www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পাগল হয়ে জীবন কাটানোই শ্রেয়

সেদিন নিজস্ব বাড়ি থেকে মামার বাড়ি যাচ্ছিলাম। আবারও নিজেকে সময়ের মাঝে হারাতে যাওয়া,আবারও ব্যস্ততার হাতে হাত রেখে জীবন চলা। অর্থাৎ এখন যেহেতু পড়াশোনার বয়স তাই মামার বাড়ি থেকেই গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করার জন্য থাকতে হয়। তারপর মাঝে মধ্যে টিউশন করা। তাই আবারও নতুন বছরের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে যাচ্ছি। যদিও নিজ বাড়িতে মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসতে হয়। তো সেদিন মামার বাড়ি ফিরছিলাম। মির্জা থেকে কাকড়াবন তারপর গাড়ি বা বাস ধরে সোজা মেলাঘর। যদিও সচরাচর মির্জার গাড়িটা কম পাওয়া যায় কিন্তু সেদিন হয়তো ভাগ্য করে এসেছিলাম তাই খুব তাড়াতাড়ি কাকড়াবন এসে গেলাম। কিন্তু তখন যতো গন্ডগোল এই কাকড়াবনে। প্রায় আধ-ঘন্টা দাড়িয়ে আছি। গাড়ি আসার কোনো সারা শব্দ নেই। যদিও সেখানে একটা গাড়ি সবসময় কাকড়াবন টু মেলাঘর যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি ওই জিব গাড়িতে উঠিনা। কারন এখন কাকড়াবন টু মেলাঘর রাস্তার যা বেহাল অবস্থা যে কোনো কালো মানুষও যদি ওই গাড়িতে উঠে তাহলে বোধহয় আর কোনো ক্রিম মাখার প্রয়োজন হবেনা। আর আমার এইসব ক্রিম মাখা মাখি একদম ভালো লাগেনা।
হয়তো মেয়েদের মধ্য যারা বেশি মাখা মাখি করে তাদের জন্য এই প্রসেসটা ঠিক হতে পারে। তাহলে হয়তো বাবার কিছুটা আর্থিক সহায়তা হবে বলে মনে করি।
যাইহোক এখনও আমি প্রতীক্ষায় ছিলাম। মনে হচ্ছিলো প্রেমিক হয়ে দীর্ঘ প্রতিক্ষীত প্রেমিকার অপেক্ষায় সময় গুনছিলাম। বড়ো আশ পেতে আছি কখন প্রেমিকা আমার কাছে ধরা দেবে আর আমি কখনই বা তার সাথে প্রেম বিনিময় করবো।
যাইহোক বাস এসে পরেছিলো। আমিও তখন উঠে পরলাম। আর যখনই প্রেম বিনিময়ে ব্যস্ত ছিলাম তখন হঠাৎ আরেকটি প্রেম আমার কাছে এসে ধরা দিলো। হঠাৎ আমি আমার জীবনের এক সুপার হিরো কে দেখতে পেলাম। তা কোনো সিনেমার হিরো নয়। এটা হলো আমার রিয়েল হিরো। ঠিক যেমন ত্রিপুরা বা সারা দেশে সারা জাগানো সেই অরন্য ঈশ্বর স্বপন দেববর্মার মতোই কিছুটা। হয়তো তেমন বড়ো কাজ করেনি কিন্তু সে আমার জীবনের আরেকটি রিয়েল হিরো। বাসে তাকে দেখে মনটা আনন্দে ভেসে গেলো। হয়তো তখনকার অনুভূতিগুলি সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারবোনা। তাকে দেখে চোখ দিয়ে জল বের হওয়ার প্রতিক্রম হচ্ছিলো। লোকটার স্বভাব, চরিত্র আমায় মুগ্ধ করেছিলো। লোকটার সৎ ভাবনা ও সৎ কাজে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। সে আমার জীবনে একজন আদর্শ ব্যক্তি হয়ে আছে।
কিন্তু জানিনা লোকটাকে সবাই কেনো এতো বাজে বাজে কথা বলে। তাকে সবাই পাগল বলে দূরে সরিয়ে দেয়। হ্যাঁ, হয়তো তার পোশাকটা ধূলো আর ময়লায় আচ্ছন্ন , আর প্রায় অর্ধেকের বেশি ছিড়াও ছিলো, গায়ে বিশ্রী একটা গন্ধ, মাথার চুল গুলি জট পাকানো আর রুক্ষ। কিন্তু তার ভেতরটা ছিলো মুলায়ম। সে ছিলো সরল ও অবুঝ মনের মানুষ। কিন্তু তাকে নিয়ে আমার খুব দুঃখ হয় যখন সবাই তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে, তারা তাকে মানুষ রূপে গন্য করতে দ্বিধা বোধ করে। আজকাল ভেতরটা কেউ লক্ষ্যই করেনা, সবাই বাহিরের পোশাক দেখে বলে দেয় সে কেমন মানুষ। সত্যি আমরা এক চমৎকার পৃথিবীতে আছি। তখন জানিনা কেনো নিজেকে মানুষ ভাবতে ঘৃনা করে। মনে হয় এই পাগলের জীবনটাই অনেক সুখের। এ জীবনে না আছে সুখের পরিমান না আছে দুঃখের পরিমান। সবই অজানা।

এইযে লোকটা, তাকে সবাই পাগল বলে কিন্তু আমি তাকে আমার জীবনের আদর্শ একজন ব্যক্তি বা রিয়েল হিরো বলে মানি, তার কিন্তু একটি ঘটনা আছে যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি তা মানি। আমি একদিন "Flipkart" এর অর্ডার আনতে মেলাঘর পাগলী মাসীর ওখানে গিয়েছিলাম। সাথে গিয়েছিলো আমার বন্ধু পরিমল। এবং ওখানে গিয়ে অর্ডার টা হাতে নিয়েই তার কিছুক্ষণ পর যখন দুজন মনের আনন্দে আড্ডা দিচ্ছিলাম ঠিক তখনই আমাদের সামনেই কিছুটা দূরে লক্ষ্য করছিলাম একটি পাগল এসে কি যেন পুড়াচ্ছিলো! লোকটাকে দূর থেকে দেখে কিছুতেই স্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো না। তাই তার কাছে গেলাম ঠিক তখনই এক নির্মম ঘটনার সম্মুখিন হলাম আমি। দেখলাম পাগলটা সকল আবর্জনা গুলি কুড়িয়ে এনে আগুনে ফেলে দিচ্ছে। আবার দেখলাম সে ওই আবর্জনা থেকে একটা নষ্ট জলের বোতল নিলো এবং বোতলটার থেকে অবশিষ্ট জলটা পান করলো। তারপর আবার ওই অবশিষ্ট বোতলটা আগুনে ফেলে দিলো। নিজের চোখে তা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তাই বন্ধু পরিমলকে ডাকছিলাম আর তার সাথে মোবাইল এ ভিডিও করাছিলাম কারন এই ভিডিওটি সমাজের সকল ব্যক্তির একটা মেসেজ হিসেবে গন্য হবে।
এই কাজটির মাধ্যমে সে আমাদের সকল সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে দাঁত কামড়ে বেঁচে থাকা সকল মানব জাতিকে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো যে সমাজের প্রতি আমাদের কর্তব্য কতটুকু। তখন থেকেই সে আমার জীবনের একজন আদর্শ ব্যাক্তি হিসেবে মনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। আর সেও ওই স্বপন দেববর্মার মতো রিয়েল হিরো হিসেবে আমার কাছে স্বীকৃতি পেলো।

এইটা তো আগের ঘটনা। এরপর বাসের সেদিনের ঘটনাটির কথা তো এখনো বলিনি। সেদিন যখন ওকে আবার বাসে দেখেছিলাম তখন শুধু ওকেই সারাক্ষণ লক্ষ্য করছিলাম পরীক্ষায় ছাত্রের নকল করার অভিনয়ে। । দেখতে দেখতে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম তার পাশে একটি সিট খালি ছিলো কিন্তুু তা শর্তেও তিনি সিটে বসেনি। কারন সে জানতো হয়তো এই সিটের মধ্যে বসলে পাশের ভদ্রলোকটা হয় উঠে পরবে আর নাহলে গরুর মতো চেচাঁমেচি করবে কিংবা বাসের কন্ট্রাক্টও। তাই নিরালায় বাসের রডে ঝুলে যাওয়াটাই শ্রেয় মনে করলো। ঠিক এই সময় বাস কন্টাক্ট ভারা নেওয়ার জন্য আমার সামনে হাজির। টাকাটা যেভাবে খুজছিলো মনে হচ্ছিলো স্ট্যান্ড পর্যন্ত এসেই ভারাটা না দিয়ে পালিয়ে যাবো।আমিও একটু বিরক্ত হয়ে মানিব্যাগ থেকে টাকাটা বের করে দিয়ে দিলাম। যাইহোক এখন আবার আমার হিরোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে তাই যেই তাকাচ্ছিলাম অমনি হারিয়ে গেলো সে। নাজানি কখন নেমে পরেছিলো। তখন কন্টাক্টরের উপর ভীষণ রাগ উঠছিলো। কিন্তু কি আর করার। মনটা খারাপ করে খুব নিম্ন স্বরে পাশের লোকটাকে জিগ্যেস করলাম উনি তাকে দেখেছে কিনা। লোকটা ঠাট্টা করে বললো-- "দাদা উনি পাগল তাই পাগলের ঠিকানায় গিয়েছে"। আবার পাশের আরেক ভদ্রলোক বললো -- " দাদা তিনি পাগল হলেও খুবই ভদ্র স্বভাবের। তিনি অনেক আগেই মোহনভোগ নেমে গেছে। এখন তিনি আবর্জনা কুড়িয়ে নিয়ে তা পুড়াবে। তাই এখানে নেমে গেছেন।" আমি কথাটা শুনে আবারও খুব গর্বিত বোধ করলাম। আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমি একাই তাকে শ্রদ্ধা করি কিন্তু আমি ভুল এই ব্যক্তিটার কাছেও সে শ্রদ্ধার পাত্র। আবারও তিনি আমার মনে শ্রদ্ধার আরেক দন্ড পার করলেন। আমি অনেক সময় ভাবি যদি আমরা সকলে মানুষ না হয়ে পাগল হতাম তাহলে এই মায়াবী পৃথিবীতে কখনো হিংসা,বিদ্বেষ, লোভ, স্বার্থ এইসকল কিছুরই মূল্য থাকতোনা। সকলে অবুঝ শিশুর মতো জীবনকে অতিবাহিত করতো। সত্যিই মানুষ না হয়ে পাগল হওয়াটাই শ্রেয় মনে করি।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৪১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৬/০১/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast