www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভাল থেকো মা

মা। যিনি পৃথবীর সব কিছু থেকে আলাদা ও ব্যতিক্রম। যার উদাহরণ পার্থিব কোন কিছুর সঙ্গে দেওয়া যায় না। মায়ের তুলনা শুধুই মা। এত বড় গুরু দায়িত্ব পৃথিবীতে আর কারো উপর অর্পিত হয়নি যা একজন মায়ের উপর অর্পিত হয়েছে। গর্ভধারণ, প্রসব বেদনা, সন্তানের জন্ম এবং সন্তানের লালন পালন করে বড় করে তোলার মত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন একমাত্র মা-ই সফলতার সাথে করতে পারেন। কেবলমাত্র মা ছাড়া পৃথিবীর কোন জীবের পক্ষে এমন কঠিন ও জটিল দায়িত্ব সহজভাবে করা সম্ভব নয়। গর্ভধারণের মতো একটি মারাত্বক জটিল প্রক্রিয়াকে জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ হিসেবে মেনে নিয়ে দশ মাস দশ দিন অস্বস্তিকর জীবন যাপন করে শুধুমাত্র মাতৃত্বের অমৃত স্বাদ গ্রহণের নিমিত্তে। সেই মা কিন্তু একজন নারী। তাই নারীর দায়িত্ব পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। সে দায়িত্ব তিনি নৈপূর্ণতা ও বৈচিত্রতার সাথে সফলভাবে পালন করে থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমাদের সমাজে নারীর কাজ বা দায়িত্ব কে আমারা খুবই খাটো করে দেখি যা বড়ই গর্হিত কাজ। এমনকি নারীও নারী কাজ কে মূল্যায়ন করতে চায়না। ইসলাম ধর্মে নারীকে অনেক গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন “মাতার পদতলে সন্তানের বেহেস্ত”। এত বড় সম্মানে পুরুষকে সম্মানিত করা হয়নি। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর নারী তার রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরুপে সংসারে আবির্ভূত হন। এ প্রসঙ্গে প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রকার ঋষি মনু সন্তান প্রসবিনী মায়ের মাতৃত্বের গৌরবের কথা যথার্থই বলেছেন- “উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে” অর্থাৎ “দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্য্যরে গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যরে গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি, সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।”
আমরা পুরুষরা মনেই রাখিনা যে প্রত্যক মা-ই একজন নারী । নারীর প্রতি অবহেলা, অবজ্ঞা প্রকান্তরে মায়ের উপরই বর্তায়। পৃথিবীতে প্রত্যেক জিনিসের বিকল্প থাকতে পারে বা আছে কিন্তু মায়ের কোন বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন মাকে নিয়ে বলেছিলেন, 'আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি, যা কিছু হতে আশা করি, এর সবকিছুর জন্য মায়ের কাছে ঋণী।' প্রখ্যাত সাহিত্যিক হূমায়ূন আহমেদ বলেছেন “ মা হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনাসূদে অকৃত্রিম ভালোবাসা”।
সবকিছু ছাপিয়ে পৃথিবীর সেরা মা আমার মা। আমার মা ছিল বাক প্রতিবন্ধী। পৃথিবীর একটি শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দের তিনি সঠিক উচ্চারণ করতে পারতেন না। এমনকি আমার নামও নয়। সেই একটি শব্দ ছিল ‘বেটা’। জন্মের পর থেকে পিতাকে পিতা হিসেবে পাইনি, পেয়েছি আতœীয় হিসেবে। এক-দুই বছর পর পর হঠাৎ করে উদিত হতো আবার এক দুই দিনের মধ্যেই হঠাৎ অস্তমিত হয়ে যেত। মা-ই ছিল আমার মাতা ও পিতা। পিতার কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই একজন প্রতিবন্ধী মা কীভাবে তার সন্তানকে লেখাপড়ায় উদ্বুদ্ধ করে মানুষ করতে পারে অত্র এলাকায় তার জীবন্ত উদাহরণ ছিলেন আমার মা।
খৃষ্টীয় প্রবাদে আছে ‘ সৃষ্টি কর্তা মর্তে নেমে আসতে পারেন না, তাই তিনি তার প্রতিনিধি হিসেবে মা পাঠিয়েছেন’। মহান আল্লাহর পাঠানো আমার জীবনের সবচেয়ে নিয়ামত সেই মা আমাকে এতিম করে গত ৮, অক্টোবর-২০১৯ চিরদিনের জন্য চলে গেল পরপারে। ভাল থেকো মা।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৪৭৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০৯/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ড. সুলতান আশরাফী ২৬/১১/২০২১
    অপূর্ব
  • সুন্দর।
  • ভাল লাগলো।
 
Quantcast