পাদুকা পূরাণ -রম্য গল্প
আজকে পাদুকা পর্ব । আমার দুটি পাদুকা ছিল, মাস ছয়েক আগের কেনা, উৎকৃষ্ট মানের রেক্সিন দিয়ে তৈরী কিন্তু দেখতে একদম খাটি চামড়ার মতো । দামের সঙ্গে তুলনা করলে এতদিনে একেবারে পয়সা উসুল যাকে বলে তার সবটাই হয়ে গেছে । তবুও এগুলোর উপর একটা মায়া পরে গেছে, প্রথমতঃ কোয়ালিটি , মানে একটুও ছিড়ে নি তার উপর এই ছয় মাস তার উপর যা নির্যাতন হয়েছে সবটাই নীরবে সহ্য করেছে, বর্ষাকালে সাধারনতঃ অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায় কিন্তু তাতেও তার কোন ভ্রূক্ষেপ নেই, পরিসেবায় বিন্দুমাত্র ত্রুটি করেনি কোন দিন । এই হেন দারুণ সঙ্গী হঠাৎ করে নিখোঁজ হলে কার না চিন্তা হয় বলুন ! আমি তো ভীষণ মন খারাপ করে এই পাদুকা উদ্ধারে চিরুনি তল্লাশি শুরু করে দিয়েছিলাম, আর এই তল্লাশি অভিযানের অসাধারন অভিজ্ঞতার কথা বলতেই এই পাঁচালীর সৃষ্টি ।
তবে এবার খোলামেলা ভাবে বলি, গত শুক্রবার শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের এক যৌথ সৎসঙ্গ নামক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গিয়েই এই বিপাকে পরতে হয় আমাকে । অনুষ্ঠানের ভেতরে প্রবেশ করার মুখে অন্যান্য সকলের মতোই আমি আমার পাদুকা জোড়া খুলে রেখে যাই, কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে দেখি সেগুলো নাই, কে বা কারা এই অপহরণ কান্ডে যুক্ত তা আবিষ্কার করার জন্য প্রাথমিক ভাবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেও আবিষ্কার করতে পারলাম না, এমনকি কেউ তার নিজের ব্যবহার অনুপযোগী এক জোড়াও ফেলে যায়নি দেখে যখন তল্লাশি অভিযানে নামলাম তখন জানতে পারলাম কে নাকি দেখেছে দক্ষিন পাড়ার নিতু সরকার আমার জুতো জোড়ার মতোই এক জোড়া জুতা নিয়ে গেছে , এমনটাই সূত্রের সংবাদ । আমি পরদিন সকাল বেলা নিতু সরকারের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম বটে বাড়ির সামনে গিয়ে তো চক্ষু চড়ক গাছ, অনেক মানুষের ভিড় , কারন জানতে চাইলাম, সবাই চুপ, মুখ ব্যাজার করে দাঁড়িয়ে আছে অনেক কিন্তু কেউ কিছু বলছে না । আমি আমার পাদুকা জোড়ার মায়ায় ভেতরে প্রবেশ করলাম, দেখলাম নিতু বাড়ান্দায় বসে আছে, আমায় দেখেই ফুফিয়ে কাঁদতে শুরু করল, সে যা বলল তা এই রকম, ”দাদা, আমি নাকি কালকে ভুলে আপনের জুতা লইয়া আইছি, কিন্তু কি ভাগ্য দ্যাখেন, আমার গোঁসাইয়ের এক আত্মীয় আমডা বাড়িত বেড়াইতে আইছল, হ্যায় আমার বউরে লইয়া ভাইগ্যা গেছেগা, আমি ঘুমেত্তে উইট্টা দেহি নাই, সব লইয়া গেছেগা, আপনেরটিঅ”। অবাক বিস্ময়ে তার কথা শোনে আমি আমার পাদুকা জোড়ার মায়া-মোহ ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসছিলাম এমন সময় রাস্তায় কানুর সঙ্গে দেখা । কানু জিজ্ঞেস করল,’কাহা, কই গেছিলেন ?” আমি সংক্ষিপ্ত ভাবে তাকে ঘটনা খুলে বললাম, সে সব শুনে বলল,”সবই বুজলাম কাহা, কিন্তু আপনের জুতাডি কিন্তু নিতু নিছে না আমি কালকা হুনছি, আমডার ঘরের লগে ভুট্টুর বউ কাইজ্যা করতাছে, জামাইরে কইতাছে, আরেক ব্যাডার জুতা লইয়া আইছ ক্যারে , ঠাকুরের অনুষ্ঠানে কি মদ খাইয়া গেছিলা নি ?” আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাতেই সে আবার বলল,”কাহা, আমার মনে অয় আপনে একবার ভুট্টুর বাড়িত খুঁজ করলে বালা অইব”। আমি তার কথা শোনে একটু ভেবে ঠিক করলাম, বেড়িয়েছি যখন একবার দেখেই যাই, কানুকে মোটর সাইকেলের পেছনে বসিয়ে সেদিকে গেলাম বটে কিন্তু সেখানে গিয়েও আরেক কান্ড । ভুট্টোর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলাম, একটু আগেই ভুট্টোর মা হঠাৎ ষ্ট্রোক করেছে, তাই তড়িঘড়ি মা’কে নিয়ে হাসপাতালে গেছে সে । তবে ভুট্টোর স্ত্রী মন খারাপের মধ্যেও আমার জুতার খোঁজ দিতে গিয়ে জানালো, ভুট্টো অন্য জুতো এনেছে ঠিকই কিন্তু সকাল সকাল কলোনী পাড়ার যদু দা এসে সেই জুতো নিয়ে গেছে , কেননা যদু’দাও নাকি উনার জুতো হারিয়ে বিষণ্ণ হৃদয়ে জুতোর খোঁজে এসেছিল তবে এগুলো উনার নয় জেনেও নিয়ে গেছে, বলেছে, যদি কেউ উনার জুতো নিয়ে আসে তবে সেগুলো ফেরৎ দিয়ে দেবে অন্যথায় নিজেই ব্যবহার করবে । কানু আগ বাড়িয়ে জানতে চাইছিল, তবে ভুট্টো কেন রাখেনি ? জবাবে জানালো, এগুলো ভুট্টোর পায়ের সাইজের সঙ্গে মিলে না, রেখেও লাভ নাই, সেই জন্য রাখেনি ।যাই হোক, আমি আমার তল্লাশি অভিযানে সফলতার মুখ দেখতে না পেয়ে নিরাশ বদনে বাজারে ফিরে এসে কানুকে নিয়ে এক কাপ চা খেতে খেতে আমার প্রিয় পাদুকা জোড়ার গুনাবলী বর্ণ্না করছিলাম । দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি ব্যবহারেও আরামের শেষ ছিল না । ঝড়-বাদল-কাদায় লড়াই করার ক্ষেত্রে এই জোড়ার কোন জুড়ি নেই । এমনিতেই যে মাছটা ধরতে গিয়ে হাত থেকে ফসকে যায় সেটা যে অনেক বড় থাকে সেটা বলাই বাহুল্য । তবে আমার মুখের এই গুনাবলী শোনে কানু যুক্তি দিল, ”কাহা, বাইড় অইছি যহন, চল যদু’র বাড়িত দেইক্যা আই “। দীর্ঘ্য দিনের সঙ্গীর মায়া ছাড়ি বললেই কি আর ছাড়া যায় ! এক মুহুর্তে চোখের সামনে ভেসে উঠলো এই সঙ্গীর সঙ্গে কাটানো সেই দিনগুলোর মধুর স্মৃতিকথা । তাই, যেই কথা সেই কাজ, কানুকে সঙ্গে নিয়েই যদূর বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম, এবারে আর যদুর বাড়ি পর্যন্ত যেতে হলনা, কিছুদুর এগিয়ে যেতেই দেখলাম, যদু তার ভাঙ্গা বাই-সাইকেল নিয়ে এদিকেই আসছে । রাস্তায় থামিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, ভুট্টোর বাড়ি থেকে একটা পলিতিনের ব্যাগে করে জুতো জোড়া নিয়ে এই ভাঙ্গা বাই-সাইকেলে করেই বাড়ি ফিরছিল কিন্তু যাওয়ার পথে কোথায় যে কি করে পরে গেল তা টের পায় নি সে তাই সেগুলো খুঁজতে বেড়িয়ে এসেছে এখন । আমি তার এই কথা শোনে হাসবো না কাঁদবো বুজতে পারছিলাম না তবে সে মুহুর্তেই ঠিক করে ফেলি আমার এই প্রিয় পাদুকা জোড়ার তল্লাশি কাহিনী লিখে রাখবো । যা হোক সেখান থেকে কানুকে নিয়ে ফিরে এসে বাড়িতে বসে হয়রানির গল্পটা বলতে যাচ্ছিলাম এমনি সময়ে মুঠো ফোনে কানু জানালো, “কাহা, যদু নাকি জুতা খুঁইজ্যা পাইছে, আপনেরটির মতোই, এট্টু আইয়েন, আমি বাজারেই আছি, যদুর বাড়িত গিয়া জুতা লইয়া আমু”। আমি কিছুক্ষণ কি ভাবলাম জানিনা তবে কানুর কথায় সাড়া দিয়ে আবার গেলাম, তাকে বাজার থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে যখন যদুর বাড়িতে গেলাম তখন দেখলাম স্বামী-স্ত্রী’তে বিরাট ঝগড়া । সারমর্ম যা বুজলাম, এই জুতো খুঁজতে গিয়ে কানুর আজকের দিনের হাজিরা কাজে যাওয়া হয়নি, তার স্ত্রীর বক্তব্য হলো জুতা না খোঁজে কাজে গেলে হাজিরার অর্দ্ধেক টাকা দিয়ে এক জোড়া নতুন জুতা আনা যেতো তাই কাজ বন্ধ করে এই জুতা খুঁজতে যাওয়া তার ভীষণ অপরাধ হয়েছে ফলে তার শাস্তি স্বরূপ এই জুতা জোড়া একেবারে বাড়ির লেট্রিনের এক পরিত্যাক্ত গর্তে স্থান পেয়েছে । আমার সাধের সেই প্রিয় সঙ্গী এখন পরিত্যক্ত গর্তে হয়তো নতুন সংসার পেতেছে এই ভেবে কাউকে কিছু না বলে মাথা নিচু করে নতুন এক জোড়া কেনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে করতে বাড়ি ফিরে আসছিলাম এমন সময় কানু আমার কাঁধে চাপ দিল, সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, নিতু সরকার চায়ের দোকানে, আমি দাড়াতেই সে জানালো থানায় গিয়ে তার স্ত্রীর বিষয়ে কেইস করে এসেছে, সে নাকি আমার জুতো জোড়ার কথাও এফ আই আরে উল্লেখ করে দিয়েছে , দারোগা বাবু বলেছেন, আমিও নাকি একজন সাক্ষী হতে পারি । পাদুকাপূরাণ যদি এখানেও শেষ হতো তাহলে বোধহয় আমার এই সৃষ্টির প্রচেষ্টা গোঁড়াতেই থেমে যেতো কিন্তু তা হলনা । পরের দিন উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে ডাকা হল, তারা দুঃখ প্রকাশ করে কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে একজোড়া জুতা দান করার প্রস্তাব জানালো আমি নাকচ করে দিয়েছি বটে কিন্তু সেখানেও শেষ হলনা আমার এই পাদুকা পর্ব । সেদিনেই থানা থেকে একেবারে গাড়ি নিয়ে আমার বাড়িতে হাজির দারোগা, ওয়ান সিক্সটি ওয়ান ষ্টেটম্যান্ট নিতে এসেছে , নিতুর বউ অপহরণ কান্ডের আমি নাকি একজন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী । যদিও আমি কিছুই জানি না গোছের কথাবার্তা বলে দারোগা বাবুকে বিদেয় করলাম কিন্তু বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে ভিড় এবং গুঞ্জনের শব্দটা কানে আসলো ঠিক । সবাই গুন গুন করে বলছে, এক জোড়া জুতার জন্য আবার থানায় যেতে হয় নাকি !
তবে এবার খোলামেলা ভাবে বলি, গত শুক্রবার শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের এক যৌথ সৎসঙ্গ নামক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গিয়েই এই বিপাকে পরতে হয় আমাকে । অনুষ্ঠানের ভেতরে প্রবেশ করার মুখে অন্যান্য সকলের মতোই আমি আমার পাদুকা জোড়া খুলে রেখে যাই, কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে দেখি সেগুলো নাই, কে বা কারা এই অপহরণ কান্ডে যুক্ত তা আবিষ্কার করার জন্য প্রাথমিক ভাবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেও আবিষ্কার করতে পারলাম না, এমনকি কেউ তার নিজের ব্যবহার অনুপযোগী এক জোড়াও ফেলে যায়নি দেখে যখন তল্লাশি অভিযানে নামলাম তখন জানতে পারলাম কে নাকি দেখেছে দক্ষিন পাড়ার নিতু সরকার আমার জুতো জোড়ার মতোই এক জোড়া জুতা নিয়ে গেছে , এমনটাই সূত্রের সংবাদ । আমি পরদিন সকাল বেলা নিতু সরকারের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম বটে বাড়ির সামনে গিয়ে তো চক্ষু চড়ক গাছ, অনেক মানুষের ভিড় , কারন জানতে চাইলাম, সবাই চুপ, মুখ ব্যাজার করে দাঁড়িয়ে আছে অনেক কিন্তু কেউ কিছু বলছে না । আমি আমার পাদুকা জোড়ার মায়ায় ভেতরে প্রবেশ করলাম, দেখলাম নিতু বাড়ান্দায় বসে আছে, আমায় দেখেই ফুফিয়ে কাঁদতে শুরু করল, সে যা বলল তা এই রকম, ”দাদা, আমি নাকি কালকে ভুলে আপনের জুতা লইয়া আইছি, কিন্তু কি ভাগ্য দ্যাখেন, আমার গোঁসাইয়ের এক আত্মীয় আমডা বাড়িত বেড়াইতে আইছল, হ্যায় আমার বউরে লইয়া ভাইগ্যা গেছেগা, আমি ঘুমেত্তে উইট্টা দেহি নাই, সব লইয়া গেছেগা, আপনেরটিঅ”। অবাক বিস্ময়ে তার কথা শোনে আমি আমার পাদুকা জোড়ার মায়া-মোহ ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসছিলাম এমন সময় রাস্তায় কানুর সঙ্গে দেখা । কানু জিজ্ঞেস করল,’কাহা, কই গেছিলেন ?” আমি সংক্ষিপ্ত ভাবে তাকে ঘটনা খুলে বললাম, সে সব শুনে বলল,”সবই বুজলাম কাহা, কিন্তু আপনের জুতাডি কিন্তু নিতু নিছে না আমি কালকা হুনছি, আমডার ঘরের লগে ভুট্টুর বউ কাইজ্যা করতাছে, জামাইরে কইতাছে, আরেক ব্যাডার জুতা লইয়া আইছ ক্যারে , ঠাকুরের অনুষ্ঠানে কি মদ খাইয়া গেছিলা নি ?” আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাতেই সে আবার বলল,”কাহা, আমার মনে অয় আপনে একবার ভুট্টুর বাড়িত খুঁজ করলে বালা অইব”। আমি তার কথা শোনে একটু ভেবে ঠিক করলাম, বেড়িয়েছি যখন একবার দেখেই যাই, কানুকে মোটর সাইকেলের পেছনে বসিয়ে সেদিকে গেলাম বটে কিন্তু সেখানে গিয়েও আরেক কান্ড । ভুট্টোর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলাম, একটু আগেই ভুট্টোর মা হঠাৎ ষ্ট্রোক করেছে, তাই তড়িঘড়ি মা’কে নিয়ে হাসপাতালে গেছে সে । তবে ভুট্টোর স্ত্রী মন খারাপের মধ্যেও আমার জুতার খোঁজ দিতে গিয়ে জানালো, ভুট্টো অন্য জুতো এনেছে ঠিকই কিন্তু সকাল সকাল কলোনী পাড়ার যদু দা এসে সেই জুতো নিয়ে গেছে , কেননা যদু’দাও নাকি উনার জুতো হারিয়ে বিষণ্ণ হৃদয়ে জুতোর খোঁজে এসেছিল তবে এগুলো উনার নয় জেনেও নিয়ে গেছে, বলেছে, যদি কেউ উনার জুতো নিয়ে আসে তবে সেগুলো ফেরৎ দিয়ে দেবে অন্যথায় নিজেই ব্যবহার করবে । কানু আগ বাড়িয়ে জানতে চাইছিল, তবে ভুট্টো কেন রাখেনি ? জবাবে জানালো, এগুলো ভুট্টোর পায়ের সাইজের সঙ্গে মিলে না, রেখেও লাভ নাই, সেই জন্য রাখেনি ।যাই হোক, আমি আমার তল্লাশি অভিযানে সফলতার মুখ দেখতে না পেয়ে নিরাশ বদনে বাজারে ফিরে এসে কানুকে নিয়ে এক কাপ চা খেতে খেতে আমার প্রিয় পাদুকা জোড়ার গুনাবলী বর্ণ্না করছিলাম । দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি ব্যবহারেও আরামের শেষ ছিল না । ঝড়-বাদল-কাদায় লড়াই করার ক্ষেত্রে এই জোড়ার কোন জুড়ি নেই । এমনিতেই যে মাছটা ধরতে গিয়ে হাত থেকে ফসকে যায় সেটা যে অনেক বড় থাকে সেটা বলাই বাহুল্য । তবে আমার মুখের এই গুনাবলী শোনে কানু যুক্তি দিল, ”কাহা, বাইড় অইছি যহন, চল যদু’র বাড়িত দেইক্যা আই “। দীর্ঘ্য দিনের সঙ্গীর মায়া ছাড়ি বললেই কি আর ছাড়া যায় ! এক মুহুর্তে চোখের সামনে ভেসে উঠলো এই সঙ্গীর সঙ্গে কাটানো সেই দিনগুলোর মধুর স্মৃতিকথা । তাই, যেই কথা সেই কাজ, কানুকে সঙ্গে নিয়েই যদূর বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম, এবারে আর যদুর বাড়ি পর্যন্ত যেতে হলনা, কিছুদুর এগিয়ে যেতেই দেখলাম, যদু তার ভাঙ্গা বাই-সাইকেল নিয়ে এদিকেই আসছে । রাস্তায় থামিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, ভুট্টোর বাড়ি থেকে একটা পলিতিনের ব্যাগে করে জুতো জোড়া নিয়ে এই ভাঙ্গা বাই-সাইকেলে করেই বাড়ি ফিরছিল কিন্তু যাওয়ার পথে কোথায় যে কি করে পরে গেল তা টের পায় নি সে তাই সেগুলো খুঁজতে বেড়িয়ে এসেছে এখন । আমি তার এই কথা শোনে হাসবো না কাঁদবো বুজতে পারছিলাম না তবে সে মুহুর্তেই ঠিক করে ফেলি আমার এই প্রিয় পাদুকা জোড়ার তল্লাশি কাহিনী লিখে রাখবো । যা হোক সেখান থেকে কানুকে নিয়ে ফিরে এসে বাড়িতে বসে হয়রানির গল্পটা বলতে যাচ্ছিলাম এমনি সময়ে মুঠো ফোনে কানু জানালো, “কাহা, যদু নাকি জুতা খুঁইজ্যা পাইছে, আপনেরটির মতোই, এট্টু আইয়েন, আমি বাজারেই আছি, যদুর বাড়িত গিয়া জুতা লইয়া আমু”। আমি কিছুক্ষণ কি ভাবলাম জানিনা তবে কানুর কথায় সাড়া দিয়ে আবার গেলাম, তাকে বাজার থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে যখন যদুর বাড়িতে গেলাম তখন দেখলাম স্বামী-স্ত্রী’তে বিরাট ঝগড়া । সারমর্ম যা বুজলাম, এই জুতো খুঁজতে গিয়ে কানুর আজকের দিনের হাজিরা কাজে যাওয়া হয়নি, তার স্ত্রীর বক্তব্য হলো জুতা না খোঁজে কাজে গেলে হাজিরার অর্দ্ধেক টাকা দিয়ে এক জোড়া নতুন জুতা আনা যেতো তাই কাজ বন্ধ করে এই জুতা খুঁজতে যাওয়া তার ভীষণ অপরাধ হয়েছে ফলে তার শাস্তি স্বরূপ এই জুতা জোড়া একেবারে বাড়ির লেট্রিনের এক পরিত্যাক্ত গর্তে স্থান পেয়েছে । আমার সাধের সেই প্রিয় সঙ্গী এখন পরিত্যক্ত গর্তে হয়তো নতুন সংসার পেতেছে এই ভেবে কাউকে কিছু না বলে মাথা নিচু করে নতুন এক জোড়া কেনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে করতে বাড়ি ফিরে আসছিলাম এমন সময় কানু আমার কাঁধে চাপ দিল, সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, নিতু সরকার চায়ের দোকানে, আমি দাড়াতেই সে জানালো থানায় গিয়ে তার স্ত্রীর বিষয়ে কেইস করে এসেছে, সে নাকি আমার জুতো জোড়ার কথাও এফ আই আরে উল্লেখ করে দিয়েছে , দারোগা বাবু বলেছেন, আমিও নাকি একজন সাক্ষী হতে পারি । পাদুকাপূরাণ যদি এখানেও শেষ হতো তাহলে বোধহয় আমার এই সৃষ্টির প্রচেষ্টা গোঁড়াতেই থেমে যেতো কিন্তু তা হলনা । পরের দিন উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে ডাকা হল, তারা দুঃখ প্রকাশ করে কমিটির পক্ষ থেকে আমাকে একজোড়া জুতা দান করার প্রস্তাব জানালো আমি নাকচ করে দিয়েছি বটে কিন্তু সেখানেও শেষ হলনা আমার এই পাদুকা পর্ব । সেদিনেই থানা থেকে একেবারে গাড়ি নিয়ে আমার বাড়িতে হাজির দারোগা, ওয়ান সিক্সটি ওয়ান ষ্টেটম্যান্ট নিতে এসেছে , নিতুর বউ অপহরণ কান্ডের আমি নাকি একজন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী । যদিও আমি কিছুই জানি না গোছের কথাবার্তা বলে দারোগা বাবুকে বিদেয় করলাম কিন্তু বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে ভিড় এবং গুঞ্জনের শব্দটা কানে আসলো ঠিক । সবাই গুন গুন করে বলছে, এক জোড়া জুতার জন্য আবার থানায় যেতে হয় নাকি !
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রবিউল হাসান ১৭/০৯/২০২৫জুতা নিয়েও এত সুন্দর করে লেখা যায়! দারুন!
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১৭/০৯/২০২৫নাইস