে হারিয়ে গিয়ে গড়ে তুলবো এক রূপকথা।
তুমি হয়তো ফড়িংয়ের পেছনে ছুটবে শিশুসুলভ দস্যিপনায়,
আর আমি নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবো
তোমার সরলতায় প্রতিবার নতুন করে প্রেমে পড়বো।

ভাবনায় ছিল, তোমার কোলে মাথা রেখে
চাঁদের লুকোচুরি খেলা দেখবো,
জোনাকি পোকার নৃত্য আর ঝিঁঝিঁ পোকার গানে
তৈরি করবো এক মধুর প্রেমের উপাখ্যান।

ইচ্ছে ছিল, শীতের শিশিরভেজা এক ভোরে
তোমাকে নিয়ে হেঁটে যাবো সবুজ মাঠের বুক চিরে,
তোমাকে ঘিরে লিখবো এক প্রেমের কবিতা,
ভেসে থাকা শাপলা ফুলের মতো স্মৃতির টুকরোগুলো দিয়ে
গড়ে তুলবো আমাদের ছোট্ট, কিন্তু অমূল্য এক গল্প।

কিন্তু সে স্বপ্ন কিংবা ইচ্ছে,
কোনোটাই পূরণ হয়নি।
আমি ব্যর্থ হয়েছি—তোমার যত্ন নিতে,
তোমার চোখের ভাষা বুঝতে,
তোমার ক্লান্ত হৃদয়ের পাশে দাঁড়াতে।

আজ তুমি ধুঁকে ধুঁকে পথ হারাও,
অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে ঝরে পড়ে অভিমান আর অভিশাপের শব্দ।
এটাই আমার শাস্তি
আর আমি জানি, এই শাস্তি আমার প্রাপ্য।

কারণ—
আমি একজন খুনি
সময়ের খুনি,
স্বপ্নের খুনি,
ইচ্ছের খুনি।

পিঠে এক রাশ যন্ত্রণার বোঝা,
আত্মগ্লানির ভারে পলাতক আমি।
নিজের কাছেই পরাজিত,
নিজের স্বপ্নগুলোকে নিজেই হত্যা করা
এক নীরব অপরাধী।