www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র I

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র
৩৬তভ পর্ব।

আসসালামুলাইকুম আন্টি।
ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছো শিউলী।
আন্টি ভালো আছি। আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি আগামীকাল আসতে চাইতেছি।
এতে অনুমতির দরকার কি, তুমি চলে আসো।
আচ্ছা ঠিক আছে আন্টি।
ঢাকায় গিয়ে আবার আমাদের ভুলে যেও না শিউলী। ভাইয়া পাখি কখনো নীড় ভুলে যায় না। নীড়হারা পাখি ঝড়ে মরে বাতাসে উঠে আর এটা সাময়িক হয়। আরে বাহ! তুমি অনেক জ্ঞানী কথা শিখে ফেলছো। আমি যে জ্ঞানী এবং ভদ্র লোকের সাথে থাকি ।
দোয়া করি তুমি যেন ভালো থাকো আজীবন। ভবিষ্যতে কোন কাজ করার আগে অনেক ভেবে চিন্তে তারপর করবে। তাই মানুষ বলে “ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না ”। রবিন্দ্রনাথ বলেছেন ভারত উপমহাদেশে তিনটা জাতির স্বভাব হলো মুসলিম কাজ করিয়া ভাবে ভালো না মন্দ। শিখ কাজ করার আগেও ভাবে না এবং করার পরও ভাবে না ভালো মন্দ নিয়ে আর হিন্দু কাজ করার আগেও ভাবে এবং কাজ করার পরও ভাবে ভালো মন্দ নিয়ে। যেখানে থাকো নিজেকে পড়ালেখায় উন্নত করার চেষ্টা করবে এবং পড়ালেখা থাকলে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে তা সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে।

হ্যালো আম্মু। আমি শিউলী বলতেছি।
শিউলী! শিউলী , শিউলী!
হ্যাঁ আম্মু শিউলী । (কান্না মিশ্রিত কন্ঠে ) আমি শিউলী।
কোথায় মা তুমি।
কেমন আছেন আম্মু।
(ফোনে মা মেয়ে উভয়ের কান্না)।
আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো মা?
আমিও ভালো আছি। আব্বু কেমন আছে এখন কি ঘরে নাই উনি। আম্মু ছোট পড়াশোনা করে ঠিকমত?
তোমার আব্বুও ভালো আছে উনি ঘরে নাই, মনে হয় দোকানের দিকে গিয়েছে। সেও পড়ে ঠিকভাবে ।
আম্মু আমি আগামী কালকে চাচীর কাছে ঢাকায় যাচ্ছি । আমি সেখানে গেলে আপনারা আসবেন তখন বিস্তারিত কথা হবে। চাচীর সাথে আমার কথা হয়েছে সে বলেছে যেতে কোন সমস্যা নাই।
ঠিক আছে তোমার আব্বু ঘরে আসলে আমি উনার সাথে কথা বলে দেখি কবে যেতে পারি আমরা। টাকা পয়সা যোগাড় করে আসতে হবে যে।
তাহলে এখন রেখে দিতেছি।

শিউলী মায়ের সাথে কথা বলে আনন্দে আত্মহারা। এতদিন ভয়ে ফোন করে নাই। মানুষ জানলে শিউলীর মা বাবাকে কটু কথা শুনাবে এবং সমাজের মানুষ প্রচার করতো মা বাপ শিউলীকে গোপনে বিয়ে দিয়েছে। বাড়ী ঘরে বসবাসও হারাম করে দিতো।
ভাইয়া ঘর ছেড়ে বাহির হওয়ার পর আজকের মত এত আনন্দ এই কয়েক মাসে আর আসেনি। আম্মুর সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি। মা বাবার সাথে বসবাস যেন বসুন্ধরার স্বর্গে থাকা আর আমি সেই স্বর্গ নিজেই পদদলিত করেছি। আর মাত্র দুই/এক দিন পরে সেই স্বর্গের দেখা পাবে। কিন্তু মনে হচ্ছে আজ রাতটাই শেষ হবে না। আপনার প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা জানাই , আপনার বুদ্ধি শ্রম আমার নতুন জীবন পেতে সহযোগিতা করেছে।
ঢাকায় গিয়ে দেখবে আরো ভালো লাগবে জীবন সত্যিই দারুণ উপভোগের একটা অধ্যায়। যাও রাত হয়েছে ঘুমিয়ে যাও সকালে সকালে উঠতে হবে।
শুভ রাত্রি ভাইয়া।

সবকিছু ঠিকমত নিয়েছো শিউলী?
জি নিয়েছি।
মুখ বেধে রাখলে ভালো হয়। এতে পরিচিত কেউ চিনতে পারবে না।
ঠিক আছে ভাইয়া। আন্টি আমার জন্য দোয়া করবেন। এই কয়েক দিন কষ্ট দিয়েছি মেয়ে হিসাবে ক্ষমা করে দিবেন। ফোন দিবেন এই মেয়েকে।
আসো আসো শিউলী । রিক্সা গেইটে দাড়িয়ে আছে।
দশটা বিশ মিনিটের খুলনা টু ঢাকাগামী বাসে তুলে দেয় শিউলীকে সুজন।
বাসায় এসে সুজন ভাবে ভালোবাসার শক্তি নিয়ে। এই শক্তির জোরে শিউলী আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া একজনের হাত ধরে ঘর ছাড়ে যার অতীত বর্তমান কিছুই জানা ছিল না । অনেক দুর হতে নাহিদের জেলা শহর খুলনায় এসে আমার এবং আমার মায়েরও আপন হয়। এটাও একটা ভালোবাসা ভাই বোন আর মায়ের। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩৭তম পর্ব।

বাস ছেড়ে যায় খুলনা হতে। কম আওয়াজে মিষ্টি সুরে “এই রাঙ্গামাটির পথে লো, মাদল বাজে বাজে বাঁশের বাঁশি” বেজে উঠে সাউন্ড বক্সে। এতে বুঝা যায় চালক সৌখিন ও রুচিবান (হয়তো পড়াশোনা জানা) । যাক এতে বাসে চড়ার ভয়টা কিছুটা দুর হলো কারণ চালক সাবধানে বাস চালাবে। দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে বিলাসবহুল যানবাহন এবং রাস্তাঘাট দেখে বলা বলা যায়। তবে তার সাথে সাথে শিক্ষিত দক্ষ ও সচেতন চালক বাড়েনি। চালাকদের লাইসেন্স পাপ্তিতে বেড়েছে সীমাহীন দুর্নীতি ।
একটার পর একটা গান বেজেই চলেছে আর নিচু আওয়াজে শুনতে আমার ভালোই লাগছে । “আকাশের ওই মিটি মিটি তারার সাথে কইবো কথা নাইবা তুমি এলে” বাজে এখন।
নজরুল এবং রবীন্দ্র সংগীতের মিক্স গানগুলি নিশ্চয় চালক পছন্দ করে একসাথে করেছে। নাহিদও প্রচুর গান শুনতো তার পছন্দ ভারতীয় বাংলা ক্লাসিক্যাল গান। তার সাথে শুনতে শুনতে আমারও ক্লাসিক্যাল গান পছন্দ এখন। মোবাইলে সারা দিন গান শুনে আর ঘুমিয়ে দিন কাটতো আমার।

নাহিদের মাদকের সেবনের নেশা ছিল কিন্তু কারবারী ছিল না। অথচ সে জেল খাটছে মাদক বিকিকিনির মামলায়, কোথাও যেন ঘাপলা আছে মনে হয়। এই সময় তার পাশে থাকা দরকার দেখা করে মানসিক সমর্থন দেওয়া দরকার অথচ আমি ছেড়ে দুরে চলে যাচ্ছি। কিন্তু কিছুই করার নাই একটু নিরাপদ আশ্রয় নেই যে আমি রাতে শান্তিতে ঘুমাবো। সোবহান মিয়ার উৎপাত আমাকে খুলনা ছাড়তে হলো। অথচ সে আমার দাদার বয়সী নামের আগে জনদরদী নেতা আবার হাজ্বীও লিখে। কিন্তু নাহিদ এমন ভন্ড নয় এমন মুখোশ পরা নয়। আমি কখনো দেখিনি অন্য মেয়ের চেহারা অপলক দৃষ্টিতে দেখেছে। কাজকর্ম করতে চাইতো না অলস বলে কিন্তু আমার বকাবকিতে আমার সাথে কখনো রূঢ় আচরণ করেনি। সংসারের টুকিটাকি খরচ করতে পারতো বলে লজ্জিত থাকতো ডাল ডিম দিয়ে চুপচাপ ভাত খেয়ে উঠে যেতো। তার পরিবার নিয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যেত বলতো সময় হলে সব জানতে পারবে।
যদি জেল হতে ছাড়া পায় তাকেও ঢাকা নিয়ে যাবো। না হলে তার পরিবারের কাছে ফিরতে চাইবো। এইসব নয় ছয় ভাবতে ভাবতে শিউলীর ঘুম এসে যায়।

নাহিদ আমি বাকরুদ্ধ আমার ভাষা নেই তোকে শান্তনা দেওয়ার। প্রাণচঞ্চল মেয়েটা এইভাবে মরে গেল বাস দুর্ঘটনায়, মনে পড়লে চোখে অন্ধকার নেমে আসে। ভালো মানুষ এত তাড়াতাড়ি কেন মরে যায় আমার বুঝে আসে না। বিধাতার নিপুণ কুদরতী বুঝা বড় দায়। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত দান করেন। শিউলীর পরিবার যেন অকালে তাকে হারানোর ব্যথা সহ্য করতে পারে ফরিয়াদ থাকবে বিধাতার কাছে। তার মা বাবার খোজ নেওয়ার দরকার ছিল কিন্তু আমাকে উনারা চিনবে না। কান্না বন্ধ কর নাহিদ, কথা বল আমার সাথে।
আমি বের হয়ে উনাদের সাথে দেখা করবো মাপ চাইবো যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। যদি সুযোগ আসে তাহলে পাশে থাকতে চেষ্টা করবো । আমার আর জেলে এক দিনও কাটছে না সুজন যেভাবে হোক আমাকে মুক্ত কর ভাই আমি তোর হাত ধরে বলছি, অনেক কৃতজ্ঞ হবো ।
নাহিদ আমি চেষ্টা করতেছি কিন্তু জামিন কেন হচ্ছে না বুঝতেছি না। কোটের সবচেয়ে নামকরা উকিল তোর মামলা লড়তেছে উনারা গাফিলতি করতেছে না। তুই আর একটু ধৈর্য্য ধর ভাই।

একটা মালবোঝাই ট্রাক ওভারটেক করতে গিয়ে শিউলীর বাসের সাথে ধাক্কা লাগে । বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় শিউলীসহ সাতজন যাত্রী নিহত এবং বহু যাত্রী আহত হয়। ট্রাক দ্রুত পালিয়ে যায় । শিউলী বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে দুই তিন দিন হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল পরে পুলিশ টেলিফোন চেক করে তার মা বাবার খোজ পায়। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩৮তম পর্ব।

মেয়েটা জীবিত ঘর হতে বাহির হয়ে গেল আর ফিরে আসলো লাশ হয়ে কার হাত ধরে ঘর ছাড়লো কে সেই ছেলে জানা হলো না চিনিও না হলো না। সবাই জানতো ছেলেটা পাশের বাড়ির আত্মীয় হয় নাহিদ নাম তার। আর তার সাথে শিউলী পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে। ছেলেটার সাথে সম্পর্ক গঠে উঠলো কিভাবে তাও একটু টের পেলাম না । হায়রে খোদা আমাকে এক বুক ভাঙ্গা কষ্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখলে।
কান্না বন্ধ করো শিউলীর মা। তোমার কান্না দেখলে আমারও খুব কান্না আসে। এখনতো ঘরেই আসতে মন চায় না একদিকে তোমার কান্নাকাটি অন্যদিকে মেয়েটার স্মৃতি ঘরের প্রতিটি আনাচে কানাচে। ঘরে আসলে যেন দম বন্ধ হয়ে যেতে চায়।
আমার মেয়েটা মরণকালে আপনজন কাউকেও পাশে পায়নি । আল্লাহ জানে কত কষ্ট পেয়েছে তখন হে আমার মেয়েকে আপনি জান্নাতবাসী করেন।
হ্যাঁ শিউলীর মা এই দোয়া করি আমরা ।

হ্যলো কেমন আছেন আপনারা।
আমরা কি আর ভালো থাকতে পারি ভাবী। কেমন করে মেয়েটাকে ভুলে ভালো থাকি।
আমার নিজের মন খারাপ মেয়েটার জন্য আর আপনারা হলেন তার মা বাবা আপনাদের অবস্থা আমি বুঝতেছি। ধৈর্য্য ধারণ করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই। নামাজ পড়ে দোয়া করবেন মেয়েটা যেন জান্নাতবাসি হয়। মৌরি শুনে খুব হতবাক তারও খুব মন খারাপ শিউলীর জন্য। আম্মাকেও বলেছি ।
ভাবী ( উচ্চস্বরে কান্না শুরু করে শিউলীর মা)। আমি নিজে না খেয়ে এই ছেলে মেয়েকে খাইয়েছি, চাচী অনেক টাকা পয়সা দিয়েছে, অনেক সাহায্য করেছে আমার এই সন্তানদের জন্য আর আজ মেয়েটা কবরে।কেমন করে ভুলি কেমন করে এই শোক সহ্য করি ভাবী।
আম্মা শুনে খুব দুঃখ পেল । সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছা । উনি যা ভালো মনে করেছেন তাই করেছেন। আমি শুক্রবারে আসবো এখন স্কুল খোলা তাই আসতে পারছি না। আপনাদের কি লাগবে জানাবেন আম্মা থাকলে সব দেখতে পারতো আমি ঢাকা হতে সুয়োগ পাচ্ছি না ।
ভাবী আপনি ফোন করে করে খবর নিচ্ছেন শান্তনা দিচ্ছেন এটাও অনেক কিছু।
আমি আসলে আপনাদের ঘরে রাতে থাকবো। মৌরিদের বাড়িতে যাবো না এই সময় ওই বাড়িতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার দরকার নাই । এখন রাখি।

আজও জামিন হলো না ।
কি আর করবো নাহিদ ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
আর সহ্য হচ্ছে না সুজন।
সহ্য না করে অন্য কোন উপায় নাই। যদি তোর কাছে কোন আইড়িয়া থাকে তাহলে বল । মামলা শুনানির প্রতি তারিখে উকিলেরা আশা দেয় জামিন হবে। কিন্তু জামিন হচ্ছে না ।
আসলে শিউলীর কথা মনে পড়লে খুব খারাপ লাগে সুজন । তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না।
মরণের উপর কারো হাত নাই । জন্ম ও মৃত্যু বিধাতা নির্ধারণ করেন আমাদের যেটা করার ক্ষমতা আছে সেটাও আমরা ঠিকমতো করি না। বিধাতার দেওয়া বিবেক আমরা সঠিক সত্য, ন্যায় নীতি ও মানবতার কাজে না লাগিয়ে সম্পূর্ণ তার বিপরীত করি। শিউলী তোর উপর অগাধ বিশ্বাস করে আর আস্থা রেখে প্রাকৃতিকভাবে গঠে উঠা ভালোবাসার কারণে জন্ম দেওয়া রক্তের ভালোবাসা ত্যাগ করে তোর কাছে এসেছে। তুই তার সেই মর্যাদা রাখতে পারলি না। সে তোর সম্পর্কে কোন কিছুই জানতে চায়নি তার কাছে তোর পরিচয় তার পাশের বাড়ির আত্মীয় অথচ তুই তোর পরিচয়ও প্রকাশ করিসনি কোন দিন। সত্য হলো পরিবারের সাথে তোর সম্পর্ক নাই কিন্তু একই শহরে বসবাস। আমার বিশ্বাস সে তোকে তোর অতীত, তোর পরিবার এবং তোর কাজকর্ম নিয়ে কখনো অবান্তর প্রশ্ন করে তোকে বিব্রত করে নাই ।
তা ঠিক সুজন সে কখনো কোন বিব্রতমুলক প্রশ্ন করে নাই। মাঝে মাঝে খরচের টাকার জন্য বলতো। আর তাও দিতে পারিনি অনেক কষ্ট করেছে তবুও সব সহ্য করেছে। এই জেলটা সব তছনছ করে দিয়েছে।
কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না নাহিদ জেল হয়েছে মাদকের জন্য তাই শিউলীর আত্মার শান্তির জন্য হলেও তোকে মাদক ছেড়ে দেওয়া উচিত।

আসসালামুলাইকুম। হ্যালো আম্মা কেমন আছেন।
মা আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো মৌরি কেমন আছে সে কি আজ ফোন করেছে।
জি আম্মা ভালো আছি মৌরিও ভালো আছে ।
তুমি কি শুক্রবারে বাড়িতে যেতে পারবে।
জি আমি শুক্রবারে যাবো শনিবার বিকালে ঢাকায় ফিরে আসবো।
হাত খালি তাই আর টাকাপয়সা দিতে পারছি না।
আমিও কিছু দিবো সব মিলিয়ে শিউলীর মাকে দিয়ে আসবো।
না তুমি টাকাপয়সা দিতে হবে না ঘরে নারিকেল সুপারি আছে তা বিক্রি করে টাকা দিয়ে দিও।
আচ্ছা আম্মা ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩৯তম পর্ব।

কেমন আছো মা মৌরি।
আম্মু আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন।
আমিও ভালো আছি । আমি গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি শিউলীর আব্বু আম্মুকে দেখতে।
ভালো করতেছেন যাওয়াটা । মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে আমার, অল্প বয়সে আবেগী হয়ে ঘর ছেড়ে এখন দুনিয়া ছাড়া হলো। ওর বয়সী মেয়েরা চুলের বেনী দুলিয়ে গ্রামের মেঠো পথে হেলেদুলে খেলার কথা। চাচা চাচীকে আমার সালাম বলবেন। দাদীরও মন খারাপ উনি কানাডা যাওয়ার পর এই প্রথম বাড়ির মানুষ মারা গেল তাহাছাড়া শিউলী দিনের বেশী সময় দাদীর সাথেই থাকতো।
হ্যাঁ মেয়েটা তোমার দাদীর ভালো দেখাশোনা করতো। জীবন তছনছ করার জন্য একটা দমকা হাওয়াই যথেষ্ট। শিউলী রীতিমত সাইক্লোনের কবলে পড়েছে তাই তার জীবনের শিকড়সহ উপড়ে গেছে। এই জন্য মানুষকে খুব সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হয়। ক্ষনিকের আবেগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। কখনো কখনো জীবনেরই অবসান গড়ে আবার কখনো কখনো জিন্দা লাশ হয়ে সেই ভুলের মাসুল দিতে হয়।
আম্মু বাড়িতে পৌঁছে আবার ফোন দিয়ে জানাবেন এখন রেখে দিচ্ছি। আমার একটু ব্যস্ততা আছে ।
ঠিক আছে ভালো থাকো তুমি।

জন্মের পর আরেকটা সত্য নির্ধারিত থাকে আর তা হলো মৃত্যু। পৃথিবীর কিছু সত্য হতে মানুষ পালিয়ে বাঁচতে চায় কিছু সত্যকে অস্বীকার করে মানুষ ভুলে যায় এইটা দুনিয়া। আবেগ মানুষকে বাস্তবতা ভুলিয়ে দেয় তা শুধু নয় আবেগ মানুষকে জেদী করে আর এই জেদ মানুষকে পৃথিবীতেই নিঃস্ব করে নিঃসঙ্গ করে। আবেগ মানুষকে লোভী করে আর লোভের নেশাগ্রস্ত হয়ে পাপ করে লোভের নেশাগ্রস্ত হয়ে জ্ঞান শূণ্য হয়। জ্ঞান শূণ্য হলেই মানুষ অপমানিত হয় পথে পথে। অনেক জ্ঞানী গুণীও লোভ করে পাপে মরে ভুলে যায় তাঁর সম্মান ।
মাহিনও কানাডায় গিয়ে লোভে পড়ে কানাডার নাগরিক হওয়ার লোভ, তার নিজের উন্নত জীবন মানের লোভ। এই জন্যই আমার ও মৌরির কথা সে ভুলে যায়। কিশোরী শিউলী আবেগে পড়ে যার কারণে ঘর ছাড়া হয়ে ঘর দুয়ার সব ত্যাগ করে। মাহিন আমাদের ত্যাগ করে কষ্ট দিয়ে জীবনের সার্থকতা ফেলেও হারিয়েছে আপনজনের সম্মান, হারিয়েছে মৌরিকে। আর শিউলী জীবনের অপূর্ণতা নিয়েই কবরে গিয়েছে।

মানুষকে ফুল না হয়ে গাছ হওয়াই উত্তম। ফুল ঝরে মাটিতে পড়ে যায়। আর গাছ ঠিকই মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। গাছে ফুল ধরে ফল ধরে তা ঝরে পড়ে গেলেও গাছ সোজা থাকে। যদি সুযোগ থাকতো গ্রামে এসে বাড়িতে থাকতাম গাছ হয়ে এইসব নিরহ মানুষকে ছায়া দিতাম ফুল-ফল দিতাম। এদের খাদ্য এবং সুশিক্ষাই এখন দরকার । মাহিনের কারণে এইসব মানুষের পাশে থাকাই হলো না। নড়বড়ে ব্যক্তিত্বের কারণে অসহায় মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা বঞ্চিত হয়েছো তুমি নিজে এবং আমাদের বঞ্চিত করেছো। স্বার্থ ত্যাগ করে মানুষকে সাহায্য করা বিরাট আনন্দময়। গ্রামের নিরহ শান্ত অসহায় হাজারো লোক আছে এরা জটিলতা বুঝে না প্যাঁচানো কথা বুঝে না রাজনীতি বুঝে না এদের পাশে থাকলে বিপদে সহযোগিতা করলে দেবতা মনে করে পুজা করে। বাড়ির এবং গ্রামের মানুষের দেবী হওয়ার ইচ্ছা আমার কখনো ছিল না। সাহায্যের বিপরীতে দোয়ার কাম্যও কখনো নাই। তবে একটা জিনিস পাওয়ার আছে সেটা হলো আমার আত্মার শান্তি। এই শান্তি আমাকে আকাশে উঠায়।

জলিকে কাছে পেয়ে শিউলীর মা বাবার চিৎকার করে কান্নায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।এতে বাড়ির সবাই এসে জড়ো হয়ে যায়। এমনিতে বাড়ির সবার কাছে জলি খুবই শ্রদ্ধার পাত্রী সবাই তাঁর সাথে দেখা করতে আসবেই। যার যা প্রয়োজন টাকা পয়সা বুদ্ধি পরামর্শ প্রয়োজনমতো দিতে অনিহা করেনি। সবার উচ্চস্বরে কান্না ও কথার আওয়াজে জলি নির্বাক হয়ে যায় । মৌরির ফোন আসে তাও ভুলে যায় জলি । (চলবে)।


মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪০তম পর্ব ।

আমাদের সবাইকে একদিন মরতে হবে কারণ মানুষ মরণশীল । কোরানে আছে “কল্লু নাফছুন জাইকাতুল মউত“ পৃথিবীর সব কিছু মিথ্যা হলেও এই কথা মিথ্যা নয়। কোরানের এই আয়াত চিরন্তন সত্য।
আপনারা যদি এইভাবে কান্নাকাটি করেন সংসার ও জীবন নিয়ে উদাসীন থাকেন তাহলে ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে। এখন হতে আপনাদের কাজ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা ঠিকভাবে খাওয়া করবেন ঠিকভাবে ছেলেটার দেখাশোনা করবেন। যাতে এই ছেলেটা পড়াশোনা করে সুশিক্ষিত হয়। আমার কাছে এবং আপনাদের কাছে এমনকি সব মা বাবার কাছেই সন্তান হারানো খুবই কষ্টের। এই কষ্টের পরিমাণ অন্য কোন কষ্ট দিয়ে পরিমাপ করা আদৌ সম্ভব নয়। তবুও মেনে নিতে হয় তবুও জীবনের তাগিদে কর্মের পিছনে ছুটতে হয়। অতীত ভুলে গেলে চলে না অতীত হতে শিক্ষা নিয়ে জীবন সাজানোই উত্তম বুদ্ধির কাজ।
ভাইজান এইভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। মন শক্ত করতে হবে কাজকর্মে মনোযোগ দিতে হবে।
আসলে ভাবী মেয়েটা চলে যাওয়ার পর হতে মনের জোর পাই না কাজকর্ম করতে। তবুও চলেছি কিন্তু মরণের পর যেন চলার শক্তিও পাচ্ছি না।
আল্লাহর শোকর ভালো আছেন। এইভাবে অনবরত কাঁদতে থাকলে খাওয়া দাওয়া না করলে অচিরে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তখন ঝামেলা আরো বাড়বে, ভুলে গেলে চলবে না আপনার পরিবার আছে।

আপনি একটু বুঝিয়ে বলুন ভাবী। আমার কষ্টে বুক ভেঙ্গে গেলেও প্রকাশ করতে পারছি না উনার আর ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সয়ে যাচ্ছি। আত্মীয় স্বজন টাকাপয়সা খাওয়া দাওয়া দিয়েছে বলে এত দিন চলেছি। এখনতো ঘরে চাল ডালও ফুরিয়ে আসছে কিন্তু উনাকে বলার সাহস পাই না।
এইভাবে জীবন চলে না , সবাই মরবেন নাকি। আম্মা পাঁচ হাজার টাকা দিতে বলেছে আর ঘরে যে নারিকেল সুপারি আছে তাও বিক্রি করে টাকা দিতে বলেছে। এখন চলেন ওই বাড়িতে দেখে আসি।
মেয়েটা যদি আপনার কাছে চলে যেত ভালো থাকতো লেখাপড়া শিখে সুনাগরিক হতো।
থাক ওইসব অতীত কথা । তার জন্য এখন শুধু দোয়া করবেন, এইসব কান্নাকাটি কোন কাজেই আসবে না।
"আমরা সকলেই আল্লাহরই আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী" ( সূরা আল বাক্বারাহ )।

একদিন এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে । কোরানের আয়াত দ্বারা এইটাই প্রমাণিত শুধু পার্থক্য হলো কেউ আগে কেউ পরে। আমি চলে গেলে আবার ভুলে যাবেন না, ফোন দিবেন কোন কিছুর দরকার হলে জানাবেন। ছেলেটাকে পড়ালেখায় কোন প্রশ্রয় দিবেন না তার প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। সেই একমাত্র সম্বল তাই তাকে ভালো করে গড়ে তুলতে হবে এতে একটু গাফিলতি বা খামখেয়ালি করবেন না
ভাবী আপনি ফোন দিবেন। আমাদের খোজখবর নিবেন। আর চাচীকে বলবেন একটু লক্ষ্য রাখতে। জি আম্মাকে আমি বলবো আপনারাও সময় সুযোগ করে উনাকে নিজের সুবিধা অসুবিধার কথা জানাবেন। সুন্দর করে সব দেখাশোনা করবেন এবং গুছিয়ে রাখবেন, ঘর দুয়ার একটু পরিচ্ছন্ন রাখবেন। এখন শিউলীর আম্মুর মন খারাপ তাই সব একটু এলোমেলো আমিও বলেছি সব গুছাইয়া রাখতে। ভাবী আপনি আসায় মনটা কিছুটা হালকা ছিল যদি সুযোগ হয় আবার আসবেন। আপনি যেভাবে আমাদের দেখাশোনা করেন মনে হয় যেন আমার মায়ের পেটের আপন বোন। এই গরিব চাষাভুষা আপনার ঠিকমতো যত্ন করতেও পারে না আবার ভাইয়ের ভালোবাসা কি দিবো।

ঠিক আছে ভাইজান আমি সুযোগ ফেলে আসতে চেষ্টা করবো কিন্তু সুযোগ করা কঠিন। পুরো সপ্তাহ ডিউটি করে একদিন ছুটি পেলে আর মন চায় না কোন দিকে যাই।বাসার সব কাজ শুক্রবারে করতে হয় এদিক-ওদিক গেলে সব কাজ জমা হয়ে থাকে। দয়া করে ভুল বুঝবেন না।
না না ঠিক আছে ভাবী। এই বোনটাকে ভুল বুঝার সেই সাহস আজীবন না হোক। (চলবে)।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩২৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/১০/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর।
  • Biswanath Banerjee ২৬/১০/২০২০
    VERY GOOD
  • Nice.
 
Quantcast