www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

এম বেলাল আহমদ ও কিছু কথাঃ

মানুষের জন্য কাজ করার সৌভাগ্য সকলের হয় না। এই মহত কাজ একমাত্র তারাই করতে পারে যাদেরকে আল্লাহ পাক ভালোবাসেন। একজন মানুষের উপকার করা মানে সয়ং স্রষ্টার উপকার করা। এতেই বুঝা যায় মানব সেবা কত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আর এই মানব সেবায় নিয়োজিত ও দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এক মহান ব্যাক্তি এম বেলাল আহমদ। তিনি ১৯৮১ সালের ১ ডিসেম্বর সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার ৬নং ফতেপুর ইউনিয়নের বাগবাড়ী গ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নাম মরহুম মাসুম মিয়া ও মাতার নাম মরহুমা রাবেয়া বেগম। মাতা-পিতার ছয়জন ছেলে সন্তানের মধ্যে তিনি ৪র্থ এবং তার কোন বোন নেই। দাদা মরহুম আব্দুল মুত্তালিব তৎকালীন সিলেট সদরে অবস্থিত চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

এম বেলাল আহমদের শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি বাগবাড়ী জামে মসজিদের মক্তব থেকে। এরপর ১৯৮৭ সালে রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৯২ সালে সেখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন। তাই ১৯৯৩ সালে তিনি বিন্নাকান্দি আবিদিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে পুনপ্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। এম বেলাল আহমদ ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তথায় লেখা-পড়া করে মোতাওয়াসসিতা ১ম বর্ষের অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে তিনি চলে যান সিলেট শহরের অদূরে জামেয়া ইসলামিয়া মারকাযুল উলূম মুহাম্মদপুর মেজরটিলা মাদ্রাসায় এবং সেখান থেকে তিনি মোতাওয়াসসিতা ২য় বর্ষ থেকে ছানোবিয়্যাহ ৩য় (মুখতাসার) পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেন। ২০০৪ সালে ছানোবিয়্যাহ ৩য় বর্ষের শিক্ষা-কার্যক্রম সমাপ্ত করার পর এম বেলাল আহমদ চলে যান প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান রহ. প্রতিষ্ঠিত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার মাদ্রাসায় এবং সেখান থেকে তিনি ২০০৫ সালে ফজিলত ২য় বর্ষ মিশকাত ও ২০০৬ সালে তাকমীল ফিল হাদিস (দাওরায়ে হাদিস) সমাপ্ত করেন।
কেরাত শিক্ষাঃ এম বেলাল আহমদ ১৯৯৫ সালে রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত কোরআন শিক্ষা প্রশিক্ষণ বোর্ড বাংলাদেশের রমজানিয়া কেরাত সেন্টারে ভর্তি হয়ে ছফফে আউয়াল (কেরাতের ১ম শ্রেণি) ও ১৯৯৬ সালে ছফফে ছানী (কেরাতের ২য় শ্রেণি) শিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত করেন। এরপর তিনি ১৯৯৭, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালের রমজান মাসে ধারাবাহিক ভাবে কোরআন শিক্ষা প্রশিক্ষণ বোর্ড বাংলাদেশের শাখা কেন্দ্র জামেয়া ইসলামিয়া মারকাযুল উলূম মুহাম্মদপুর মেজরটিলা মাদরাসা থেকে ছফফে ছালিছ, রাবে ও খামিছ উত্তীর্ণ হন। এবং সবশেষে কোরআন শিক্ষা প্রশিক্ষণ বোর্ড বাংলাদেশের মূল কেন্দ্র সিলেট জিন্দাবাজারস্থ বায়তুল আমান জামে মসজিদ থেকে সিলেটের প্রখ্যাত কারী আব্দুল মতিন সাহেবের নিকট থেকে ২০০০সালে কেরাতের সনদ অর্জন করেন।

কর্মজীবনের শুরুতে এম বেলাল আহমদ ২০০৭ সালে পশ্চিম সুবিদবাজার লন্ডনী রোড জামে মসজিদের ছানী ইমাম হিসাবে তার কর্মজীবনের যাত্রা শুরু করেন। এবং সেখানে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দুই বছর সেই দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এরপর ২০০৯ সাল থেকে তিনি বাগবাড়ীস্থ তার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। এবং সেই দায়িত্ব ২০১৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সাত বছর অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। এরপর এম বেলাল আহমদ ২০১৭ সালের মার্চ মাসে কাতার গমন করেন। কিন্তু মহান পালনকর্তার ইশারায় মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে তার সন্তান আশরাফুল ইসলামের অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে আবার স্বদেশে ফিরে আসেন। ২০১৭ সালের মে মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ছেলের সাথে হাসপাতালে অতিবাহিত করেন। ছেলে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরার পর এম বেলাল আহমদ মানবতার সেবা করার মনস্থ করেন। কিন্তু কোন ব্যক্তিই তার জমানো সম্পদ থেকে বন্ঠন করতে শুরু করলে তা দিয়ে সকল প্রয়োজন মিটানো সম্ভব নয়। এই ভাবনা থেকে তিনি কিছু দাতা ব্যক্তিদের সংস্পর্শ গ্রহণ করেন। এবং তাদেরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম তিনি টিউবওয়েল দানের মাধ্যমে তার মানবসেবা শুরু করেন। তিনি এপর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তিদের থেকে কালেকশন করে অসহায় ও হতদরিদ্র প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবারের মধ্যে টিউবওয়েল ও ডিপটিউবওয়েল বিতরণ করেছেন। বর্তমানে তিনি টিউবওয়েল ও ডিপটিউবওয়েল ছাড়াও অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, গৃহহীনদের গৃহ দান, নিঃস্বদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী দানসহ মানবসেবার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন আর এতে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন একদল নিঃস্বার্থ প্রবাসী। ব্যক্তিগত ভাবে এসব কাজ চালিয়ে গেলেও তিনি আন্তর্জাতিক সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ প্রবাসীকল্যাণ সংস্থার সহধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া তিনি বর্তমানে তার নিজ গ্রাম বাগবাড়ীতে শাহ আলম এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন যা আগামী ১এপ্রিল ২০২২ তারিখে কাজের উদ্বোধন করা হবে। তিনি বলেন, তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন এটি।

পারিবারিক জীবনে এম বেলাল আহমদ তার নিজ এলাকার মহিষখেড় গ্রামের শামছুল ইসলাম সাহেবের প্রথম কন্যা আনোয়ারা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পারিবারিক ভাবে তিনি দুইজন ছেলে সন্তান ও দুইজন মেয়ে সন্তানের জনক। ছেলে দুইজন হলেন; ১.আশরাফুল ইসলাম ও ২.আশফাকুল ইসলাম এবং মেয়ে দুইজনের নাম; ১.খাদিজা আক্তার রিফা ও ২.আসিয়া আক্তার শিফা।
সব শেষে মহান প্রভুর দরবারে ফরিয়াদ এম বেলাল আহমদের জীবনের শেষ স্বপ্ন মানতার সেবা এবং তার পরিকল্পিত শাহ আলম এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করুক। আমীন!
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৩০৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৩/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ৩০/০৩/২০২২
    Very good
  • খালেছ নিয়তে মানবসেবা ভালো।
  • তথরসমৃদ্ধ সুন্দর লেখা
 
Quantcast