www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমাকেও নিয়ে যাও পাপা তোমার সাথে

www


সুমিত, চাকুরী করে বাংলাদেশের একটি সুনাম ধন্য কোম্পানীতে। একটু ভীতু প্রকৃতির। ভীতু বললে ভুল হবে। আসলে দেশের বর্তমান চড়ম নিরাপত্তাহীনতার কারনে একটু সাবধানে চলা মাত্র। চলমান হরতালে এতদিন অফিস হতে অভার-টাইম দেওয়ায় নিয়মিত অফিস করেছে। তবে বাসা হতে প্রতিদিন অফিসে গিয়েছে রিক্সা করে, চিপা গলির মধ্য দিয়ে অতি সাবধানে, যতটা সম্ভব প্রধান সড়ক এড়িয়ে। জীবনের ঝুকি নিয়ে চলা, শুধু মাত্র টাকার জন্য, নিজেকে ও নিজের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য।

আজ সুমিতের মন খুবই খারাপ। অফিসের ম্যানেজম্যান্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে হরতালে শুধু মাত্র ডিউটিরত সময়ে অতিশ্রম দেওয়া হবে। অফিসের গাড়ী চলবে। কেউ ডিউটি না করলে তাকে ছুটি কাটাতে হবে। সিদ্ধান্তের কথা জানার পর অনেক প্রশ্ন জাগে মনে। সবাই ব্যস্ত শুধু অভার টাইম পেল কি না, তা নিয়ে। কেউ নিজেরা কতটুকু নিরাপদ থাকবো, একবারও ভাবলো না। কেউ ম্যানেজমেন্টকে প্রশ্ন করলো না গাড়ীতে আমরা কিভাবে নিরাপদ থাকবো? কয়েক দিন আগেও ব্যাংকের একটি বাসে পেট্রোল বোমা মারা হয়েছে। এসব খবর দেখে পরিবারের সবাই আরও বেশি আতংকিত হয়ে পরেছে। হরতাল অবরোধের মধ্যেও রাস্তায় গাড়ী চলছে যেমন সত্য, ঠিক তেমনিই প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও গাড়ী পুড়ছেও এবং আহত বা নিহতও হচ্ছে কেউ কেউ।

এসব চিন্তা করতে করতেই অফিসের বাসে উঠে বসে সুমিত। মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে স্বরণ করতে থাকে। বাসটি কিছু দুর অগ্রসর হওয়ার পর পরই হঠাৎ থেমে যায়। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তার সারা শরীরে আগুনের উপস্থিতি টের পায়। অসহায়ের মত বাস থেকে নামার চেষ্টা করে। তার ঐ বেঁচে থাকার চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যেই পুরো শরীর ঝলসে যায় পেট্রোলের আগুনে। উদ্ধারকারীরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই নিস্তেজ হয়ে পরে সুমিতের শরীর, চিরমুক্তি পেয়ে যায় নিষ্ঠুর এ পৃথিবীর অত্যাচার থেকে।

এরপর সবারই টনক নড়ে। সরকার হতে ঘোষিত হয় পুরস্কার। অফিস থেকে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এসে শান্তনা দিয়ে যায় পরিবার কে। ক্ষতি পূরনেরও নিশ্চয়তা দিয়ে যায় সবাই। নির্দ্বিধায় সিদ্ধান্ত বদলিয়ে পূর্বের সিদ্ধান্তে চলে আসে অফিসের ম্যানেজম্যান্ট।

টাকা, হ্যা শুধু মাত্র টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যায় সবাই। সহকর্মীরা সহানুভূতি দেখানোর জন্য চাঁদা তুলতে থাকে, একদিন বা দু'দিনের বেতনও দিয়ে দেয় অনায়াসে  অনেকেই।

কিন্তু একবারও কেউই ভাবে না সুমিতের অবুঝ ছেলেটির কথা, যে ছেলেটি অধীর অপেক্ষায় বসে আছে তার পাপার বাসায় ফেরার আশায়। ঘুম থেকে উঠেই যে শিশুটি ভাঙ্গা ভাঙ্গা উচ্চারনে তার মায়ের কাছে জানতে চাচ্ছে, "মা, পাপা অফিস থেকে আসেনি? আমার জন্য চককেট আনেনি"? অথবা প্রতিদিন সকালে পূর্বের মত তার মায়ের পাশের  খালি বালিশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, "মা, পাপা কোথায়"? বাথরুমের দড়জা ধরে কাঁদতে থাকে, "পাপা, দরজা খুলো, আমি তোমার সাথে টিথ্ ব্রাশ করব, তোমার সাথে গোসল করব পাপা, প্লিজ দরজা খুলো"।

টাকা দিয়ে হয়তো ঐ শিশুটি বড় হতে পারবে, কিন্তু কোন দিন কি সে তার বাবার আদর পাবে ঐ টাকার বিনিময়ে? সুমিতের মা-ই বা কি কোন দিন তার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে পারবে? কি অপরাধ ছিল সুমিতের, তার বাচ্চার, তার মায়ের অথবা তার স্ত্রীর? কে জবাব দিবে এসকল প্রশ্নের? ম্যানেজম্যান্ট? সরকার? বিরোধী দল? কেউ-ই দিতে পারবে না এ প্রশ্নের জবাব। জবাব শুধু একটাই, এমন কুলাঙ্গার দেশে জন্মানোর শাস্তি। এ শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় নেই আমাদের যতদিন না আমরা ক্ষমতালোভী, হিংস্র রাজনিতীবিদদের থাবা হতে মুক্ত হতে পারব, ততদিন একের পর এক এমন সুমিতদের হারাতে থাকবো আর অসহায় অবুঝ শিশুটির আর্তনাদ শুনতে থাকবো চিরকাল।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ১২৩৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৩/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast