www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

PK- সমাজ পরিবর্তনের পথ প্রদর্শক।

PK- সিনেমাটি বেশ কয়েক বার দেখলাম। দেখলাম বললে ভূল হবে, যাকে বলে গিলে গিলে খাওয়া, ঠিক তেমনি করে উপভোগ করলাম। বিনোদনের পাশাপাশি শিখলাম, জানলামও অনেক কিছু। আসলে পরিচালক রাজ কুমার হিরানির প্রতিটা সিনেমাতে বিনোদনের পাশাপাশি সমাজের অতি ক্ষুদ্র কিছু ত্রুটি বা নীতি বা আইন, যা সমাজের, প্রশাসনের, বা রাষ্টের কর্তা ব্যাক্তিদের কখনও নজরে আসেনা, অথচ ঐ সকল ত্রুটি বা নীতির কারনে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠি অনেক বড় ধরনের সমস্যায় পতিত হয়, (যেমন MV MBBS সিনেমাতে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা রুগীকে ভর্তি ফরম পুরন না করা পর্যন্ত চিকিৎসা শুরু না করা।) অথবা সমাজের কিছু অর্থলোভী মানুষ অতি সূক্ষ্ণ, অতি তুচ্ছ বিষয়কে পুঁজি করে ( যেমন PK- সিনেমাতে "ডরকা বিজনেস") নিরীহ ধর্ম ভীরু জনগোষ্ঠির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা কামিেয় নেওয়ার পদ্ধতি অতি নিঁখুত ভাবে তুলে ধরেছেন। তেমনি এ সকল সমস্যা সমাজ থেকে চিরতরে বিতারিত করার রাস্তাও দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখ্যের বিষয় বাস্তবে কেউই কোন দিন আমাদের সমাজ থেকে এগুলো বন্ধ করা বা প্রতিহত করার বিন্দু মাত্র চেষ্টাও করবে না। আমরা শুধু বিনোদনের জন্যই সিনেমাটি দেখব, দু'চারটা মন্তব্য করব, তারপর এক সময় ভুলে যাব। সমাজ, দেশ চলবে তার নিজস্ব গতিতে। কারন বাস্তবে কোন মুন্না ভাই বা পিকে জন্মাবে না। যদিও কেউ জন্মায় বা কেউ মুন্না ভাই হতে চায়, তবে সমাজের স্বার্থ সন্ধানী ব্যাক্তিরা বা প্রশাসন উপাধি দেবে মাস্তান। আর পিকে হতে চাইলে  "ডরকা বিজনেস" (ধর্ম ব্যাবসায়ী) ওয়ালারা উপাধী দেবে নাস্তিক। আসলে মুন্না ভাইয়ের মত প্রকৃত সোস্যাল ওয়ার্কার, পিকের মত কোন প্রকৃত আস্তিক কে এ সমাজ কোন দিনও জন্মাতে দিবে না। অথচ সমাজে শান্তি আনার জন্য, সুন্দর জীবন-যাপনের জন্য যে এদের এ সমাজে জন্মানো  কতটা প্রয়োজন, পরিচালক তার সিনেমা গুলিতে ডেমো সহকারে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছন।

পরিচালক শুধু কি বিনোদনের জন্যই বা শুধু টাকা কামানোর জন্যই কি সিনেমাটি তৈরী করেছেন? অন্য কোন উদ্দেশ্য কি নেই? নেই কি কিছু শিক্ষা নেওয়ার এবং তা ব্যাক্তি জীবনে বা সমাজে প্রয়োগ করার?

PK- সিনেমার ছোট্র একটা চরিত্র বিশ্লষন করে আমার মনে একটা উপলব্দি জন্মে।
ভেরু শিং(সঞ্জয় দত্ত), খুব ছোট্র একটা চরিত্র, খুব ছোট্র একটা ঘটনা যা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটে, এই ছোট্র ঘটনার ছোট্র চরিত্রের মাধ্যমে অনেক বড় একটা উপলব্ধি লুকিয়ে আছে।
পিকে (আমির খান) ভেরু শিংয়ের গাড়ীতে এ্যাকসিডেন্ট করে। ভেরু শিং পিকে কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পিকের আচরনে মনে করে মাথায় আঘাতের কারনে সে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে এবং তা ভেরু শিং কে বলে। ডাক্তারের মুখে এমন কথা শুনে সে মনে মনে খুশি হয়ে যায় এবং পিকে কে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। খুব সহজেই বিবেক কে হত্যা করে। পিকের স্মৃতি শক্তি সত্যিই বিলুপ্ত হয়েছে কি না তা আরও নিশ্চিত হতে তাকে কয়েকটি প্রশ্ন করে। কোন উত্তর না পেয়ে নিশ্চিত হয় যে পিকে সত্যিই স্মৃতি শক্তি হারিয়েছে। তাই ভেরু শিং খুব বেশি খুশি হয়ে সিদ্ধান্ত অটল রেখে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

কিন্তু সে গেইট পার হতে পারে না।থমকে দাঁড়ায়। বিবেকের তারনায় থমকে দাঁড়ায়। কারন পিকের কোন পরিচয় বা ঠিকানা সে জানে না। একজন অসহায় মানুষ, যার সাথে ভেরুর পূর্বের কোন পরিচয় বা সম্পর্ক না থাকা সত্বেও তাকে একা ফেলে পালিয়ে যেতে পারে না ভেরু শিং। সিদ্ধান্ত বদলায়, পিকে কে নিয়ে যায় তার বাড়ীতে, স্মৃৃতি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তার বাড়ীতে রেখে দেয়। অথচ ভেরুর কথা-বার্তা ও আচার-আচরনে সমাজের কেউ তাকে ভাল মানুষ হিসেবে গন্য করবে না। পৃথিবীর অনেক নিকৃষ্ট মানুষের মাঝেও কিছু ভাল গুন থাকে, যা জীবনে কোন এক সময় প্রকাশিত হয়ই।

সিনেমার শেষের দিকে এই ভেরু শিংই আবার পিকে কে সহযোগিতার জন্য ট্রেনে করে দিল্লি যায়। দিল্লি স্টেশনে "গাড"কে রক্ষা করা বাহিনী দ্বারা বিস্ফোরিত বোমার আঘাতে সে মারা যায়।

ভেরু শিং হাসপাতালে বিবেক কে বিসর্জন দিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, সে সিদ্ধান্তে অটল থাকলে কি ঐ বোমা হামলায় সে মারা যেত? না, সে বেঁচে থাকতো, কারন সে যে ধরনের  জীবন যাপন করে, তাতে তার দিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন হয়তো হত না এবং ঐ বোমা বিস্ফোরনের শিকার হত না। বউ-বাচ্চা, সংসার, ব্যান্ড গ্রুপ নিয়ে হয়তো দিব্বি মজার একটা জীবন উপভোগ করতো।

আসলেই কি তাই হতো? জীবনে কোন এক মূর্হুতের জন্য কি তার মধ্যে অপরাধ বোধ জন্মাতো না? যদি জীবনে শুধু একবারের জন্য জন্মায়, তবে সারাটা জীবন তার মনের মধ্যে একটা অশান্তি বোধ কি কাজ করত না? সে আসলেই কি সুখে থাকতে পারত? সে কি চিরতরেই ভুলে যেতে পারত? পৃথিবীর সত্যিকার কোন মানুষের দ্বারা কি ভুলে যাওয়া সম্ভব? যদি কেউ সত্যিই বিবেক হত্যা করে এমন কাজ করে এবং খুব অনায়াসেই ভুলে গিয়ে দুনিয়াতে সুখের জীবন যাপন করতে পারে, তার কি মানুষ শব্দটি ব্যবহার করার কোন যোগ্যতা থাকে?

আমাদের সমাজে অনেকের কাছে বিবেক কে বিসর্জন দিয়ে বিপদ গ্রস্থ মানুষকে ফেলে পালিয়ে যাওয়া খুবই সহজ একটা কাজ। অনেকের কাছে এটা একটা সামান্য ব্যাপার মাত্র। নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য খুব অনায়াসে অনেকে কাজটি করছে, সমাজে সন্মানের সাথে বসবাসও করছে।
আবার কোন কোন ব্যাক্তির কাছে বিবেক বিসর্জন দেওয়া খুবই কঠিন কাজ। জন্মগত, পারিবারিক, সামাজিক, শিক্ষা, জ্ঞান ইত্যাদি দ্বারা অনেক কষ্টে উপার্জিত আদর্শ অনেকেই আবার জীবন চলে গেলেও হত্যা করতে পারে না। কঠিন-নিষ্ঠুর সমাজে টীকে থাকার জন্য, সমাজের নিষ্ঠুর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য সাময়িক ভাবে হয়ত সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু বেশীক্ষন ধরে রাখতে পারে না বিবেকের যন্ত্রনায়। মনে মনে নিজেকে নিজেই গালি দেয়, অন্যদের মত বিবেক কে বিসর্জন দিয়ে নিজের মনকে শান্তনা দেওয়ার মত কোন ভ্রান্ত যুক্তি দাঁড় করাতে পারে না। পরাজিত হয় বিবেকের কাছে, পরিনতি হয় ঠিক ভেরুরই মত। ভেরু শিং, তোমাকে হাজার সেলুট।

বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১২০৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • জাহিদুর রহমান ২৫/০২/২০১৫
    Ai cenamay nastikota sikhano hoice
    • সহিদুল ইসলাম ২৫/০২/২০১৫
      তাই নাকি ভাই? দেখে বলছেন? না কি শুধু শুনেই বলছেন? মনযোগ দিয়ে দেখে তারপর আপনার মন্তব্য আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কতটা ভুল।
  • ফাহমিদা ফাম্মী ২৫/০২/২০১৫
    এই সিনামা থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে
  • ভালো লিখেছেন।
  • জহির রহমান ১৩/০২/২০১৫
    তারুণ্যে স্বাগতম...
  • জহির রহমান ১৩/০২/২০১৫
    পড়লাম...।

    ধন্যবাদ রিভিউ শেয়ার করার জন্য।
  • ১৩/০২/২০১৫
    সুন্দর লেখা ।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ১৩/০২/২০১৫
    pk is nice cinema @@@@@@
 
Quantcast