www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি বাসর রাত

মনিটরে একটি মুখ ভাসছে। পেছনে একটা ছায়া। বুঝতে পারছি, নুজহাত এসে দাঁড়িয়েছে। আমি পেছনে তাকাচ্ছি না। এখন রাত দুটো। জরুরি একটা কাজ করছি বলে এখনো ঘুমোইনি। আজ আমাদের বিশেষ একটা রাত। বাইরে থেকে বাসায় এসে দেখলাম, নুজহাত ঘুমিয়ে পড়েছে। আশ্চর্য, এমন রাতে কেউ ঘুমায়! এত প্রশান্তি মেয়েটা কোত্থেকে পেল! নাবিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কিরে, তোর ভাবি তো ঘুমিয়ে পড়েছে। খেয়েছে কিছু?'
'জানি না।'
'জানবি না কেন? একটা মেয়ে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল, আর তোরা কেউ খোঁজ নিলি না?'
'আমরা কি জানতাম যে, সে ঘুমিয়ে পড়েছে? আর এমন রাতে কেউ ঘুমুতে পারে?'
'আচ্ছা, যা।'
'ভাইয়া, ডেকে দিই?'
'না।'
'তোমার রাতটাই মাটি হয়ে গেল।' বলেই নাবিলা মুখ টিপে হাসতে লাগল।
'যা তো, পাজি কোথাকার!'
'যাচ্ছি, যাচ্ছি। আরে বাপরে বাপ, এত রাগ!'
ভাবলাম, নুজহাত যখন ঘুমিয়ে পড়েছে, তাই আমি আমার কাজই করি। কাজে মগ্ন থাকায় এতক্ষণ বুঝিনি— হয়তো অনেকক্ষণ আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে। 'নতুন' বলে আগ বাড়িয়ে কিছু বলতেও পারছে না।
আমি ওয়ার্ডে নতুন একটি ফাইল ওপেন করলাম। সেখানে লিখলাম, 'আসসালামু আলাইকুম!' মনিটরে নুজহাতের ভাবাবেগ পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না। সে কি বুঝতে পারছে, এই সালামটা তাকে উদ্দেশ করেই! নাকি মনে করছে, আমি কোথাও চিঠি লিখছি! মেয়েটার সাথে এর আগে কথা হয়নি। তার মনোভাব, চালচলন কিছুই জানা নেই। প্রথম কথা কি আমাকেই বলতে হবে? কী কথা বলা যায় তাকে? আমি মনিটরে দ্বিতীয় বাক্য লিখলাম, 'হ্যালো! সালামটা যে আপনাকে উদ্দেশ্য করে করা, তা কি বুঝতে পারছেন?' এবার একটু নড়াচড়া হল। হয়তো বুঝতে পারছে।
'কেমন আছেন?' মনিটরে ভেসে ওঠা আমার তৃতীয় বাক্য।
'আমার তো আর কম্পিউটার নেই যে, লিখে লিখে প্রশ্নের উত্তর দেব।'
আরে বাপরে! পুতুলের মুখে খই ফুটেছে! কিন্তু মেয়েটা এমন অভিমান করে কথা বলছে কেন?
'আসলে আমি কাজে একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই সারাদিন আপনার খোঁজ নেওয়া হয়নি। মাফ করবেন।' এবার আমি মুখ খুললাম।
'আমাকে তুমি করে বললে খুশি হব। আর স্ত্রীর কাছে আবার মাফ চাইতে হবে কেন?'
'আচ্ছা, ঠিকাছে। তুমি করে বলা যাবে। কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে কেন?'
'এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আসলে সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুম চলে এসেছিল। নাহয় এমন রাতে কি কেউ ঘুমুতে চায়? কিন্তু কী করব বলুন!'
'আমাকে কি তুমি করে বলা যায় না?'
'আপাতত না।'
'কেন?'
'অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে।'
'ও, আচ্ছা। এখন ওঠলে কেন?'
'হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। দেখলাম, আপনি কম্পিউটারে কী করছেন। তাই ভাবলাম, দেখি।'
'ও। কেন? সন্দেহ হচ্ছিল কিছু?'
'না না। সন্দেহ হবে কেন? এমনি দেখতে ইচ্ছে হল। কেন, আমার কি দেখার অধিকার নেই?'
'অবশ্যই আছে। থাকবে না কেন? ঠিকাছে, এখন ঘুমিয়ে পড়।'
'আপনি ঘুমুবেন না?'
'হ্যাঁ, আসছি। কাজটা শেষ হতে আরেকটু সময় লাগবে।'
'তাহলে একসঙ্গেই ঘুমোই?'
'আচ্ছা, ঠিকাছে।'
'আমি কি আপনার জন্য চা করে নিয়ে আসব?'
'না, এত রাতে কষ্ট করার দরকার নেই। তুমি এমনিতেই ক্লান্ত। তাছাড়া ঘনঘন চা খাওয়ার আমার অভ্যাস নেই। তুমি খাটে ওঠে বসে থাক।'
প্রশান্তির সাথে কাজটা শেষ করে এসে শুয়ে পড়লাম। নুজহাত আমার দিকে মুখ করে আছে, আমি আকাশের দিকে। আকাশের দিকে তো না— ছাদের দিকে।
'সত্যি কথা বললে তুমি কেঁপে ওঠবে!'
'কেন?'
'আমি এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করেছি, যার সম্বন্ধে তেমন কিছুই জানি না।'
'আমিও তো এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করেছি, যার সম্বন্ধে তেমন কিছুই জানি না।'
'এটা তো মেয়েদের ক্ষেত্রে হয়ই। বিয়ের আগে তারা তাদের স্বামী সম্বন্ধে কিছুই জানে না।'
'কেন? এরকম হয় কেন? তাদের কি জানার অধিকার নেই?'
'অবশ্যই আছে। আসলে সমাজ তাদের পছন্দকে এমনভাবে রেখেছে যে, মনে হতে পারে তাদের পছন্দের কোনোই দাম নেই।'
'এমন কেন হয়? তারাও তো মানুষ, নাকি? ছেলেদের পছন্দের মূল্য থাকলে মেয়েদের পছন্দের মূল্য থাকবে না কেন?'
'হুম। তাইতো! পছন্দের মূল্য অবশ্যই সমান হওয়া উচিত।' আমি ভাবনায় ডুবে গেলাম। আসলেই এ সমাজে মেয়েদের পছন্দকে কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। আমার বাবার কথাই ধরা যাক— তিনি তার ছেলের বিয়ের সময় ছেলের পছন্দ, মতামত জিজ্ঞেস করেছেন। এই তিনিই আবার যখন তার মেয়ের বিয়ে দেবেন, তখন তাকে পছন্দ, মতামত কিছুই জিজ্ঞেস করবেন না।...
'কিন্তু আজকাল কিছু মেয়ে নিজেদের পছন্দের ক্ষেত্রে এতটাই সোচ্চার হয়ে ওঠছে যে, যে জায়গায় তাদের পছন্দ মানায় না, সে জায়গায়ও তারা নাক গলানো শুরু করে। অনেক সময় সমাজে তাদের কারণে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে।'
'এখানে অসঙ্গতির মোকাবেলায় অসঙ্গতি প্রকাশ পেয়েছে। তারা যখন সমাজের শৃঙ্খল দেখল, তখন তারা ফুঁসে ওঠল। শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে তারাও কিছুটা অন্যায় হস্তক্ষেপ শুরু করল। তাছাড়া এগুলো তো সব মেয়ে করছে না। এখনো অধিকাংশ মেয়ে তাদের মা বাবার পছন্দকেই প্রাধান্য দেয়।'
'হুম, ঠিকই বলেছ।' আমি লক্ষ করলাম, নুজহাত বেশ যুক্তিনির্ভর আলোচনা করতে পারে। এমন হলে তো মেয়েটার প্রেমে পড়তে আমার বেশিদিন লাগবে না। এমনকি অল্পদিনের ভেতরে হাবুডুবুও খেতে পারি! হাহাহাহাহা!! ... ...
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৬৯২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৬/১১/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুজিত মান্না ২০/১১/২০১৬
    বেশ লাগলো।
  • মানসূর আহমাদ ২০/১১/২০১৬
    সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং সাথে থাকার আহবান জানাচ্ছি!
  • ভালো লেগেছে!
  • ভালো লাগলো।
  • সোলাইমান ১৭/১১/২০১৬
    খুব সুন্দর
  • দারুন
 
Quantcast