www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কেতকী ১

কেতকী অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় বসে আছে । অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না ।এবার বিমান কিছু একটা বলে নিশ্চয়ই বিষয়টা এখানেই শেষ করবে এবং হলও তাই । সত্যিই বিমান কিন্তু জানেনা, কেতকীর গোত্র কি ! কেতকীর বংশের পরিচয় বা প্রকৃতপক্ষে সে কোন সম্প্রদায় ! বিমান শুধু জানে, কেতকী নামের একটা অতীব সুন্দরী মেয়ে , সুশিক্ষিতা, আচার ব্যবহারে যথেষ্ট ভদ্র ও শিষ্ট ।অসহায় বলে জানেনা সে ।কেননা যেদিন থেকে বিমানের জীবনে কেতকীর প্রবেশ ঘটেছে সেদিন থেকেই সে দেখে এসেছে অঢেল টাকা আর কেতকীর অ-মিতব্যয়িতা । কিন্তু সেই অর্থের উৎস সে জানেনা, জানতে চায়নি কোনদিন কেননা বিমান নিজেই এক গ্রামের নিন্ম মধ্যবিত্ত সংসারের সন্তান ।অঢেল টাকার বিলাসিতা কোনদিন দেখেনি সে সুতরাং উৎস খুঁজে হয়রান হওয়ার মতো মানসিকতা নেই তার । কেতকীর থেকেই শোনা মুর্শিদাবাদের এক আধা শহরের ঠিকানা এবং সেই সঙ্গে কাল্পনিক ভাবে শান্ডিল্য গোত্রের কথা বলে পুরোহিতের হাত থেকে সাময়িক মুক্তি নিয়ে বিয়ের আচার অনুষ্ঠান সারলো বটে তবে বিমানের মনে মনে হাজার প্রশ্ন রেখে গেলো পুরোহিত । আসলে কেতকী কে ! কি তার পরিচয় ! হিন্দু তো ! ইত্যাদি ইত্যাদি ।একটা অপরাধ বোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল বিমানকে । এভাবে কিছু না জেনেশোনে শুধু মাত্র চোখের ভাল লাগা আর পাশাপাশি সুন্দর কয়েকটি দিন যাপনের আবেগ দিয়ে চিরদিনের জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া কি ঠিক হল ! নাকি এই অকস্মাৎ সিদ্ধান্তের জন্য সারাজীবন পস্তাতে হবে ! সে যাকগে, ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না -বিমান নিজেকে এভাবেই আরেকবার বুজানোর চেষ্টা করলো । অতঃপর বিমানের সাজানো ছোট্ট টিনের ঘরে ঠাঁই হলো কেতকীর । এখন তারা গ্রামের বিশুদ্ধ নিয়ম আচারে স্বামী -স্ত্রী । ঘরে ঢুকেই কেতকী তার নিজের লাগেজ থেকে নিজের সমস্ত স্বর্ণালঙ্কারের একটি ছোট বাক্স বিমানের মায়ের হাতে তোলে দিল ; মিষ্টি সুরে শাশুরী মা'কে প্রণাম করে অলঙ্কার গুলো যথাস্থানে সংরক্ষিত রাখার কথা বলে মা'য়ের মন যে যথেষ্ট সন্তোষ্ট করতে পেরেছে তা কিন্তু বিমান তার মায়ের গদগদ চেহারা দেখেই বুঝে গেলো । আরেকটা ছোট বাক্স থেকে সবটা না হলেও বেশ কিছু টাকা বিমানের বাবাকে ডেকে প্রণাম করে হাতে তোলে দিয়ে বললো একেবারে বড়সর না হলেও মোটামুটি একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা দরকার । গ্রামের মানুষকে খাওয়ানো যে গ্রামের বৈবাহিক রীতির একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ সেটা কেতকী ভাল করেই জানে । বিমানের চোখ ছল ছল করছিল, এ সময়ে যে কাজটা তার নিজের করার কথা সে কাজটা করছে কেতকী । যাই হোক, বাবা হয়ত এখনো বুজে উঠতে পারেনি টাকাগুলো কার কিন্তু এই নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্ত্তা হিসাবে সামনের এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার বিষয়ে যে খালি হাতে উনি খুব চিন্তিত ছিলেন এবং এখন এই টাকাগুলো পেয়ে বেশ চিন্তামুক্ত হয়েছেন সেই ঔজ্জ্বল্য চোখে মুখে বেশ ফুটে উঠেছে ।এছাড়াও বিমান জানতো না যে কেতকী বেশ কিছু মিষ্টি ও ফল এবং বাচ্চাদের জন্য কিছু চকলেট সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে । এগুলো বিলি বন্টনে কেতকীর সাবলীলতা দেখে চোখের কোনে জল জমে গেল বিমানের । একটা দীর্ঘ্য শ্বাস বেড়িয়ে এল ভেতর থেকে । চোখ বুজে একটা আত্মতৃপ্তি উপলব্ধি করলো সে, 'না কোন ভুল করেনি, এত সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল ভাবে যে মেয়ে সকলের মন জয় করতে পারে তাকে জীবন সঙ্গী করে সে মোটেই ভুল করেনি' । বিমান চোখ বোঝেই বুজতে পারছে এবার কেতকী তার দিকে চেয়ে আছে । কেতকীর গায়ের পারফিউমের গন্ধটা নাকে লাগছে, কাঁচের চুড়ির ঝন ঝন আওয়াজ, নূপুরের রিনিঝিনি বিমানকে অন্য এক জগতে হাতছানি যখন দিচ্ছিল, কান পেতে শোনতে পেল, কেতকী তার কানের কাছে এসে আস্তে করে বলছে ,"কি গো ! চোখ বোঝে কি ভাবছো !" ?

'কই , না তো, কিচ্ছু না' বলেই বিমান একটু সরে গিয়ে বসলো যেন কেতকী খাটের কিনারায় তার পাশে বসতে পারে ।

আরেকবার কাঁচের চুড়ির ঝন ঝন আওয়াজ, নূপুরের রিনিঝিনি শোনিয়ে কেতকী গিয়ে বসলো বিমানের পাশে, পিঠে হাত রেখে ক্লান্ত স্বরে বলল , 'এবার ফ্রেশ হওয়া যাক, কি বল' !

বিমান টের পেল হাতের এই স্পর্শ অন্য দিনের মতো নয়, এই কোমলতায় এক অন্য বার্তা বহন করে । 'হ্যাঁ চল' বলেই দুজনে দুজনার বাড়তি কাপড় চোপর নিয়ে পুকুর ঘাটের দিকে রওনা হল ।

যদিও পেছন পেছন আরো কয়েকজন আসার চেষ্টা করছিল কিন্তু দুজনের বারণ শোনে আর কেউ আসে নি । পুকুর টা বাড়ির সীমানার বাইড়ে একটু নীচু জমিতে, পুকুর পাড়ে সারি সারি সুপারি গাছ, জলের সঙ্গে মিশে আছে একটা হিজল গাছ, বেশ কিছু ব্যাঙ বসে থাকে হিজলের ডালে, যদিও কোন কোন সময় কচ্ছপের ছোট ছোট বাচ্চাও বসে থেকে কিন্তু এখন নেই, দুজনকে দেখে ব্যাঙ্গগুলো লাফিয়ে পরল জলে । কেতকী আস্তে আস্তে নতুন বেনারসী নিয়ে জলে নামলো, বিন্দু মাত্র আড়ষ্টতা নেই, যেন বহুদিনের চেনা এই জলাধার । বিমান বুজতে পারলো কেতকী পুকুরের দেশের মানুষ, পুকুরের জলে স্নান করার আনন্দ কেতকীর চেনা জানা । তাই আর কোন কথা বাড়াল না সে । কিন্তু পেছন থেকে লক্ষ্য করলো কেতকীর পিঠের গায়ে শত শত নখের আঁচর । কতক শুঁকিয়ে গেছে আবার কিছু কিছু আঁচর যেন সদ্য । জানতে চায়নি সে, যেমন করে গত দু বছরে কিছু জানতে চায়নি, আজকেও জানতে চাইল না বিমান । মনের মধ্যে পোষে রাখে সে, পুরোহিতের প্রশ্নগুলোর মতোই । কেতকী স্নান সেরে পুকুর পাড়ে কাপড় পাল্টাতে পাল্টাতে বিমানের স্নান শেষ দুজন ঘরে ফিরে গেল । এবার সামনে প্রচুর কাজ আবার প্রচুর বিশ্রামের প্রয়োজন । কোনটা কিভাবে করবে তার একটা নক্সা তৈরী করছে বিমান ।কেতকী আপন মনে আয়নাটা হাতে নিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সিঁদুর পড়ছে সিঁথিতে ।

...............চলবে ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২১৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/০৩/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর
  • তরুন ইউসুফ ১২/০৩/২০২৩
    দারুন
  • শুভজিৎ বিশ্বাস ১১/০৩/২০২৩
    অপেক্ষায় রইলাম।
  • পড়তে থাকি।
 
Quantcast