www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মুক্তিযুদ্ধ-মুক্তিযোদ্ধা ও কিছু সমসাময়িক প্রসঙ্গ

একটা কথা দিয়ে লেখাটা শুরু করি। শুরুতে কবিতা। মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আর দেশপ্রেমের কবিতা কি রাজনৈতিক? মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা কি রাজনীতি? দেশপ্রেমের কথা বলা কি রাজনীতি করা? অনেকে বিষয়গুলো গুলিয়ে ফেলেন। আমি মনে করি না এগুলো রাজনীতি। তবে এর ভিতরে চেতনা, সমাজ সচেতনতা, বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং শেষ বিচারে রাজনীতির গন্ধ/সৌরভ থাকবেই। কিন্তু এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো আপাতঃদৃষ্টে রাজনৈতিক মনে না হলেও সেটার পিছনে গুঢ় রাজনৈতিক ভাবাদর্শ আছে। আমি সে রকম একটা প্রসঙ্গ দিয়ে মূল কথাগুলোতে প্রবেশ করি।

১)   আল্লাহ্‌ হাফেজ, হিজাব ও বোরখা

আমাদের পূর্বপূরুষরা ‘‘খোদা হাফেজ’’ দিয়ে কথা শেষ করতেন, যেমন পত্রের শুরু করতেন ৭৮৬ বা এলাহী ভরসা ইত্যাদি শব্দ বা সূচক দিয়ে। কিন্তু এখন অনেককেই দেখি শেষে বলছেন ‘‘আল্লাহ্‌ হাফেজ’’। এটা রাজনৈতিক আবিষ্কার এবং কায়দা করে মানুষের মুখে ঠেসে দেয়া। গেলানো। খোদা হাফেজ বললে কি আল্লাহ্‌ হাফেজ বলে যা বলতে চেয়েছি, তা বলা হয় না? হয়। কিন্তু এখন একদল লোক বলছে আল্লাহ্‌ হাফেজ বলতে হবে। হাবিল-কাবিলের মারামারির এজনের লাশ নিয়ে অন্যজন চিন্তিত। লাশ নিয়ে কি করবে বুঝতে পারছে না। তখন দেখা গেল একটা কাক আরেকটা ককের মৃতদেহ সৎকার করছে। ঠোঁট দিয়ে মাটি খুঁড়ে গর্ত করে তাতে কাকের মৃতদেহ রেখে মাটি দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে। তা দেখে ওরা শিখে গেল মানব দেহ কিভাবে দাফন করতে হবে। একইভাবে একদল লোক নিজেরা খোদা হাফেজকে দাফন করছে আল্লাহ্‌ হাফেজ দিয়ে। নিজেরা বলাবলি করে অন্যদের শিখাচ্ছে, বলছে এইভাবে বলতে হয়। আর আমরা বলছি। এরা আমাদের মুক্তিযদ্ধের বিপরীত শক্তি এবং এটা তাদের শেখানো বুলি যা তাদের নিজস্ব কারখানায় বানানো।

আমি অনেক দেশের মুসলামনের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্বের প্রায় ১৫-১৮ দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা খোদা হাফেজ বা আল্লাহ হাফেজ শব্দদ্বয় ব্যবহার করেন না। দেশ সমূহের মধ্যে আছে, তুরস্ক, সিরিয়া, ওমান, ইয়েমেন, মিশর, জর্ডান, ফিলিস্তীন, ক্রোয়েশিয়া, জিম্বাবুয়ে, জিবুতি, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, কাজাখস্তান, ভারত, উজবেকিস্তান, মরক্কো-অারো অনেক দেশ। তাতে কি আল্লাহ্‌ অসন্তুষ্ট হন। কাজেই খোদা হাফেজ এর বদলে আল্লাহ হাফেজ চালু বা এলাহী ভরসা বা ৭৮৬ এর বদলে অন্যকিছুর প্রচলন...ভিন্ন চিন্তা থেকে উৎসরিত। এর পিছনে রাজনীতি ভিন্ন কিছু নেই। এটি দেশীয় সংস্কৃতিবিরোধী অপতৎপরতা ও জনমানসে ভিন্ন চিন্তা প্রবেশ করানোর পাইলট স্কীম। ছিল। এখন প্রায় চালু হয়ে গেছে । এর পরের স্কীম হলো শাড়ীর বিরুদ্ধে বোরখা বা হিজাব এবং  সালোয়ার কামিজ প্রচলন। এটা আবহমান কালের বাংলা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অন্য কিছু সুকৌশলে চাপানোর প্রবণতা ভিন্ন কিছু নয়।

তাই, আসুন, নতুন শব্দের আমদানি রহিত করি! নতুন চাল-চলন ও পোষাকরীতির ইনজেকশন/প্রবর্তন সজ্ঞানে পরিহার করে আবহমানকালের বাংলার পোষাক, আচরণ ও ভাষারীতিকে লালন ও পরিপুষ্ট করি। অন্যকোন কিছু আবৃত্তি নয়, কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি করি। আপনার আমার মনের কথা আপনার আমার মতো করে বলতে পারে কবিতা। সেটা আবৃত্তি করে মনের যন্ত্রণা দূর করি। বাংলা কবিতাকে ভালোবাসি এবং বাংলা ভাষাকে বুকের মাঝখানে পুনরায় ভালবেসে স্থান দিই।

২)   বাঙালী ও বৃদ্ধাশ্রম

বৃদ্ধাশ্রম আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয়। আমাদের বাঙ্গালীর বাবা-মা রা তাদের সন্তানদের বুকে করে লালন-পালন করেন, সেবা-শুশ্রুষা, যত্ন-আত্তি করেন, ঘরে লালন করেন, বড় করেন, ছেলে/মেয়ের চাকরীর জন্য এমনকি মেয়ের সুখের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে জামাই-এর চাকরীর জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করেন। আর আমরা বড় হয়ে যখন প্রতিষ্ঠিত ও স্ত্রী-সন্তান পেয়ে পিতা-মাতাকে বর্জন করবো, তখন কি আমরা বাঙ্গালী থাকি, না মানুষ থাকি?

না, আমারা বাঙ্গালীও থাকি না, মানুষও থাকি না। আমরা অমানুষ হয়ে যাই। যে সব সন্তানের বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হয়, সামান্য ব্যতিক্রম বাদে, তাদের সন্তানের শিক্ষা-মন-মানসিকতা নিয়ে আমার, অবশ্যই একান্ত ব্যক্তিগত, প্রশ্ন রয়েছে। এই সন্তানেরা সুযোগ্য হিসেবে গড়ে ওঠেনি বলেই আমার বিশ্বাস। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বাবা-মাকে ওল্ড হোমে ট্রান্সফার কু-মানসিকতার পরিচয়। এসব লোক অতিমাত্রায় স্বার্থপর। এরা অবাঙ্গালী মানসিকতা আক্রান্ত ও এদের পরিণতি অশুভ।।

৩)   কোটা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা

মুক্তিযোদ্ধার কোটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের মধ্যে দু’দল ছিল। সারাক্ষণ কক-ফাইট চলতো।

একদল বলতো ‘‘মুক্তিযোদ্ধার কোটা উঠিয়ে দেয়া উচিত। একদল বলতো কোটার-ই প্রয়োজন নেই। লড়াই এর ময়দান সমতল হোক মেধাবীরা স্থান পাবে, তাহলে। কোটার মাধ্যমে কম মেধা সম্পন্ন লোকেরা চাকরীর ময়দান দখল করছে। এরা আর দেশকে কী দেবে। অযোগ্যদের দিয়ে দেশের কোন উপকার হতে পারে না। এরা সবকিছু গুবলেট করে ফেলবে।’’

আমি অবশ্য কোটার পক্ষে। আমি বলতাম, ‘‘ব্যাপারটা এমন হলো না, কোটা সিস্টেমের কল্যাণে আমি আমার কোটা পূর্ণ করার পর যখন কোটা দিয়ে আর চাকরীর বাজারে ঢুকতে পারছি না, তখন বলছি, না আর কোটার দরকার নেই, এখন কোটা তুলে দাও। মানে, মনের ভিতরে এই আকাঙ্খা, আমার কোটা খাওয়া হয়েছে, এখন মেধার কথা বলে কোটা তুলে দিয়ে আপনার ভাগের খাবারটুকু খাওয়ার পাকা ব্যবস্থা করি।’’

তাদের প্রশ্ন করি, ‘‘যখন তোমার কোটা সিস্টেমে চাকরী হলো, তখন বলোনি কেন কোটা দরকার নেই? রাষ্ট্র কি শিক্ষা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে দেশের সব কর্ণারের সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি বা সম্প্রসারণ করতে পেরেছে। গ্রামের একজন কৃষকের বা দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তান বিকশিত হবার জন্য শহরের একজন মাঝারি মানের সন্তানের সমান সুযোগ পায়? আর আর্থিক পারঙ্গমতার কথা না হয় নাই-ই বললাম।’’ তারা এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যেতেই পছন্দ করেন। আসলে তাদের মূল টার্গেট ছিল, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা অপসারণ’’। কারণ, এতে মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের বংশ বুনিয়াদ সিভিল সার্ভিসে বা সরকারী বেড়ে যাবে। এতে অসুবিধা কি না! কোটা তো কেবল মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে না, মহিলা, উপজাতি, প্রতিবন্ধী আরো অনেক ক্ষেত্রে। অনগ্রসর শ্রেণিকে অগ্রসর শ্রেণির সমানতালে এক প্লাটফরমে তুলে আনার জন্য কোটা ব্যবস্থা সারা পৃথিবীতেই আছে। এটা একটি রাষ্ট্রের ‘‘ক্ষতিপূরণ’’ ধরণের উদ্যোগ। এটা বহাল রাখার পক্ষে আমি। তখনও সোচ্চার ছিলাম, এখনো আছি। পৃথিবীর সব দেশেই এরকম পদ্ধতি আছে, থাকবে, থাকা উচিত সব সময়। কারণ, রাষ্ট্রের পক্ষে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।

তবে বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধদের ৩য় প্রজন্মকে এই সুবিধা দিতে হবে.....আমি এই চিন্তার শতভাগ সমর্থক নই। এটা সীমিত পরিসরে করা যেতে পারে, অবশ্যই বৃহৎ পরিসরে নয়। এটা রিথিঙ্ক করা যেতে পারে।

আর যারা মেধায় কম তারা কি রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা সমানভাবে পাবার অধিকার রাখে না? সব কিছু মেধাবীদেরই দিতে হবে? কম মেধাবীরা পাবে না? এটা হতে পারে না। দেশের প্রত্যেকে নাগরিকের সমান অধিকার লাভের জন্য সংবিধানে ব্যবস্থা ও স্বীকৃতি আছে। আরো একটা বিষয়, মেধাবী হলেই দেশপ্রেমিক হবে, তার কাছ থেকে দেশ সর্বোচ্চ সুবিধা পাবে, এমন গ্যারান্টি কি আছে? না, নেই।

কিছুকাল আগে এক অতিরিক্ত সচিব ও কয়েকজন যুগ্ম-সচিবের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, এই বিষয়টা নিয়ে। অতিরিক্ত সচিব বলছিলেন, ‘‘সরকারী চাকুরেদের মধ্যে যারা কম-পড়্হ আদমী, একটু কম পারেন, তারা গায়ে গতরে খেটে, চিন্তা-ভাবনা করে, পরিশ্রম করে কাজ করেন। কিন্তু যারা ডক্টরেট বা অধিক জ্ঞান বা যোগ্যতা সম্পন্ন, দেশ-বিদেশে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, তারা কোন কাজ পারেন না।’’
আমি বললাম, ‘‘না পারলে বিদেশী রাষ্ট্র বা সরকার বা সংস্থা তাদের ডিগ্রী প্রদান করলো কি ভাবে? তারা অবশ্যই পারেন।’’
তিনি বললেন, ‘‘তাহলে কেন করেন না, আমি বুঝতে পারি না।’’ আমি বললাম, ‘‘তারা করতে চান না। বা করার দরকার মনে করেন না। না করেই যদি পুরষ্কার পাওয়া যায় তো কষ্ট করে কাজ করবেন কেন? কেউ কেউ হয়তো ভবিষ্যৎ কনসালটেন্সীর জন্য বুদ্ধি জমা করে রাখছেন!’’
কথার এ পর্যায়ে আরেকজন যুগ্ম-সচিব বললেন, ‘‘বিষয়টা এমনও হতে পারে, তারা আমাদের এই ফাইল চালাচালি বা সরকারী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তাসম্মত মতামত দেয়াটাকে তাদের মেধার পক্ষে যোগ্য কাজ মনে করেন না, ভাবেন এত ছোট বিষয় নিয়ে এত বড় মেধা কাজ করা উচিত নয়, তারা ভাববেন বড় বড় বিষয় নিয়ে….ইত্যাদি।’’

আলোচনার শেষে কনক্লুসন হলো তাই, এইসব কেউকেটাদের রাষ্ট্রের/সরকারের ক্ষুদ্র জ্ঞানের বিষয় নিয়ে ভাবলে চলেনা। কাজেই মেধাবী হলেই যে সর্বোচ্চ সেবা পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। আবার ভিন্ন চিত্রও দেখা যায়, অযোগ্যরা যোগ্যদের জন্য উপযুক্ত চেয়ার হোল্ড করে বসে সব লেজেগোবরে করে ফেলছেন। তাই নয় কি? কাজেই ঐ একই পুরান কথা। মাঝারি দিয়েই সবচে ভালো সেবা পাওয়া যায়। উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে, তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে। বলা বাহুল্য, মধ্যমাই সমাজে বেশি এবং তাদেরকেই কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। কাজেই মেধার সাথে দেশপ্রেমিকও চাই।

৪)   মুক্তিযোদ্ধার সম্মান

বাংলাদেশ কি মুক্তিযোদ্ধার যোগ্য সম্মান দিয়েছে? সম্মান জিনিসটা চেয়ে আদায় করতে হয়? ভাই আমারে একটু সম্মান করুন, ভাই আমারে একটু খাতির করুন…বিষয়টা এমন নয়। এমন যদি দেখা যেত রাষ্ট্র প্রতিবছর নির্দিষ্ট সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধাকে নিজ দায়িত্বে খুঁজে বের করে এককালীন থোক হিসেবে ৫-১০ লাখ করে টাকা দিচ্ছে, কোন রকম তদবীর আবেদন ছাড়াই, তাহলে বলা যেত মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানীত হচ্ছে। এমন চিন্তা করাও পাপ। দেয় মাসে হাজার দশেক টাকা সেটাও রাষ্ট্রীয় ভিক্ষার মতো। ঘুরতে হয় অমুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি উদাসীন, অশ্রদ্ধাশীল ও অজ্ঞ ব্যক্তিদের মাধ্যমে/কাছ থেকে। এটা কি আত্মসম্মানহানিকর নয়!

আর শহীদদের কথা বলবেন? তারা তো মরে গিয়ে খালাস। মুক্তিযুদ্ধ কি বুঝেছে তাদের পরিবারের সদস্যরা। রাজাকার আলবদর (আসলে আল-বাঁদর), শান্তি কমিটির লোকজন---তারা কেউ ১৯৭১ এ/মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। বরং লাভবান হয়েছে। না-না-ভা-বে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার, বাংলাদেশের নিরীহ, খেটে খাওয়া, গরীব সহজ সরল মানুষ। যুদ্ধের বিভীষিকা কি তা তারা জানত না। যারা একটি মুরগী জবাই করতে ভয় পেত, তারা নিজ চোখে দেখেছে মানুষ জবাই। শীতল সরোবর থেকে একেবারে জ্বলন্ত উনুনে পড়ে তারা বুঝেছে এটা কি? এই ট্রমা কি তারা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে? না পারেনি। এই যখন তাদের অবস্থা তখন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা আদায় করার যোগ্যতা তাদের কোথায়! আজ যখন কেবল খানিকটা ঘুরে দাঁড়াবার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তখন নতুন নতুন ফর্মূলা হাজির হচ্ছে, কোটা তুলে দাও, নতুন করে তালিকা তৈরি কর, তালিকা যাচাই-বাছাই কর। ইত্যাদি।

৫)   বদলে যাওয়া দৃশ্যপট

আমরা সকলেই জানি ১৯৭৫ এর আগষ্ট ট্রাজেডীর পর দেশের ও সমাজের, শাসন যন্ত্রের ও মননের চাকা কোনদিকে ঘুরেছিল! যারা একাত্তরে পরিকস্তান সরকার বা আর্মীর সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিল তারা ১৯৭১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল দাপটের সঙ্গে। তারা ৭২-৭৫ সালে ছিল বেশ বদল করে, পালিয়ে বা মুজিবকোট বাহিনী সেজে বা বৈজ্ঞানীক সমাজতন্ত্রী সেজে। এইসব সমাজতন্ত্রীদের বগলের নিচে বৈজ্ঞানীক সমাজতন্ত্রের স্লোগানের আড়ালে ছিল ছাত্র সংঘ আর জেআইবি, মুসলিম লীগের তরুণরা। কিন্ত... বহাল তবিয়তেই ছিল। এজন্য দেখা যায় ছাত্রলীগ ভেঙ্গে নবগঠিত জাতীয় সমাজমান্ত্রিক দল (জাসদ) রাতারাতি বড় হয়েছিল, ফুলে ফেঁপে বটগাছ হয়েছিল। কিন্তু ৭৫ এর জঘণ্য ও অমানবিক ঘটনার পর রাতারাতি জাসদের একরকম বিলুপ্তি ঘটে। বিপরীতে রাতারাতি গঠিত হয় ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি/ লীগ(আইডিপি/এল) (মাওলানা আব্দুর রহীম) ও পরে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। পাশাপাশি জামাতের বাইরে বাংলাদেশ জাতীয় দল (বাজাদল) ও পরে Bangladesh Nationalist Party (BNP) বা বিএনপি। জাসদ লুপ্ত হয় তখন। আর শুরু হয় ভোটের বাক্সে লাথি মেরে সমাজতন্ত্র কায়েম করার দল (ন্যাপ ভাসানীর খন্ডাংশ, বদরুদ্দীন উমর) নকশালদের গলা কাটা বা স্পট কিলিং বা শ্রেণি শত্রু নিধনের রাজনীতি। এখন তার একটি ভিন্ন ভার্সন দেখা যাচ্ছে আইএস, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, আনসার আল ইসলাম ইত্যাদি নামে। তখন সমাজতন্ত্রের বুলি ছিল তাদের রক্ষা কবচ। আর এখন ইসলাম কায়েম বা আল্লাহ্‌র আইন প্রতিষ্ঠা। এখন যেমন আওয়ামীলীগের অনেক নেতা শিবিরদের রাজাকার বলাকে অসমীচীন মনে করেন এজন্য যে, তাদের জন্ম বাংলাদেশে। স্বাধীনতার পর এরকম কিছু আওয়ামী লীগার ছিল যারা কোলাবরেটরদের শেলটার দিয়েছে। কখনও এ কথাকি মনে হয়েছে যে, যারা হিটলারের নাজী পার্টিকে সমর্থন যোগাবে বা সাপোর্ট করবে বা ঐ মানসিকতা সম্পন্ন হবে তাদের কে নাজীর মতো ভাবা যাবেনা? আপনি এ যুক্তি মানেন? আমি মানি না।

আমাদের নেতা শেখ সেলিম ভাই তো সে বিচারে চ্যাম্পিয়ন, এক বেয়াই বিএনপির বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী টুকু (যিনি শেখ কামালের বন্ধু ছিলেন, এবং তথাকথিত ব্যাংক লুটের মামলার আসামী ও শেখ কামালের গাড়ীর যাত্রী, বিএনপি যাকে সসম্মানে মন্ত্রী করেছিলেন), আরেক বেয়াই তো আরেক বি(!)খ্যাত লু্লা রাজাকার মুসা বিন শমসের। যা হোক, সবই আমাদের স্খলন ও দোষ দিই নিয়তির।

আপনার সন্তানরা যদি জামাতের ডাটাবেজে তাদের নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বস্ত কর্মী হতো ঠিকই তাদের ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা, ইনসেপটা, দিগন্ত ইত্যাদি ব্যাংক, ট্রাস্ট, হাউজিং (মিশন, ভিশন), ফার্মাসউটিক্যাল, স্কুল কলেজ, বিশ্বদ্যিালয়, মাদ্রাসা, আদর্শ স্কুল, টিভি পেপার, কলকারখানা, আরএফ এল, মেঘনা (Fresh কোঃ) ইত্যাদিতে চাকরী পেত। হয়তো তারা অতো নিবেদিত হতে পারে নি। পারলে হতো কেল্লাফতে! তবে আমি খুশি যে আপনার সন্তানরা আত্মকর্মসংস্থান করছে। হয়তো এমপ্লয়ি না হয়ে তারা ভাল করলো, একদিন তারা এমপ্লয়ার ও উদ্যোক্তা হবে বাংলাদেশে। আর হয়তো এই পথেই দেশে আসবে আপনার-আমার কাঙ্খিত অর্থনৈতিক মুক্তি। আমরা সেটাই চাই। তবে দেশের যে অবস্থা ভরসা পাই না। আরো দশটি বছর আমাদের রাইট ট্রাকে থাকতে হবে। পারলে মুক্তি, না পারলে সমূহ পতন।

সবশেষে বলি, অনেকে জামাতি বুলি না জেনে রপ্ত করেছে। কথার শেষে আল্লাহ্‌ হাফেজ। খোদা হাফেজ বললে কি অসুবিধা। আর না বললেই বা কি? আমার এক বন্ধুর পুরো পরিবার ছিল আওয়ামী লীগ। তারা মেয়ে বিয়ে দেয় এক শিবিরের কাছে। সেই শিবির এর ১ম চারা ছিল আমার বন্ধু। এখন পুরো পরিবার জামাত করে। আমার আর এক বন্ধু খুলনা খাশিপুরে বড় হয়েছে। তার বড় ভাই ছিল শ্রমিক নেতা, ক্রিসেন্ট জুট মিলে। ঘোর আওয়ামীলীগার। আমার বন্ধু শিবির করায় তাকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছিলেন। বন্ধু ভায়ের বাড়ী ছেড়েছে, শিবির ছাড়েনি। ভাই-এর বাড়ী ত্যাগ করে জামাতের পরিবারে আশ্রয় নিয়েছে, বিএল কলেজের শিবিরের নেতা হয়েছে। আমার আরেক বন্ধু ছাত্র জীবনে ব্যাকবে্ঞ্চার ছিল। জামাত শিবিরের কল্যাণে সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার হয়েছে। চান্স পেলেই আমাকে জামাতের বয়ান দেয়ার চেষ্টা করে। আমি তখন তার ইতিহাসটা তাকে মনে করিয়ে দিই। সে ইতিহাসের (বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা তার ব্যক্তিগত) ধার কাছ দিয়ে না গিয়ে ধর্মের কথা বলতে আসে। কাজেই কেউ কোন ভাষা রপ্ত করলেই যে জামাত হয়ে গেল, তা মনে করি না। কিন্তু ভুল বা সঠিকটি দেখিয়ে দেয়ার পরও যদি না ছাড়ে—তাহলে বুঝতে হবে....ডাল মে কুচ কালা হ্যায়।

আমার এক ওস্তাদজী (আমরা সেরকমই বলতাম) ছিলেন ফেণীর মানুষ, তাঁর কাছেই কোরআনের পাঠ শিখেছি, তিনি অর্থ জানতেন না, তাই তা শেখাতে পারেন নি। বছরে ১০ মাস আমাদের এলাকায় থাকতেন, আর ২ মাস ফেনীতে। তাঁকে কখনো রাজনীতির ধার কাছ দিয়ে যেতে শুনিনি দেখিনি। অরাজনৈতিক বলতে আমি তাকে দেখি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের গোটা পরিবার ছিল ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পে। আম্মার মুখে শুনেছি, আমার সঠিক মনে নেই, মাঝে মাঝে সিনেমার সেলুলয়েডের মতো ভাসে। ঘুমের ভেতরে স্বপ্ন যেমন তেমন। তবে মনের ভিতরে এখনো বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ দেখতে চাই। এখনো স্বপ্ন বাঁধি। সঠিক মানুষের বড় অভাব সমাজে। কিন্তু তবুও আশা রাখতে হবে। আশায় বসতি।


                                    - আরশাদ ইমাম
                                      ৭ ডিসেম্বর ২০১৫,
                                      সোমবার, ঢাকা।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৭১২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/১২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা কোনো রাজনীতি হতে পারে না তবে দলিয় ভাবে বললে সেটা রাজনীতি।
    কবিতা মনের কথা লে তাই সেটা রাজনীতি হতে পারে না।তবে দলগত লিখলে সেটা রাজনীতি।
    দেশ প্রেম রাজনীতি না তবে যখন দল কেন্দ্রিক মিসিল মিটিং তখন সেটা রাজনীতি।
    • আপনার সঙ্গে একমত। তবে রাজনীতি কোন দোষের কিছু নয়। রাজনীতি ছাড়া বিশ্ব অচল।
      তবে আমরা মুখে রাজনীতি বলবো না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে রাজনীতির নকশা কাটবো-এটি ভয়ঙ্কর।
      রাজনীতির আদর্শ বলে একটা কথা আছে। সেটি প্রচার মূলক। কিন্তু ঘোষণা ছাড়া প্রচার চালানো শঠতা।
      মুক্তিযুদ্ধ মানলে বা এতে বিশ্বাস করলে কিছু মৌলিক বিষয় আছে যেগুলোতে সহমত হতে হয়। এই মৌলিক বিষয়ে চিন্তার পার্থক্য বা ভিন্ন চিন্তা বা মত থাকলে তা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা বা না মানার নামন্তর।
      বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে দুঃখের বিষয হলো একটি স্বাধীন দেশে এখনো অনেক মানুষ আছে যারা স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করেনা, ভিন্ন মতবাদকে বিশ্বাস করে।
      শাহনাজ সুলতানা, সত্যি বলতে কি আমি লেখাটি একদিনে দিতে চাইনি, কিন্তু কার্যকারণে তা একত্রে দিতে হয়েছে। পুরাটা পড়ার ধৈয্য আপনার হয়েছে কি না জানি না, হলে পড়ে বিষয়ভিত্তিক মতামত জানাতে পারেন। ভিন্নমত পোষণ করার যথেষ্ট অবকাশ আছে। কিন্তু সেটা শত্রুতামূলক না হওয়াই শ্রেয়। এই দেশটা আমাদের, রক্তের দামে কেনা। এটার স্বাধীনতাই আমাদে মূল উপজীব্য। এই দেশটাকে আমাদেরই ভালো বাসতে হবে। অন্যে বা ভিন্ন দেশের কেউ ভালবাসবে না। কাজেই আমার দেশকে দেখে রাখতে হবে আমারই। আমাদেরই। আর যে আদর্শের জন্য মুক্তযুদ্ধ হয়েছিল, সে আদর্শের পথে দেশকে চালানো মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানো, রক্তের অবদানকে স্বীকার করা। এই যা। পরে আরো কথা হবে। শুভেচ্ছা । ভালো থাকবেন।
      • দোষের কথা আমি বলিনি।আপনি আমি সে কোনো না কোনো দল অবশ্যই সাপর্ট করি।
        • জ্বী। সেইটিই সত্য। ধন্যবাদ।
 
Quantcast