www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ৪৬

সুন্দরের আরাধনা
---------------

রাস্তায় একজন অতীব সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আপনি আমি তিনি তারা কেউ সে রকম তাকালই না। নিছক অন্যান্য সাধারণ কেউ দাঁড়িয়ে আছে এমনভাবে দেখে চলে যাচ্ছে।
যদিও এমন সাধারণত হয় না। কিন্তু যদি হয় তাহলে তা আশ্চর্য ঘটনা হবে। মেয়েটি বাড়ি এসে ভাববে আমি কি এমনই খারাপ দেখতে? কোন কৌতূহলী ভাববে, বাপরে! দেশের হল কি? সুন্দরের কদর নেই?
কিন্তু যদি কোন হ্যাণ্ডসাম ছেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে এরকম ভাবনা বা ভাবার কোন অবস্থান সমাজে তৈরি হয় না। হ্যান্ডসাম নিজে কিংবা অন্য কেউ এ ব্যাপারে ভাবেই না।
মেয়ে এবং ছেলে, নারী এবং পুরুষ নিয়ে এই হল আমাদের অবস্থান। যুগ যুগ ধরে এভাবেই সমাজ ব্যবস্থা আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে আছে। সে ছেলে মেয়ে সবার মধ্যে। মানুষের মধ্যে।
প্রতি বছর বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ করে ঈদে পূজোতে যে সব ফ্যাশন আসে তা কেবল মেয়েদের জন্য, মেয়েদের কথা ভেবে। ছেলেদের জন্য যদিও আসে তা খুবই যৎসামান্য। মেয়েদের সাজানোর জন্য পুরো ব্যবস্থা উঠে পড়ে লাগে। ভাবতে থাকে। ভাবাতে থাকে। কিভাবে আরো কত সুন্দর করা যায়, কিভাবে আরো কত মোহময় করা যায়।
ধীরে ধীরে এই ফ্যাশন চিন্তাধারা মেয়েদের কিভাবে চিত্তাকর্ষক করা যায় সেই ভাবনা সুদূরপ্রসারী হচ্ছে। এক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজাইনার সে মেয়ে বা ছেলে যাই হোক না কেন।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত কিছু পোশাক ছিল শুধু সিনেমার জন্য। পারিপার্শ্বিকে সাধারণত দেখা যেত না। দেখা গেলেও তা কেবল ধনী ফ্যামিলিতে দেখা যেত। এখন প্রায় সমস্ত রকমের পোশাক সর্বত্র দেখা যাচ্ছে।
কোন পোশাক পরার পর তার ভেতর থেকে উঁকি মারা কোন দেহের অংশ দেখা গেলে জনমানসে সেটাই বেশি উত্তেজনা জাগায়। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। যেমন সিনেমার নায়িকার একটু ঝুঁকে পড়া দৃশ্যে বেশ ভালই হাততালি পড়ে। হাততালি ছেলে মেয়ে দুপক্ষই দেয়।
কোন বিজ্ঞাপন বা সিনেমায় যৌন উত্তেজনার দৃশ্যে দেহের কিছু কিছু অংশ দেখা যাবে সে রকম পোশাকের সাহায্য নেওয়া হয়। তাতেই বিক্রি বেশি হয়। সে যে কোন প্রোডাক্ট অথবা চলচ্চিত্র যাই হোক না কেন। কেন না, পুরো খুলে ফেলা সবসময় ভাল লাগে না। কিংবা অনেকেই দেখতে চায় না। অথবা উত্তেজনা জাগানোর কাজ করে না। কিছু বিশেষ অবস্থান ছাড়া।
নগ্নতা একটা পর্যায়। যৌন উত্তেজনার জন্য নয়। এখন ফ্যাশনের ক্ষেত্রে যদি এই অবস্থান জন সমক্ষে চলে আসে তাহলে তার অবস্থানটা কি?
ছেলেরা কিছুদিন আগে জামার একটা দুটো বোতাম খুলে রাখত। এখন তো সব বোতাম খোলা থাকে।
এই ভাবনা নিয়ে যদি ফ্যাশন এগিয়ে চলে তাহলে উদ্দেশ্য কি থাকে? আর এই ফ্যাশনে যারা গা ভাসায় বিশেষ করে মেয়েরা তাদের উদ্দেশ্যও বা কি থাকে?
কিন্তু একটু দেখা যাবে যাবে করছে কিন্তু দেখা যাচ্ছে না, এমন অবস্থান বেশি উত্তেজনাপূর্ণ। যারা দেখছে তারা না দেখতে পাওয়া অংশ দেখার মত করে মনে মনে চিত্র আঁকে। এই চিত্র মনের মধ্যে সুর ভাঁজতেই থাকে এবং উত্তেজনার পাহাড় রচনা করে। একসময় এই পাহাড়ে কারো কারো ক্ষেত্রে ধস নামে।
এই ধস কিন্তু পাহাড়ের শক্ত অংশে নামে না। নামে নরম অংশে। অর্থাৎ যেখানে অল্প অল্প শরীর দেখতে পাওয়া দেখা দেখল সেখানে শক্ত ঘাঁটি (মলে, শহরের রাস্তায়, সিনেমা হলে, বিয়ে ইত্যাদি উৎসবে)। তাই স্রোত থেকে গেল মনের মধ্যে।
আর নরম অংশে (নির্জন রাস্তা, ফাঁকা বাড়ি, বড় মাঠ, ধান ক্ষেতে, গ্রামে) সেই ধস প্রবল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ল। অর্থাৎ যেখানে ধ্বস নামল সেখানকার স্রোতের উত্তেজনা পূর্ববর্তীর সাথে কিছুটা হলেও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে।
যা সামাজিকতায় আমরা প্রায়ই ভুল বুঝে থাকি। যারা এইসব ফ্যাশন বহুল, অল্প অল্প দেখা যাওয়া, অন্তর্বাস বাইরে করে (ছেলেদের ক্ষেত্রে দেখবেন জামার ভেতর থেকে গেঞ্জি দেখা যাবেই না। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে বিশ তিরিশ শতাংশের ব্রা দেখা যাবেই) আরো অঙ্গ প্রদর্শিত পোশাক পরে তারা বেশিরভাগই পাহাড়ের শক্ত পাথর প্রদেশে (বেশিরভাগ ধনী অভিজাত নিরাপদ বলয়যুক্ত) বাস করে। তাই তাদের দেখে অনেকের মনের অবচেতনে যৌন উত্তেজনার স্রোত/প্রবাহ/ধারা তৈরি হয়। আর যারা এসবে মধ্যে নেই তাদের (সাধারণ খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত সম্প্রদায়) কাছে এই উত্তেজনার ধ্বস নামে। যা নরম অংশ। যার জন্য শক্ত ঘাঁটি অনেকাংশে দায়ী থাকে।
বর্তমানে পোশাকের যে উদ্দেশ্য তা আমরা অনেকদিন পেছনে ফেলে এসেছি। এখন আর শুধু লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক নয়। তার ছায়ায় দস্তুর ফ্যাশন আমাদের জীবন যাত্রায় চলে এসেছে। তাও অনেকটাই মেয়েদের আরো অপরূপ করার বাসনা নিয়ে।
যে কোন ফ্যাশনে যৌথ ভাবনা (সুন্দর এবং সভ্য/ ছেলেদের ও মেয়েদের) মিশে থাকে ঠিকই, কিন্তু প্রথম প্রায়োরিটি মেয়েদের। তারপরে ছেলেদের। শাড়িই প্রায় একশ দু'শ রকমের তারপর আছে সালোয়ার কামিজ, কুর্তা, স্কার্ট ইত্যাদি প্রায় আরো প্রায় পাঁচশ রকমের। সেখানে ছেলেদের প্যান্ট আর জামা পাঞ্জাবি ইত্যাদি দশ বিশ রকমের।
এবং বর্তমানে পোশাকের ভেদটাও ধীরে ধীরে মুছে দেওয়া হচ্ছে। সব পোশাক সবাই পরছে পরতে চাইছে। যা খুবই আনন্দের ভাবনা।
আগামীকে নিশ্চয় আরো মধুর দিশা দেখাবে। ছেলে মেয়ের ভেদাভেদ আর থাকবে না। নারী পুরুষ সমান সমান।
সমাজে মানুষের অবস্থান কেমন হওয়া উচিত। প্রথমে তার চাই (শুদ্ধ) খাদ্য, তারপর (রুচিশীল) বস্ত্র এবং (সম্মানিত) বাসস্থান। খাদ্যের ক্ষেত্রে এখন নানান প্রকরণ এবং যে যার গলাধঃকরণ। বাসস্থানের ক্ষেত্রে নিজস্ব সুউচ্চতা। অন্য কারো এক্তিয়ার নেই। কিন্তু বস্ত্রের ক্ষেত্রে অন্যের কাছে নিজের বোধের সঠিক পরিচায়ক।
সেজন্যই অনেকক্ষেত্রেই পোষাক বিধি চালু আছে। যেমন ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, ছাত্রছাত্রী, সিক্যুরিটি ইত্যাদি। এসবই মর্যাদার ধারক বাহক। যদিও এসব ক্ষেত্রে কোন বিশেষ জনের কাছে নিজের মর্যাদা। যেমন রোগীর কাছে ডাক্তার, নার্সের ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর। আইনের কাছে পুলিশের, শিক্ষার কাছে ছাত্রছাত্রীর।
কিন্তু যেখানে মানুষ বিন্দাস। মজা করা ঘোরাফেরা বা নিজস্ব কর্মপ্রবাহ, সে রকম ক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষের নিজস্ব মর্যাদার পরিচায়ক হওয়া উচিত এই পোশাক।
পোশাকের বিভিন্নতায় একই অভিনেতা/অভিনেত্রী বিভিন্ন ধরনের অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করে। কখনও রাজা, কখনও উজির, কখনও মন্ত্রী এবং কখনও বা সাধারণ খেটে খাওয়া, ভিখারি। একটাই দেহ তাকে যেমনভাবে প্রোজেক্ট করে তেমনভাবে সে জন সমক্ষে চর্চার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রোজেক্টের জন্য অভিনেতা/অভিনেত্রী মেকআপের সাথে সাথে পোশাকের সহযোগিতা নেয়। তাহলে আমাদের জীবনে পোশাকের গুরুত্ব সেই অনুপাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কেন না সমাজের বুকে অভিনয়ের মত আমারও কিছু সত্যিকারের ভূমিকা আছে। আমি যদি রাণী হই রাণীর মত পোশাক পরব। রাজা হলে রাজার মত। আমাকে যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে খদ্দের জোটাতে হয় তো সে রকম পোশাকের সহযোগিতা নেব। যদি আমি সাধারণ হই তো সেইভাবেই পোশাক পরব। রাজমিস্ত্রির কাজে তো আর হ্যাট কোট বুট পরলে চলবে না।
আবার এই পোশাকের হিসেবে ঘরের ড্রেস, রাতের ড্রেস, অফিস ড্রেস, বিয়ের ড্রেস, সুইমিং ড্রেস, পার্টি ড্রেস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত। একই ব্যক্তি এই রকম নানান ড্রেসে নানানভাবে নিজে নিজেই নিজের কাছে উপস্থিত হয়।
এখন কেউ যদি এই ড্রেস প্রকরণ উলট পালট করে দেয়। রাতকে দিনে, দিনকে রাতে নিয়ে আসে এবং বলে 'আমার মর্জি অনুযায়ী পোশাক ব্যবহার করব, কোন বিধি নিষেধ কেউ চাপাতে পারবে না'। তাহলে তা নিয়ে দুই পক্ষেরই ভাবা দরকার। যে পরছে আর যে/যারা দেখছে। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি 'আপ রুচি খানা পর রুচি প্যাহ্যানা'।
আমি যদি বলি সুইমিং কস্টিউম পরে বিয়ে করব বলি তাহলে কি হবে? শাড়ী বা ধুতি পরে অলিম্পিকে দৌড়ব তাহলে কি হবে?
কেউ কাওকে কোন বিধি বিধান চাপাতে চায় না। যদি তার নিজস্ব বোধ সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। তার দিক থেকে তার বোধ কতটা স্বচ্ছ, কতটা সামাজিক, কতটা সামাজিক না মানা পরোয়াভাব সেই সব ভেবেই বিধান তৈরি হয়।
সামাজিকতার এই রকম বিধানে কিছুটা দমিয়ে রাখার একটা ভাবনা যেমন কাজ করে তেমনি কিছু ক্ষেত্রে একটা বাঁধন তো থাকা দরকার। আবার এই সামাজিক বিধানের নানান অপপ্রয়োগ কিছু আছে। কিন্তু তার জন্য পুরো সিস্টেম বা সামাজিকতাকে দোষ দেওয়া যায় না।
এখন রাতের ড্রেস যদি দিনে বেরিয়ে পড়ে তাহলে পুরুষকে দেখে নারীদের ক্ষেত্রে মনে হয় পাগল ছাগল। কিন্তু এরকম কোন নারীকে দেখে পুরুষের যা হয় তাকে নিজস্ব বোধে অনেকে নিয়ন্ত্রিত করে বা করতে পারে। আবার যারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না তাদের জন্য কি ভাবনা? কেন না প্রাচ্য সংস্কৃতিতে নারী দেহগতভাবে পুরুষের কাছে বেশ আকর্ষিত কিন্তু পুরুষ দেহগতভাবে নারীর কাছে ততটা আকর্ষিত নয়।
তবে প্রাচ্য হোক আর পাশ্চাত্য কিংবা এই বিশ্বে নারী দেহগতভাবে পুরুষের কাছে কোমল পেলব এবং সৌন্দর্য্যমাত্রায় আকর্ষিত। এই ভাবনায় পুরুষ তো বিশ্বাসী তেমনি আমাদের সমাজে নারীরাও বিশ্বাসী। এই ভাবনা জীবন যতদিন থাকবে, সৃষ্টির গূঢ় যতদিন আবর্তিত হবে ততদিন এই ভাবনা জনমানসে থাকবে।
পাশ্চাত্য ভাবনায় অনেক বিস্তার আছে, প্রাকৃতিক, সামাজিক অবস্থান আছে যা প্রাচ্য ভাবনায় নেই।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৭৭৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/১০/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সোলাইমান ২৭/১০/২০১৭
    অনেক ভালো লাগা নিয়ে গেলাম শ্রদ্ধেয় কবি।
    ভালো থাকবেন সতত।
  • অসাধারণ
  • মধু মঙ্গল সিনহা ২১/১০/২০১৭
    অপূর্ব
  • আলমগীর কাইজার ২১/১০/২০১৭
    সুন্দর, ভালো লাগলো।
  • আজাদ আলী ২১/১০/২০১৭
    Valo
 
Quantcast