www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গণশত্রু

মাস শেষ। বেতনও শেষ। হাতে মাত্র পঞ্চাশ টাকা। বাজারে গেছি। চাল কিনেছি ষোল টাকা, ডাল কিনেছি আট টাকা, আলু ছয় টাকা, তেল আট টাকা।মোট আটত্রিশ টাকা। একহালি ডিম বার টাকা। কিনলে হেঁটে বাসায় ফিরতে হবে। সিগারেটও দরকার। ডিম ২টা ছয় টাকায় কিনে বাঁকী টাকা ফেরত নিচ্ছি, দোকানদার বললেন, ভাই এত কম টাকার বাজার তো কখনো করতে দেখিনি আপনাকে, ব্যাপার কি?
আমি বললাম, মাস শেষ বেতন পুরোপুরি পাইনি, হাতে টাকা নেই।
তিনি অবিশ্বাসের হাসি হাসলেন।
বললাম, বিশ্বাস হচ্ছে না?
তিনি বললেন, না।
আমি বললাম, কেন?
‘‘হাতে টাকা নেই বলছেন কেন? বলুন টাকা নিয়ে আসেন নি।’’
‘‘না ব্রাদার টা্কাই নেই।’’
তিনি এবারও হাসলেন।
‘‘ আবার হাসলেন দেখি?’’
তিনি কিছু বললেন না আর।
আমি পকেট থেকে ৩৯০০ টাকার একটি চেকের পাতা দেখিয়ে বললাম, ‘‘দেখুন তো কিছু বুঝতে পারেন কি না!’’
তিনি ইতস্তত করে হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে ফেরত দিলেন।
‘‘কি বুঝলেন?’’
‘‘বুঝলাম এখনো ব্যাংকে জমা দেন নি।’’
‘‘জ্বী ঠিক বুঝেছেন, তবে একটু বাঁকী। এটা আমার সারা মাসের রোজগার। এর মধ্যে মাসিক খরচ, বাসা ভাড়া, চলাফেরা, হাত খরচ সবই আছে। মাস পার করাই মুশকিল।’’
‘‘আপনার না সরকারী চাকরী?’’
‘‘হ্যাঁ সেজন্যই তো!’’
‘‘তাহলে আপনার বেতনের আর টাকা কোথায়?’’
‘‘এটাই তো!’’
‘‘এত কম টাকা সরকারী বেতন?’’
‘‘জ্বী!’’
‘‘নাহ্‌।’’
‘‘তাহলে.....’’
‘‘এই টাকায় তো মাস চলবে না। আপনার আসল বেতন কোথায়?’’
‘‘আসল বেতন?!.....’’ আমি আর তাকে বুঝাতে পারিনি। আর কিছু বলিনি।জানি বললেও তিনি বিশ্বাস করবেন না। একজন সরকারী ১ম শ্রেণীর চাকরীজীবির বেতন কত কম তা সেই দোকানীকে সেদিন বুঝাতে পারিনি। সালটা ধরুন ২০০১। এখন হলে সংখ্যাগুলো দশ দিয়ে গুণ হতো। এর বেশি কিছু নয়। অবস্থার পরিবর্তন হয়নি মোটেও। একজনের আয় দিয়ে এই ঢাকা শহরে বাড়ী ভাড়া করে সংসার-পরিজন নিয়ে মান সম্মতভাবে চলাই দুষ্কর। সরকারে থেকেও সরকারী কর্মকর্তাদের তা বুঝা হয় না কোন দিন। তা না হলে অর্থ মন্ত্রণালয় পে-স্কেল নিয়ে যে ভেলকীবাজীর খেলা খেলছে, তা তো এক শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তারাই করছে। তারা কি এই হিসেবের বাইরে? না। কিন্তু করছে। এ থেকেই লোকজন সন্দেহ করে। এবং বলাবাহুল্য করলে সেটাকে অযোৗক্তিক বলা যাবেনা। আমরা সত্যকে এমনভাবে উপস্থাপন করি যে সত্যকেই মিথ্যা মনে হয়্। আর যা মিথ্যা তা সত্য হয়ে প্রতিভাত হয়। আসলে সরকারী কর্মচারীই সরকারী কর্মচারীদের শত্রু। ফলে তাদের পক্ষে জনগণের বন্ধু হওয়া কঠিনই বটে। হেনরিক ইবসেন মনে হয় এদেরকেই বলেছিলেন গণশত্রু...Enemy of the People.

এস, এম, আরশাদ ইমাম//৮ নভেম্বর ২০১৫//রবিবার//ঢাকা।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৮১৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/১১/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • দেবাশীষ দিপন ১০/১১/২০১৫
    দারুণ বলেছেন।।
  • ঠিক বলেছেন আরশাদ দা । বেশ ভালো লাগল আপনার এই মন্তব্য ।
    • শান্তনুকে পেয়ে ভাল লাগল। তোমার একটা গল্প/উপন্যাস মনে হয় এক ঝলক দেখলাম। সেদিকে সময় দিতে পারিনি। হাতে সময়ের ঘাটতি। কবিতা স্বল্প সময়ের ইস্যু, অন্য মাধ্যম তুলনায় বেশি সময় চায়। এজন্য। যা হোক ভালো থেকো। সাথে থেকো। মতামত দিও। একদিন আমিও যাবো পূর্ণদৈর্ঘ্য মতামত নিয়ে ওদিকে।
  • পরশ ০৯/১১/২০১৫
    সত্য বলেছে
  • আপনার নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছেন। স্বাগত। আমাদের উপার্জন যাই হোক , আমাদের অহং সেটা অন্যদের সামনে আলোচনা করতে বাধা দেয়।
    পরিশেষে জানাই ইবসেন Enemy of the People লিখেছিলেন একেবারে অন্য প্রেক্ষিতে।
    • Enemy of the People যে ভিন্ন প্রেক্ষপটে লেখা সেটা ঠিক, কিন্তু আমি এখানে against the interest of the people বুঝাতে চেয়েছি। এটাও এক ধরণের গণবিরোধী চিন্তার বিষয় বলে এ চিন্তার প্রসারকারীদের গণশত্রু বলার প্রয়াস পেয়েছি মাত্র। এটা ইবসেনের মতো না হলেও অন্যরকম গণবিরোধী চিন্তা।
      অার আমি অবশ্য উপার্জন নিয়ে রাখ ঢাক করি না। মানুসখে ভুল ভাবনায় রেখে কি হবে বলুন!
 
Quantcast