www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দলিত ভালবাসা

১ম পর্ব : বিশ্বাসঘাতক

২য় পর্ব : নিঃস্ব পৃথিবী

☻শেষ পর্ব : শরীর সর্বস্ব (দলিত ভালবাসা)

ঢাকায় ফিরে দীপালী ভাবীর বাবার বাসা খুঁজে পেতে একটু কষ্টসাধ্যই হয়ে গেল । কারণ আপুর শ্বশুর বাড়ীর কেউ নাম্বার দিতে চায় না । শেষে আপুর সেই বড় জেঠা শ্বশুরকে ফোন করে কান্নাকাটি করে নম্বর যোগার করলাম ।

১২ বছর আগের কাহিনী, কিন্তু দিপালী ভাবীর বাসায় যেয়ে তা বোঝার উপায় নেই । অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে ভাবীর বিয়ে হয়েছিল, তখনকার উচ্ছলতায় ভরা ফটো ঘরময় টাঙানো । ভাবীর মারা যাওয়ার কোন তথ্য উনাদের বাসার কেউ দিতে পারেনি । তবে শ্বশুর বাড়ী থেকে বলা হয়েছিল সাঁতার না জানার কারণে পুকুরে নেমে আর উঠতে পারেনি ।

দিপালী ভাবীর স্বামী আপুর মেঝো ভাসুর । খুঁজে বনশ্রী তার বাসায় গেলাম । যখন সেখানে যেয়ে পৌঁছলাম, তখন সেই নওরোজদা’র বাসায় উনার সাথে উনার সুদর্শন এক বন্ধু গল্প করছিলেন । আমাকে দেখে চুপ মেরে হাসিমুখে তাকালেন । তাদের চেহারা দেখে বয়স বুঝতে না পারলেও হিসেব করে দেখলাম প্রায় ৪২/৪৩ হবে । কিন্তু অবাক লাগছিলো তাদের আকর্ষণীয় ফিগার আর জ্বলজ্বলে চেহারা দেখে । এই বয়সেও এতো আকর্ষণীয় সত্যিই ঈর্ষণীয় !

কয়েকদিন তাদের দু'জনের কাছ থেকেই সময় পেতে যেয়ে অবাক হয়ে খেয়াল করছিলাম নওরোজদা’র বন্ধু অর্থাৎ তমাল ভাইয়ের সাথেই আমার ভাব হয়ে যাচ্ছে ! এবং উনি একসময় কথাচ্ছলে আমার সাথে অদ্ভুত সব ঘটনা শেয়ার করা শুরু করেছেন । আমিও কেমন যেন মোহগ্রস্থের মতো উনার কথাগুলোর একনিষ্ঠ শ্রোতা হয়ে গেলাম ।

তমাল ভাই আমার কাছে একেক করে সব স্বীকার করেছেন । নওরোজদা’র একের পর এক মেয়েদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার পেছনে, ঢাকা শহরের ব্রোথেলগুলোর খোঁজ পেতে তমাল ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা । তারা অফিসিয়াল ট্যুরগুলোকে কতো নিঁখুত ভাবে কাজে লাগাতেন তাদের প্রতিটা দিনের শেষে রাতকে । সেখানকার মেয়েদের শরীর দিয়ে তাদের ক্লায়ান্টদের যত্ন করার বর্ণনা শুনে সত্যিই নিজের মেজাজ সামলানো কষ্টকর হয়ে গিয়েছিলো । ট্যুর শেষে ফিরে এসে তাদের খাবারের চাহিদা বেড়ে যেত । ইউনিভার্সিটিতে পড়ার নাম করে মেয়ে গুলো নওরোজদা’ এবং তাদের মতো কাস্টমারদের শরীরের চাহিদা ভালোই মেটাতো ।

দিপালী ভাবী কোনভাবে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলেন । যদিও নওরোজদা’র ব্যক্তিত্বের সামনে যে কারো দাড়ানোই মুশকিল । ভাবী ঢাকা কিছু প্রমাণ করতে পারেন নি । কিন্তু যখন শ্বশুরবাড়ী গেলেন তখন সেখানকার এক কুমারী মাতার কাহিনী দূর্ঘটনাক্রমেই জেনে গেলেন । যেই জাকিয়ার সন্তান কিনা নওরোজদা’র ঔরষজাত । চাপা একটা কষ্ট নিয়ে শ্বশুরবাড়ী যেয়ে এই ঘটনা জানার পর নিজেকে আর সামলাতে পারেননি । ঢাকায় ফিরে বাবা-মাকে হয়তো এই কষ্টের ভাগীদার করতে চাননি । তাই নিজেকে সেই পুকুরের পানিতেই তলিয়ে দিয়েছেন । কিন্তু জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগে জেঠা মশাইকে বলে গিয়েছিলেন যেন ভাবীর বাবা-মাকে নওরোজদা’র চরিত্রের ব্যাপারে কিছু জানতে না দেয়।


সব ঘটনা বিশ্লেষণ করে এটুকু বুঝলাম যে, ভালোবাসা এখন শরীর সর্বস্ব বিশ্বাসঘাতকদের পায়ের নিচে দলিত ।

------
গল্প
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৫৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/১০/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • suman ২৩/১০/২০১৩
    আমার কাছে এই দূর্দান্ত সত্যকাহন ভালো লেগেছে ...মনে হয়েছে পাঠকের প্রতি লেখকের অন্তর্গত দায়বদ্ধতা কাজ করে.....আরো লিখুন ...এই লেখক অনেক দূরে যাবেন তার স্পষ্ট ছাপ আছে ...
    • আরজু নাসরিন পনি ২৪/১০/২০১৩
      আপনি সত্যিই দারুণ !
      মন্তব্যগুলো পড়ে অনেক অনুপ্রেরণা পাই ।
      চেষ্টা করেছি কিছু কথা জানাতে...
      পাঠে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই, প্রিয় সুমন ।।
  • মুগ্ধ হয়ে পড়লাম
  • সহিদুল হক ২৩/১০/২০১৩
    গল্পের বিষয়-বস্তু খুবই ভাল। আজকাল এমন ঘটনা আকছার ঘটছে। খোলা হাওয়ার পরিণতি এটা। শারীরিক সম্পর্কের প্রকৃত তৃপ্তি থেকে এরা বঞ্চিত। অন্তরের অকৃত্রিম সাড়া না থাকলে কখনই কাঙ্খিত তৃপ্তি আসে না। এটা যদি সবাই বুঝতো তাহলে ধর্ষণের মতো অবাঞ্ছিত ঘটনাগুলো কখনই ঘটতো না আর শরীর সর্বস্ব ভালবাসার(?) পরবর্তে প্রকৃত ভালবাসা ঘটতো।
    • আরজু নাসরিন পনি ২৪/১০/২০১৩
      ভালবাসাকে এখন কর্পোরেট বাবুরা পায়ের নিচে ঠেলে দিয়েছে তাদের শরীরের পশুবৃত্তির আদিম কামনায় ।
      এ কখনোই ভালবাসা নয় ।

      অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার ।।
  • ভালো পাঠক নই বলে বোধহয় একটু অগোছালো মনে হলো।তাই কয়েক বার পড়লাম।যাক বুঝতে পারলাম আপনি একটি চরম সত্য উপস্থাপনের আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।আসলেই বর্তমান ভালবাসা গুলো সত্যিই শরীর নির্ভর হয়ে পড়েছে।এটা ভালবাসার দোষ নয়।এটা আমাদের পরিস্থিতি ই করতে বাধ্য করছে।কারও টাকার প্রয়োজনে শরীর বিলাচ্ছে।আর কেউ শরীরের প্রয়োজনে ভালবাসার ব্যবহার করছে।ভালো হয়েছে।তবে প্রথম পর্ব টি অসাধারণ।পরের গুলোতে আপনাকে খুজেঁ পাওয়া যায় নি।ধন্যবাদ।
    • আরজু নাসরিন পনি ২৪/১০/২০১৩
      হাহা...
      আপনি অবশ্যই অনেক বেশিই ভালো পাঠক ।
      আমি আসলে মেসেজটা পৌঁছাতে বেশি চেষ্টা করতে গিয়েই এই বিপত্তি ঘটেছে । এই গল্পটা সবগুলো মিলিয়ে একটা গল্প । বড় হওয়ায় পর্ব করে দিয়েছি । যদিও মূলত দুই পর্বে লিখেছিলাম ।
      সামনে কতোটুকু পারবো জানিনা , তবে চেষ্টার কমতি থাকবে না ইনশাহআল্লাহ ।।
      পাঠে এবং আন্তরিক আলোচনায় অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই ।।
 
Quantcast