www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিশ্বযুদ্ধ

প্রযুক্তির হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বায়ন। সভ্যতার বিবর্ণতার ছোবলে স্বপ্নের ফানুস উড়িয়ে অবক্ষয় নামক সর্বগ্রাসী সন্ত্রাসের বিস্তার ঢুকে পড়েছে সারা বিশ্বময়। বিশ্বায়নের নাম করে সাম্রাজ্যবাদ তার হিংস্রতার ভয়াল নখ ক্ষতবিক্ষত করে চলছে গোটা পৃথিবীকে। শান্তিকামী মানুষগুলোর চিন্তা চেতনায় কড়া নাড়ছে মৃত্যু-চাঁদ ফুরানো রাতের মতই জীবনের গল্পটাকে অসমাপ্ত রাখার প্রয়াসে। নড়বড়ে বোধের ক্লান্তিহীন উল্লাসে নির্বোধ বিবেক মুখ থুবড়ে পড়ে আছে সিগারেটের অ্যাশট্রেতে। রাতের নিথর অবয়বে কান্নার দাগ বয়ে বেড়ানো লাশের নগরীতে পরিণত হচ্ছে গোটা বিশ্ব।
ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে বিকেলের মূর্ছনায় জেগে আঁধারের চাদর, নির্বোধ বিকেল তা বোঝে না। তাই চুপসে থাকা জীবনের মর্ম গান তোলে আরেক দুঃখের ঘটনাবলীতে। নিজের দুর্বল য্ুিক্ত প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের সাথে ক্রমাগত সংঘর্ষ আর বির্তক সত্যের পরাজয়টাকে করে ত্বরান্বিত। অল্প বয়সে গাণিতিক মৌলিক শিক্ষার অভাবে পড়া শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবন যেমন সিদ্ধান্তহীনতা ও বিভ্রান্তির শত ভুলে ভরে যায় তেমনি সভ্যতার কিছু অমোঘ নিয়ম আমাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। অনাথ অন্ধকারে ভোগা রাতের বাতাসে ঘুরে বেড়ানো কিছু বাদুর, টিকটিকি আর হুতুম পেঁচার মত। কোথায় হারিয়ে যাচ্ছি আমরা? সভ্যতার আলোঘরে কেরসিনের কুপি জ্বালিয়ে তবে কি ফিরে যাচ্ছি সেই আদিমতায়? সেই আইয়ামে জাহেলিয়া যুগে?
আজকের পৃথিবী জুড়ে সন্ত্রাসের বিস্তার। মননে, মস্তিষ্কে, আবেগে প্রেমে, ক্ষুধায়, জিদে, আক্রোশে, শৌর্য বীর্যে লালন করছি, রোপণ করছি, বপন করছি সন্ত্রাসবাদ। প্রবল প্রতাপে যে সন্ত্রাস প্রতিনিয়ত আমাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত তা থেকে উত্তরণের কোন উপায়ই যেন খুঁজে পাচ্ছি না আমরা। কি এক অদৃশ্য শক্তি বার বার আঘাত হানছে গোটা পৃথিবীময়। সময়ের কাছে পরাভুত বাস্তবতা অথচ সভ্যকামী মানুষের মিছিলে নৈরাজ্যের হাতগুলো যেন একেকটি কেউটে সাপ। ফ্যাসিবাদ নামে পরিচিত এক দানব মহাতা-ব সৃর্ষ্টি করে মানবসভ্যতাকে গ্রাস করতে উদ্যত। মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস হারানো বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশের গহীন জঙ্গলে এনে দেয় অন্ধকারের ঘ্রাণ। কি এক সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আজ গোটা বিশ্ব সতীত্ব হারানোর নারী মতই স্টেটমেন্ট দেয় সম্ভ্রমহানিতার। আবার অনেক বলেছেন, ইসলাম ধর্মের ঝাণ্ডাধারী বর্ণবাদী, উগ্র জাতীয়তাবাদী, বিভিন্ন গোষ্ঠী ব্যবাহার করেছে। এই গোষ্ঠীগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতা পেতে চায়, নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে চায়। অর্থাৎ উদ্দেশ্য একটাই নির্বাচনে জয়ী হওয়া। তার মানে দাঁড়াচ্ছে সময়ের মদদে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মূল কারণই হচ্ছে নির্বাচন! টার্গেট একটাই ক্ষমতা। উদ্দেশ্য একটাই দেশ জয়। গোল একটাই মসনদ। মানে গদি দখলের যে প্রক্রিয়া, যে লালসা মনের গোহিন কোনে লুকায়িত তারই বহিঃপ্রকাশ হলো সন্ত্রাসবাদ।
বলাবাহুল্য, সভ্যতাবিরোধী ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো মানুষের সভ্যতার দীপ্তিতে উজ্জ্বল হয়ে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পৃথিবীর অনেক দেশের ক্ষমতার চাবিকাঠিই হচ্ছে এখন লুটপাটতন্ত্রী। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যে নয়া সাম্রাজ্যবাদ তথা বিশ্বায়নের জাঁতাকলে পড়ে ক্রমাগত শোষিত বিপর্যস্ত। ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের তাণ্ডব থেকে মুক্ত নয় বিশ্বের কোন দেশই। অন্যদিকে তথাকথিত বিশ্বয়ানের বিরুদ্ধে এবং অন্যায়ভাবে সম্পদ অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর অভ্যন্তরেই গণঅসন্তোষের ক্রমবিস্তার ঘটে চলছে। ফ্যাসিবাদী বা একদলীয় সামরিক বাহিনীভিত্তিক এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সরকার ব্যবস্থা যা উগ্র জাতীয়তাবাদ বা বর্ণবাদ কিংবা সাম্প্রদায়িকতার প্রসারের মাধ্যম্যে ব্যক্তি এবং রাষ্ট্র পুঁজির বিকাশ সম্প্রসারণে তৈরী করে বিশ্ব আধিপত্যবাদ। পুঁজিবাদের সাধারণ সংকটের সৃষ্টি, শ্রেণী গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়াশীল দাম্ভিকতা, উগ্রজাতীয়বাদী, স্বৈরশাসকের চরমতা, সাম্যবাদ বিরোধিতার সমন্বয়ে ফ্যাসিবাদ নামে পরিচিত এক দানব মহাতাণ্ডব করে মানবভ্যতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হচ্ছে বারবার।
আফগানিস্তান, ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের আরো কিছু দেশে হামলা ও মানবাধিকার লংঘন অভ্যন্তরীণ বিপত্তি আরও বাড়িয়েছে। পুঁজিবাদের পথে চলেই চীনের সমৃদ্ধি ঘটেছে, চীন একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে কেউ কেই ভাবলেও সাম্রাজ্যবাদের ধারকদের ভাবনা মোটেও সে রকম নয়। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে পুঁজিপতিদের কিছুই করার ক্ষমতা নেই। সর্বহারার একনায়কত্বের এটি একটি নতুন ধরনের সমীক্ষা যা হতে পারে খুবই বিপদজ্জনক। চীনে যে মাঝে মাঝে তথাকথিত মানবাধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র আন্দোলনের কথা শোনা যায় তা আসলে পুঁজিবাদকে চাঙ্গা করার জন্য মার্কিন প্ররোচনাজাত অন্তর্ঘাতী কার্যকলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
স্ফুলিঙ্গ তার পাখায় ক্ষণিকের ছন্দ পেয়ে মুহূর্তেই উড়ে গিয়ে ফুরিয়ে যায়। মানুষ আগে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে নিজেকে টিকিয়ে রাখতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় দিন যতই এগুচ্ছে মানুষ ততই নিজের বিরুদ্ধে নিজেই মারণাস্ত্র হয়ে মাঠে নামছে। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব নিজের ক্ষমতার জন্য প্রতিদিন চলছে একের পর এক খুন, হত্যা। প্রতিদিন হত্যাকে জায়েজ করার ষড়যন্ত্রে গোটা বিশ্বময় চলছে এখন অশান্তির অনল। প্রায় সব দেশে সন্ত্রাসের হিংস্র থাবা কেড়ে নিচ্ছে প্রতিদিন শত শত নিষ্পাপ মানুষের জীবন। যারা মারা যাচ্ছে তাদের বেশীর ভাগই জানেন না কোন অপরাধে তাকে প্রাণ দিতে হচ্ছে। হত্যার ভয়াবহ উল্লাসের দায় স্বীকার করে বিশ্বে আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করছি। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের মধ্য দিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের শুরু প্যারিসের হত্যাকাণ্ড দিয়ে পৃথিবীবাসী তার আপাত শেষ ঘটনা অবলোকন করলো। আসলে পৃথিবীর কোন দেশই এখন আর সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য নিরাপদ নয়।
দুই পরাশক্তির ঠা-া যুদ্ধের অব্যহিত পরে শক্তিগুলোর অর্থনীতিতে ব্যাপক ধস
নামার আশংকায় দেশে দেশে যুদ্ধ লাগনোর যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল তাই আজ সারা বিশ্বে শান্তি কেড়ে নিয়েছে। পরাভাবকে চরম বিশ্বাসে কেউ আর অপরাধ মনে করছে না। নিরপত্তা কেউই দিতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত অস্ত্রের বাজার সীমিত হয়। অপরদিকে জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ দিন দিন হত্যা, খুনকে উস্কে দিচ্ছে। জাতীয়তাবাদ হল একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিশাল জনসমষ্টির চিন্তা, আবেগ, অনুভূতি, আশা, আকাক্সক্ষা, সংস্কৃতি, সংস্কার, দেশাত্মবোধ, আনুগত্যের বিরাট সম্পর্ক ও অবিচ্ছেদ্য আত্মীয়তা। একই রাষ্ট্রে একাধিক গ্রুপ, কালচারাল গ্রুপ, রিলিজিয়াস গ্রুপ থাকতে পারে কিন্তু জাতীয় ভাবাদর্শেও মূলধারা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না। যেটা বর্তমানে বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ। পক্ষান্তরে, বাকস্বাধীনতা হরণ, গণমাধ্যম্যেও কণ্ঠরোধ ফ্যাসিবাদের অস্ত্র। যার পরিণামই হচ্ছে রক্তপাত।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের সবুজ শস্যভূমিও হত্যার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা, ধর্ম, গনতন্ত্র, রাজনীতি, মুক্তচর্চার আর ব্যাবসাকে পুঁজি সম্প্রসারণের জন্য একের পর এক মরণযুদ্ধে প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি যেন আমরা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি। খুন আর গুপ্ত হত্যায় ছেয়ে গেছে দেশ। রক্তের হোলিতে ভাসছে মানুষ আর মানবতা। অনেকের ধারনা পুরনো খুনের বিচার না হওয়ার কারণে এই হত্যাযজ্ঞ আরো বেড়ে চলছে। বিজ্ঞজনেরা মনে করছেন, মূল্যবোধের অভাবেই আশংকাজনক হারে খুন কিংবা হত্যা বেড়েই চলছে। কেউ কেউ মনের করছেন আইনশৃংঙ্খলার অবনতির চরম বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে দেশে খুন, হত্যা, গুম। কারণ যাই হোক আমরা আশা করবো যেকোন হত্যার পিছনে যে মোটিভই থাকুক না কেন, অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে সঠিক সময়ে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো। আর নয় কোন হত্যা, আর নয় কোন তাজা প্রাণের বলি। সময়ের নোংরা বলয়ে আর কোন তাজা প্রাণকে আমরা ঝরে যেত দেব না এই হোক আমাদের প্রত্যয়।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৮৮৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৬/০৯/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast