www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আকাশে উঠতে গিয়ে-পাতালে পরলাম।

আমার নাম সিয়াম। আমি একটি সরকারি কলেজে পড়া-শুনা করি। আজ দু’দিন হলো আমাদের কলেজ ছুটি হয়েছে। তাই অনেক দিন পর আজ বাড়িতে যাচ্ছি। আমি এখন বাসে উঠলাম। বাসের সমনে গেইটের সাথে একটি বৃদ্ধ লোক বসে আছে তার পাশে একটি সুন্দর মেয়ে। এত বৃদ্ধ বয়সের লোকটি দেখে মনে মনে ভাবলাম, তাকে সালাম না দিলে কেমন দেখা যাবে? তাকে সালাম দেওয়া উচিৎ। তাহলে নিশ্চয় তিনি আমাকে বাসের সবার চাইতে বেশি ভালবাসবে। তিনি হয়তো ভাববে, ছেলেটি অনেক ভাল-ভদ্র এবং শিক্ষিত। তাই তাকে সালাম দিলাম। লোকটি আমার দিকে তার দু’চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে সালামের জবাব দিল। আমি আরো ভাবলাম তাকে জিজ্ঞাস করি কোথায় যাবে? তবে এখন নিশ্চয় ভাল করে উত্তর দিবে। এই ভেবে তাকে আদর করে মিষ্টি মিষ্টি কণ্ঠে বললাম, ও দাদু। কই যাবেন?
-জাহান্নামে। তোমাকে কইতে ওইবো?
দাদু আপনি রাগ করছেন কেন?
-ওই মিয়া। তুমি আমার সাথে কথা কইয়ো না। দূরে গিয়ে বসো। দূরে যাও।
সেদিন বাসে করে যাওয়ার সময় বিকেল বেলা এমনটাই ঘটেছিল। আমার সিটের সামনের সিটেই ছিল সেই পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধ লোকটির সিট। চোখে চশমা হাতে লাঠি মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে আছে। তবে তার মুখে দাঁড়ি ছিল না। তার সাথে থাকা সেই যোয়ান মেয়েটির গায়ের শ্যামলা রং।

তার মেজাজ যে কেন এত গরম তা জানি না। যায় হোক। তার পর আমি আমার সিটে গিয়ে বসলাম। আমি সিটে বসে বসে শুনি লোকটি খুব রাগে সেই মেয়েটির সাথে খুব উত্তেজনা কণ্ঠে বলল, “ কই থেকে যে আসে এসব...!” এই কথা বললে মেয়েটি একটু বিরক্ত অবস্থায় মিষ্টি মিষ্টি কণ্ঠে বলল, ও...দাদু। তুমি চুপ করো তো।
-কেন চুপ করবো। ওর বাড়ি কই? আমারে দাদু কইল কেয়া?
আচ্ছা বাদ দাও। ভুল করেছে সে। এখন তো চুপ করো।
-রেশমা তুমি চুপ করতে বলছো...! সে কান্ডটা কি করল?
রেশমা এবার বেশ উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, ভুল করছে এবার হলো? চুপ করো...!
তখন জানতে পারলাম মেয়েটির নাম রেশমা। দাদুর নাতনী হয়। যায় হোক যেহেতু তিনি দাদুর বয়সী তাহলে তাকে দাদু বলে ডাকাই উত্তম। উনার কথায় আমি রাগ করি নি। তার রগচটা-রগচটা কথা শুনে বুঝতে পারলাম, সে মনে হয় কোন কারণে মানসিক ভাবে আগে থেকেই উত্তেজনায় ছিল। তার প্রতি কোন রাগ না করে আরো মনে মনে ভালবেসে নিলাম। ইতিমধ্যেই দাদু আবার রেশমাকে উত্তেজনা কণ্ঠে বলল, “ রেশমা। ওরা বাসটা ছাড়ে না কেয়া? ওদের সমস্যা কি? ওদের কি হইছে?” দাদুর কথা শুনে বাসের সব লোক অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রেশমা সবার চাওয়া দেখে লজ্জা পেয়ে তার মাথা নিচু করে বসে আছে এবং তার দাদুকে আদর করে মিষ্টি কণ্ঠে আস্তে আস্তে বলছে, “ তুমি অস্থির হইয়ো না। বাস তো ছাড়বেই।” তার দাদুকে রেশমা সান্তনা দিল। তবুও তার দাদু ড্রাইভারের দিকে উত্তেজনা অবস্থায় তাকিয়ে আছে। রেশমা তার দাদুর চাওয়া দেখে তার দাদুকে আরেকটু সান্তনা দেওয়ার জন্য ড্রাইভারকে বলল, এই ড্রাইভার গাড়ি ছাড়েন।
ড্রাইভার একটি সিগারেট হাতে লয়ে টানতে টানতে বলল, না পোষাইলে নাইয়ামা যান।
-কেন নেমে যাবো?
তাহলে এত কট কট করবেন না।
-আশ্চর্য্য ব্যাপার। কি চরিত্র।
এমন সময় আবার দাদু ওঠে উত্তেজনা কণ্ঠে বলল, “ রেশমা এই বেয়াদবটা কি কয়?” এই কথা বলে ড্রাইভারের পাশে বসে থাকা আরেকজন ভ্রদ্র লোকের দিকে তাকিয়ে বলল, “ ওই মিয়া। ওর গালে একটা জোরে চর মারেন।” ড্রাইভারটি দাদুর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি মুচকি হাসছে। এবার বাসের সবার মুখেই মুচকি হাসি তাদের কান্ড দেখে। ইতিমধ্যেই একটি মহিলা হাতে মোরগ এবং একটি বাচ্চা কোলে নিয়ে বাসে উঠছে। মহিলার সাথে আরেকটি বাচ্চা রয়েছে। তার মনে হয় পাঁচ বছর হবে। বাসে মোরগ নিয়ে উঠার সময় গেইটে দাদুর চোখে ভেসে পরল হাতে মোরগ। আবার তার নাতনীকে ধাক্কা দিয়ে উত্তেজনায় বলল, “ দেখো রেশমা। দেখো। ওদের কান্ডটা দেখ। বাসটারে একেবারে বাড়ি-ঘর গড়ে তুলছে।” এই কথা রেশমাকে বলে আবার মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বেশ জোরে জোরে বলল, “ এই মেয়ে তুমি নামো..! বাস থেকে নামো..! তুমি হেঁটে যাও।” রেশমা এবার তার দাদুর দিকে বেশ রোষে তাকিয়ে বলল, “ দাদু তুমি চুপ করো তো..! চুপ করে বসে থাকো।” দাদু এবার একটু চুপ করে বসে আছে। মহিলাটি হাতে মোরগ এবং কোলে একটি বাচ্চা শিশু নিয়ে বাসের পিছনের দিকে যাচ্ছে। এমন সময় সেই পাঁচ বছরের শিশুটি তার মাকে এসব কথা বললে সে ভাবল, লোকটি খারাপ। তাই দাদুর প্রতি তাকিয়ে শিশুটি মুখ ভেঙ্গান দিয়ে ই....!ই....! শব্দ করে ভয়ে জলদী করে আবার তার মায়ের কাছে চলে যাচ্ছে। শিশুটির মুখ ভেঙ্গানো শুনে দাদু রেশমার দিকে আবার উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, “ দেখ রেশমা। এই আন্ডাটার অবস্থা দেখো...!” বলে শিশুটির দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে ডাক দিয়ে বলল, “ এই মেয়ে। এদিকে আসো। এদিকে আসো।” শিশুটি ভয়ে ভয়ে তার কাছে এসে ভীষণ মলিন হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দাদু তাকে আর কিছু না বলে তার গালে জোরে একটি চর মারিল এবং ধমকে বলল, “ যাও এখান থেকে...!” চর খেয়ে শিশুটি কেঁদে দিয়ে তার মায়ের কাছে চলে গেল। এই কান্ড দেখে রেশমা এবার বেশ উত্তেজিত হয়ে তার দাদুকে রাগে রাগে বলল, “ দাদু আমি আর পাচ্ছি না। এখন কিন্তু আমি চলে যাবো। তুমি কি চুপ করবে?”

বাসের সবাই তাকে ভয়ে নিরব হয়ে আছে। ইতিমধ্যেই বাসটি ছেড়ে দিল। দাদুর মুখ এবার একেবারে বদ্ধ হলো। বাস চলছে। আসলে মানুষ যখন বুড়ো হয় তখন তার জ্ঞান শক্তি কমে যায়। এটা আবার সবার ক্ষেত্রে নয় কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে। তখন তার সাথে ভাল কথা বললেও সে অল্পতে রেগে যায় এবং অকারণে সবার সাথে খারাপ আচরন করতে থাকে। এমন সময় আমরা যেন তাদের কাছ হতে একটু দূরে থাকি এবং তাকে একা একা থাকতে দেই। তার প্রতি আমরা যেন রেগে না পাই বরং তাকে ভালবাসি। সত্য বলতে এগুলো মানুষের চরিত্রের দোষ নয় এটা একটা রোগ।
অতএব, আমি আর তার চোখে ভালো-নম্র আর ভদ্র মানুষ হতে পারলাম না। আমি আকাশে উঠতে চেয়েছিলাম এখন একেবারে পাতালে পতিত হলাম।


রচনাকালঃ ৩০-১০-২০১৯ ইং
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৫৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/১১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অনিরুদ্ধ বুলবুল ১১/০১/২০১৯
    বাংলা কবিতার প্রকাশনী সংস্থা অর্ক প্রকাশনীর নতুন উদ্যোগ - 'আলোর মিছিল'
    এর সফল অগ্রযাত্রায় শরিক হোন। ৪র্থ সংখ্যাটিও (মাতৃভাষা দিবস সংখ্যা) প্রকাশের পথে। আপনার লেখাটি দিন। গল্প প্রবন্ধ কবিতা যা ইচ্ছা দিতে পারেন। ধন্যবাদ। https://www.bangla-kobita.com/oniruddho/matryvasa-dibos/?s=published
  • রশিদ মিয়া ০২/১১/২০১৮
    আরো এমন গল্প চাই স্যার।
  • মামুন ০১/১১/২০১৮
    ঠিক কথায় বলছেন।
  • হৃদয় ০১/১১/২০১৮
    ভাল লাগল।
 
Quantcast