www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৬১তমপর্ব।

ঢাকায় কয়েক দিন থেকে ভালোই হলো। কী যেন একটা গান আছে “ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাছে, লাল লাল নীল নীল বাতি দেইখা নয়নয় জুড়াইছে”। ত্রিশ/চল্লিশ বছর আগের এই গান ঢাকার সাথে মানানসই ছিলো তখনকার দিনে। এখন আগের হতে অনেক পরিবর্তন হলেও এই পুরানো গানের সুর কানে ভেসে আসলে মানুষ এখনো থমকে দাঁড়ায় শুনার জন্য। বায়তুল মোকারমের হকার মার্কেট এবং জাতীয় প্রেস ক্লাব ঘুরে দেখা যেমন আমার পুরাতন অভ্যাস তেমনি বাংলা একাডেমি ঘুরে দেখাও আমার প্রিয় শখ। কালের আবর্তনে হয়তো এইসব অভ্যাস একসময় আমার থাকবে না, দখল করে নিবে গভীর রাজনীতি আর অন্য চিন্তা। পার্টি অফিসে গিয়ে এই কয়েক দিনে ভালোই হয়েছে দেখলাম, বুঝলাম এবং পরিচয় হলাম।

আপনি আমাকে অন্য পার্টির সাথে আলাপ করিয়ে দেন, না হয় আপনি আমাকে জিনিস দিন। যেটা আপনার কাছে ভালো মনে হয় তাই করেন। তবে আপনি নিরাপদে জিনিস গন্তব্যস্থলে পৌছে দিতে পারবেন। কারণ আপনি অনেক দিন ধরে এইলাইনে আছেন, আপনার সাথে অনেকের পথ পরিচয়ও আছে। অন্যরা যেভাবে আপনার সাথে ব্যবসা করতেছে আমিও সেইভাবে করবো।
কিন্তু এই লাইনে তুমি যে নতুন।
কোনো কিন্তু নয় বড় ভাই।
আচ্ছা, চিন্তা করে দেখি আমি কালকে জানাবো।
টেকনাফ হতে ফিরে আসলাম হোটেল সী-গালে।কক্সবাজার আসলে মানুষ সাগর দেখার সাথে সাথে বৌদ্ধধর্মের মন্দির ও বার্মিজ মার্কেট দেখে দৌড় দেয় শুটকি মার্কেট দেখার জন্য লম্বা লম্বা শুকনা মাছের সাথে সেলফি তোলে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়। যেমন কুমিল্লায় নুরজাহান, মিয়ামী ও ওয়াল্ডভিটা যে কোনো হোটেলের সামনে বাস বিরতি নেয় লোকজন সেখানে দাড়িয়ে একটা সেলফি তোলে ফেসবুকে পোষ্ট দেয় আর লিখে এখন আছি কুমিল্লার এই হোটেলে। এইসব সাতপাঁচ ভেবে ভেবে রাত কাটলো একটু ঘুম আসলো না দুই নয়নে। পরের দিন আবার ছুটলাম টেকনাফে বড় ভাইয়ের কাছে।

কেমন আছো (মুচকি হেসে বড় ভাই জানতে চায়)।
হাসি দেখে আমার মনে ভালো লাগার দোলা দেয়।
জ্বি, ভালো আছি বড় ভাই।
ঠিক আছে ব্যবসা করতে পারবে তুমি। লোকমানের সাথে কথা বলো আর এখন কত পিস নিবে নগদ দিয়ে নিয়ে যাও। তবে জিনিস নিয়ে আর কক্সবাজারে থাকার দরকার নেই সোজা চলে যাবে।
ঠিক আছে এখনই নিয়ে চলে যাবো।
সাত হাজার পিস লক্ষ্মী নিয়ে আমি রওয়ানা হই আমার শহরে। রাঙ্গামাটি এবার আর যাওয়া হয় না। রাস্তায় যেন কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য মনে মনে ভয়ে থাকি। কক্সবাজার হতে চট্টগ্রাম বাসে এসে চট্টগ্রাম হতে আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা আসার জন্য দৌড় দিই বাদামতলী রেল স্টেশন। শোভনের যাত্রী হয়ে আরাম করি ট্রেনে আর ট্রেন দ্রুত পিছনে ফেলে পাহাড়তলী, বারকুণ্ড, সীতাকুণ্ড, ফেনী ও কুমিল্লা।

এলাকায় নিজের প্রভাব বিস্তার করার জন্য যা করা দরকার সবই করবো, চাচা আপনি শুধু কী করা লাগবে বলে দিবেন। আর আমার আগের মামলাটা পুলিশ যেন চার্জশীট না করে।
পুলিশ জানে তুমি এখন সোবহান মিয়ার বিশ্বস্ত লোক দেখলে সালাম দিবে, কিসের আবার চার্জশীট।
আস্তে আস্তে ক্ষমতার স্বাদ পেতে থাকি এবং ক্ষমতার শিখরে উঠতে থাকি অর্থাৎ ধীরে চলো নীতি মেনে চলি তাই ভালো হবে। গোপনে আমার ব্যবসাটাও প্রসার করবো আর সোবহান মিয়া চাচা জানলে আর কী এমন হবে। ঠিকমতো এক বছর করতে পারলেই কোটিপতি বনে যাবে নাহিদ। খুশিতে নিজে নিজে হাসি। হাঃ হাঃ হাঃ।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৬২তম পর্ব।

আম্মু কেমন আছো।
আমি ভালো আছি। তুমি?
হ্যাঁ আম্মু, আমিও ভালো আছি। আমি অনেক ব্যস্ত থাকি তাই এখন আগের মত ফোন করতে পারি না। প্লিজ আম্মু মন খারাপ করো না। মামাকে সাথে নিয়ে বৃটেন দূতাবাসে যাবে, উনি সব চিনে সব বুঝে মামা সব ঠিক করে দিবে। টাকা পয়সার কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন।
আমি তোমার মামার সাথে কথা বলেছি। উনিও ব্যবসায়িক কাজে সারা দিন ব্যস্ত থাকে তাই সময় সুযোগ কম পায় তবে তুমি চিন্তা করো না সময়মতো সবকিছু ঠিক করে দিবে। যখন আমি দূতাবাসে যাওয়া লাগবে তখন আমিসহ যাবো।
আমি দাদীর সাথেও কথা বলেছি। আব্বু প্রথম নাকি রাজি হচ্ছে না পরে দাদীর জেদের কাছে হার মানে। দাদী যেহেতু কানাডা হতে লন্ডন আসবে তাই হয়তো উনার আসাটা আপনি আসার আগেই হবে। আম্মু তুমি আপতত দাদীর কাছে ফোন করার দরকার নাই তারা মনে করবে তুমিই দাদীকে মিসগাইড করতেছো। ঠিক আছে আমি লন্ডন আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আর ফোন দিবো না।
যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে দুই/এক মাসের ভিতর ভিসা প্রসেস হয়ে যাবে।
হুম তাই।
আম্মু রেখে দাও ফোন।
ওকে,লাভ ইউ মামনি।

মৌরিকে নিয়ে যখন আমি একা থাকতাম তখন রাতে আমার ঘুম আসতো না। এই মেয়েটাকে আমি কতদিন বুকে আগলে রাখতে পারবো, এরচেয়েও বড় কোনো ঝড় আসে যদি জীবনে তখন হয়তো উপড়ে ফেলবে মা ও মেয়ের জীবনের শিকড়। তখন হয়তো বাস্তবতার কারণে জীবনের দুই পান্তে দুইজন হবো। এই ভয়ে নিজের মনকে শক্ত করেছি মৌরিকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে করেছি রঙহীন। আজ বিধাতা আমাকে সেটার প্রতিদান দিচ্ছে অনেকগুণ বেশী করে। আমি মৌরিকে কখনো বুঝতে দেয়নি বাবার অভাব কিন্তু আসল সত্য হলো একজন আরেক জনের অভাব কখনোই পুরণ করতে পারে না। একজন বাবা হিসাবে সন্তানকে কাছে রাখতে না পারা মানুষের জীবনের ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে। নিজ জীবনের স্বার্থের প্রাধান্য দেওয়ায় মৌরির মনে বাবার প্রতি ঘৃণা জন্মে গিয়েছে যার কারণে মৌরি কখনোই তার বাবার প্রতি ভালোবাসা দেখায়নি। আমিও নিজ জীবনে স্বার্থের প্রাধান্য দিতাম সন্তানকে দুরে রাখতাম তাহলে আমিও মৌরি হতে সেই ঘৃণাই পেতাম। কিন্তু আজ আমি আমার মেয়েকে নিয়ে লন্ডনে বাস করবো। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ যেমন পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু তেমনি সন্তানের দেওয়া ভালোবাসাও পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দের।

কাঁদছো কেনো মা।
আসলে কখনো কখনো সুখেও কান্না আসে। তোদের দুই ভাই-বোনকে ছোট ছোট রেখে তোর আব্বু মারা গেলো তখন আমার ভয় হতো তোদেরকে পড়ালেখা শিখিয়ে সুশিক্ষিত করে সুনাগরিক করে গড়ে তুলতে পারবো কিনা। তুই খুব ছোট ছিলে তাই এতকিছু বুঝতে পারতে না। আমি তোদের নিয়ে সংগ্রাম করলাম বড় করলাম বিয়েশাদী দিলাম। ছেলে বউমা নিয়ে সুখে থাকলেও তোর জন্য সবসময় মন কাঁদতো। ভাবতাাম আমরা মা মেয়ের জীবন এক ও অভিন্ন। তুই তোর বাবার মত সৎ এবং সাহসী বলে জীবনের কুল পেয়েছিস। তোর বাবা মরে যাওয়ায় আমি তোদের নিয়ে সংগ্রামী হয়েছি আর মৌরির বাবা ভোগ বিলাসী ও লোভী হওয়ায় তুই সংগ্রামী হইলি। আজ আমি পরিপূর্ণ মা। লন্ডনে মৌরিকে নিয়ে বাকী জীবন কাটিয়ে দিবো, শুধু তোমার দোয়া দরকার। তোকে আর মৌরিকে মনে পড়লে আর দেখতে পাবো না বলে কষ্ট লাগছে।
আমি শৌরিকে নিয়ে সংগ্রাম করেছি আর সাথে ছিলো আমার শাশুড়ী। উনি দোয়া আর অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেছে বলেই মৌরি লন্ডন যেতে পেরেছে। মৌরির আব্বুর সাথে আমি সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইনি মৌরির আব্বুই আমার হতে দুরে সরে গিয়েছে এবং দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, সে তার কর্মের ফল সে পাবে মা।

তোদের কী লাগবে কী খাবে আমাকে বল জলী। মৌরি ফোন দিলে জিজ্ঞাসা করবি আমি কী পাঠাবো তার জন্য।
মা আমি মৌরিদের গ্রামের বাড়ি যাবো সবাইর সাথে দেখা করার জন্য গ্রাম হতে এসে আবার আসবো তখন থাকবো এবং বলবো।
মৌরি আমাদের বাসায় আসতে চাইতো না সে আমাদের কথায় হয়তো মনে কষ্ট পেয়েছে। একজন মা সন্তানের সুখ ছাড়া দুঃখ কখনো মেনে নিতে পারে না। আমি, তুমি এইটা এখন বুঝি মৌর মা হলে বুঝবে, কারণ আমরা সবাই নারী। সে সময় আমি আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম।
বাদ দেন মা এইসব কথা। মৌরি এখন বড় হয়ছে সব বুঝে। আর সবসময় ফোন করে আপনাদের সবার খোজখবর নিচ্ছে রাগ থাকলে কখনো তা করতো না।
(চলব)।


মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৬৩তম পর্ব।

আমি বাড়িতে এসেছি আপনাদের সবাইকে দেখে যাওয়ার জন্য কারণ আমি লন্ডন চলে গেলে আবার কখন দেশে আসি তার কোনো ঠিক নাই। কে বাঁচে কে মরে আল্লাহ জানে তাই যাওয়ার আগে সবাইকে একবার দেখে যেতে মন চাইলো।
খুব ভালো করেছেন ভাবী আপনি এসেছেন, আপনাকেও আমরা দেখতে পারলাম।
আমি মৌরিদের বাড়িতে থাকতে চাই তাই একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা দরকার।
কিছুই করতে হবে না সব কিছু সাফ সাফাই করা শুধু নতুন বেড সিট লাগাতে হবে। সব কিছু ধুয়ে আলমারিতে রাখা আছে, যেটা পছন্দ সেইটা নিবেন। আমি একটু বাড়ির সবাইর সাথে দেখা করি। কারণ
শুক্রবারে সবাইকে খাওয়াতে চাই, খতম ও মিলাদ পড়াতে চাই, বাড়ির মৃত ব্যক্তিদের কবর জিয়ারত করাতে চাই।
আচ্ছা,আপনি তাহলে আমাদের ছেড়ে বিদেশে চলে যাবেন ভাবী, মৌরি মা মনি তাহলে আর আসবে না।

মৌরি লন্ডনে একটা ভালো চাকরী পেয়েছে, তাই আমাকেও নিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের দিনমান কেমন কাটছে, জামাই বাবা খোজ খবর নিতেছে কিনা?
ভাবী সে সবসময় ফোন করে। প্রতি মাসে বিশ হাজার টাকা দেয় খরচের জন্য, বলেছে ঘরটা দালান করে দিবে। আমার ছেলেকে পড়ালেখা শেষে ব্যবসা করার টাকা দিবে। সব মিলিয়ে ভালো আছি আমরা।
জামাই কী করে এখন।
সে বলে ব্যবসা করে, তবে তার আত্মীয় স্বজন বলে রাজনীতিও করে! আমি কিছু জানতে চাইনি কখনো। থাক এতকিছু জেনে কী লাভ। আপনাদের ভরণপোষণ দিচ্ছে এটাই বহু কিছু।
আপনাদের বাড়ির নারিকেল সুপারি ও ধান বিক্রির কিছু টাকা জমা আছে। এই আমানত আপনার হাতে তুলে দিতে চাই।
দেখুন ভাই আমি এখানে আমার শাশুড়ীর জন্যই আসতেছি এবং আপনাদের সবার আন্তরিক ভালোবাসা আমাকে আসতে বাধ্য করে। এইসব টাকা পয়সা আমার কোনো দরকার নেই।
তবুও ভাবী আপনি হকদার। এই বাড়ীর ধনী গরিব সবাইকে আপনি উপকার করেছেন। আপনি ও আপনার শাশুড়ীর সাহায্যে এই বাড়ির গরিব বেঁচে আছে, এতেই আমরা কৃতজ্ঞ ।

ঠিক আছে, আমি আম্মার সাথে কথা বলে জানবো এই টাকা কী করবেন।
এখন আমরা চলতে পারছি আল্লাহ চালাচ্ছে। তাই এক টাকাও খরচ করি নাই।
এখনতো জামাই বাবা টাকা পাঠায়। হাঃ হাঃ হাঃ।
নিজের মেয়েই বেঁচে নেই পরের ছেলের কী আর ভরসা! দুইদিন পরে খোজই হয়তো নিবে না।
আরে মন খারাপ করবেন না। ইনশাল্লাহ খোজ নিবে। দোয়া করবেন সবসময়।
এখন যেভাবে নিজের মনে করে এইখানের সব দেখে রেখেছেন ঠিক সেইভাবে ভবিষ্যতেও দেখে রাখবেন। আম্মার শরীর ইদানিং ভালো যাচ্ছে না আল্লাহ জানে কত দিন হায়াত আছে আবার দেশে এসে উনার গঠা ঘর-দরজা দেখতে পারবে কিনা।
আল্লাহ চাচীকে সুস্থ সবল যেন রাখে। এই ঘরের ভাত তরকারি খেয়ে বড় হয়েছি, বেঁচে আছি। শুধু আমি না আমাদের অনেকই। একটা কথা আছে “নুন খাইলে গুণ গাইতে হয়”। যেতদিন বাঁচি গুণ গেয়েই যাবো।

ভাবী ঢাকা গিয়ে ফোন দিবেন। আবার লন্ডন যাওয়ার আগেও ফোন দিবেন।
ঠিক আছে ভাই। যে টাকা জমা আছে তা গ্রামের কোনো গরিব মেয়ের বিয়েতে দিবেন ।
আচ্ছা ঠিক আছে ভাবী।
অন্য সময় টাকা জমা হলে বাড়ির ভিতর কারো ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার জন্য টাকা দরকার হলেও দিবেন। কারো ছেলে মেয়ের বই খাতা কিনতে টাকা পয়সার সমস্যা হলে জানাবেন আমি সবাইকে বলে যাচ্ছি। কারণ সুশিক্ষিত মানুষই সুন্দর সমাজ গঠতে চেষ্টা করে সবসময়। সবাই ভালো থাকবেন।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র ।
৬৪তম পর্ব।

আমরা আবার একই ছাদের নিচে একই বাসায় আমি, আম্মু আর দাদী। আসলে নিঃস্বার্থ ও নির্মল ভালোবাসাই পারে ভালোবাসা অগাধভাবে বাড়াতে। দায়িত্ব ও কর্তব্যের সাথে যদি স্বচ্ছ ভালোবাসা থাকে তাহলে সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য আনন্দিত মনে পালন করা যায়। আমার আম্মু করে আমার দাদীর জন্য, আর আমি করছি আম্মুর জন্য।
তোমাদের কাছে পেয়ে আমার যেন বয়স কম হয়ে গিয়েছে,যেন শরীরে শক্তি বেড়ে গিয়েছে। আমি চলাফেরায় অনেক আনন্দবোধ করতেছি নিজেকে অনেক হালকা মনে করেতেছি।
আসলে দাদী যৌথ পরিবারের যৌথ ভালোবাসা মন ভালো রাখার জন্য অসাধারণ টনিক। মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো লাগে।
আজকাল মানুষ যৌথ পরিবার নয় একক পরিবারে সব ভালোবাসা এবং সুখ খোজে বোন।
আচ্ছা শুনেন আমি আপনাদের বেশী সময় দিতে পারবো না। প্রতি রবিবার ছুটির দিনে আমি আপনাদের নিয়ে ঘুরে বেড়াবো এবং লন্ডনের নামি দামি রেস্তোরাঁয় খাবার খাবো।
না বোন আমি বাহিরে যাবো না তোমরা মা মেয়ে যেও

আম্মা যেই দিন আপনার শরীর ভালো থাকে সেই দিন বেড়াতে যাবো আমরা। মানুষের শরীর প্রাকৃতিক উপায় বিধাতা সৃষ্টি করেছেন তাই মানুষ যেত সবুজ গাছপালা কিংবা নদ নদী এবং সাগরের কাছাকাছি হবে মানুষের মন ও শরীর প্রকৃতির মোহে আবিষ্ট হবে এবং সতেজ হবে। আমরা বনজ উদ্ভিদ হতে যে অক্সিজেন নিচ্ছি তাই একমাত্র বিশুদ্ধ উপাদান শরীর জন্য।
ঠিক আছে সম্ভব হলে যাবো।
আম্মু তোমাকে ড্রাইভিং শিখতে হবে।
না না মামনি, আমার ভয় লাগে পারবো না।
হাঃ হাঃ হাঃ চালানো শিখলে আস্তে আস্তে ভয় চলে যাবে, প্রয়োজনে সব কাজ করতে হয় আম্মু।
কিন্ত ভয় লাগে যে আমার ।
ঠিক আছে তাহলে এখন কিছু দিন টেক্সিতে চলাফেরা করতে হবে। সব কিছু জানাশোনা হলে তখন গাড়ি নিতে পারবো।
এখন এইসব নিয়ে ভাবতে হবে না মৌরি। আমি আর তোমার দাদী বাসায় থেকে কাটাতে চাই, এতে আমি আম্মাকে দেখাশোনা করতে পারবো আর উনারও মন ভালো থাকবে।
আমি তোমাদের কাছে পেয়ে যেন নতুন জীবন পেয়েছি। বেঁচে থাকার ইচ্ছা বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ।

বাংলাদেশের রক্ষণশীল ও নানা কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের মানুষ আমরা, যেখানে স্বামী দুরে সরে গেলে মেয়েদেরকে শাশুড়ীর মায়া পাওয়া কঠিন। যেখানে তোমার দাদী আর আমি একসাথে থাকলে মানুষ কানাঘুষো করতো। এখানে ওইসব নেই তোমার দাদী আমাকে মায়ের মায়া দিতে পারবে আমিও তা মন উজাড় করে উপভোগ করবো। আর তুমি মেয়ে হয়ে আমাকে মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে যে সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করতেছো তাই জীবনের শ্রেষ্ঠ সুখ ও মেয়ের শ্রেষ্ঠ মায়া। তোমার দাদী এখানে কত দিন থাকতে পারে তাও দেখার বিষয় আছে। তোমার আব্বু নিয়ে যেতে চাইবে এবং ভিসা সংক্রান্তও ব্যাপার আছে অতএব উনি আমাদের কাছে থাকতে পারে কিনা তার নিশ্চয়তাও নেই।
মা‘রে এত কিছু বুঝি না, আমি তোমাদের কাছেই থাকতে চাই। ওদের প্রতি আমার এত মায়া-মমতা নেই তাই তাদের আমার প্রতিও দায়িত্ববোধ নেই। আমি কানাডা গেলে একা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বো।
এইতো জীবন মা, যা কিনা মায়াহীন।

আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো এখানে আপনাকে রাখার জন্য। কিন্তু আইনগত জটিলতা যেমন আছে তেমনি আপনাকে নিয়ে যাওয়ার অধিকারও আপনার ছেলের আছে। সে মেয়ের ভালোবাসা পাচ্ছে না তাই মায়ের ভালোবাসা হারাতে চাইবে না।
এত জটিলতা হতে বাঁচার একমাত্র পথ হলো আমার মরণ আর আমি তোমাদের কাছে মরবো। আমি কোথাও যাবো না, এখানে একসাথে আমরা আছি এবং থাকবো আর এইটাই আমাদের মায়া।
(চলবে)।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৬০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০২/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর নিবেদন
  • Biswanath Banerjee ১৮/০২/২০২১
    good
  • অসাধারণ নৈপুণ্যে বাস্তবতার সমাহার
  • নির্মম বাস্তবতা।
    মুগ্ধতা একরাশ প্রিয় কবি।
 
Quantcast