www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কাল জন্ম দিন (পার্ট-১)

খায়েস।
খায়েস সাহেব বাড়িওয়ালা। তার বাবার আমল হতেই তিনি অনেক সম্পদশালী। তার বাড়িতে দু’জন চাকর থাকে। সারাদিন এই দু’জন চাকর তার পিছনেই কাজে লেগে থাকে। কখন কি জানি লাগে! দু’জন চাকর রফিক এবং পিয়াস। খায়েস কখনো কখনো রঙ তুলি দিয়ে ভিন্ন রকমের ছবি আঁকে এবং তখন রফিক তার সেই আঁকা ছবি সম্পর্কে ভাল ভাল মন্তব্য করে। রফিককে সবসময় মন্তব্য করার জন্যই ছবি আঁকার সময় পাশে রাখা হয়। রফিক ভালো করেই জানে ভালো ভালো মন্তব্য করলে খায়েস সাহেব ভীষণ খুশি হয়। তাই রফিক সবমসয় খারাপ ছবিকেও ভাল ভাল মন্তব্য করে থাকেন।

আজ বিকেল বেলা। খায়েস সাহেব রফিককে পাশে বসিয়ে নজরুলের একটি ছবি আঁকছে। রফিক বাম পাশে চুপ করে মাথাখানা নিচু করে বসে আছে। নজরুলের ছবিটি দেখার জন্য রফিক খায়েস সাহেবের দিকে ভীষণ ভয়ে ভয়ে দুই চোখ ঘুরাতে ঘুরাতে মাথা তুলে একটু আড়ে চোখ তুলে তাকায়। এমন সময় খায়েস সাহেব তার চশমার ফাঁকে একটু আড়ে তাকালো। রফিক আবার লজ্জা এবং ভয় পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বার বার ভয়ে চোখ ঘুরাতে ঘুরাতে খায়েস সাহেবের দিকে তাকায়। খায়েস সাহেব এবার তার ভাব দেখে একটু মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কণ্ঠে বলল, কি দেখছো? রফিক আবার তার চোখ ঘুরাতে ঘুরাতে ভয়ে কাতর কাতর কণ্ঠে বলল, কিছু না।
-তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
জ্বী না।
-তাহলে লজ্জা পাচ্ছো?
জ্বী না।
ইতিমধ্যেই কে যেন এসে ঘরের দরজায় নক করছে। দরজায় নক শুনে রফিক ঐখানে বসেই বেশ উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, এই কে এখানে? স্যার এখন ব্যস্ত আছেন। খায়েস সাহেব তার ছবি অঙ্কন বদ্ধ করে তার দিকে একটু উগ্র নজরে তাকালো। রফিক আরো ভয়ে ঘামছে এবং মাথা নিচু করে বসে আছে। আবার কে যেন দরজায় নক করল। এবার খায়েস সাহেব একবার দরজার দিকে তাকালো এবং তার দিকে তাকালো। রফিক তার দুই চোখ ঘুরাতে ঘুরাতে কপাল হতে ঘাম মুছতে মুছতে খায়েস সাহেবের দিকে তাকালো। খায়েস সাহেব এবার একটু উগ্র কণ্ঠে বলল, দরজাটা খুঁলে দাও। এবার রফিক বসা হতে ওঠে আস্তে আস্তে খায়েস সাহেবকে আড়ালে রেখে দরজাটা খুঁলে দেখল, পিয়াস দাঁড়িয়ে আছে। রফিক পিয়াসকে চোখে-মুখে এবং মাথায় ইশারা দিল, চলো একটু দূরে গিয়ে কথা বলি। রফিক এবং পিয়াস দু-জনেই চুপ করে দূরে চলে গেল। রফিক উত্তেজিত অবস্থায় ফিস ফিস করে পিয়াসকে বলল, কী হয়েছে? পিয়াস আমতা আমতা করে বলল, সাহেবের সাথে কথা ছিল।
-কিসের কথা?
আমাকে যাইতে দেন..!
-অকারণে কথা কইয়ো না। যা বলার আমারে বলো।
একি বলছেন আপনি! আমি আবার কখন অকারণে কথা বললাম।
-তুমি সবসময় বেশী কথা বলো। তুমি কি কাজের কথা কইবা?
আমি বেশী কথা অকারণে কখন বললাম! আর আমি আপনাকে কেন বলতে যাবো? আমি তো সাহেবের সাথে বলবো।
-সাহেব ব্যস্ত। মাথায় রাগ ওঠে আছে। যা বলার আমাকে বলো।
আমি আপনাকে বলবো না।
-তাহলে দূরে যাও। মাফতে মাফতে তিন হাত দূরে যাও।
পিয়াস ভেবেছিল জোর করেই ঢুকে যাবে। তাই সে কথা বলতে বলতে কথার ফাঁকে ঢুকতে চাইল। এমনি রফিক তাকে পাঞ্জা দিয়ে ধরে বলল, এখন যদি ঘাড়ে কামড় মারি? ভয় পেয়ে পিয়াস আমতা আমতা করে বলল, ছাড়েন। আমি যাবো না। রফিক তার দিকে রাঙা রাঙা চোখে তাকিয়ে তাকে ছেড়ে দিল। এবার পিয়াস তার হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলল, একজন লোক আসছে সাহেবের সাথে দেখা করতে। মুখে দাঁড়ি-মাথায় লম্বা চুল-কাঁধে ঝুলানো একটি বেগ। সব কথা শুনে রফিক একটু মাথা অপর দিকে ঘুরে নিয়ে আস্তে আস্তে বলল, কোথা থেকে যে আসে এসব! কথাটি হালকা পিয়াস শুনে রফিককে বলল, কিছু বলেছেন? রফিক তার দিকে উগ্র করে বলল, আসুক। গিয়ে বলো চলে যাওক। সাহেব বাসায় নেই।
-কি কইতাছেন। সাহেব বলল উনারে আসতে। তাই তো তিনি আসলো।
তোমারে না বললাম-অকারণে কথা বলবে না। চলে যাও।
-না আমি যাবো না।
তাহলে আবার কামর দিবো?
-না আর দিতে হবে না। আমি যাচ্ছি।
পিয়াস আমতা আমতা করে চলে গেল। রফিক দরজাটা ভাল করে আটকে দিল। যেন পিয়াস না ঢুকতে পারে এবং আবার তার মাতা নত করে ভয়ে ভয়ে খায়েস সাহেবের দিকে আড়ে আড়ে তাকিয়ে পূর্বের জায়গায় গিয়ে চুপ করে বসল। খায়েস সাহেব তার দিকে আড়ে চেয়ে দেখল সে কি করে। রফিক আবার চুপি চুপি করে ছবিটি দেখতে চেয়েছিল। এমনি খায়েস সাহেব আবার তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কণ্ঠে বলল, কে এসেছিল? রফিক তার মাতা তুলে চোখ ঘুরাতে ঘুরাতে বলল, কেউ আসে নি। তার চোখ ঘুরানো দেখে খায়েস সাহেব ঠের পেল যে নিশ্চয় রফিক মিথ্যা কথা বলছে। এই ভেবে খায়েস সাহেব আবার তার দিকে আড়ে তাকালো। রফিক এবার তার কপাল থেকে বার বার ভয়ে ঘাম মুছছে। খায়েস সাহেব সব বুঝে এবার তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি করে বলল, কে এসেছিল? রফিক আবার তার দু-চোখ ঘুরাতে ঘুরাতে মাথা নিচু করেই বলল, একজন ভিক্ষুক।
-কেন এসেছিল?
জানি না।
-জানতে চাইলে না?
না?
-কেন?
রফিক কিছু বললনা। সে একটু লজ্জা পেয়ে কপাল থেকে আবার বার বার ঘাম মুছতে লাগল এবং খায়েস সাহেবকে আড়ে দেখল। খায়েস সাহেব আবার তাকে বলল, একটু আগে যে বললা-কেউ আসে নি। মিথ্যা বললা কেন? রফিক আবার চুপ করে বসে রইল। এবার খায়েস সাহেব তার দিকে একটু আশ্চর্য্য নজরে তাকিয়ে বলল, আজ বাংলা কত তারিখ? রফিক আবার মাথা নিচু অবস্থায় চোখ ঘুরাতে ঘুরাতে বলল, আজ জৈষ্ঠ্য মাসের পনেরো তারিখ। খায়েস সাহেব আবার ছবি আঁকতে আঁকতে মুচকি হাসি গালে লয়ে বলল, তুমি কি জানো আজ পনেরো তারিখ?
-জ্বী সাহেব।
তোমার ঘরে বর্ষপঞ্জিকা আছে?
-জ্বী আছে।
সেটা কত সালের?
রফিক কোন কথা বলল না। আবার সে চুপ করে বসে আছে। খায়েস সাহেব তার দিকে আবার তাকালো এবং ধীরে ধীরে বলল, আজ তো পঁচিশ তারিখ। কাল আমার ছেলের জন্মদিন। রফিক আসলেই জানতো না আজ কত তারিখ। তাই তার মুখে যত আসল ততোই বলল। রফিক আবার মাথা নিচু করে চোখ ঘুরাতে লাগল। কথা বলতে বলতে খায়েস সাহেব ছবি অঙ্কন শেষ করল এবং রঙ তুলিটা পাশে টেবিলের উপর রেখে চলে গেল।
যখন খায়েস সাহেব ঘরের বাহিরে গেল এমনি রফিক ওঠে ধীরে ধীরে সেই টেবিলের উপর হতে রঙ তুলিটা হাতে নিয়ে ছবিটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। রফিক চেয়ে দেখল নজরুলের ছবিটি সুন্দর করেই আঁকা হলো। রফিক এবার তার চোখ ঘুরাতে ঘুরাতে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল খায়েস সাহেব আসে কিনা! এই সুযোগে রফিক নজরুলের ছবিটির মুখে সুন্দর করে মুছ এঁকে দিল। রফিক আবার ভয়ে তার চোখ ঘুরাতে ঘুরাতে রঙ তুলিটা আগের জায়গায় সেই টেবিলের উপর রেখে দিল।

----------------------------------------------সংক্ষিপ্ত--------------------------
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৫৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/১১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আব্দুল হক ১১/১১/২০১৮
    বেশ সুন্দর লিখেছেন।
 
Quantcast