www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বাধীনতা যুদ্ধে আলেম মাশায়েখের অংশগ্রহন ও বীরত্ব ।

বাংলাদেশের ইতিহাস এখন যেন গাছের পাতা, স্বার্থবাজ চামচারা ছিড়ে আর ছাগলে খায়।
(সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ এর মধ্যে একজনও হুজুর নাই, আটষট্টি জন বীর উত্তমের মধ্যে একজনও মাওলানা নাই, ১৭৫ জন বীরবিক্রমের মধ্যে একজন মুফতি নাই, ৪২৬ জন বীরপ্রতীকের মধ্যে একজনও আন্তর্জাতিক খ্যাতি-সম্পন্ন মুফাচ্ছের নাই, তবে দুইজন মহিলা আছেন! দেশকে স্বাধীন করতে কত ধরণের মুক্তি বাহিনী গঠিত হয়েছে! কিন্তু একজন হুজুরের নেতৃত্ব ০৫-১০ জন মাদ্রাসার ছাত্র নিয়ে কোন প্রতিরোধ যুদ্ধের নজির পাওয়া যায়নি। নজির পাওয়া গেছে পাকিস্তানি কর্তৃক বাংলার মা বোনদের ধর্ষণে সহযোগিতায়।

আজ আমাদের ওলামাগণ মাইকে চিল্লাইয়া দেশপ্রেমের বুলি আওড়াচ্ছেন। অথচ তারাই তালেবান কর্তৃক মসজিদে/ স্কুলে আত্মঘাতী হামলায় নিরীহ মুসলিম/শিশু হত্যাকে সমর্থন করে, কখনো জিহাদি সাপ্লাইয়ের প্রত্যয়ও ব্যক্ত করে।
(কা‌র্টে‌সি: হুমায়ুন র‌শিদ খান)।)

আসল ইতিহাস ও সত্যঃ
ourislam.com এ কিছু হুজুরের কথা বলা হয়েছে যাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা ছিল। অনেকে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন।

(১) মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ: আব্দুর রশিদ ২৪৩ দিন আত্মগোপন থেকে স্বাধীনতার যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তার পরামর্শে অসংখ্য মানুষ যুদ্ধে অংশ নেয়, এবং এই কারণে পাকিস্তানী হানাদাররা তার বাড়ি-ঘর সব জ্বালিয়ে দেয়।

(২) মাওলানা আবুল হাসান যশোরী: তিনি ছিলেন যশোর রেল স্টেশন মাদরাসার মুহতামিম। তার মাদরাসার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল তার মাদরাসায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলা করে ২১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে কে শহিদ করে, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন সম্মানিত আলেম মাওলানা হাবীবুর রহমান এবং তার সাথে ছিলেন ৫ জন শাগরেদ আর বাকীরা ওখানে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা। পরে মাদরাসা প্রাঙ্গনেই শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দেয়া হয়। ওই হামলায় যাশোরী গুলিবিদ্ধ হয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

(৩) মাওলানা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান চিশতী: পুরান ঢাকার জুরাইনের পীর হিসেবে যিনি পরিচিত। কথা সাহিত্যিক আনিসুল হকের “মা” উপন্যাসে আজাদের মা সফিয়া বেগম তার ছেলে আজাদকে এই পুরান ঢাকার জুরাইনের পীরের নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণ করেছিলেন। জুরাইনের পীরের বহু মুরীদ মুক্তিযোদ্ধা ছিল এবং জুরাইনের পীর সাহেব নিজে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিলেন। তথ্য সূত্র: আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে।

(৪) মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর রহ.: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা ঢাকার লালবাগ মাদরাসায় ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিলেন। সে সময় কওমি মাদরাসার কয়েক জন ছাত্র হুজুরকে জিজ্ঞাসা করেছিল, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আপনার কি অভিমত? তিনি বলেন, এটা হচ্ছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ। পাকিস্তানিরা জালেম আর আমরা হচ্ছি মজলুম। হাফেজ্জি হুজুরের এই কথা শুনে অনেক আলেম দেশের টানে ও নির্যাতিত নারীদের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর লালসার হাত থেকে বাঁচাতে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু নিজে হাফেজ্জি হুজুরের সাথে দেখা করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন।

(৫) শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান রহ.: তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রধান মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যা ও নারী ধর্ষণের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ইয়াহিয়া সরকার উনাকে জোর করে সৌদিআরব পাঠিয়ে দেয়। দেশ স্বাধীন হবার পর শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান রহ. বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং বঙ্গবন্ধু তাকে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রধান খতিব হিসাবে নিযুক্ত করেন। তথ্য সূত্র: শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর জীবন ও কর্ম।

(৬) ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহ.: ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সবচেয়ে বড় কওমি মাদরাসা জামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন তিনি। তাকে মধ্যপ্রাচ্যের আলেমরা একনামে চিনতেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়, তার ফতোয়া শুনে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার অনেক বড় বড় আলেম মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বহু মুক্তিযোদ্ধাকে ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহ. তার নিজ বাসায় আশ্রয় দিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। তথ্য সূত্র: ফখরে বাঙাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহ. ও উনার সাথীবর্গ।

এ রকম আরো অনেক আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ রয়েছে যাদের অবদান বাংলার মানুষ ভুলেনি। হয়তো ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম নেই। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক যতো নিবন্ধ, প্রবন্ধ এবং বই প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আলেমদের নেতিবাচক ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে এবং হচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম এসব বই, নাটক, সিনেমা দেখে আলেমদের বা দাড়ি টুপি দেখলেই রাজাকার মনে করে। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। এদেশের শত্রু-মিত্রদের চিনিয়ে দিতে হবে। সেজন্য মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের যে বীরত্ব ও অবদান রয়েছে তা মানুষের কাছে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৩২৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/১২/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আপনার লেখাটি খুব সুন্দর হয়েছ‌ে।সবার জানা দরকার এ বিষয়ট‌ি। ধন্যবাদ।
 
Quantcast