www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৬)

মিলিয়ে দেখবেন , কথা সত্য হয় কিনা!
@ নমুনা টপিকসঃ
#শ্রমিক হত্যা।
#গরিব ও লকডাউন।
#টোকাই মারুফ।
#ঝর্ণা, মুনিয়া, মিথিলা ও মিডিয়া।

যেখানে বিল গেটসের সন্তানেরা নানা ধরনের মানব সেবায় ব্যস্ত, সেখানে আমাদের বসুন্ধরার সন্তানেরা নানা ধরনের অপকর্ম আর খুন খারাবি নিয়ে ব্যস্ত।

যেখানে আম্বানীর সন্তানেরা নিজেই গাড়ি চালিয়ে অফিসে যায়, সেখানে আমাদের এক এমপি পুত্র রাস্তায় জ্যাম দেখে রাগে পাখির মত গুলি করে ২ জন মানুষকে হত্যা করে।

যেখানে ব্রিটিশ রাজপুত্ররা সেনাবাহিনীতে ট্রেনিং নেয় দেশ সেবার জন্য, সেখানে হাজির পুত্র ইরফান থাপ্পর দিয়ে সেনাসদস্যের দাঁত ফেলে দেয়। আবার অল্প দিনে জেল হতে বের হয়ে মাল্যভূষিত হয়।

যেখানে টাটা বিড়লার ব্যাংক থেকে এক রুপিও আত্মসাৎ করার নজির নাই, সেখানে সিকদার ব্রাদার্সরা ব্যাংক লোনের জন্য ব্যাংকের এমডিকে গুলি করতেও দ্বিধা করে না।

যেখানে ইস্পাহানি বাওয়ানী পরিবার তাদের নিজস্ব জায়গায় দেশে একটার পর একটা স্কুল হাসপাতাল নির্মাণ করে যাচ্ছে, সেখানে যমুনা গ্রুপ হাজার হাজার একর জমি দখল করে যাচ্ছে, দেখার কেউ নাই।

যেখানে রতন টাটা বলে করোনায় দেশের প্রয়োজনে সে তাঁর সমস্ত সম্পদ দিয়ে দিতেও রাজি, সেখানে আমাদের শিল্পপতিরা মদ ও রক্ষিতা নিয়ে আমোদ ফুর্তিতে মত্ত।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শাসন-শোষণ করার জন্য উঠে আসছে এক নিষ্ঠুর, ভয়ংকর, পিশাচ টাইপের ধনী প্রজন্ম। ওদের বাবারা তো আমাদের অন্তত বাঁচিয়ে রেখেছে, কিন্তু তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের মানুষগুলা আমাদের সন্তানদের জাস্ট পিষে মারবে। মিলিয়ে দেখবেন , কথা সত্য হয় কিনা।

নোয়াখালি নিয়ে চুপ, হেফাজতকে টাইট এবং বাঁশ, এই হলো বাংলাদেশ।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৭)

টুকরো টুকরো স্মৃতিতে অতীত ও কয়েকজন স্যারঃ
কেমন আছেন হাজ্বি সাহেব। এই কথাটা বলেই আমার বাবাকে জড়িয়ে ধরতেন লেমুয়া বাজারে। আমি সালাম দিয়ে পাশে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতাম আর দেখতাম উনাদের কথায় একে অপরকে শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং মার্জিত ভাব। উনি আমার বাবার সিনিয়র তবে লেমুয়া স্কুলের ছাত্র দুইজনে। মীর স্যার করৈয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। যার ব্যক্তিত্ব আগুনের মত, এখনকার এই ছাইপাঁশ মাতব্বরদের জন্য উনার ব্যক্তিত্বটাই যথেষ্ট ছিলো। স্কুল বন্ধ হলেই আমি বাড়ি চলে যেতাম আর আমার বাবা প্রতি শুক্রবার চিটাং হতে আসতেন এবং স্যারও প্রায় শুক্রবার বাড়ি যেতেন। এই কারণে প্রায় সময় দেখা হতো বাজারে, কিন্তু স্যার যখন বাবাকে হাজ্বি সাহেব ডাকতেন তখন মনে খটকা লাগতো। উনি হজ্ব করেন নাই আর কেউ এটা ডাকেও না, তাহলে মীর স্যার কেনো ডাকে। তবে তারচেয়েও ভয়ে থাকতাম আমার পড়াশোনার কথা জিজ্ঞাসা করবে, তাই চুপ থাকা ।

মীর স্যারের সততা, প্রজ্ঞা, মেধা, মহানুভবতা এবং দক্ষতা আমার চেয়ে জ্ঞানী গুণী লোকেরা বলবে। উনার বিচার বিশ্লেষণ করতে গেলে এই মহান লোকের মানবিকতার সাগরে ডুবতে হবে আমাকে। শুধু এইটুকু বলবো মীর স্যার নিজেই একটা করৈয়া স্কুল। আমি, আমার স্ত্রী এবং বাবা ফেনী ট্রাংক রোড়ে বড় মসজিদের সামনে দাড়ানো, স্যার আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ হতে বের হলেন আমি দেখেই সালাম করতে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কারণ অনেক বছর পরে দেখা। সেই আগের মত বাবাকে হাজ্বি সাহেব ডাকতেছেন। সেই আগের মত শ্রদ্ধা ভালোবাসা ।

আমি স্যারকে কোথাও বসতে বললাম উনি বসলো না। আমি স্কুলের কথা জানতে চাইলাম, উনার কথা জানতে চাইলাম, বাবাকে বলেন হজ্ব করতে যেতে উনি যাচ্ছে না । স্কুলের কথা বলায় প্রদীপটা টপ করে নিভে গেলো। আমি কথা পাল্টাতে চাইলাম তারপরও উনি বলেন সাজেদুল্ল্যা স্যার দায়িত্বে আছেন। তবে স্বাধীনতা নাই। বুঝতে আর বাকি রইলো না প্রিয় স্কুল এখন লংষ্কা আর শাসন করে রাবণ। তবে রাবণ সীতার রূপে মুগ্ধ হয়ে অপহরণ করলেও ইজ্জতে হাত দেয় নাই। সব আমলে রাজনীতিক রাবণেরা মসজিদ, মন্দির, স্কুল ,কলেজ মাদ্রাসার ইজ্জত নিলামে তুলে আর এতে কিছু শিক্ষক নামের মানুষ সহায়তা করে।

বাড়ি গিয়ে ধরলাম বাবাকে মীর স্যার আপনাকে হাজ্বি কেনো ডাকে। উনি ফিরে গেলেন দেশ স্বাধীনের আগে স্কুল জীবনে। স্মৃতি মানুষকে কাতর করে, আবেগী করে। লেমুয়া স্কুলে পড়ার সময় নাটক করেছেন আর সেই নাটকে অভিনয়ে চরিত্রের নাম হাজ্বি ছিলো। তাই স্যার আমার বাবার সিনিয়র হলেও নাম ধরে ডাকে না।

টি ইসলাম হতে বাসে উঠে দেখি ভিতরে গোপাল স্যার বসা। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। ডেকে পাশে বসতে বললেন। আমি নানার বাড়ি হতে ফেনী যাচ্ছি,তখন ফেনী কলেজের ছাত্র আমি। স্যার আমার পুরো খবর নিবে, উপদেশ দিবে ভালো কেমন করে লাগবে! তবে মনে মনে খুশি আমি ভাড়া স্যার দিবে বলে। কথায় কথায় বললেন এক বেয়াদব ছাত্র দেলোয়ার স্যারের সাইকেল ভেঙ্গে ফেলেছে। দেলোয়ার স্যার খুব অপমানবোধ করেছে। এমন হলে শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে হবে। আমি বললাম আপনার সাথে কেউ এমন করবে না, স্কুলের সব ছেলে নিয়ে গিয়ে ওই ছেলেকে ধরে নিয়ে আসা উচিত, তাকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। স্যার হাসলেন কিছু বললেন না। বেয়াদব আগেও ছিলো এখনো আছে তবে পার্থক্য এখন বেয়াদবি রাজনৈতিককরণ করা হয়েছে যার কারণে বেয়াদব কালো চমশা পরে বাপও চিনে না।

তুমি এত আগে আগে হাটছো কেনো। আমি তাকে বলি।
তুমি আরো পিছনে থাকো তাই ভালো, মেয়েটা বলে।
আমি দশ/বার হাত পিছনে আর কত পিছনে থাকবো।
কারণ এই সময় নেপাল স্যার স্কুল হতে বাসায় যায়। নেপাল স্যার তখন ছাগলনাইয়া পাইলট হাই স্কুলের শিক্ষিক। স্যারের বাসা মেয়েটার বাসার পাশে আবার স্যার আমার বাবার সহপাঠী এবং এক গ্রামের আমরা । ভালো করে চিনে দুইজনকে এবং একসাথে দেখলে বেকায়দায় পড়তে হবে। একদিন ঠিক দুইজনকে রাস্তায় পেয়ে গেলো স্যার। দুরে দুরে দেখে কিছু বললো না শুধু বললো কেনো এসেছি ছাগলনাইয়া।

আমি বিয়ের দাওয়াত দিতে গিয়ে দেখি স্যার প্রধান শিক্ষক। দাওয়াত দিলাম পরিবারের সবাইকে। সেই পুরাতন রাস্তায় হাটতে ৯২/৯৪ সালের স্মৃতি এসে পা জড়িয়ে যাচ্ছে। জানি না মেয়েটা তার স্বামীর হাত ধরে এখন হাটে কিনা। এই কয়েক বছর আগেও নেপাল স্যারের সাথে দেখা করতে গিয়েছি উনি বাঁশপাড়া হাসপাতালের (নাম মনে নেই) দায়িত্বে আছেন । আমি সাথে নিয়ে চা পান করতে চাইলাম। হোটেলে গেলেন কিন্তু কিছুই খেলেন না কারণ উনার ডায়াবেটিস, আমার বিল দিয়ে দিলেন। একটা কার্ড দিয়ে বললেন তোর বাবাকে ফোন দিতে বলিস। এখন আমারও ডায়াবেটিস। মীর স্যার শেষ বয়সে, গোপাল স্যার নেই, আমার বাবা শেষ বয়সে। এইসব স্যারের কথা ভুলা যাবে না জীবনের শেষ অবদি। শিক্ষালয়ও আজ শেষ বয়সে ছাত্র, শিক্ষক এবং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে। দেখে হৃদয় রক্তক্ষরণ হয় তবে কিছু বলতে মানা কারণ আমি আপনি এবং আমরা দয়াহীন, বিবেকহীন ।

মুহুরীগঞ্জ হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোশারফ স্যার আমার নানা হয় বলে মজা করেই কথা বলতেন। মুহুরীগঞ্জ ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল কলেজে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়ে ছিলো উনাকে। আমার স্ত্রী দুই বছর কলেজের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু কলেজ টিকে নাই কারণ স্থানীয় রাজনীতি। স্যারই কলেজ বন্ধ করে দিতে বলেন। কতো কষ্ট, কতো টাকা সব জলে গেলো। অতীত জীবনে স্যারের উপদেশ এই মেয়ের চেয়েও আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করাবো ভুলতে পারিনি। ভুলতে পারবো না মুহুরীগঞ্জ কলেজে আমার স্ত্রীকে অনেক সহযোগিতা। কিন্তু এই সমাজে ভালো কাজ মূল্যহীন।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৮)

ফেলে আসা দিনের কিছু গল্প কিছু স্মৃতি।
বছরে একবার খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্কুলের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। নবম শ্রেণীতে উঠে নাটকে অংশ নিয়ে নিজেকে অভিনয়ের পাঠশালায় হাজির করি। খেলাধুলায় বরাবর আমার অনীহা তাই কোন দিন তার ধারেকাছে যাওয়া হয়নি।এই জন্যই মনে হয় নাটকের পিছনেই পড়ে ছিলাম। ফেনী থিয়াটার এবং লেমুয়ার নাটক এখনো আমাকে স্বপ্নে অভিনেতা করে তুলে। আগে যাত্রা, পালাগান, নাটক শীতকালে মানুষকে বিনোদন দিতো সাথে সাথে মানুষের মনকে নরম করতো, প্রশস্ত করতো ও মানবিক করতো। এখন রাজনীতি রাজনীতি নাটকে মানুষ মনকে শক্ত, লোভী ও লিপ্সু করার দৌড়ে যুবসমাজকে ব্যবহারে লিপ্ত। আর যুবসমাজ বাইক, মোবাইল এবং ক্ষমতার কাছে নিজেকে সপে দিয়ে পুতুল হয়ে যেমন খুশি তেমন সাজে ব্যস্ত।

নাটকের রিয়ার্সেল চলার সময় কখনো কখনো এক মানবীর দুইটা চোখ জানালার ওপাশ হতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো। এতে আমার বুকে কাঁপন হতো আমি বুকে হাত দিয়ে হৃদয় খুজতে চেষ্টা করতাম। সাদা সাদা চোখের মিষ্টি মিষ্টি নজরে আমার হৃদয় বাতসে উঠতো আমি তখন মুকুটহীন সম্রাট হয়ে নাটকের ডায়লগ বলা শুরু করতাম। “বাংলা বিহার উড়িয়্যার শেষ অধিপতি নবাব---------”। সেই দুই চোখের যাদুর টানে আজও আমি শুনি “আকাশের ওই মিটিমটি তারার সাথে কইবো কথা নাইবা তুমি এলে।” আবার কখনো কখনো শুনি “ ইন আখোকি মাস্তি মে” তারপর ইউটিউবে খুজি মোগল-লে আজম কিংবা পাকিজার নরম নরম সুরের ঠান্ডা ঠান্ডা গান। লাল লাল কৃষ্ণচূড়ার ঝরে যাওয়া কলির জন্য আমি গাছ তলায় নীরব পথিক। লোকে বলে ঝরে যাওয়া ফুলে মালা হয় না অথচ ঝরে যাওয়া ফুলেই সুঘ্রাণ বেশী। যদি কখনো পেয়ে যাই তাহলে ঘন কালো রেশমী চুলের খোঁপায় গুজে দিবো বকুল ফুলটা।

দেয়ালে দেয়ালে, সিড়িঁতে, উপরে-নিচে সব জায়গায় একটা স্লোগান “নাটক চাই নাটক চাই”। কিন্তু কারা লিখছে আর তারা কিভাবে জানলো এবার নাটক হবে না বুঝতে পারলাম না অথচ আমি তখন দশম শ্রেণীতে। রোজার পর ২৬শে মার্চ এখনো অনেক দেরী স্বাধীনতা দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে খেলাধূলার পুরষ্কার বিতরণ হবে, নাটক হবে, যা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার স্যারেরা চুপ থাকায় সরব ছাত্র সমাজ, নাটক চাই নিয়ে। হাজ্বি স্যার, হুজুর স্যার নাটক করা নিয়ে কখনো প্রকাশ্য বিরোধিতা করতো না। খায়ের মোল্লা স্যার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে বলতেন না। তবে সাজেদুল্লা স্যার খুবই উদ্যমী ছিলেন কারণ উনি খুবই সাংস্কৃতিক মনের মানুষ তাই প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের সাথে মিলে সমস্ত সাংস্কৃতিক কাজ সমাধানে সহযোগিতা করতেন।

নাটক হবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষকমণ্ডলী। শুনে সমস্ত স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভিতর আনন্দ আনন্দ ভাব। ৯০ সালে ২৬ শে মার্চ উপলক্ষে নাটক হবে। একদিন কয়েক ঘন্টা হওয়ার পরে সব ছাত্রছাত্রীর ডাক পড়লো উত্তর পাশে দালানের দ্বিতীয় তলায়। প্রাইমারী স্কুলের শাহ আলাম স্যার যথারীতি পরিচালনার দায়িত্বে। নাটকের নাম “দুই ভাই”। সব স্যার মঞ্চে বসেছেন অভিনয়ের জন্য পার্থী নির্বাচন করবে তাই। আমি নিলাম গ্রাম্য মাতব্বের বখাটে ছেলের (তারা) অভিনয়। পার্থী নির্বাচন শেষ কিন্তু মাতব্বর কে হবেন তা ঠিক হলো না। তখন স্কুলে নতুন একজন স্যার সদ্য যোগ দিয়েছেন, রফিক আহম্মদ সেলিম। পরে সিদ্ধান্ত হলো উনিই হবেন গ্রাম মাতব্বর। শুরু হলো রিয়ার্সেল শাহ আলাম স্যারকে কখনো ভোলা স্যার কখনো সাজেদুল্লা স্যার কখনো শ্রীধাম স্যার সহযোগিতা করেন। মাতব্বরের অভিনয় দাপটে আমি অসহায়, ডায়লগে আব্বাজান বলতে হয় অনেক বার। সিংহনগরের সেলিম স্যার এখনো আমাকে ছেলের মত আদর করেন। কিন্ত তখন প্রথম প্রথম আব্বাজান বলতে খুব লজ্জা লাগতো।

আগের নাটকের রিয়ার্সেলের সময় সাদা চোখের পরির যে নজর লেগে ছিলো তা যেন আরো প্রকট হয়ে আমাকে আড়ষ্ট করেছে। আমি এখন শমশের গাজীর রাজ্য দখলে ব্যাকুল তাই অভিনয় আমার কাছে মৃত কিৎসা। সবার সাহসী এবং হৃদয়গ্রাহী অভিনয়তে আমি পদ্মফুলের শিশির মাত্র। গ্রাম্য মাতব্বরের বাচনভঙ্গি, অভিনয়, শব্দ উচ্চারণে আমি তাঁর ছেলে মিলাতে পারি না। অথচ ওই মানবীর জন্য ঘোড়ায় চড়ে চাঁদের ওপারে যেতে মরিয়া আমি।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৯)

পরিবার, দায়বদ্ধতা ও অন্যান্য।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক রিক্সাচালক বাবা তার মেয়েকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে--। ছিঃ কেমন বিশ্রী কথা ও কেমন বিশ্রী বাবা। নিজের মেয়ে তার লালসার স্বীকার। পেপার পত্রিকায় প্রায় দেখি এমন বাবাদের খবর, চাচাদের খবর, মামাদের খবর কিংবা ভাইদের খবর। কিন্তু কেনো এই বিকৃত পুরুষত্বের স্বীকার মেয়েরা। এখন হতে ভাবতে হবে সমাজ বিজ্ঞানীদের, না হয় এইটি মহামারী আকার ধারণ করবে এবং সমাজে ভদ্রতা নষ্ট হবে, সভ্যতা নষ্ট হবে, সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়বে। একটা মানুষের জন্য ঘরটাই সবচেয়ে নিরাপদ অথচ সেই ঘরে বাবা, চাচা, ভাইরূপি জানোয়ারদের বাস। তাহলে একটা মেয়ে কাকে বিশ্বাস করবে, কোথায় নিরাপদ থাকবে। কথায় কথায় আমরা বলি পৃথিবীতে বহু খারাপ লোক আছে কিন্তু একটা খারাপ বাবাও নাই। কথাটা আজ মিথ্যায় পরিণত হতে চলেছে। তাই মেয়ের মা’দেরকে সচেতন হতে হবে, বিচক্ষণ হতে হবে। মেয়ের সাথে বন্ধুভাব রাখতে হবে যাতে কেউ কিছু বললে কিংবা করলে মাকে বলতে দ্বিধা না করে। প্রত্যেককে কয়েকটি বিষয় মেনে এবং খারাপ বিষয় পরিহার করে চলতে হবে ।

ধর্মীয় ও পারিবারিক শিক্ষাঃ
সাধারণত পুরুষ হতে মেয়েরা বেশী ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। তাই মেয়েকেও ধর্ম মেনে চলতে বাধ্য করে। কিন্তু অনেক বাবাই ধর্ম হতে অনেকটা দুরে থাকে কারণ পরিবারের ভরণপোষণের জন্য রোজগারে ব্যস্ত থাকার অজুহাত। তাই প্রত্যক স্ত্রীর উচিত উনার স্বামীকেও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করা। যাতে স্বামীর মনে আল্লাহর ভয় থাকে, সামাজের ভয় থাকে। মেয়েদেরকে আবার শাসনের নামে মনে এমন ভয় দেওয়া যাবে না যাতে সে সহজ কথাও বলতে ভয় পায়। নিজেরা সত্য কথা বলতে হবে এবং সন্তানদের সত্য কথা বলতে বাধ্য করতে হবে। যৌথ পরিবার হলে সন্তানকে পরিবারের সবার সাথে সত্য-সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণে বাধ্য করতে হবে। আশেপাশে কারো আচরণ কিংবা নজর কুরুচিকর হলে সন্তানদের তাদের হতে দুরে রাখতে হবে।

রাজনীতি ও মাদকঃ
আমার মনে হয় সমাজের এবং পরিবারের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণটা এখন রাজনীতি ও মাদক। ইয়াবা এখন গ্রাম মহল্লায় অতি সহজে পাওয়া যায় আর এর যোগান দাতা রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী। সন্তান দশম শ্রেণী কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠলে তার দিকে সতর্ক নজর দেওয়া দরকার। কারণ তখন তাদের কাছে সব কিছু রঙ্গীন রঙ্গীন মনে হয়। মোবাইল, বাইক, একা রুম এবং ক্ষমতা তাদের কাছে আকর্ষণীয় লাগে। বন্ধুদের সাথে ঘুরলে রাজনীতি করতে হয় আর রাজনীতি করলে মোবাইল ও বাইক লাগবেই। এইসব থাকলে রাজনীতি তাকে ক্ষমতাবান করবেই আর ক্ষমতা থাকলে টাকা আসবেই টাকা আসলে মাদক গ্রহণ করবেই। মেয়েদের মনে রাখা উচিত ছেলেদের বেশীর ভাগ প্রতারক হয়। সেটা ভালোবাসার, সেটা ক্ষমতার, সেটা কথার, সেটা অন্যান্যও বটে। তাই মুখে মিষ্টি অন্তরে অনিষ্ট অতএব সাবধান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমঃ
মাঝে মাঝেে সন্তানদের মোবাইল চেক করে দেখা উচিত। কারণ মদ, জুয়া, বাটপারি, চিটিংবাজি সব এখন মোবাইলে হয়। একা রুমে কী করে দেখা উচিত, সন্দেহ হলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ফেসবুক, টুইটার নেশাগ্রস্ত হলে দ্রুত পরিহার করতে হবে কারণ এইসব মাদক হতেও ভয়ংকর। কোনোমতেই মোবাইল গেইম খেলতে দেওয়া উচিত নয়। গেইমে আসক্ত হলে কঠিন শাসনের আওতায় আনতে হবে। টিকটক এবং লাইকি কোনোমতেই করতে দেওয়া যাবে না। শত শত নারী পাচার হয়েছে এবং সংসার হারা হয়েছে এই টিকটক এবং লাইকির কারণে। যেইসব নারী এইসবে অভ্যস্ত ওরা বিকারগ্রস্ত মানুষ। ভারতের ব্যাঙ্গালরে এক নারীর উলঙ্গ ছবি ভাইরাল এই টিকটকের কারণে। বাংলাদেশ হতে ভারত ও মধ্যপাচ্যে শত শত নারী যৌন ব্যবসায় বাধ্য হয়েছে এই টিকটকের নেশায় পড়ে। সরকারকে অচিরে এইসব বন্ধ করা উচিত।

পরিশেষে বলবো সবাইর জীবন সুন্দর হোক। মেয়েরা নিরাপদ হোক ঘরে, হাটে, বাজারে ও শহরে। অতিরিক্ত ভালোবাসার কারণে সন্তান বখাটে হওয়া কাম্য নয়। পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপে সন্তান জীবনহারা হোক কাম্য নয়। বৃদ্ধ মা-বাবা ঘর ছাড়া হোক কাম্য নয়। পরিবার হোক যৌথ আর যৌথ পরিবার হোক স্বর্গ। রাজনীতি হোক কল্যাণময়।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৩৮৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০৫/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast