www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নজরুল কথা

কবি নজরুল মানে দুখু মিয়ার -
'সত্যমন্ত্র' কবিতার--
'পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর
বিধির বিধান সত্য হোক'
এই লাইন দুটি আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে ছোটবেলায়। তখনও বুঝতাম না কবিতার মানে কি! অজানা এক ভালো লাগা কাজ করতো।

নজরুল বলতে আমি বুঝি ভালোবাসা - মানবতা এবং বিদ্রোহের এক অভুতপূর্ব মিশ্রন।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'ঝিঙেফুল' কবিতায় তার কল্পনার গভীরতার প্রতি শ্রদ্ধা এসে যায় সকলের। আসলে শত প্রতিকুলতা সত্বেও কাজী নজরুল ইসলাম একটি জীবনমুখী সংগ্রামের পথে রেখে গেছেন হাজার অনুপ্রেরণা। নজরুল সঙ্গীতের বিশিষ্ট শিল্পীদের সাক্ষাতকার দেখেছি অনেক। কেউ কেউ তো বলেছেন -
একপর্যায়ে অবচেতন মনেই কিছু সুর তাকে বেশি টানত। বড় হয়ে জানতে পারলেন, তিনি যে গান গাইতেন, সেগুলো আসলে নজরুলের। এভাবে একটা অমোঘ আকর্ষণ ও অবচেতনভাবে নজরুলের গানের সঙ্গে নিজেকে বেঁধে ফেলেছেন অনেক শিল্পীরা। আর এখনো সেই নজরুলকে নিয়েই কাজ করে চলেছেন।

জীবনের এতটা সময় নজরুলসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেয়ার একটা কারণও আছে। তার গানের সুর, লয়, তাল ও ছন্দের যে বৈচিত্র্য, সেটা আসলেই প্রচণ্ড শক্তিশালী। এ বৈচিত্র্যই শিল্পীদের এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছে। এর চেয়েও একটি প্রাসঙ্গিক কথা হলো, নজরুলের গান গাইলে একজন সঙ্গীতশিল্পী যে কোনো ধরনের গানই গাইতে পারেন।
গর্ব করি এটা ভেবে যে, ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে আমাদের দেশের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

নজরুলকে স্মরণীয় করে রাখার অঙ্গ হিসেবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চুরুলিয়ায় "নজরুল অ্যাকাডেমি" নামে একটি বেসরকারি নজরুল-চর্চা কেন্দ্র আছে। চুরুলিয়ার কাছে আসানসোল মহানগরে ২০১২ সালে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। আসানসোলের কাছেই দুর্গাপুর মহানগরের লাগোয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানী কলকাতার যোগাযোগ-রক্ষাকারী প্রধান সড়কটির নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম সরণি। কলকাতা মেট্রোর গড়িয়া বাজার মেট্রো স্টেশনটির নাম রাখা হয় নজরুলের নামে। আমাদের ত্রিপুরা রাজ্যেও সোনামুড়া মহকুমায় সরকারী মহাবিদ্যালয়ের নামও নজরুলের নামানুসারে।

ছোট বেলায় বইতে পড়েছি নজরুল নাকি বিদ্রোহী কবি! পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতো 'বিদ্রোহী কবি কে ছিলেন'? না বুঝেই উত্তর লিখতাম কাজী নজরুল ইসলাম।
পরে জানলাম অসহযোগ মিছিলের সাথে শহর প্রদক্ষিণ করা হতো নজরুল গানে "ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও! ফিরে চাও ওগো পুরবাসী"---- নজরুলের এ সময়কার কবিতা, গান ও প্রবন্ধের মধ্যে বিদ্রোহের ভাব প্রকাশিত হয়েছে। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে 'বিদ্রোহী' নামক কবিতাটি। বিদ্রোহী কবিতাটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
এই কবিতায় নাকি নজরুল নিজেকে বর্ণনা করেছিলেন - তাই সেটা পড়লাম।

আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ জ্বালা, চির লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের
আমি অভিমানী চির ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম প্রকাশ কুমারীর!
আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালবাসা তার কাকন চুড়ির কন-কন।
মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
আমি চির বিদ্রোহী বীর –
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!
তবে নজরুলের বানী সকলের হৃদয়ে বিরাজ করছে আজ।।

নজরুল সম্প্রীতির পুজারী ছিলেন নিসন্দেহে
তিনি তার শেষ ভাষনে উল্লেখ্য করেন - “কেউ বলেন আমার বানী যবন কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনটাই না। আমি শুধু হিন্দু মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।”

আজ কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন।
সাম্য, দ্রোহ আর প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জয়ন্তীতে কবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি । কবির অনুপ্রেরণায় সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।


২৬শে মে ২০১৮
আগরতলা
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৮৩৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৫/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast