www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রোহিঙ্গা ও জাতিসংঘ

রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সামরিক অভিযানসহ ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও গণহত্যা তদন্তে মিয়ানমার সফর করবেন জাতিসংঘের মানবাধিকার দূত ইয়াংহি লি। ৬ জানুয়ারি মেইল অনলাইন পরিবেশিত খবরে বলা হয়, জাতিসংঘের এই বিশেষ দূত আগামী সপ্তাহে ১২ দিনের সফরে মিয়ানমার যাচ্ছেন। আগামী সোমবার থেকে এ সফর শুরু হওয়ার কথা। ইয়াংহি লি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছাড়াও কাচিন রাজ্যও পরিদর্শনে যাবেন। কাচিনে জাতিগত বিদ্রোহী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সেখানকার জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা। উল্লেখ্য যে, গত বছরের মার্চে দেশটির নেত্রী অংসান সু চির দল সরকার গঠনের সময় দেশের শান্তি ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করলেও সেই পথে তারা হাঁটেননি।
উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে কয়েক মাসব্যাপী সামরিক অভিযানের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নেত্রী সু চি ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন। উল্লেখ্য যে, গত বছরের অক্টোবর থেকে রাখাইন অঞ্চল অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। সৈন্যদের নিষ্ঠুর নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রায় ৫০ হাজার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনের এই অবরুদ্ধ অবস্থাকে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি অগ্রহণযোগ্য বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বর্মী সৈন্যদের কর্তৃক সংখ্যালঘু মুসলিমদের গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে লি বলেন, ‘গত কয়েক মাসে রাখাইনে যা ঘটেছে তাতে সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, রাখাইন ছাড়াও কাচিন ও শান অঙ্গরাজ্যে সৈন্যদের সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াই অশান্তি সৃষ্টি করছে।
প্রসঙ্গত এখনে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ চরমপন্থীরাও রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই নিপীড়নের কথা কেউ বলুক কিংবা সমালোচনা করুক তা তাদের পছন্দ নয়। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের সমালোচনা করায় দেশটিতে এর আগের সফরের সময় মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ চরমপন্থীরা ইয়াংহি লি’কে হুমকি দেয় এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এবার মিয়ানমার সফরের সময় তার প্রতি বৌদ্ধ চরমপন্থীরা কেমন আচরণ করে তা অবশ্যই একটি পর্যবেক্ষণের বিষয় হবে। প্রসঙ্গত এখানে প্রশ্ন করা যায় যে, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে তদন্তে জাতিসংঘ এতটা সময় নিলো কেন? রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের যে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে তাতে তো ওরা প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। এতদিন পরে তদন্তে নামলে রিপোর্ট কখন প্রদান করা হবে, আর পদক্ষেপই বা নেয়া হবে কখন? এভাবে কালক্ষেপণ করলে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের কোন অস্তিত্ব থাকবে কী? ইতিহাস বলে, রোহিঙ্গা মুসলমানরা রাখাইনের ভূমিপুত্র। দেশটির ভোটার লিস্টে তাদের নাম ছিল, ছিল তাদের নাগরিক পরিচয়পত্রও। এখন দেখার বিষয় হলো, রোহিঙ্গাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ কতটা সফল হয়। আর ইতিহাসের সত্য অবলম্বন করে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে তো জাতিসংঘের ব্যর্থ হওয়ার কথা নয়।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৮৩৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast