www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

তমসায় তামাসা

আজকে কিছুই লিখতে পারছি না। কেন যেন মাঝে মাঝে এমন হয়। তখন খুব ইচ্ছে হয় ডায়েরী লিখতে।
আগে লিখতাম।
সাদা সাদা কাগজ।কালো কালো হরফ।ওর মাঝেই কথা বলে এক জীবন।
কখনো কখনো ডায়েরীও লিখতে পারি না।
তখন কী যে হয়! দুনিয়াটা অসহ্য হয়ে উঠে। আমি লিখতে পারি, তাই লিখি। শুধু নিজের জন্যে।
আচ্ছা! মানুষ কেন লিখে? মানুষের জন্যে?-----মনে তো হয় না।
তাহলে?
আসলে মানুষ লিখে নিজের জন্য। একটা কবির কাছে সেই সবচেয়ে বড় পাঠক এবং সমালোচক কি না!
আমি তাই নিজের জন্য লিখি। কখনো তো ভালোবাসার মানুষটিকে একটা কবিতাও পড়ে শুনাই নি!
এটা কি আমার দোষ? কক্ষনো না। ও ই তো শুনতে চায় নি। বা রে! যদি আমি জানতাম ও কবিতা লিখে, তাহলে কী শুনতে চাইতাম না?
কয়দিন আগের কথা।
সবেমাত্র নিজের টেবিল থেকে উঠেছি। দরজায় কড়া নড়ল।
মাঝে মাঝে মনে হয় দরজায় একটা নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেই। কিছু কিছু সময় আমার কারো সঙ্গ ভালো লাগে না।এমনকি মালতীর ও না। ওকে তো আজকাল ভালই লাগে না!
কেন জানি দু’দিন পর পর প্রিয় মানুষ গুলো বিরক্ত করা শুরু করেছে।
প্রিয় মানুষ!!!
মানুষ? প্রিয়? আমার সবচে’ প্রিয় মানুষটা কে?
কখনো কাউকে এত প্রিয় মনে হয় নি। কাউকে এত আপন মনে হয় না। তাহলে?
হ্যাঁ, বুঝেছি। আমি নিজেই আমার প্রিয় মানুষ।
আচ্ছা, দরজাটার কথা ভুলে গেছি।
দরজার ওপাশে কে? মালতী? নাহ! ওর তো আজ গানের ক্লাস।
আমি আবার গান টান গাই না। কবি মানুষ। কবিতা লিখি আর আবৃত্তি করি। সুর নয়, ছন্দের সনে আমার পিরিতি। এজন্যেই বোধহয় মালতীকে আজকাল বড্ড বিরক্ত লাগে।
মালতী নয়, বোধহয় দুধওয়ালা এসেছে। বেটা নির্ঘাত বাকী টাকা আদায় করতে এসেছে। কিন্তু ওকে তো আমি টাকা দিয়ে দিয়েছি।
তাহলে? আমার কোন গুণগ্রাহী কী এসেছেন?
তাও তো সম্ভব না। আমার কোন কবিতাই তো ছাপাতে পারি নি।
কবিতা ছাপানোর মাঝে কতটুকু আনন্দ? কখনো বুঝতেই দেই নি শালার প্রকাশক রা।
শুধু কি ওরা? পাশের রুমের আহসান,সুধীর। ওরাও দেয় নি।
ওদের হাতে লেখা পত্রিকার জন্যে কত্ত কিছুই না করলাম।
রোদে পুড়ে তারপর শহরের দোকান হতে এক বাক্স রঙ চুরি করে এনেছি।কই? তখন তো বলেছিল ঠিকই কবিতা ছাপাবে।
একটা মাত্র কবিতা ছাপালে কি অন্ন্পাপ হয়ে যায়? এর জন্যে কি আমি বনেদী ঘের ছেলে হেও চুরি করি নি?
চুরি তো আমি করতে চাই নি। অবশ্য ওরাও আমাকে চুরি করতে বলে নি। তাহলে কেন করলাম?
আহসান তো ঠিক ই রঙ কেনার টাকা টা আমার হাতে গুঁজে দিয়েছিল।
হাতে!!!
হ্যাঁ!!, আমার  পাঞ্জাবীর পকেট দুটো বানিয়ে দেয়নি শালা জানোয়ার দরজি। তাই হাতেই নিয়েছিলাম টাকা কয়টা। কিন্তু শহরে বেরুতেই কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
দরজার খট খট শব্দটা বেরেই চলছে। অবাক ব্যাপার ! এখনো বের করতে পারছি না কে আছে দরজার ওপারে!
আর কারো তো এই অসময়ে আসার সুযোগ নেই।
আবার দরজা খুলতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। ইচ্ছে নামক কল্পনা যদি সত্যি ‘সত্যি’ হত; তাহলে কতো মজাই না হতো।
ইচ্ছে হলেই কত কিছু করা যেত। যখন যা খুশি, তাই করতাম।
আচ্ছা, কী কী করা যেত? একটু ভাবি তো।
আমি কি তাহলে কবিতা ছাপাতাম? নাকি দিনের পর দিন কাঁদতাম?
কাঁদতে খুব সাধ জাগছে। কাঁদতে খুবই ভালো লাগে বলে। রবীন্দ্রনাথ এর ফটিকের মৃত্যুতে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল।আমার ভিতরটা এক অদ্ভুত ভালোলাগায় ভরে ছিল তখন।
দরজার ওপাশে কড়া নাড়ার গতি বেড়ে যাচ্ছে। আর ভাববার সময় নাই। দরজা বুঝি ভেঙ্গেই ফেলল।
দরজা টা ভেঙ্গে ফেললে সব শেষ। এখন তো কড়া নাড়ছে, দরজা না থাকলে তো হুট করে ঢুকে পড়ত।তাহলে তো বড় বিপদ হবে।
বিপদকে খুব ভয় পাই বলেই হয়তো বা দরজাটা খুলে ফেললাম।
তিনজন পুলিশ এসেছিল।কিন্তু কেন?
আমার কবিতা গুলো মনে হয় বাটপার প্রকাশক নিজের নামে ছাপিয়ে দিয়ে এখন বিপদে পড়ে আমার নাম বলে দিয়েছে।
না হয়, আহসান,সুধীরের কাজ। বেটা যেই হোক না,সব কটা কে নিয়েই জেলে যাব। এই করলাম প্রতিজ্ঞা , ছাগলের মাথার দিব্যি।
প্রতিজ্ঞা তৈরি হয় ভাঙ্গার জন্য; একদম সত্য কথা। আমিও দিব্যি ভেঙ্গে একা আসলাম শ্রীঘরে।
আমি ওদেরকে কত বললাম এগুলো আমার কবিতা নয়, ওরা কানেই তুলল না।
জেলের বোটকা গন্ধের মাঝে শ্বাস নেয়া দায় হয়ে পড়েছিল।পাশে একটা জিনিয়া ফুলের গাছ থাকলে মন্দ নয়। জেলার কে বলব বলব বলে ঠিক করে রেখেছিলাম।
এর আগেই ওরা আমাকে কোর্টে নিয়ে গেল।কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার দোষ প্রমাণ হয়ে গেল। আমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মেরে ফেলতে আদেশ দেয়া হল।
কবিতাগুলো ছাপা হয় নি। কবিতার দায়েও ফাঁসি হয়নি।ফাঁসি দিল আমায় ভালোবাসা।
মালতীকে হত্যার দায়ে ফাঁসি।
আমি কি মালতীকে হত্যা করেছি? কই না তো। মনে পড়ছে না তো। মাত্র কয়দিন আগের কথা অথচ মনে পড়ছে না!
কয়দিন? নাকি কয় বছর? কে জানে! মনে পড়ছে না। মনই তো নেই। প্রাণও নেই। ফাঁসির দড়িটা কুত্তার মতো কামড়ে আমার প্রাণ্টাকে মেরে ফেলেছে।
আমি নাকি কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কবিতা আওড়াচ্ছিলাম! ঠিকই তো।
কবিতো কবিতাই পড়বেন। কবি গান গাইবেন না।
তবে ওরা যে শুনল আমি নাকি ফাঁসির আগে গান গাইছিলাম!
কে জানে কোনটা সত্য? হয়তো বা ওরা সত্যই বলেছে।
তমসায় বসে আছি। মালতীকে খুব দরকার।
ওকে আজ আর বিরক্ত লাগে না, কেন যেন খুব আপন আর প্রিয় মনে হয়।কিন্তু ও কোথায়?
তমসার মাঝে মালতী কে কোথায় পাই?
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২০১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৮/০৫/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • প্রিয় ১৭/০৭/২০১৬
    আপনার প্রতিভা আছে।গল্পটা পড়তে পড়তে কখন যে শেষ হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না!
  • মেহেদী হাসান ০৫/০৬/২০১৬
    ভালো লিখছেন ভাই ;)
  • অসাধারণ ... অসাধারণ । থিম তো ভালোই কিন্তু পরিবেশন করার ভঙ্গি বিশেষ ভাবে আকর্ষিত বলে মনে হচ্ছে । শুভেচ্ছা রইল ।
  • পরশ ০২/০৬/২০১৬
    ভাল
  • পরশ ৩১/০৫/২০১৬
    আসাধারন
  • suman ৩১/০৫/২০১৬
    স্বাগত !!! অসাধারণ সৃষ্টি ...আরো আরো ...লিখুন নবিন লেখক ......
  • Khub valo laglo
  • প্রবাল ২৯/০৫/২০১৬
    সুন্দর
  • মাঝে মাঝে এইরম হয়!!
    • ফাহিম খান ২৯/০৫/২০১৬
      কি রকম ? :/
  • নীরব ঘোষ জয় ২৮/০৫/২০১৬
    ভালো লিখেছেন
  • লেখার স্টাইল টা ভালো লেগেছে। অনেক টাইপো আছে। শুদ্ধ করে নিতে হবে। তারুণ্যে স্বাগত।
 
Quantcast